রক্তের বাঁধন

রক্তের বাঁধন

অনেকক্ষন যাবত কলিং বেল চাপছি,কেউ দরজা খোলার নাম ই নাই।
আজকেই এই বাসায় প্রথম আসলাম।কাগজে প্রাইভেট পড়ানোর
বিজ্ঞাপন দেখেই যোগাযোগ করি,কথাবার্তা বলে সব ঠিক
করে চলে আসলাম এই বাসায়।কিন্তু কলিং বেল চাপতে চাপতে
মেজাজ গেল খারাপ হয়ে,ধুর বলে যখন ই চলে যেতে
নিবো,ঠিক তখনই একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দিলো।কিন্তু
মেয়েটাকে দেখে কেমন জানি লাগলো।
মেয়েটার বয়স তেমন হবেনা,এই আঠারো উনিশ।কিন্তু
মেয়েটা সাদা শাড়ী পড়ে আছে।মুখটাও কেমন জানি ফ্যাকাশেঁ।
দেখে মনে হচ্ছে কেউ তার মনের সব রং চুরি করে নিয়ে
গেছে।
দরজা খুলে মেয়েটা কোন কথাই বলল না, ভিতরে চলে গেল।
আমিও তাকে অনুসরন করতে লাগলাম।
.
তিনটা রুম পরে কর্ণারের একটা রুমে ইশারা করে আমাকে
যেতে বলল।
ওই রুমে গিয়েই দেখি একটা বাচ্চা মেয়ে টেবিলে বসে
আছে,বয়স ৯-১০ হবে।
আমি রুমে ঢুকতেই সালাম দিয়ে দাড়িয়ে পড়লো।
আমি ও সালামের উওর নিয়ে বসে পড়লাম।আর ওকেও বসতে
বললাম।
তবে আমি নিজেও এখন একটু অন্যমনস্ক,আমার ভাবনায় শুধু সেই
সাদা শাড়ী পড়া মেয়েটা।
মেয়েটা দেখতে অস্থির সুন্দর।কিন্তু সে এমন চুপচাপ কেন,
তা জানতে মনটা ব্যকুল হয়ে আছে।
ছাত্রীকে বললাম…
—আগে পরিচয় পর্বটা শেষ করি কেমন??
—-আচ্ছা স্যার।
—-একটা কথা বলো তো,এখন তো বছরের জুলাই মাস
চলছে,আগের ছয়মাস কি তুমি প্রাইভেট পড়োনি??
—-পড়েছি।
—-কার কাছে?আর হঠাৎ কেন টিচার পরিবর্তন করলা?তুমি কি
জানো,এটা তোমার জন্য ক্ষতিকর।
—-হুম স্যার জানি।কিন্তু আগে যে স্যার আমায় পড়াতো তিনিই আমার
রায়হান ভাইয়া।আমার আপুর স্বামী।
কথাটা শুনে আমি একটু অবাক হলাম।
বললাম…
—-এখন পড়োনা কেন?
—-আসলে ভাইয়া একটা এক্সিডেন্টে ২মাস আগে মারা গেছে।
তার পর থেকেই আপু এমন চুপচাপ হয়ে গেছে।
প্রথম একমাস আপু হসপিটালে ভর্তি ছিল।এখন বাসায় ই আছে।তবে
কারো সাথেই কথা বলে না।এখন অল্প অল্প বলে,তাও দরকার
পড়লে বলে।জানেন স্যার আমাদের এত বিশাল বাড়ির মধ্যে
আমরা মাত্র তিনজন থাকি।তাও আব্বু সারাক্ষন অফিসেই থাকে।আর
আপুতো তার বেডরুম আর বেলকনি ছাড়া আর বের ই হয় না।আমি
যতক্ষণ স্কুলে থাকি,ততখন ই ভালো লাগে।বাড়িতে ভালোই
লাগেনা।
—-আচ্ছা তোমার নামটাই তো জানা হলো না?
—-আমার নাম,আশফি রহমান হাসি।
আর আপুর নাম তানিয়া রহমান খুশি।
জানেন স্যার,আপু নাকি ছোটবেলায় খুবই হাসতো তাই ওর নাম রাখা
হয়েছিল খুশি।বলেই হেসে দিল।কথাগুলো শুনেই কেমন জানি
মনটা খারাপ হয়ে গেল।
মনে মনে ভাবতে লাগলাম,যদি এই খুশির খুশি ভরা মুখটা আবার
ফিরিয়ে দিতে পারতাম।যদি তার সাদা কালো জীবনটাতে আবার
রঙের ছোঁয়া দিতে পারতাম??তবে দেখা যাক কতদূর করা যায়।
.
হাসির ডাকে কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরলাম…
—-এই স্যার, স্যার,,,,
—-হুম বলো।
—-কি এত ভাবছেন আপনি??
—-কিছু না তো।বলো।
—-আপনার নামটাই তো জানা হলো না।
—-আমার নাম আকাশ।
—-স্যার,আপনার বাসায় কে কে আছেন??
—-কেউ নাই।ছোটবেলায় একটা রোড এক্সিডেন্টে মা বাবা
দুজনই মারা গেছেন।তখন থেকেই আমি আমার মামার বাসায় ছিলাম।
তিনি ই খরচ দিতেন,পড়ালেখা করিয়েছেন,বাবার আত্মীয় স্বজন
কেউ কোন খোজঁ নেয় নি।অনার্সে ভর্তি করে দেওয়ার
পরে আমার আর কোন খরচ মামা দিতো না।
তখন থেকেই আমার পড়াশোনার খরচ আমিই চালাই।আমি একটা পার্ট
টাইম জব করি আর এইবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি।মামা মামীর
সাথে এখন কোন সম্পর্ক নেই।কারন মামী আমাকে একদমই
পছন্দ করেন না।মামা তাও আমায় এতদুর পড়ালেখা করিয়েছেন।
কিন্তু মামীর কথায় মামা ত্যক্ত হয়ে আমায় চলে যেতে বলেন।
আমিও চলে আসি,আর কতদিন তাদের ঘাড়ে পড়ে খাবো।তাই
চলে এসেছি।
.
হাসি শুধু হা হয়ে আমার কথা গুলো শুনছিলো।আমি হঠাৎই আড্ডা
দেওয়ার মজাটা নষ্ট করে দিয়ে বললাম….
—-গল্প অনেক হলো এইবার বই খুলো।
—-স্যার,স্যার।প্লিজ আজকে কিছুই পড়বোনা।
—-কেন??
—-(একটু মুচকি হেসে বলল)আজকে তো আমাদের পরিচয়
পর্ব চলবে।
আমি ও হেসে দিলাম।
—-আপনি কি জানেন,যারা আমাকে প্রাইভেট পড়াতো বা পড়াবে,
তারা সবাই আমাদের বাসায় থেকে পড়াতো ও পড়াবে।আপনার ও
আমাদের বাসায় থেকেই পড়াতে হবে।
—-হুম।আমি জানি।
.
প্রথম দিনটা পরিচয় হওয়া আর গল্প করেই কাটিয়ে দিলাম।
পরের দিন আমার ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে আসলাম হাসিদের বাড়ি।
আমি হাসিকে অফিস থেকে আসার পর সন্ধায় পড়াই।আজ
হাসিকে পড়ানো শেষ করে রুমে যাওয়ার সময় দেখি খুশি
বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।স্পষ্ট না দেখলেও,মনে হচ্ছে
ও চোখ মুছতেছে।তার মানে ও কাদঁছে।কি করব বুঝতে
পারছিলাম না।
ওর কাছে গিয়ে বললাম….
—-আসতে পারি??
খুশি আমার দিকে তাকিঁয়ে একটু অপ্রস্তুত ভাবে বলল….
—-জ্বী আসুন।
আজকে তিনদিন হলো এই বাসায় আছি।তবে আজকেই প্রথম
মেয়েটির কন্ঠস্বর শুনলাম।
মেয়েটির কন্ঠও মেয়েটির মতই অস্থির সুন্দর।আমি কাছে
যেতেই ভালো করে চোখ দুটো মুছে নিলো।কিন্তু গালে
কান্নার ছাপ টা স্পষ্ট লেগে আছে।আমি বললাম…
—-আপনি এখানে একা দাড়িয়ে আছেন যে??
—-এমনি ই দাড়িয়েঁ আছি।আর আপনি হঠাৎ এখানে??
—-এমনি মনটা ভালো না,আর হাসিকে পড়িয়ে রুমে যাচ্ছিলাম।
দেখলাম আপনি একা দাড়িয়ে আছেন তাই আসলাম একটু আড্ডা
দিতে।
—-আমার ভালো লাগছে না,আমি আসছি,বলেই রুমে চলে
গেল।
কি অদ্ভুদ মেয়েরে বাবা!!!!স্বামী মারা গেছে বলে কি কারো
সাথেই কথা বলা যাবেনা নাকি?
ধুর। বলেই রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
-.
ওদের বাসায় ভালোই যাচ্ছে দিনগুলি।
হাসির সাথে ভালোই বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
কিন্তু খুশি টা কে কোন মতেই খুশি করতে পারছিনা।তবে এখন
আগের চেয়ে অনেকটা স্বাভাবিক।আগে তো প্রশ্ন
করলেও উত্তর দিতো না।এখন প্রশ্ন করলে উত্তর দেয় আর
হাসি কে পড়ানোর সময় পাশে বসে থাকে।
এখন নাকি তার একা থাকতে ভালো লাগেনা।এটা একটা ভালো
লক্ষণ।
.
প্রায় তিন মাস হয়ে গেল হাসি কে পড়াচ্ছি।খুশির মানসিক অবস্থা এখন
অনেক ভালো।এখন ভার্সিটিতে ও যায়।
খুশি এইবার অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী।স্বামী মারা যাওয়ায় মেয়েটা
পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়,কিন্তু এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।
তবে মনে হয় ওর মনের কষ্ট টা মনেই রয়ে গেছে।
মাঝে মাঝে কেমন জানি চুপচাপ হয়ে যায়।
ভার্সিটি যাওয়ার দিনগুলি ছাড়া বাকি দিনগুলি দরজা আটকে বসে থাকে।
এখনো সাদা শাড়ী পড়ে থাকে।
ভালো লাগেনা একদম।কি ভুত চাপে মাথায় ও ই জানে।
.
একদিন আমার খুব জ্বর হলো।বিকেলে অফিস থেকে আসার
পর থেকেই শুয়ে আছি।হাসি কে পড়াতেও যাই নি।
রাত ৯টার পর হাসি খুশি দুজনই আমার রুমে আসলো।তাদের রুমে
আসতে কোন সমস্যাই হলো না কারন আমার রুমের দরজা কখনই
লক করা থাকেনা।
আমাকে ডাকতেই আমি খুব কষ্টে উঠে বসলাম।হাসি বলল..
—-স্যার আপনার কি শরীর খারাপ?আজকে পড়াতে আসলেন না
যে??
—-হ্যঁ কিছু টা অসুস্থ।
কথা বলা শেষ করতেই হাসি কাছে এসে,কপালে হাত দিয়ে
বলল….
—-ওরে বাবা,,,আপুরে স্যারের তো অনেক জ্বর।হাসি জ্বর
কথাটা বলতেই খুশি বলল…
—-তুই বসে থাক তোর স্যারের কাছে,আমি আসছি।বলে বাইরে
চলে গেল।একটু পর খুশি হাতে একটা ঔষধের বাক্স আর বালতি
ভরে পানি নিয়ে এলো এবং সাথে কিছু খাবার।
পরে আমার মাথায় পানি ঢালতে লাগলো।এমন করতে করতে ঘড়ির
দিকে তাকিয়ে দেখি রাত বারো টা বাজে প্রায়।
আমি বললাম…..
—-আপনার রুমে যান।ঘুমিয়ে পড়ুন না হলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন
তো।ততক্ষনে হাসি আমার বিছানাতেই ঘুমিয়ে পড়ছে।
খুশি বলল…..
—-আপনি আগে খাবার ও ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন তবেই আমি
চলে যাবো।
আপনি এখন আমাদের বাসায় থাকেন।
আপনার ভালোমন্দ দেখাটা আমাদের দায়িত্ব।আমি খাবার খেয়ে
ঔষধ খাওয়ার পর খুশি রুম থেকে হাসিকে কোলে নিয়ে রুম
থেকে বের হয়ে যায়।এই সাদা শাড়ী পড়া গম্ভীর মেয়েটার
মনে যে এত দয়ামায়া আছে তা আজ টের পেলাম।
.
পাঁচদিন পর আমি সুস্থ হলাম।এই পাঁচটা দিন হাসি ও খুশি দুজন ই আমার
অনেক সেবা করেছে।সুস্থ হওয়ার পর অফিসে গিয়ে জানতে
পারলাম আমার চাকরি টা আর নেই।পাঁচ দিন অনুপস্থিতির কারনে চাকরিটা
চলে গেছে।মনটা খুবই খারাপ।পড়াশোনার খরচ,খাওয়ার খরচ সব
তো আর প্রাইভেটের বেতন দিয়ে হবেনা।কি করবো কিছুই
ভেবে পাচ্ছিলাম না।পড়ানোর সময়ও মন খারাপ ছিলো।আমার মলিন
মুখ দেখে হাসি কি হয়েছে তা জানতে চায়,প্রথমে বলতে না
চাইলেও পরে হাসি কে সব খুলে বললাম।ও বলল,খুশি কে।আর
খুশি গিয়ে বললো ওর বাবাকে।
পরের দিন ওর বাবা রহমান সাহেব আমাকে ডেকে পাঠালেন।কুশল
বিনিময় ও হাসির পড়ালেখার খোজঁখবর নেয়ার পর তিনি বললেন….
—-বাবা আকাশ, শুনলাম তোমার নাকি জবটা চলে গেছে?
—-জ্বী আঙ্কেল,জ্বরের কারনে পাচঁদিন যেতে পারি নি,তাই
চাকরিটা চলে গেছে।
—-সমস্যা নেই, তুমি চাইলে আমাদের কোম্পানিতে জয়েন
করতে পারো।
এতে তোমার ও আমাদের সবার ই ভালো হবে কারন
তোমাকে এখন আমরা আমাদের পরিবারের ই একজন ভাবি।
.
আঙ্কেল আমার জন্য এতটা করবেন তা ভাবতে পারি নি।উনার মনটা
আজ ভালো,তাই ভাবলাম আজ তাহলে কথাটা উনাকে বলে ই দেই।
খুশি কে সেই প্রথমদিন থেকে ই পছন্দ করি,যা এতদিনে
ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে।কিন্তু খুশি কে কথাটা জানাই নি,কারন ও
কখনোই এটা মেনে নিবে না।তাই আঙ্কেলকে সবকিছু বলার
সিদ্ধান্ত নিলাম।আমি খুব সাহস নিয়ে তখনই বলে ফেললাম…..
—-আঙ্কেল আপনাকে একটা কথা বলতে চাই যদি অনুমতি দেন ও
রাগ না করেন।
—-অনুমতি নেয়ার কি দরকার বাবা,তুমি নিশ্চিন্তে বলো,আমি রাগ
করবো না।
—-আপনি যদি রাজি থাকেন তো আমি খুশি কে বিয়ে করতে চাই।
কথাটা শুনে উনি খুবই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন।উনি আমার
অতীত বর্তমান সবই জানতেন।উনি বললেন….
—-না বাবা,,তা হয়না।
—-কেনো হয়না আঙ্কেল?আমি খুশি কে খুব ভালো রাখবো।
আমি তার অতীত টা ভুলিয়ে দিবো।কোন কষ্ট পেতে দিবো
না,ওর কষ্টগুলো দুর করে ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে
আনতে চাই।দয়া করে আমায় ফিরিয়ে দিবেন না।
অনুনয় করে কথাগুলো বললাম।আমার আকুতি দেখে পরে উনি
বললেন…
—-আচ্ছা ঠিক আছে আমার কোন আপত্তি নেই,,,খুশি যদি রাজি
থাকে,তবে আমার কোন সমস্যা নেই।প্রয়োজনে তুমি
সারাজীবন আমার মেয়েকে নিয়ে আমার বাড়িতেই থেকে
যাবা।কিন্তু খুশি কি রাজি হবে?
আমি বললাম….
—-খুশি কে রাজি করার দায়িত্ব আমার।
বলে উনার রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।
.
পরের দিন সকালে,খুশির ডাকেই আমার ঘুম ভাঙলো।ঘড়ির দিকে
তাকিয়ে দেখি ১০টা বেজে গেছে।
তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম।
—-আপনি আমার রুমে???
—-হুম আমি।কি শুরু করেছেন আপনি হা?আমি এমন কিছু কিন্তু
আপনার কাছ থেকে আশা করিনি।
আমার বুঝতে আর বাকি রইলো না খুশি কি বলছে।আমি বললাম
—-কেনো?তাতে কি হয়েছে??আপনি একজন বুদ্বিমতি এবং
যথেষ্ট শিক্ষিত মেয়ে।আপনি কি এটা বুঝেন না যে মানুষ একদিন
মারা যাবেই।তবে কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকেনা।
জীবনকে একটা সুযোগ দিতে হয়।এভাবে নিজেকে কষ্ট
দেয়ার কোনো অধিকার আপনার নেই।
এটা শুনে ও বলল….
—-কিন্তু আমি তো রায়হানকে কথা দিয়েছিলাম জীবনসঙ্গী
হিসেবে ও কে ছাড়া আর কাউকেই গ্রহন করবোনা।সেটার কি
হবে?
—-হুম বুঝলাম।
কিন্তু আপনি তো রায়হান থাকাকালীন নতুন কাউকে গ্রহন করেন
নি,আপনার বাচাঁর জন্য একটা আশ্রয় দরকার।আমি আপনার আগের খুশি
খুশি মুখটা আবার দেখতে চাই।
আপনার সাদা কালো জীবনটাতে আবার ও দিতে চাই রঙের
ছোঁয়া।খুব ভালো রাখবো আপনাকে,কখনো কষ্ট পেতে
দিবো না,প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।
.
তারপরও খুশি রাজি হতে চায় নি।পরে হাসি ও রহমান আঙ্কেল
অনেক বুঝানোর পর খুশি নিমরাজি হয়।জানি ওর হয়তো মন
থেকে আমায়
মানতে সময় লাগবে,কিন্তু মেনে ও নিবে ই।
আজকে আমাদের বাসর রাত।রুমে ঢুকতেই দেখি খুশি চোখ
মুছছে।ব্যাপারটা দেখে আমার খুব কষ্ট লাগলো।আজকে
আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন আর ও কিনা কাঁদছে।আর
ওর ই বা কি দোষ?চাইলেই তো আর এত সহজে অতীত কে
ভুলে বর্তমান নিয়ে ভালো থাকা যায় না।
আমি আস্তে করে গিয়ে ওর পাশে বসলাম।
হাতটা ধরে বললাম…..
—-জানো খুশি।আজকে তোমাকে কত সুন্দর লাগছে??
ও চুপ করে বসে রইল।কিছুই বলছেনা।বুঝলাম এভাবে হবে
না,অন্যভাবে বলতে হবে,তাই আমি বললাম…..
—-জানি তুমি রায়হান কে ভুলতে পারছোনা।কিন্তু জানো
তো,অতীত অতীতই।যা কখনই ভবিষ্যৎ হতে পারেনা।
বুঝতে পারছি তোমার জীবনে একটা দুঃখজনক অতীত ঘটে
গেছে,তাই বলে কি তুমি ওটার কথা ভেবে বর্তমানের সুখের
সময়টা নষ্ট করবে?তুমি কি এখন ওইসব মনে করে এমন কাউকে
কষ্ট দিবে,যে কিনা সর্বদা তোমাকে খুশি দেখতে ব্যস্ত?এখন
আমি তোমার জীবনে আছি,তোমার সব দায়িত্ব আমার।এরপরও
যদি তোমার মনেহয় যে তুমি আমায় মেনে নিতে পারবে না
তাহলে কথা দিচ্ছি কখনো তোমার সামনে আসবো না,বহুদুর
চলে যাবো।
কথাটা বলার সাথে সাথে চোখের পানি মুছতে মুছতে আমাকে
জড়িয়ে ধরে বললো…….
—-আমি পারছিনা আকাশ,রায়হান কে ভুলতে।
কি করবো আমি?ও যে আমার প্রথম ভালোবাসা।কিভাবে ভুলবো
বলো।
বলে অঝোরে কাঁদতে লাগলো
আমি আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম…..
—-জানি প্রথম ভালোবাসা কে ভোলা যায়না।তবে আমি চেষ্টা
করবো ভুলিয়ে দিতে।প্রথম ভালোবাসার স্তরটা ঢেকে দিবো
আমার ভালোবাসার চাদর দিয়ে
জানোই তো কারো জীবনে প্রথম ভালোবাসা হওয়াটা তেমন
কঠিন কিছু না।তবে কারো জীবনে শেষ ভালোবাসা হওয়াটা
সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
সব শুনে খুশি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে
লাগলো।আমি বাধা দিলাম না,কাদুঁক,, আর কখনো কাঁদতে দিবো না
মেয়েটাকে।
.
আজকে আমাদের বিয়ের এক বছর হয়ে গেছে।এখন প্রতিদিন
আমার খুশির খুশি মুখটা দেখেই ঘুম থেকে জাগি আবার রাতে
ঘুমিয়ে পড়ি।সুখে ই কাটছে আমাদের দিনগুলি।

গল্পের বিষয়:
অন্যান্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত