নির্জীব

নির্জীব

বিবাহিত জীবনের উপরে বিরক্তি এসে গেছে । খুব বেশিদিন হয় নি আমাদের বিয়ের । মাত্র ৬ মাস কাটিয়েছি এক ছাদের তলে ।
ঐন্দ্রিলার ব্যবহার , কথাবার্তা আজকাল সব পাল্টে গেছে । বিয়ের আগে ও বলত , ওর বরটাকে হতে হবে একটু পাগলাটে , একটু অগোছালো ,একটু ঝগড়াটে আর অনেক দুষ্ট ।

অথচ এখন পান থেকে চুন খসলেই কথার তীর ছুটে আসে । একটু দেরি করে বাসায় ফিরলে হাজারটা কৈফিয়ত দিতে হয় ।

কথায় কথায় রাগারাগি , মান অভিমান , ওর ভাত না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া সব কিছু খুব অসহ্য লাগে । মনের সুখে সিগারেটে টান দিতে গেলেই ওর বকাবকি । কাপড় চোপড় গুছিয়ে রাখা , জুতোগুলো ঠিক জায়গায় রাখা অভ্যাস করতে হয়েছে ।

ফোনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেলে ওর বাঁকা চাহনি সব আজকাল অসহ্য লাগে । আমি আবার সেই আগের তপু হতে চাই । চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে ফিটফাট হয়ে মেয়েদের সামনে সেই একটা ভাব নিতে চাই , আবার চার পাঁচটা মেয়ের সাথে লাইন মারতে চাই ।

টং দোকানে চা খেতে খেতে মেয়েদের দেখে অশ্লীল কথা বলতে চাই , বন্ধুরা মিলে জনপ্রিয় কোন গানের অশ্লীল প্যারোডী করতে চাই । আবার আমি গাঁজার নেশায় বুঁদ হতে চাই ।

ঐন্দ্রিলা আমার জীবনে আসার পর থেকে লাইফটা নিরামিষ হয়ে গেছে । আমাকে আবার স্বাধীন হতে হবে । তাই ওকে সরিয়ে দিতে হবে ।

ঐন্দ্রিলাকে আমি খুব ঘৃণা করি এখন ।

ওকে আমি খুন করব । ওকে খুন না করলে আমার মনে শান্তি আসবে না । তবে খুব ঠান্ডা মাথায় । খুব যত্ন করে প্ল্যান করতে হবে যেন দেখে সবার মনে হয় স্রেফ দুর্ঘটনা । ঐন্দ্রিলা আর আমি দুজন ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়েছি । আমার সাবজেক্ট ছিল এপ্লায়েড ফিজিক্স আর ওর কেমেস্ট্রি ।

তবে আমাদের দুজনের বাসা কাছাকাছিই ছিল । হঠাত্ করে একদিন দেখা , ভালোলাগা আর ভালোবাসা । তারপর একদিন হুট করেই বিয়ে করে ফেলা । ততোদিন অবশ্য দুজনেই জব করি ।

ঐন্দ্রিলা কে খুন করার প্ল্যান রেডী । ইলেকট্রিক আয়রন মেশিনটার তারের ইনসুলেশন কিছু জায়গায় ড্যামেজ করে দিয়েছি । ও আয়রন করার সময় কোন ভাবে তারে হাত লাগলেই শক খাবে । তারপর আসবে আমার মুক্তি ।

এই খুশিতে ঠিক করলাম ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে শেষ বারের মত একটা ভালো রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে যাবো ।
– ঐন্দ্রিলা , চলো সারিন্দায় যাই ।
– হঠাৎ সারিন্দায় কেনো ?
– এমনি । যাবা ?
– যাব । তবে একটু দেরি হবে । শাড়ি পরে আসি
– এখন থাক শাড়ি । এসে আমার নীল শার্টটা আয়রন কোরো । আজকে সালোয়ার কামিজ পরেই চলো।
..
..
..
ও ভিতরে চলে গেল । তারপর দেখলাম কার সাথে যেন ফোনে কথা বলল । ওকে আজ অনেক দিন পর খুশি লাগছে । অথচ ও জানেই না কি অপেক্ষা করছে ওর জন্য ।
রেস্টুরেন্টে দুজন বেশ খাওয়া দাওয়া করলাম । বের হয়ে দুজন ফুটপাত ধরে হাঁটছি ।হঠাৎ করে শরীরটা বেশ দুর্বল লাগছে ।
– আই এ্যাম সরি তপু !
– কেন ?
– তুমি – আমি দুজন দুরকম মানুষ । দেড় বছরের এফেয়ারেও আমি তা বুঝে উঠতে পারি নি । আমি সরি।
– পুরানো কথা তুলে লাভ কি ?
– ডা. তাহসানকে মনে আছে ?
– হুম । তোমার কাজিন ?
– হ্যাঁ । তোমাকে এখন নিয়ে যাবো তার কাছে ।
– কেন ? কোথাও যাবো না । শরীর খারাপ লাগছে । বাসায় চলো।
– তপু , তোমার পোলাও এর সাথে আর্সেনিক মেশানো ছিল । আর অল্প কিছুক্ষণ বাকি তোমার আয়ু !!
– হোয়াট ??
– তোমাকে আর সহ্য হচ্ছিল না । ডিভোর্স নেয়া যেত , কিন্তু ইচ্ছে হলো না ।
তোমাকে খুন করার স্বাদ হলো ।
তোমার মৃত্যুর পর তাহসানকে বিয়ে করব । আর ওই তোমার ডেথ সার্টিফিকেট দিবে ।
আর্সেনিকে কারো মৃত্যু হওয়ার আগে সাধারণ রোগের মত উপসর্গ দেখা যায় । তাই সবাই মনে করবে সাধারণ
কোন রোগে মারা গেছ তুমি ।
আমাকে সন্দেহ করবে না কেউ । ইটস্ সিম্পল !
_____________________ গতকাল তপুর লাশ সৎকারের ব্যবস্থা হয়ে গেছে ।
তাহসানপুলিশকেও ম্যানেজ করেছে । সব কিছু প্ল্যান মতোই হয়েছে । তপুকে আমি সত্যি ঘৃণা করতাম । গত ছয়মাসে ওর প্রতি ভালোবাসা কর্পুরের
মত উবে গিয়ে তার জায়গা নিয়েছে ঘৃণা ।ওর অবহেলা ই এর মূল কারণ । তপুর নীল শার্টটা পড়ে আছে খাটে ।
ওর খুব প্রিয় ছিল শার্টটা । ধুয়ে রেখেছি । শার্টটা আয়রন করে রাখা দরকার ,এসব
কথা একমনে ভাবছিল ঐন্দ্রিলা । ======================
ঐন্দ্রিলা তপুর শার্টটা আয়রন করতে শুরু করল । ওর মনে পড়ে গেল ওদের বিয়ের দিন এই শার্টটাই পরেছিল তপু !!
হঠাৎ করে ঐন্দ্রিলার সারাশরীর কেঁপে উঠল প্রচন্ডভাবে । তারপর নিথর হয়ে গেল তার দেহ।

গল্পের বিষয়:
অন্যান্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত