একটা রিক্সা আর ঝুম বৃষ্টির আশায় মধ্য দুপুরের গনগনে রোদ মাথায় করে দাড়িয়ে আছে সোমেন।ঘামে ভেজা শার্টটা পিঠের সাথে আটকে আছে বেয়াড়া ভাবে।বিরক্তি আর রোদের উত্তাপে কপালে বেশ কয়েকটা ভাঁজ।
তখনি হুট করে কে যেন ধাক্কা দেয়।লোকটার ঘামের বোটকা গন্ধ নাকে লাগে । পাসেই ছিল নালা।পরতে পরতে কোন মতে নিজেকে সামলে নিল সোমেন।জিবের ডগায় কয়েকটা গালিও এসে গিয়েছিল। পাশ থেকে কে একজন খুব জোড়ে হেসে উঠল।
সোমেন লোকটার দিকে তাকাতেই,হাসি থামিয়ে বলল,
-সবার মাঝে অনেক ব্যাস্ততা।কাকে কাকে দোষ দেব,বলুন?
কিছুটা অপ্রস্তুত সোমেন।পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মোছে।সামনে দাঁড়ানো মাঝারি উচ্চতার লোকটির দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
-মন্দ বলেন নি। আপনি?
হেসে হাত বাড়িয়ে দেন ভদ্রলোক।
-শাহরিয়ার,আপনি?
-সোমেন।কিছু মনে করবেন না, কেমন যেন চেনা মনে হচ্ছে আপনাকে?
-প্রশ্নই আসে না।সিলেট আজি এলাম।সাংবাদিক,আপনাদের হাসপাতালে কিছু কাজ ছিল…
দুজনের কথার মাঝেই একটি রিক্সা এসে থামে।সোমেন দরদাম করে নেয়।রিক্সায় চড়ে বলে,
-দুপুরটা বড্ড বেয়াড়া।নয়তো আপনার সাথে একটা আড্ডা দেওয়া যেতো।
জবাবে একটা ছোট হাসি দেয় শাহরিয়ার।
-আছি এখানে আর দিন দুয়েক।বলা যায় না হয়তো দেখবেন দেখা হয়ে গেল।
-কোন পত্রিকায় আছেন?
কিছু একটা বলে শাহরিয়ার।শুনতে পায় না সোমেন ,ততক্ষনে রিকশা বেশ কিছু দূর এগিয়ে গেছে।
এ ঘটনার দু দিন পর-
ঢাকায় যাচ্ছিল সোমেন।পারাবত এক্সপ্রেক্স।শেষ বিকেলের রোদ ধান ক্ষেতে কিংবা বিলের পানিতে এসে পরছিল।বেশ লাগছিল দেখতে।
-আরে সোমেন
পরিচিত কণ্ঠ কানে আসতেই ফিরে তাকায় সোমেন।শাহরিয়ারের হাসিমুখ দেখেই ভাল লাগে।
-বাহ্।দেখা হয়েই গেল।একা ট্রেন জার্নি মোটেও ভাল লাগে না আমার।
হেসে বলে সোমেন।
দুজনে মিলে চলে জম্পেশ আড্ডা । সমবয়সী বলে জমে যায় আড্ডা খুব অল্পেই। কথায় জানা যায়,দুজনের ছোট বেলা কেটেছে সিলেট।আপনি থেকে তুমিতে নেমে আসে তারা।
ট্রেন ঢাকায় পৌঁছবে রাত দশটায়।আটটার মত বাজে। বাইরে বেশ অন্ধকার করে আছে।অন্ধকারের নিস্তব্ধতা চিড়ে এগিয়ে যাচ্ছে ট্রেন।শেষ হয়ে আসা সিগ্রেট টা তুড়ি মেরে জানালা দিয়ে ফেলতে ফেলতে শাহরিয়ার বলে,
-জান সোমেন,খুব ছোট বেলায় অন্তু নামে একটা বেশ ভাল বন্ধু ছিল আমার।চেহারাটা আবছা,নাহ বেশ ভালই মনে আছে তার।
একসাথে খেতাম,খেলতাম।কত সুন্দর ছিল সময়টা।
চায়ের কাপটা সিটের নিচে ঠেলে দিয়ে,পকেট থেকে সিগ্রেটের প্যাকেট বের করতে করতে সোমেন বলে,
-তারপর?এখন কোন খোঁজ নেই?যোগাযোগ আছে?
-নাহ।আসলে শেষ বার যেদিন অন্তুর সাথে খেলছিলাম,কি কারনে যেন অন্তু আমার উপর খুব রেগে গিয়েছিল।বেশ জোড়ে একটা ঘুষি মেরে বসেছিল আমার পেটে।
-লেগেছিল খুব?
-আরে ধুর।পাঁচ বছরের একটা ছেলে কিবা জোড় ছিল হাতে
তবে আঘাত পেয়েছিলাম খুব, কাছের মানুষের থেকে পাওয়া আঘত তো।মনে খুব লেগেছিল।
-ও।
কি বলবে ভেবে পায় না সোমেন। শাহরিয়ার জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল।সেদিকে তাকিয়ে সিগ্রেট ধরাতে ধরাতে সোমেন বলে,
-আমার মনে হয় কি জান,এর জন্য নিশ্চয়ই সে কষ্ট পেয়েছিল।
-পেতে পারে।
শাহরিয়ারআরের দিকে সিগারেট টা বারিয়ে দিয়ে বলে,
-তারপর,তারপর কি হয়েছিল?
-রেগেমেগে আমি তো আর অন্তুর সাথে দেখাই করি নি।দুদিন পর শুনি তারা সেই বাসা বদলে চলে গেছে।তারপর কত বছর কেটে গেল।নাহ আর ওর দেখা পেলাম না।
-আচ্ছা ধর হঠাৎ অন্তুর সাথে দেখা হয়ে গেল।কি করবে?
হেসে ওঠে শাহরিয়ার।একমুখ ধোঁয়া ছেরে বলে,
-বেশ বলেছ তো।ভাবি নি কখনও।হয়তো পাল্টা ঘুষি চালাব।যেটা তখন করা উচিত ছিল।
বাদ দাও ভাই,তার দেখা আর পাব না।দেখলেও এখন চেনার প্রশ্নই আসে না।
হঠাৎ নিরব হয়ে যায় ট্রেনের কামরাটা।
ট্রেন এগিয়ে যায়,
রাত বারতে থাকে।ট্রেন দশটার একটু পরেই প্ল্যাতফরমে ঢোকে।আর সবার সাথে সোমেনরাও নেমে পরে।পেটে খিদে নিএ দুজন দুদিকে চলে যায়।ফোন নাম্বার রেখে দেয়।এক রাতেই দুজনে খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায়।
রাতের জার্নির ধকল কাটিয়ে বেশ বেলায় বিছানা ছাড়ে শাহরিয়ার।অভ্যাসবসত মোবাইলটা হাতে নিলে দেখতে পায় কেউ একজন টেক্সট করেছে,
“আরিফ, তুই ও নাম বদলে ফেলেছিস!আমার মতই।কত হ্যাংলা ছিলি।কিভাবে বুঝব এটা তুই?আমায় যে চিনিস নি তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস?ভাই মাফ করে দিস।তোকে খুজি নি,জানতাম পাব না।কিন্তু ভুলি নি তোকে,জানিস?ভাবছিস হয়তো, কাল কেন পরিচয় দেই নি?তোর ঘুসির ভয়ে। আসলে তুই কাল কথা গুল বলার পর এতটাই লজ্জা লাগছিল,বলে বোঝাতে পারব না।……… অন্তু ( সোমেন)”