ট্রেনে জানালার পাশে সিট পেয়েছে হাবিব। লং জার্নির জন্য এমন সিট খুবই ভালো। হাওয়া খেতে খেতে টাইম পাস করা যায়। জার্নির ক্লান্তিটা আর শরীর মনে ছাপ ফেলতে পারে না। তবে হাবিব বেশ অস্বস্তিতে আছে। অস্বস্তির কারন তার সামনের সিটের সুন্দরী মেয়েটা। সুন্দরী মেয়েদের সামনে কোনো ছেলে দীর্ঘক্ষন স্বাভাবিক থাকতে পারে না। খারাপ ছেলেরা মজা পায় আর ভালো ছেলেরা অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
আনুমানিক ২২/২৩ বছর বয়সী মেয়েটা এখন ঘুমাচ্ছে। এদিকে বেশ জোরেসোড়ে বৃষ্টি নেমেছে। পাশের জানালা খোলা থাকায় বৃষ্টির পানি মেয়েটার চোখে মুখে এসে পড়ছে। চুলের ফাকে ফাকে জমা হচ্ছে বিন্দু বিন্দু পানি। হাবিব কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। উঠে যেয়ে মেয়েটার জানালা বন্ধ করে দেবে? নাকি মেয়েটাকে ডাকবে?
একটা সুন্দরী মেয়ে চোখের সামনে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে, এতটা সৌন্দর্য্য সহ্য করার ক্ষমতা বোধহয় হাবিবের নেই। সে উঠে যেয়ে জানালাটা বন্ধ করে দিলো।
জানালা বন্ধ করার সাথে সাথে মেয়েটার কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো হাবিব।
মেয়েটা বিরক্তি নিয়ে বললো, “কি ব্যাপার? জানালা বন্ধ করছেন কেন?”
হাবিব অপ্রস্তুতভাবে উত্তর দিলো, “ভিজে যাচ্ছেন তো…”
মেয়েটার তেজী উত্তর, “তাতে আপনার কী?”
হাবিব সিটে বসে পড়লো, “নাহ, আমার কিছু না। সরি।”
মেয়েটা আর কিছু বললো না। হাবিবও অহেতুক কথা বাড়ালো না। অহেতুক কথা বলা তার স্বভাব বিরুদ্ধ।
ট্রেনের ঝিক ঝিক আর বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে র মাঝে হারিয়ে গেল কিছুক্ষন আগের সেই অপ্রিয় কথোপকথন…
মিনিট পাঁচেক পর মেয়েটা মুখ খুললো, “জেগেই ছিলাম। আমি ইচ্ছা করে ভিজছি, ভিজতে ভালো লাগে।”
হাবিব মুখ ঘুরিয়ে তাকালো, “আমাকে কিছু বললেন??”
মেয়েটা জানালার বাইরে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “না, কিছু বলি নাই।”
-বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসেন??
=আমার কথা না শোনার ভান করলেন কেন?
-শুনছিলাম। ইচ্ছা করেই ভান করছি, ভান করতে ভালো লাগে।
মেয়েটা হেসে ফেললো, “প্রতিশোধ নিলেন বুঝি?”
হাবিবও হাসলো, “নিলাম। ক্ষতি কী? প্রতিশোধ থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তবে প্রতিশোধই ভালো!”
মেয়েটা এবার শব্দ করে হাসলো,”তাই নাকি? ভালো কিছুটা কী?”
হাবিব উত্তর দিলো না। বললো, “আমি হাবিব। আপনি?”
-আমি লামিয়া। বললেন না তো, ভালো কিছুটা কী?
হাবিব লামিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, “এই যে পরিচিত হলাম। আপনার নামটা জেনে ফেললাম!”
লামিয়া নামের মেয়েটা আবারো হাসলো। এই মেয়েটার কাজ শুধু হাসা। হাবিব মনে মনে মেয়েটার নাম দিলো, ‘লাস্যময়ী লামিয়া।’
-ঢাকায় থাকেন?
=হ্যা। আপনিও?
-আমিও। ঢাকার কোথায়?
=আমি ঢাবিতে পড়ি। হলেই থাকি।
-ওহ তাই নাকি? আপনি তো আমার প্রতিবেশি! আমি বুয়েটে আছি।
=তাহলে তো ভালোই হলো।
-ঢাকায় ফেরার পর একদিন কফি খাবেন?
এতক্ষন স্বাচ্ছন্দে কথা চালিয়ে গেলেও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একটু থেমে গেল লামিয়া। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো, “আচ্ছা দেখা যাক…”
হাবিবও বললো, “দেখা যাক…”
লামিয়া ভদ্রতাসূচক একটা হাসি দিলো। হাসিটার মাঝে দ্বিধার ছাপ স্পষ্ট। সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের মনকে খুবই কনফিউজিং ভাবে তৈরী করেছেন। এরা মিনিটে মিনিটে দ্বিধায় পড়ে। ড্রেস পছন্দ করতে দ্বিধায় পড়ে, চুলের ক্লিপ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে, বার্গার আর স্যান্ডউইচ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে, চটপটি আর ফুচকা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে… আর সদ্য পরিচিত হওয়া যুবকের সামনে দ্বিধায় তো পড়বেই…,
দ্বিধাদ্বন্দে কথোপকথনটা ধীরে ধীরে থেমে গেল। হুট করে নেমে আসা বর্ষার ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ যেমন খানিক পরেই থেমে যায়, তেমনি আলাপচারিতার অপ্রত্যাশিত এই উচ্ছাসও উবে গেল ক্ষনিকেই। তবে হাবিবের খুব ইচ্ছা করছে আরো কথা বলতে। অপ্রয়োজনীয় অহেতুক কথা বলতে। অহেতুক কথা বলা থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তবে অহেতুক কথা বলাই ভালো। কারন হাবিবের মন বলছে, ভালো কিছু হবে… বর্ষার হঠাৎ বৃষ্টি অল্পতেই থেমে যেতে পারে, তবে সে আবারো ফিরে আসবে, নিশ্চিতভাবেই ফিরে আসবে…