মিয়াঁও…. মিয়াঁও….
আবারো সেই ডাক! এই বিড়ালটা আজ জ্বালিয়ে মারবে। আমার ছোট বোন মিতুর বিড়াল প্রীতি প্রচুর। শুধু বাবার ভয়ে বিড়াল বাসায় নিয়ে আসতে পারছে না।
তা না হলে এতদিনে বাসায় ডজন খানেক বিড়াল থাকতো এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
আম্মু মিতুকে নিয়ে মামাবাড়ি গেছে। আব্বু একটা জরুরী কাজে ঢাকায়। বাসায় আমি একা থাকবো এইজন্য আম্মু একটা মোবাইল দিয়ে গেছেন।
এই কয়দিন না চাইলেও আমাকে মোবাইলটা সাথে রাখতেই হবে। আর এই মোবাইলের রিংটোনে বিড়ালের ডাক দিয়ে গেছে আমার বিড়াল প্রেমী বোনটি।
এই বিড়ালটি কিছুক্ষণ পরপর ডেকে উঠছে। মামাবাড়িতে আজকে বিশেষ একটা ঘটনা ঘটছে, আর সেই ঘটনার প্রতি মুহূর্তের খবর আমায় না জানিয়ে নাকি মিতু শান্তি পাবে না।
তার শান্তির কথা ভেবে আমাকে সব শুনতে হচ্ছে।
বাসা ফাঁকা দেখে ইভান আর ইরফানকে ডেকে এনেছিলাম আড্ডা দেয়ার জন্য। কিন্তু মিতুর জন্য শান্তিতে আড্ডা দেয়া হচ্ছে না। মোবাইলটা আবার বেজে উঠলো।
ইভান বলে,
-কিরে! ফোন রিসিভ করে কথা বল।
-আমি জানি কি বলার জন্য ফোন করেছে। শুধু শুধু আড্ডায় ডিস্টার্ব হবে।
-আচ্ছা ওরা কয়দিনের জন্য গেছে?
-জানিনা, থাকবে হয়তো কিছুদিন।
-আঙ্কেলও বাসায় নেই। তুই একা কেনইবা থাকতে গেলি! তুইও যেতিস ওদের সাথে।
আমি মলিন এক হাসি দিয়ে বললাম,
-আমার মামাবাড়ি যাওয়া নিষেধ।
আমার কথায় ওরা দুজন চমকে উঠলো। এতটা অবাক যেন ইতিপূর্বে আর কখনো হয়নি। ইরফান বলে,
-এটা কেমন কথা! নিষেধ মানে! কার নিষেধ?
-আমার বড় মামার কাছে আমি একজন অভিশপ্ত মানব। তার কড়া নিষেধ আমি ঐ বাড়িতে যেতে পারবো না।
-কারণ কি?
-দুইবছর আগের কথা। আমি সেখানে গিয়েছিলাম। আমার সামনে বড় মামা ছোট বাচ্চাদের ধমকাচ্ছিলেন। তখন বলেছিলাম,,,,,
-মামা আপনার উচিৎ বাচ্চাদের সাথে মিষ্টিভাবে কথা বলা। বাচ্চাদের ধমকালে ওরা আপনাকে ভয় পাবে কিন্তু শ্রদ্ধা কমে যাবে।
আমার কথায় মামা আরেকটু রেগে গেলেন।
-কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা তোর কাছ থেকে শিখা লাগবে আমায়?
-জ্বি না মামা। আমার কাছ থেকে আপনাকে কিছু শিখতে হবে না। আমি শুধু এটাই বুঝাতে চাচ্ছি যে,অল্পতেই এত উত্তেজিত হয়ে চিল্লাচিল্লি করাটা আপনার জন্য বিপদজনক।
কণ্ঠে বেশি চাপ পড়বে, দেখা যাবে একটা সময় আপনি আর কথা বলতে পারছেন না।
মামা কড়া চোখে আমার দিকে তাকালেন। দাঁতে দাঁত পিষতে লাগলেন। কিছু বলতে গিয়েও ঠোঁট কেঁপে থেমে গেলো। হয়তো বিষণ রেগে গেছেন।
বেশি রাগ উঠলে মানুষ সহজে কথা বলতে পারেনা। কথা আটকে যায়। মামার রাগ কমানোর জন্য আপাতত আমি তার সামনে থেকে সরে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর পুরো বাড়িতে বিরাট এক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো। বড় মামা কথা বলতে পারছেন না। উনার ঠোঁট নড়ছে অথচ কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না।
মামা কাগজে লিখলেন,
***ইশান ছেলেটি ভয়ঙ্কর একটা অভিশপ্ত মানব। ওর মুখ থেকে যে কথাই বের হবে সেটা হবেই। ওর প্রতিটি কথাই অভিশপ্ত।
আশেপাশের মানুষের জন্য যে ও কতটা ভয়ঙ্কর সেটা তোমরা হয়তো বুঝতে পারছো না। আমি বুঝতে পারছি। ওকে এখনি আমার বাড়ি থেকে চলে যেতে বলো।
ভবিষ্যতে যেন ওর ছায়াও এই বাড়িতে না পড়ে। ওকে যদি এই বাড়িতে দেখি তবে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে সব জ্বালিয়ে দিবো।**
ছোট মামা, দুই মামী এবং আম্মু। কেউ বড় মামাকে বুঝাতে পারলো না। সেই থেকে ঐ বাড়িতে যাওয়া আমার নিষেধ। পরে মামা বিভিন্ন জায়গায় অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন।
কোথাও কোনো কাজ হয়নি। মামা মনে করলেন এটা কোনো অলৌকিক রোগ। তাই তিনি নানান জায়গায় খোঁজ খবর নিয়ে কিছু পীর ফকির দেখালেন।
তারাও মামাকে ভালো করে দিতে পারলো না।
সকাল থেকে এই পর্যন্ত মিতুর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য শুনে যা বুঝতে পারলাম, আজকের ব্যাপারটা এইরকম…
হঠাত একদিন মামার কানে খবর আসলো একজন মানুষ আছে। অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। সে চাইলে মামাকে এক চুটকিতেই ভালো করে দিবে।
লোকটির চিকিৎসা বড়ই অদ্ভুত! বান্দর ও কলা দিয়ে উনি চিকিৎসা করেন। অদ্ভুত তো বটেই!
তবে যারা পীর পর্যায়ের ওরা অন্য সাধারণের চেয়ে আলাদা হবেন এ আর অস্বাভাবিক কি হল!
লোকটি বান্দর দিয়ে চিকিৎসা করে বলে তার নাম পড়েছে, বান্দর বাবা।
সব শুনে ইভান বলে,
-তোর কি মনে হয়? বান্দর বাবা পারবে তোর মামাকে কথা বলিয়ে দিতে?
-লোকটা যে অনেক বড় প্রতারক এটা বুঝতে পারছিস না? আমার মনে হচ্ছে লোকটি উল্টো বিপদে পড়তে যাচ্ছে আজ।
-তাহলে কি তোর মামা আর কখনোই কথা বলতে পারবেন না? তোর কি মনে হয় এই ব্যাপারে?
-আমি বুঝতে পারছি না।
-আচ্ছা এবার তো ফোনটা ধর! মেয়েটা কখন থেকে দিয়ে যাচ্ছে।
আমি রিসিভ করে নিরবে মিতুর কথা শুনতে লাগলাম। ঠিক কথা না! হাসি বলা যেতে পারে। মিতু খিলখিল করে হেসেই যাচ্ছে। কোনোভাবে হাসি থামিয়ে বলে,
-এখানে যা হচ্ছে ভাইয়া… হিহিহি…. হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা করছে।
-সে তো বুঝতেই পারছি। এইবার হাসিটা একটু বন্ধ করে আসল কথা বল।
-বান্দর বাবা মামাকে সারিয়ে তুলবে কিনা জানিনা। তবে আমরা ফ্রিতেই বান্দরের খেলা দেখতে পাচ্ছি। হিহিহি…. ইশ তোকে যদি ভিডিও কল দিয়ে দেখাতে পারতাম।
কিন্তু মামা যদি দেখে ফেলে আমি মোবাইল দিয়ে তার চিকিৎসার ভিডিও করছি তাহলে কিয়ামত ঘটিয়ে ফেলবে।
-চিকিৎসা কতদূর?
-আর চিকিৎসা! আমরা বান্দরের খেলা দেখে মজা পাচ্ছি এটাই অনেক। মামাকে যদি কেউ সারিয়ে তুলতে পারে সেটা তুই। আর আমি বুঝতে পারছি আজকেই তোকে এখানে আসতে হবে।
-কি করে বুঝলি?
-ভাইয়া আমি তোর ছোট বোন না? আমিও অনেক কিছুই আগে থেকে বুঝতে পারি।
-ওহ আচ্ছা।
-ওহ আচ্ছা মানে! আমার কথা তোর বিশ্বাস হচ্ছে না, তাই না?
-মিতু এখন রাখি।
মিতুর অনুমান মিথ্যে না। আমারো মনে হচ্ছে আজকে আমার ডাক পড়বে সেখানে। তাই আমি ব্যাগ গুছিয়েই রেখেছি।
আবার আড্ডা শুরু করলাম। ঘণ্টা খানেক আড্ডা দিলাম এর মাঝে মিতু আর একবারও ফোন দিলো না। তার ঐ কথায় বিশ্বাস করেছি স্বীকার না করায় হয়তো রাগ করে আছে।
ঘণ্টা খানেক পরে আম্মুর ফোন আসে।
-ইশান।
-বলো আম্মু।
-এখনি তৈরি হয়ে চলে আয়।
-আচ্ছা।
-এখানে আসা তোর নিষেধ। তারপরও আমি আসতে বলায় একটু অবাকও হলি না? জিজ্ঞেসও করলি না যে কি এমন ঘটেছে যে এখন তোকে আসতে বলছি!
-বান্দর বাবা কিছুই করতে পারেনি। পরে ছোট মামা বুঝাতে চেষ্টা করেছেন যে এই সমস্যা একমাত্র আমিই সারাতে পারবো। তাই আমাকে ডাকা হচ্ছে। বলতে পেরেছি?
-কিছুকিছু হয়েছে। এইরকম আইডিয়া করে অনেকেই বলতে পারবে। এইজন্য আধ্যাত্মিক ক্ষমতা লাগে না।
-কোনটা কোনটা হয়েছে?
-বান্দর বাবা কিছু করতে তো পারেইনি। উল্টা বিপদে পড়েছিল।
-কিরকম বিপদ?
-পীর লোকটি কিছু একটা মন্ত্র বিড়বিড় করে পড়ে একটা কলাতে ফুঁ দিয়ে সেই কলা বান্দরকে খেতে বললো। বান্দর কলাটা খাচ্ছিল।
অর্ধেক খাওয়ার পর পীর বান্দরটিকে বলল ঐ অর্ধেক খাওয়া কলাটি ভাইজানকে খাওয়াতে। হঠাৎ করে বান্দরটি রেগে গেলো। মনে হচ্ছিল তার এই আদেশ পছন্দ হল না।
বান্দরটি রেগে কলাটি ছুড়ে মারে পীরের দিকে। আকস্মিক এই পরিস্থিতির জন্য পীর বান্দর বাবা প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি রেগে গেলেন বান্দরের উপর। ধমক দিলেন বেশ জোরে।
ধমকে বান্দরটি ভয় পেলো না। ভীর যুদ্ধার মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো লোকটির উপর। সে কি অদ্ভুত কাণ্ড! লোকটি চলে যাবার আগে তোর মামাকে বললো,
আপনার উপর বড় বদ জ্বিনের আচর পড়ছে। এত সহজে তাকে তাড়ানো যাবে না। জ্বিনটা আমার বান্দরকে পাগল বানিয়ে দিয়েছে। ইশান শুনতে পাচ্ছিস?
-হ্যাঁ।
-আর তোর বড় মামাকে ছোট ভাইজান রাজি করায়নি। বড় ভাবি রাজি করিয়েছেন।
-ওহ বুঝলাম।
-আচ্ছা তুই কি সত্যি সত্যি এখানে এসে ভাইজানকে সারিয়ে তুলতে পারবি?
-আমি জানিনা আম্মু।
-ওহ,আচ্ছা তাড়াতাড়ি চলে আশিস।
-আচ্ছা।
বাসে আমার পাশে এক মধ্যবয়স্ক লোক বসে। লোকটি কোনো কারণে বিষণ টেনশনে আছে। পনেরো মিনিটের মাঝেই লোকটি পাঁচবার এক জায়গায় ফোন করেছে।
এইবার ফোন রাখা মাত্র বললাম,
-চাচা এত ভয় পাবেন না। আপনার মেয়ে এখন ভালোই আছে।
-মানে! আমাকে কিছু বলছো?
-জ্বি আপনাকেই বলছি।
-তুমি জানলে কিভাবে যে আমি আমার মেয়ের জন্য টেনশন করছি! ফোনে তো আমি একবারও নাম নেই নি। শুধু বলেছি, ও কি ফিরেছে?
-বলেননি, তবে আমি জানি আপনার মেয়ে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিল।
এইবার লোকটি চমকে উঠলো। চোখ বড় বড় করে তাকালো আমার দিকে।
-তু..তুমি জানলে কি করে! তুমি কি রিমার ফ্রেন্ড? তোমায় ফোন করে বলেছে?
-আপনার মেয়ের নাম রিমা!
-হ্যাঁ, নাম জানো না? তাহলে কি তুমি ওর ফ্রেন্ড না?
-জ্বি না, আমি রিমার ফ্রেন্ড না।
-তাহলে জানলে কিভাবে যে রিমা তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিল?
-আইডিয়া করেছি চাচা।
-তোমার আইডিয়া মিলে গেছে। রিমা তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেছে তবু ফিরছে না দেখে তার মা মানে আমার স্ত্রী ফোন করে।
দেখে যে রিমার মোবাইল বন্ধ দেখায়। ওর বান্ধবীর কাছে ফোন করলে সে জানায় রিমা ঘণ্টা খানেক আগেই চলে গেছে। মেয়েটা আমার না জানি কি বিপদে পড়লো।
লোকটি কেঁদে ফেললো। চলন্ত বাসে বয়স্ক একজন লোক কান্না করছে দৃশ্যটি মোটেও ইন্টারেস্টিং না। লোকটির কান্না থামাতে বললাম,
-চাচা আপনি কান্না থামান! আপনার মেয়ে এখন ভালো আছে। বান্ধবীর বাসা থেকে আসার পথে ওর এক্সিডেন্ট হয়েছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাই দেরি হয়েছে।
এখন সে বাড়িতেই ফিরছে। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় ফিরে আপনাকে ফোন করে জানাবে।
-কিন্তু ওর মোবাইল বন্ধ কেন?
-হয়তো এক্সিডেন্টে ভেঙ্গে গেছে।
আমার কথায় কাজ হয়েছে! লোকটির কান্না থামানো গেছে। তবে আমার কথা বিশ্বাস করেছে আর তার মেয়ে ভালো আছে শুনে সন্তুষ্ট হয়েছে এইরকম কিছু না।
লোকটির কান্না থেমেছে কারণ আমার কথায় উনি চূড়ান্ত পর্যায়ের বিস্মিত হয়েছে। মানুষ বিস্মিত অবস্থায় কান্না করত পারে না।
-তুমি এতকিছু জানো কিভাবে?
-চাচা আপনি টেনশন না করে শান্ত থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার ফোন আসবে।
আমি হাই তুলে আবার বলি, আমার ঘুম পাচ্ছে। একটু ঘুমিয়ে নেই।
লোকটিকে এত সুন্দর ভাবে ঘটনাটা বলে গেলাম যেন আমি নিজের চোখে সব দেখতে পেয়েছিলাম। কেন বললাম নিজেও বুঝতে পারছি না। কেন যেন মনে হচ্ছিল এটা তাকে বলা উচিৎ।
তবেই উনার কান্না থামবে। পুরুষ মানুষের কান্না খুব খারাপ জিনিস।
চোখ বন্ধ করতেই ঘুম চলে আসলো। অল্প সময়েই ঘুম গভীর হয়ে গেলো। চলন্ত বাসে এত তাড়াতাড়ি কিভাবে গভীর ঘুমে চলে গেলাম ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না।
ঘুম ভাঙ্গার পর মনে থাকলে ব্যাপারটা নিয়ে একটা গবেষণা করে দেখবো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। ঘন সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। আমার গন্তব্য স্থান কোথায় আমি জানিনা।
স্বপ্ন সবসময় এলোমেলো হয়। হয়ত হঠাৎ দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। দেখা যাবে সবুজ ঘাসের জায়গায় মরুভূমি চলে আসবে। আমি মরুভূমিতে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত।
কিন্তু পানির কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। কিন্তু দৃশ্য পাল্টাচ্ছে না। আমি একটা জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করলাম।
কিছুদূর যেতেই দেখতে পেলাম একজন সন্ন্যাসী বিরাট এক বট গাছের নিচে বসে আছেন। তার চোখ দুটি বন্ধ করা।
চোখ বন্ধ থাকায় উনার চেহারা বুঝা যাচ্ছে না। কাছে গিয়ে আমি সালাম দিলাম। সন্ন্যাসী চোখ না খুলেই সালামের উত্তর দিয়ে বললো,
-বাছা কিছু বলবি?
-বলার জন্যই তো এতদূর থেকে আসলাম।
-বল কি জানতে চাস!
-আগে তো চোখ খুলে আমার দিকে তাকান!
-তাকানো যাবেনা বাছা।
-কেন বলুন তো?
-এটা আমাদের গোপন সূত্র। মানুষকে বলা নিষেধ।
-ওহ!
-মন খারাপ করেছিস! আচ্ছা তোকে বলছি, এর আগে আর কাউকে কখনো বলিনি। সন্ন্যাসীদের কাছে অনেক মানুষ আসে অনেককিছু জানতে।
কিন্তু আমরা আর কতটাই বা জানি! তবু মানুষকে মিথ্যে আশ্বাস দিতে হয়। আর কারো চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে আশ্বাস দেয়া যায় না।
-আচ্ছা আপনি কি কি করতে পারেন?
-আমি কিছুই করতে পারি না বাছা। চোখ বন্ধ করে শুধু ধ্যান করতে পারি।
-আপনি কি আমার মামাকে ভালো করে দিতে পারবেন?
-তোর মামা ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল এটা সে এখনো জানে না। তুই একটা ফোন করে তাকে কথা বলতে বল, দেখবি কথা বলতে পারছে।
-এটাও কি আরেকটা মিথ্যে আশ্বাস?
সন্ন্যাসীটি অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসলো। কি এই হাসির অর্থ? জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। তার আগেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
ঘুম ভেঙ্গে পাশের লোককে বেশ উল্লসিত মনে হল। লোকটি মুখে হাসি রেখে বলল,
-তোমার কথা একদম ১০০% মিলে গেছে। আমার মেয়ে ফোন করেছিল।
-কখন?
-এই প্রায় ২০মিনিট হল। তুমি ঘুমিয়ে ছিলে জাগাতেও পারছিলাম না আবার না বলা পর্যন্ত শান্তিও পাচ্ছিলাম না। আচ্ছা কিভাবে বলতে পারলে?
-প্রতিটি মানুষের মাঝেই ইএসপি ক্ষমতা আছে। যে জন্য মাঝেমাঝে মানুষ অদ্ভুত কিছু ব্যাপারে বলে ফেলে যেটা তার জানার কথা না।
আমার কথা শুনে লোকটি কপাল কুঁচকে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। কোনো একটা প্রশ্ন করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তাকে এখন প্রশ্ন করতে দেয়া যাবে না।
আমি হুট করে বললাম,
-চাচা আপনার মোবাইলটা দিয়ে একটা ফোন করা যাবে?
-হ্যাঁ অবশ্যই…অবশ্যই।
লোকটি তার মোবাইল আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি মিতুর নাম্বারে ডায়াল করলাম।
-হ্যালো।
-হ্যালো মিতু!
-হ্যাঁ। আপনি কে?
-আরে আমি ইশান।
-ওহ ভাইয়া তুই। এটা কার মোবাইল থেকে ফোন করলি? তোকে না মোবাইল দিয়ে আসা হয়েছিল সাথে রাখার জন্য। জানিস ঐ নাম্বারে কতবার ট্রাই করা হয়েছে?
-জানিস তো এইসব মোবাইল সাথে রাখতে ভালো লাগেনা। তাই বাসায় ফেলে আসছি।
-তুই কই এখন? আর কতক্ষণ লাগবে আসতে?
-লাগবে মোটামুটি ২০/২৫ মিনিট। তোকে যে কারণে ফোন করা। মামাকে গিয়ে বল উনি ভালো হয়ে গেছেন। এখন থেকে কথা বলতে পারবেন।
-মানে!! কি বলছিস এইসব?
-যা বলছি সেটা কর গিয়ে। বলবি আমি বলেছি উনি ভালো হয়ে গেছেন।
ফোন কেটে দিয়ে উনার মোবাইল ফিরিয়ে দিলাম।
বড় মামা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন! আশেপাশে দাঁড়ানো সবার মুখেই আজ তৃপ্তির হাসি। মামাও হাসি মুখে। মামাকে হাসতে খুব কমই দেখেছি।
হাসে নিয়েই মামা বললেন,
-মিতু যখন রুমে গিয়ে বলল, মামা আপনি ভালো হয়ে গেছেন। ইশান ভাইয়া বলছে এখন থেকে আপনি আবার কথা বলতে পারবেন।
স্বাভাবিক ভাবেই আমার অনেক রাগ উঠলো। আমি ভালো হয়ে গেছি আর সেটা আমিই জানি না! অথচ ইশান আমার থেকে অনেক দূরে থেকেই বুঝে গেলো আমি ভালো হয়ে গেছি?
স্পষ্টত মিতু কথাগুলো বানিয়ে বলছে। আমার সাথে ফাজলামি করছে ভাবতেই প্রচণ্ড রাগ উঠলো। অনেক জোরে ঝাড়ি দিয়ে উঠলাম, ফাজিল মেয়ে! ফাজলামি করিস আমার সাথে?
ধমক দেয়ার পর হঠাৎ খেয়াল করলাম, আরে! সত্যিই তো আমি কথা বলতে পারছি।
-মামা আপনার শরীর ঠিক আছে তো এখন?
-শরীর ঠিক আছে। এখন তো মনও ভালো হয়ে গেছে। আর আমি তোকে কথা দিচ্ছি, এখন থেকে আর বাচ্চাদের ধমকাবো না। ভালবাসার সাথে বুঝাবো।
এক পর্যায়ে মিতু আমাকে একা পেয়ে বলল,
-কি বলেছিলাম না? আজকে তুই এখানে আসবি। তখন আমার কথা বিশ্বাস করছিলি না। এখন কি বল?
-এটা অস্বাভাবিক কিছু না। দৈনন্দিন জীবনে আমরা এইরকম অনেককিছু বলে থাকি। যার কিছুকিছু হঠাৎ মিলে যায়। তবে খারাপ কিছু বলা উচিৎ না।
তাহলে অন্যের কাছে নিজেকে অভিশপ্ত মানব বানিয়ে ফেলবে।