কা আ.. কা কা.. কা কা..
 কা আ.. কা কা.. কা কা..
 সকাল বেলা মোরগ কুরুক্কু কুরুক্কু করবে,কবুতর বাকুম বাক বাকুম করবে আর মানুষ ঘুম থেকে বিছানায় উঠে বসে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে আলাজিভ বের করে,
হাই তুলতে তুলতে সকাল হবে, এটা মেনে নেয়া যায়।কিন্তু কাকের রোজ রোজ কা কা শুনে ঘুম থেকে উঠাটা বেশ বিরক্তিকর।
 .
 আমি রোজ একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুম থেকে উঠি।সূর্য মহাশয় মাথার উপরে না আসা পর্যন্ত এই বিরক্তি যায় না।
 .
 কাকটা দুই পাঁচবার ডেকেই মাথা ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়।সম্ভবত এই কর্কশ কন্ঠের জন্য খানিকটা লজ্জিত বোধ করে।
 আমি তাই আর গালাগালি করি না।আমার মুখের ভাষা যথেষ্টই অলেখ্য এবং অকথ্য।
 .
 কাকটা বেশ আয়োজন করে,ভালোবাসা নিয়ে কাঠি জড়ো করছে।বেচারার কন্ঠ কর্কশ হলেও দিলে ভালোবাসার কমতি নেই।
 আমি রোজ রোজ কাকের কাঠি জড়ানো দেখি।
 .
 ছাদে একটা পুরোনো কাঠির ঝাড়ু পড়ে থাকে।কাক কাঠির উপর দাঁড়িয়ে ঠোট দিয়ে কাঠি বাকিয়ে ভেঙে নিয়ে যেয়ে বাসার ভিত্তি দেয়।
 অল্প মোটা ডালগুলোও কিভাবে কিভাবে জানি জড়ো করে ফেলেছে।
 কাকের কাকা শুনেও আমি মাঝেমধ্যেইই সকালে উঠতে পারি না।
 ওর ডাকাডাকি আরও জোড়ালো করার জন্য ছানাপোনার আমদানি ঘটাবে বোধ হয়।
 .
 রোজ বাহির থেকে দুপুরে আসি আর কাকের কাঠি জড়ানো দেখি।
 এক দুপুরে জানালা খুলে দেখি বাসা তৈরী।তিনি বাসায় আরামে শরীর ডুবিয়ে বসে আছেন।
 .
 আমার দিকে দুইবার তাকালো।
 আমি হ্যালো বলবো কিনা বুঝতে পারলাম না।
 .
 আমার যাওয়া আসা আর কাকের বসে থাকতে থাকতেই দিন রাতগুলো যায়।কাক ডিমে তা দেয় আর অপেক্ষা করে কবে ছানাপোনা আমদানি হবে।
আমি শঙ্কিত মুখে অপেক্ষায় থাকি কবে আমার সকাল ঘুম বরবাদ হবে।
 .
 বর্ষাকাল আসি আসি করছে।মাঝে সাঝে আকাশ কালো করে ফেলে।
 তারপর কিনা কি ভেবে আর বৃষ্টি নামায় না।
 মেঘ অন্য শহরের দিকে উড়ে যায়।
 রোদের ছায়া খুঁজে খুঁজে দিন যায়।
 .
 অন্য সকালে কাকটা দুই পাচ বার ডেকে থেমে যায়।আজ সকালে কেনো জানি থামছেই না।আমি বিরক্ত মুখে জানালা খুলে দিলাম, বেচারার লজ্জা পেয়ে ভেগে যাওয়ার জন্য।
 কিন্তু উলটা আরও দিগুণ উৎসাহে কাক মহাশয় ডেকেই যাচ্ছে।
 বাসার দিকে তাকিয়ে দেখি দুই তিনটা ছোট ছোট মাথা উঁকি দিচ্ছে।
 এবার বোঝা যাচ্ছে উনি কেনো বাড়ি মাথায় তুলেছেন।
 .
 আমি আলহামদুলিল্লাহ বলবো নাকি নাউজুবিল্লাহ বলবো সেটা নিয়ে খানিকটা দ্বিধায় পড়ে গেলাম।রুমের দরজা খুলে দেখলাম, আকাশও ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে।চারদিক থৈ থৈ অবস্থা।
 যে যাই ঘটাক না কেনো আমাকে ঠিক সময় যেতে হবে।কার্ড পাঞ্চ করাতে হবে।নাহলে বেতন কাটা।
 কর্তৃপক্ষ এর বেতন দেবার চেয়ে কাটার প্রতি বেশি মনোযোগ। মাসের ১৫ তারিখ পার হলেও বেতন হয় না,কিন্তু ২ মিনিট দেরী হলেই বেতন কাটা।
 .
 একটা মাইক্রো খুব জোরে পাশ দিয়ে গেলো।
 সামনের কোদাল আর ঝুড়ি নিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া লোকটাকে ভিজিয়ে দিলো কাদা মাটিতে।
 লোকটা কোনো আক্ষেপ না করে টিউবওয়েল খুজছে।
 গাড়ি চড়া জীবগুলোই শুধু মানুষ।রাস্তায় দাঁড়ানোরা মানুষ এটা কোথায় লেখা আছে!মানুষের গর্ভ থেকে জন্মালেই মানুষ না।সমাজে মানুষ হবার জন্য মাইক্রো-কার এইসব থাকতে হয়।
 .
 বৃষ্টি ম্যাডাম ভেজাচ্ছেন এখন সারাদিন অবধি।বিগত দিনগুলোর হিসেব সব মিটিয়ে দিয়ে তারপর যাবেন এবার।
 বাচ্চাগুলো বড় হচ্ছে।সারাক্ষণ হা করে থাকে। মা কাকটা ঠোটে কিছু না কিছু নিয়ে এসে ক্ষুধা মেটাতে চেষ্টা করে।কিন্তু ক্ষুধা আর মেটে না।
 কাকের বাচ্চারও জ্বর হয়।নাহলে এক বৃষ্টিতে আমি মা কাকটাকে পাখা মেলে বাচ্চাদের আড়াল করতে দেখতাম না।নিজের সব পাখা পালক ভিজে একাকার।
পালকের নিচের চামড়াও দেখা যাচ্ছে।কিন্তু বাচ্চাগুলোকে তবু ভেজাবে না।
 .
 প্রাণি আলাদা আলাদা হতে পারে।জাত আলাদা হতে পারে।মায়ের জাতটা কেনো জানি সব সময় একই।
 আচ্ছা কাককে কেনো পাখি বলে না।বেটারা তো দিব্বি উড়ে বেড়ায়।উটপাখিরা শেষ কবে উড়েছিলো কেউ কি জানে?
 তবুও পাখি।কি অদ্ভুত।
 .
 জুনিয়র কাকেরা এখনো ডাকাডাকি শুরু করেনি।এক কাকের ডাকেই আমি বিপর্যস্ত। এনারা শুরু করলে বাড়ি ছাড়া হতে হবে।
 চিন্তিত মুখে ঘুমাতে যাই।সকালে উঠে চোখ ডলতে ডলতে দৌড় লাগাই।
 .
 দুপুর বেলা এসে জানালা খুললাম।কাকটা এই ভর দুপুরে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে।ঘটনা কি? আরও দুইটা বাচ্চা পয়দা দিয়ে ফেলেছে নাকি!
ওই বাসায় এত বড় ফ্যামিলি জায়গা হবার কথা না।
 বাসাটায় আরও দুটো মাথা দেখতে পেলাম না।উলটো আগের তিনটে মাথাও নেই।
 .
 কাকটা এই জন্যই ডাকাডাকি করছে।অন্যদিন জানালা খুললে চুপ হয়ে যায়।আজকে আর চুপ হচ্ছে না।
 ডেকেই যাচ্ছে।
 কা আ, কা আআ, কা আ আআ,
 কা আ, কা আআ, কা আ আআ।
 .
 বোধ হয় জিজ্ঞেস করছে,
 “তুমি কি দেখেছো আমার বাবারা কোথায়?”
 .
 উত্তরটা জানি না।জানলে দিয়ে দিতাম।
 ছাদে এসে দাঁড়ালাম।কাকটা ডেকেই যাচ্ছে।
 তা ডাকুক।আমি তো আর জানি না,ওর বাচ্চা কই।
 .
 আমি বরঞ্চ রাস্তা দেখি। রাস্তা দিয়ে তুমুল গতিতে একটা মাইক্রোবাস কাদাপানি ছিটিয়ে যাচ্ছে। নিশ্চিত আজকেও রাস্তার পাশে দাঁড়ানো কাউকে ভেজাবে।
 আজকে বোধ হয় উত্তরটা পেয়ে যাবো।
 কাক কেনো পাখি না,উটপাখি কেনো পাখি…
 রাস্তায় থাকা জীবগুলো কেনো মানুষ নাহ,গাড়িতে থাকলেই মানুষ…
  










