ভূতের ভয় দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ

ভূতের ভয় দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ

আবূল কাশেম আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ বর্ণনা করেন, আমাকে কুফার কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন।

আদরা নামক এক ব্যক্তি কুফায় বসবাস করতো। সে অত্যন্ত সাহসী ও নির্ভিক ছিলো। কুফার নির্জন এলাকায় পথচারীরা এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেতো। রাতে দেখা যেত, অনেক উঁচুতে আগুনের লেলিহান শিখা দাউদাউ করে জ্বলছে। আগুন কখনো নিচে নেমে যেত।

লোকেরা এ দৃশ্য দেখে আতঙ্কে জমে যেত। বলতো জঙ্গলের ‘ভূত’। এক রাতের ঘটনা। আদরা কোনো প্রয়োজনে ঘোড়ায় চড়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। ঘটনাটা তাঁর মুখ থেকেই শোনা যাক, তিনি বলেন, ঘোড়ায় চড়ে যেতে যেতে যা দেখলাম তাতে ভয়ে শরীরের রক্ত হিম হয়ে গেল। অন্ধকারে দেখা গেল ভীষণ উঁচু  কালো রঙের একটা কিছু আর তাঁর উপরে আগুন। ভাবলাম, মনে সাহস সঞ্চয় করতে না পারলে ভয়েই হার্ট ফেল করে মারা যাবো।

সাহস জোগানোর জন্য চিন্তা করলাম এ নিশ্চয়ই কোন দুষ্ট জ্বীনের কাণ্ড অথবা চোখের ভেল্কি। একে পাত্তা দেয়ার কোন কারণ নেই। আমি আমার কাজে চলে যাই। আমি আল্লাহকে স্বরণ করে দোয়া দরূদ যা জানতাম সব পড়া শুরু করলাম। ঘোড়ার লাগাম শক্ত করে আঁকড়ে ধরে তাকে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলাম। ঘোড়ার পিঠে চাবুক চালালাম। ঘোড়া সামনে অগ্রসর হলো। লক্ষ্য করলাম কালো জিনিসটি আরো লম্বা হয়ে গেছে। ঘোড়া এ দৃশ্য দেখে আতঙ্কে লাফালাফি শুরু করলো।

আমি তাকে শান্ত রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। পুনরায় ঘোড়ার পিঠে চাবুক চালালাম। এবার ঘোড়া সেই বস্তুত দিকে এগিয়ে গেল। ঘোড়া তাঁর উপর হামলে পড়ার উপক্রম হলো।

অবাক হয়ে দেখলাম বস্তুটি ছোট হয়ে যাচ্ছে। ছোট হতে হতে মানুষের সমান হয়ে গেল এবং পালাতে শুরু করলো।

এবার আমার জিদ চেপে গেল। ঘোড়ায় চড়ে তাকে ধাওয়া করলাম। সে প্রাণপণ ছুটছিলো হঠাৎ সে একটি সরু গলিতে ঢুকে পড়লো। আমিও তাঁর পিছু নিলাম। সে ভূগর্ভস্থ একটি ঘরে প্রবেশ করে পালানোর চেষ্টা করলো। আমি দ্রুত ঘোড়া থেকে নেমে ঘোড়া বেঁধে রেখে তাকে অনুসরণ করলাম। কোমরের খাপ থেকে তরবারী কোষমুক্ত করে খুব সাবধানে এদিক ওদিক তাকিয়ে এক পা, দু পা করে এগুচ্ছিলাম। ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর অন্ধকার চোখে সয়ে আসলে আবছাভাবে তাকে দেখতে পেলাম। সে আমার উপস্থিতি টের পেয়ে পালাতে উদ্যত হলে আমি হিংস্র বাঘের মতো তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। বজ্র আঁটুনিতে তাকে শূন্যে উঠিয়ে বাইরে নিয়ে এলাম। সে হাত পা ছোঁড়াছুঁড়ি করে ছুটতে চেষ্টা করলো। কিন্তু ব্যর্থ হলো। বাইরের আবছা আলোয় এনে মুখের কাপড় সরিয়ে দেখলাম একটি মেয়ে।

আমি তলোয়ার উঁচিয়ে কঠিন গলায় হুঙ্কার দিলাম, বল তুই কে? নইলে এক আঘাতে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলবো।

তাঁর চোখে-মুখে মৃত্যু ভয় ফুতে উঠলো। আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো দোহাই আল্লাহর, আমাকে মেরে ফেলবেন না, সব বলছি। তারপর ধীরে ধীরে সে তাঁর কাহিনী বলতে শুরু করলো।

আমি অমুক গোত্রের বাঁদী। অনেক দিন আগে সেখান থেকে পালিয়ে এসে এই নির্জন জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছি। জীবিকার প্রয়োজনে মানুষকে এভাবে ভয়  দেখাই। যারা ভীত হয়ে সাথে থাকা মালপত্র ফেলে চলে যায়, আমি সেগুলো কুড়িয়ে এনে পরদিন বাজারে বিক্রি করে আমার জীবিকা নির্বাহ করি। লোকজন ভূতের ভয়ে এই নির্জন স্থানে আসার সাহস পায় না।

আমি তাকে ধমক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি যে বিকট কালো জিনিস আর আগুন দেখলাম সেটা কিভাবে করিস?

সে জবাব দিলো, আমার নিকট কালো রঙের বড় একটি চাদর আছে আর কয়েকটি লাঠি আছে।

প্রত্যেকটি লাঠি ফাঁপা। একটির ভিতরে অন্যটি ঢুকানো সম্ভব। চাদর লাঠির সাথে বেঁধে উঁচিয়ে ধরলে আধারে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সেই সাথে লাঠির মাথায় কয়েকটি মোমবাতি জালিয়ে দেই। দেখলে যে কারো পিলে চমকে যায়।

কয়েকটি লাঠি একটির সাথে আরেকটি জোড়া দিয়ে চাদর উঁচু করি। যদি নিচু করতে চাই তাহলে নিচ থেকে একটি লাঠি খুলে নেই। আবার উঁচু করতে চাইলে পুনরায় লাঠি লাগিয়ে দেই। এভাবে মানুষকে ভয় দেখিয়ে এতো বছর চলেছি। কিন্ত আজ পর্যন্ত আপনি ছাড়া কেউ আমার পিছু নেয়ার সাহস করেনি। আমি আপনার মতো সাহসী মানুষ আজ পর্যন্ত দেখিনি।

সে কথা শেষ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।

আমি তাকে ধরে এনে তাঁর মালিক পক্ষের হাওয়ালা করে দিলাম।

এ ঘটনার পর আর কখনো সে এলাকায় অদ্ভুত আগুন দেখা যায়নি।

গল্পের বিষয়:
অন্যান্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত