অদ্ভুত মৃত্যু

অদ্ভুত মৃত্যু

কৃত্রিম মুদ্রা প্রস্তুত করিবার অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তির সম্বন্ধে বিশেষ অনুসন্ধানের নিমিত্তে আমাকে ময়মনসিংহ অঞ্চলে যাইতে হইয়াছিল। প্রায় সপ্তাহকাল সেখানে সে মোকদ্দমার যথাসম্ভব প্রমাণাদি সংগ্রহ করিয়া গোয়ালনন্দ- ট্রেনে রাত্রে কলিকাতা প্রত্যাবর্তন করি।

পরদিন প্রাতঃকালে কাগজপত্র গুছাইয়া রিপোর্টাদি লিখিয়া নিজের প্রয়োজন বশতঃ জনৈক বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত্ করিতে যাইবার উদ্যোগ করিতেছি, এমন সময়ে একজন কনেস্টবল যথারীতি লম্বা সেলাম ঠুকিয়া, একখানা সরকারী চিঠি আমার হস্তে প্রদান করিল। চিঠির উপরে লাল কালিতে বড় বড় ইংরেজী অক্ষরে লিখিত ‘অতি দরকারী ‘ – এই দুটি কথা সর্ব প্রথম আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করিল। কনেস্টবলকে বিশ্রাম ঘর দেখাইয়া দিয়া ত্রস্ত হস্তে চিঠি খুলিয়া পত্র পড়িতে লাগিলাম। পত্রে প্রধান কর্মচারী যাহা লিখিয়া পাঠাইয়াছেন, তাহার সারমর্ম এই – ‘ আজ চারি দিবস গত হইল, মির্জাপুর স্ট্রীটের একটি ছাত্রাবাসে মহেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নামে একটি ছাত্র অতি আশ্চর্যরূপে হত হইয়াছে।

পুলিশ যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াও এ পর্যন্ত খুনের কিনারা করিতে পারে নাই। তুমি মুহূর্তমাত্র গৌণ না করিয়া উক্ত হত্যার ব্যাপারে অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইবে। মুচিপাড়া থানার পুলিশ কর্মচারী হত্যা ব্যাপারে প্রথম অনুসন্ধান করিয়াছে।’ পত্রখানি পাঠ করিয়া আমার বন্ধুদর্শনবাসনা পলকে বিলুপ্ত হইল। সেই কৃত্রিম মুদ্রার জটিল মোকদ্দমার গুরুভার হইতে মুক্ত হইতে না হইতেই আবার এক হত্যা কাণ্ডের গুরুতর ভার মস্তকে বহন করিতে হইবে ভাবিয়া মন অবসন্ন হইয়া পড়িল। কিন্তু ঊর্ধতন কর্মচারীর আদেশ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আমাকে প্রতিপালন করিতে হইবে , সুতরাং আর ইতস্ততঃ না করিয়া কনেষ্ট্বলকে বিদায় দিয়া গাড়োয়ানকে গাড়ি প্রস্তুত করিতে আদেশ করিলাম এবং কিঞ্চিত্ জলযোগান্তে অবিলম্বে মুচিপাড়া থানায় উপস্থিত হইলাম। সেখানকার ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীকে বড়সাহেবের লিখিত পত্রের মর্ম জ্ঞাত করাইলে তিনি আমাকে উক্ত হত্যা ব্যাপারের প্রধান অনুসন্ধানকারী কর্মচারীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করাইয়া দিলেন।

অনুসন্ধানকারী কর্মচারীর নাম সুশীলবাবু; সুশীলবাবু আমার পূর্বপরিচিত। ইনি আমাকে হত্যা সম্পর্কে নিজ তদন্তে যতদূর তথ্য সংগ্রহ করিতে পারিয়াছিলেন, তাহা একে একে সন্তুষ্টির সহিত বর্ণনা করিলেন। হত্যা সংক্রান্ত আমূল বিবরণ শুনিয়া আমি বুঝিতে পারিলাম, এ ব্যাপারের কিনারা করা সহজ-সাধ্য নহে পুলিশানুসন্ধানে এ সম্বন্ধে যতদূর জানা গিয়াছে, তাহার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে প্রকটিত হইল: “মহেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি বিক্রমপুর অঞ্চলের বজ্রযোগিনী গ্রামে। ইঁহার পিতার নাম, ঁহরপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। মহেশ কলকাতার সিটি কলেজের দ্বিতীয় বার্ষিক শ্রেণীতে অধ্যয়ন করিতেন। মির্জাপুরে এক স্টুডেণ্ট মেসে ইঁহার বাস ছিল। ঁশ্রীশ্রী দুর্গা পূজার বন্ধে সেই মেসের অধিকাংশ ছাত্রই বাড়ি চলিয়া গিয়াছিল, কেবল তিনজন বি.এ পরীক্ষার্থীর সহিত মহেশচন্দ্র বন্ধের সময়েও সেই মেসেই ছিলেন।

গল্পের বিষয়:
অন্যান্য · রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত