মেয়েটির নাম লিজা, পছন্দ করত একটি ছেলেকে। সেই নবম দশম শ্রেণী থেকে একজন আরেক জনকে দেখে আসছে।
.
ছেলেটির জব না থাকায় মেয়েটির বাবা মা ছেলেটির সাথে মেয়েটির বিয়ে দেয় নি। ছেলেটি অনেক বার বলছিল, আমাদের একটি সুযোগ দিন প্লিজ। আমি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই একটি চাকরি নিব। আর আমরা নিজেদের সুন্দর করে গুছিয়ে নিতে পারব।
.
মেয়েটির বাবা মা রাজি হয় নি। ভবিষ্যতে কে কি হবে হয়তো কেউ হয়তো তা কেয়ার করে না। সবাই বর্তমান চায়। বর্তমানে কার কি আছে তা নিয়েই বিচার করে। অথচ সবাই ভবিশ্যৎ এর দিকেই যায়।
.
মুহিরের ছোট্ট একটি ফার্ম আছে গুলশানে। সকাল বিকাল অফিস। আর এর পর বাসায়। মাঝে মাঝে এখানে সেখানে বন্ধুদের দাওয়াতে অংশগ্রহন। এভাবেই চলছিল। মা বাবা চিন্তা করল এবার মুহিবের জন্য পাত্রী খোজা দরকার।
.
কথার ফাঁকে মুহিবের আম্মু একদিন জিজ্ঞেস করল, তোর পরিচিত কোন মেয়ে আছে? মানে তোর পছন্দের কেউ?
.
মুহিব আনমনা হয়ে গেলো। অনেক আগের সৃতি থেকে একটি মুখ বেসে উঠল। সাদিয়া,সাদিয়া নাম তার। তাদের সাথে একই ক্লাসে পড়ত। সেই নবম দশম শ্রেণীর সৃতি। বই এর দিকে না তাকিয়ে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগত। ভালো লাগত তানিয়া কি করে এসব দেখতে। চুপটি করে বসে বসে দেখতো। বন্ধুরা বুঝতে পারলো মুহিব সাদিয়াকে পছন্দ করে। মুহিব স্বীকার করল। বন্ধুরা শুনালো হতাশার খবর। বলল আরে, সাদিয়া তো রাশেদের সাথে প্রেম করে… যদিও তখনো মুহিব বুঝত না আসলে প্রেম মানে কি। তবে জানল সাদিয়া আর রাশেদ এক সাথে স্কুলে আসত, এক সাথে যেতো। মাঝে মাঝে বন্ধের দিনে সিনেমা দেখতেও যেতো। ঐ দিন আবিরের মন খারাপ হয়েছিল। ভীষন মন খারাপ। এর পর থেকে মুহিব ক্লাসে আসত, ক্লাস করে চলে যেতো। বন্ধুদের সাথেও তেমন আর মিশত না…
মুহিবের আম্মু চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটালো। বলল মুহিব…
মুহিব বলল না মা, নেই… তোমরা দেখো।।
.
মুহিবের আম্মু অনেক মেয়েই দেখছে। তার মধ্যে যাদের পছন্দ হয়েছে মুহিবকে তাদের ছবি দিয়ে দেখতে বলল। মুহিব বলল তোমাদের পছন্দ হলেই হবে… তোমরা পছন্দ কর।
তাদের পছন্দ হয়েছে যাকে তার ছবি মুহিব কে দিয়ে বলল দেখ, পছন্দ হয় কিনা। মুহিব বলল হয়।
.
মুহিব সহ একদিন মেয়েটির বাড়ি গিয়ে দেখে আসল। বিয়ের দিন ঠিক করে আসল।
তারপর বিয়ে। খুব সুন্দর ভাবে বিয়েটি সম্পুর্ন হলো।
.
রাজ কন্যা ঘরে আসল। রাজ কন্যার নাম মাহি।
.
রাজকন্যা ঘরে এনে মুহিবের আম্মু খুশি। মুহিবও অখুশি নয়। অফিসে অন্যদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে একফাঁকে ঘুরে আসল কক্সবাজার থেকেও।
মুহিব অফিসে যেতে সাহায্য করা। অফিস থেকে আসলে এক সাথে বসে খাওয়া দাওয়া করা। বিকেলে বারান্দায় বসে গল্প করা, এক সাথে বসে বিকেলের চা বা কফি খাওয়া, মাঝে মাঝে এক সাথে বাহিরে শপিং করতে যাওয়া, শপিং করা শেষে কোন রেস্টুরেন্টে বসে লাঞ্চ বা ডিনার করা, সবই চলছিল সুন্দর মত।
.
একদিন মুহিবের হাতে ছোট্ট একটা ফোসকা উঠল। মাহিকে দেখালো। মাহি অভাক হয়ে বলল, আরে ডাক্তার দেখাও না কেনো! আজই ডাক্তারের কাছে যাবে। মুহিব বলল, আরে কিচ্ছু হবে না। ঠিক হয়ে যাবে।
.
হাতে ফোসকাটা কমার পরিবর্তে বাড়তে লাগল। চারপাশে আরো কয়েকটা উঠল। পায়েও উঠতে লাগল কয়েকটা। এবার মুহিব ভয় পেলো। ডাক্তারের কাছে গেলো। ডাক্তার কত গুলো ঔষধের পাশাপাশি এক গাদা পরীক্ষা ধরিয়ে দিল।
.
পরীক্ষা গুলো করিয়ে মুহিব ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখালো। সাথে ছিল মাহি। ডাক্তার বলল রক্তে আর্সেনিক ধরা পড়েছে। আর আর্সেনিকের জন্যই এ ফোসকা গুলো উঠেছে।
.
মুহিবের শরীরে ফোসকা গুলো বাড়ছে। আর তীব্র ব্যাথা। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়ছে।
.
আজ সৈকতের বিয়ে। সৈকত হচ্ছে ঐ ছেলেটি, যে মাহিকে প্রচন্ড ভালোবাসত। যে ছেলেটির এক বছর আগেও কিছু ছিল না আজ সে গাড়ি বাড়ি করে বিয়েও করতে যাচ্ছে। আজ তার সব কিছু আছে, শুধু মাহি নেই।
.
মাহি এখন আরেক জনের বউ। আর সৈকত ও আজ অন্য আরেকটি মেয়েকে ঘরে তুলতে যাচ্ছে। আচ্ছা, তার পরিনতিও কি মাহির মত?
.
মাহি তার এক বান্ধবীর কাছ থেকে শুনল সৈকতের বিয়ে হচ্ছে। শুনে তার মনে কেমন হাহাকার করে উঠল। সব কিছু শূন্য হয়ে গেলো তার কাছে। পৃথিবীটাই শূন্য।
.
মুহিব হাসপাতালে মৃত্যু সয্যায়। তাতেও এতদিন তার খারাপ লাগে নি। উলটো ভালো লেগেছে। বিয়ের কয়েক দিন পর থেকেই মাহি ম মুহিবের কফি বা চায়ের সাথে অল্প অল্প করে আর্সেনিক মিশিয়ে আসছিল। বিজ্ঞানের ছাত্রী হওয়াতে সে জানল আর্সেনিক মানুষের শরীরে আস্তে আস্তে বিষের মত কাজ করে এবং যা কোন ঔষধে পুরাপুরি নিরাময় সম্ভব হয় না।
.
বিয়ের পর থেকেই সৈকতের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করত মাহি। সৈকত দূরে সরে থাকত। প্রথম প্রথম সৈকতের অনেক কষ্ট হয়েছিল। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে শরীর কাষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পরে সব কিছুই নিয়তি মনে করে মেনে নিয়েছিল সব কিছু। যা হয়েছে তা ভুলে সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।
.
আর মাহি? সৈকতের জন্য একজনকে ঠান্ডা মাথায় খুন করতে চলছে। যার ঘড়িটি ঘাড়ের উপর টিক টিক করে বেজে চলছে। যে কোন সময়ই লোকটি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে।
.
আজ সে এদিকেও যেতে পারবে না, ঐদিকেও যেতে পারবে না। দরজা গুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে তার জন্য। তার মন আজ আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছে। যার প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয় নি। যে কোন সময় তার মন শরীর থেকে বিদায় নিবে। যে শরীরে কোন মন নেই, সে শরীরের কোন দাম ও নেই