মায়াবিনী

মায়াবিনী

রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আয়ান! আজ আবার সেই মায়্যা ভরা চোখ দুটির সাথে দেখা হলো!
।।
কয়েক দিন পরের কথা!
সাব্বির- কিরে শালা! কোথায় যাচ্ছিস? তোর সাথে তো আগের মতো আর দেখা হয় হয়। আম্মু তোকে দেখা করার জন্য ডেকেছে, চল বাড়ী।
আয়ান- আমি তো এখন আর এই দিকে বেশি আসার সময় পায় না। ঠিক আছে চল অ্যান্টির সাথে দেখা করে নেই।
।।
সাব্বির আয়ানকে ওদের বাড়ী নিয়ে গেলো। সাব্বির আর আয়ান ছোট কালের বন্ধু কিন্তু কলেজের

ওঠার পর থেকে তাদের দেখা একটু কম হয়, কারণ আয়ান অন্য শহরে পড়াশুনা করে।
সাব্বির- আম্মু! এই দেখো কাকে নিয়ে এসেছি, তুমি বললা না আয়ান কে দেখবা দেখো নিয়ে এসেছি।
সাব্বিরের আম্মু- আয়ান! কেমন আছো বাবা? অনেক দিন থেকে তোমাকে দেখিনি,
আয়ান- জি অ্যান্টি আমি ভালো আছি, আসলে এখন তো এখানে তেমন থাকি না তাই দেখা হয় না। আপনি ভালো আছেন?
সাব্বিরের আম্মু- হ্যাঁ ভালো। এখন কি করছো?
আয়ান- একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি, এই তো আর ২ বছরের পড়া শেষ।
সাব্বিরের আম্মু- অনেক ভালো করেছো, এই গাধা তো আর পড়তেই চাই না। আচ্ছা তোমরা কথা বলো, আমি নাস্তা দিচ্ছি।
।।
কিছুক্ষণ পর একজন নাস্তা নিয়ে আসলো!
আয়ান তাকে দেখে চমকে গেলো! এতো সেই মায়াবিনী চোখ!
সাব্বির- কিরে? চিনতে পারিস নি? এটা আমার ছোট বোন পায়েল। অবশ্য পারবি কীভাবে,

তুই যখন আমাদের বাড়ী আসতি তখন পায়েল তো হাপ প্যান্ট পড়ে ঘুরে বেড়াতো।
পায়েল- ভাইয়া! বেশি হয়ে যাচ্ছে, আমি কিন্তু এখন ছোট না।
আয়ান কথা শুনে হাসতে শুরু করে দিলো।
সাব্বির- হ্যাঁ তুমি তো এখন আমার থেকেও বড়, এজন্য তো বলছি বিয়ে দিয়ে দিতে তোর।
পায়েল- আম্মু! আম্মু! তোমার ছেলে দেখো আমাকে কি বলছে?

আয়ান- সাব্বির বাদ দে না! পায়েল তুমি কিসে পড়ো?
পায়েল- ভাইয়া! এবার কলেজে উঠলাম।
।।
সে দিন আয়ান সাব্বিরের বাড়ী থেকে চলে আসলো।
কয়েক দিন পর!
আয়ান ফেসবুকে আছে, একটা রিকুয়েস্ট আসলো, নীল পরি, সাথে একটা ম্যাসেজ!
ভাইয়া! আমি পায়েল, সাব্বির ভাইয়ের ছোট বোন।
আয়ান রিকুয়েস্ট টা গ্রহন করলো।
।।
এভাবে তাদের নতুন একটা সম্পর্ক শুরু হলো। বন্ধুত্তের সম্পর্ক
কয়েক মাস পর!
পায়েল- আজ জানেন আমার অনেক মন খারাপ! সারা দিন কোথায় ছিলেন?
আয়ান- কেন আমাকে দরকার নাকি? আর মন খারাপ কেন?
পায়েল- বাড়ীতে আমার বিয়ে ঠিক করে দিয়েছে, ছেলে একটা সরকারী চাকুরীজীবী।
।।
আয়ান কিছুটা শক খেয়েলেও পায়েল কে কিছু বুঝতে দিলো না।
আয়ান- ওহ! তাহলে তো ভালোই, তা বিয়ের দাওয়াত কবে?
পায়েল- শোনেন! মেজাজ খারাপ করবেন না, আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন, আর আমিও আপনাকে পছন্দ করি,

এজন্য প্রতিদিন আপনার সাথে কথা বলি, এখন আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না, আমি ঐ রকম মেয়ে না।

৩ দিন পর আমার বিয়ে যদি আপনি আমাকে পালিয়ে না নিয়ে যান তাহলে আমি বিশ খেয়ে নিবো।
।।
আয়ান কিছু উত্তর দিবে কি তার আগেই ওপাশ কালো হয়ে গেলো, মানে পায়েল আইডি ডিএকটিভ করে দিয়েছে। আয়ান কি করবে কিছু বুঝছে না।
।।
সে বাড়ী আসলো, তারপর সাব্বিরকে ফোন করলো।
আয়ান- সাব্বির, একবার আমার সাথে দেখা কর, জরুরী দরকার।
।।

সাব্বির- কিরে শালা! এমনি আমি ব্যাস্ত! কি হয়েছে বল।
আয়ান- বলছি, বস! আমি একটা মেয়েকে অনেক ভালোবাসি,
সাব্বির- আবে শালা তুই ও প্রেমে পড়েছিস? ওরে কুত্তা আগে বলিস নি।
আয়ান- আরে শোন- আগে।
সাব্বির- হ্যাঁ বল,
আয়ান- আমি জানতাম না যে ঐ মেয়েও আমাকে ভালোবাসে।
সাব্বির- ভালো কথা।
আয়ান- কিন্তু সে মেয়ের বিয়ে ঠিক এখন বলছে আমি যদি তাকে না নিয়ে পালিয়ে যায় তাহলে সে আত্মহত্যা করবে।
সাব্বির- ভাই! মেয়েরা পাগলী, ওদের মাথা ঠিক থাকে না, তুই চল আমার সাথে ।
আয়ান- কেন?
সাব্বির- মেয়েটার বাড়ী যাবো, ওকে নিয়ে পালাতে হবে, তুই টাকা পয়সার চিন্তা করিস না।

আমার কাছে হাজার ৫ টাকা আছে, ওটা নিয়ে তোরা পালা, চল তুই।
আয়ান- মেয়েটা তোর বোন পায়েল।
।।
সাব্বির- কি?
আয়ান- হ্যাঁ এটা সত্যি।
সাব্বির- তো তুই না পালিয়ে আমাকে বলছিস কেন?
আয়ান- আমি পালিয়ে বিয়ে করতে পারবো না। আমি আমার সুখের জন্য তোদের কষ্ট দিতে পারবো না।
সাব্বির- আচ্ছা তুই বাড়ী যা! আমি দেখছি কি করতে পারি।

সাব্বির বাড়ী গিয়ে বললো,
সাব্বির- আম্মু এই বিয়ে হবে না।
আম্মু- কেন? কি বলিস এসব? আর মাত্র ২ দিন পর বিয়ে আর কি বলিস।
সাব্বির- আমি খোঁজ পেলাম ছেলেটার চরিত্র ভালো না, আর এই রকম একটা খারাপ ছেলের সাথে বিয়ে আমি আমার বোনকে দিবো না।
আম্মু- কিন্তু এখন কীভাবে বিয়ে ভাঙবো? মানুষ কি বলবে?
সাব্বির- মানুষ কি ভাবছে সেটা দেখে আমার কিছু যায় আসে না। আমার বোনের সুখ হচ্ছে আসল সুখ।

তার জন্য আমি ছেলে খুঁজবো। আর এতো বিয়ের তাড়া কিসের? আমার বোন ও এখন ও বুড়ি হয়ে যায় নি, সে পড়ুক।
।।
তার পর পায়েলের বিয়ে ভেঙ্গে গেলো।।
দুই বছর পরের কথা!
পায়েল এর একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে অনেক ভালো। বাড়ীর সবাই রাজী, কিন্তু সাব্বির না।
আম্মু- এই তোর সমস্যা কি? এভাবে তোর জন্য কি আমার মেয়ের বিয়ে হবে না কোন দিন? এই ছেলেটা তো অনেক ভালো।
সাব্বির- ঐ ছেলের বাড়ী তো অনেক দূরে, আমরা তাদের পরিবার সম্পর্কে জানি না, তারা যদি বিয়ের পর আমার বোনকে কষ্ট দেয়।
আম্মু- তোর বাড়ীর পাশে কোন রাজপুত্র আছে শুনি, যে তোমার বোনকে বিয়ে করার জন্য বসে আছে।
।।
সাব্বির- একটা ছেলে আছে, অনেক ভালো। চাকুরী ও করে, কিন্তু হয়তো এই ছেলের মতো অনেক টাকা ইনকাম করে না,

তবে আমার বোনকে অনেক সুখে রাখবে। তুমিও চিনো তাকে।
আম্মু- কে সে?
সাব্বির- আয়ান।
আম্মু- তোর সেই বন্ধু আয়ান?
সাব্বির- হ্যাঁ সেই আয়ান।
আম্মু- সে এখন কি করছে?
সাব্বির- একটা কোম্পানিতে চাকুরী করছে।
আম্মু- ঠিক আছে তাহলে আমাদের সমস্যা নাই, সে কি রাজী হবে?
সাব্বির- আচ্ছা আমি সব দেখে নিবো। তুমি আজকে অ্যান্টির বাড়ী গিয়ে কথা বলে নাও।
আম্মু- ঠিক আছে।
।।
পরের দিন ওদের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু সাব্বির বলে আয়ানকে সে জানাবে অন্য কেউ যেন না ফোন করে।
।।
রাতে সাব্বির আয়ান কে ফোন করে।
সাব্বির- বন্ধু কাজ তো খারাপ?
আয়ান- কেন রে কি হলো?
সাব্বির- পায়লের তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, আমি অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না । তবে একটা পথ আছে, তুই কালকেই বাড়ী চলে আয়।
আয়ান- গিয়ে কি হবে?
সাব্বির- আবে শালা! তুই পায়েল এর বিয়ে ভেঙ্গে দিবি।
আয়ান- কিন্তু?
সাব্বির- কোন কিন্তু না কাল দুপুরের মধ্যে তুই আমাদের বাড়ী আসবি।
।।
পরের দিন দুপুর!
আয়ান সাব্বিরের বাড়ীর সামনে এসে দেখলো, বাড়ীর সামনে হালকা করে সাজানো। তার ওপর একটা মাইক্রো দাঁড়িয়ে। আয়ান সাব্বিরকে ফোন করলো।
সাব্বির- তুই কইরে?
আয়ান- তোর বাড়ীর সামনে।
সাব্বির- ভিতরে চলে আয়।
।।
আয়ান ভিতরে গিয়ে দেখে তার বাবা-মা আরও আত্মীয় স্বজন। আয়ান ভাবতে লাগলো কি ব্যাপার,

বিয়ের দাওয়াত না হয় আমার আব্বু – আম্মু আসবে, আমার সব আত্মীয় কেন?
।।
একজন বলল, এই তো জামাই চলে এসেছে।
সাব্বির আসলো।
সাব্বির- এই তাড়াতাড়ি আয়! এই নে পাঞ্জাবী টা পড়ে আয়।
আয়ান- মানে?
সাব্বির- আরে এই শার্ট প্যান্ট পড়ে বিয়ে করবি নাকি? যা পাঞ্জাবী পড়ে আয়,
।।
কিছু বুঝতে পারার আগেই আয়ান আর পায়েলের বিয়ে হয়ে গেলো।
।।
সাব্বির- এবার খুশী তো? অনেক কষ্ট করে সবাইকে ম্যানেজ করেছি, শালা আমার বোনের যদি একটু কষ্ট হয়েছে তো তোর খবর আছে।
আয়ান- তুই আমাকে বললি যে তোর বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।
সাব্বির- হ্যাঁ মিথ্যা কি বলেছিলাম? ঠিক তো হয়েছিলো। তোর সাথে ঠিক হয়েছিলো।
আয়ান- কিন্তু আমাকে এভাবে টেনশানে ফেলেছিলি কেন?
সাব্বির- আমি একটু পরীক্ষা করছিলাম যে তুমি আমার বোনকে কতো ভালবাসিস?
আয়ান- হারামি! তুই জানিস আমি রাত থেকে কিছু খায় ও নি, আর ঘুম ও যায় নি।
সাব্বির- এখন খেয়ে নে। আর ঘুমের দায়িত্ব আমার বোনের।
।।
রাতে আয়ান ঘরে ঢুকল।
আয়ান- তুমি সব আগে থেকেই জানতে?
পায়েল- হ্যাঁ।
আয়ান- তো আগে বলো নি যে।
পায়েল- ভাইয়া মানা করেছিলো। আর আমিও দেখতে চাচ্ছিলাম যে আপনি আমাকে কতো ভালোবাসেন।
আয়ান- দুই ভাই বোন মিলে আমাকে এভাবে বোকা বানালা।
পায়েল- হুম।
।।
আয়ান- আমি এখন ঘুমাবো,
পায়েল-কি?
আয়ান- কাল থেকে ঘুমায় নি।
পায়েল- এখন সাহস থাকলে শুয়ে দেখান, ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি এনে পানি ঢেলে দিবো।
আয়ান- কি?
পায়েল- জি তাই, আজ আপনার সাথে অনেক গল্প করবো।
আয়ান- না আমি ঘুমাবো।
পায়েল- দাঁড়ান! ভাইয়াকে ফোন করছি, যে আপনি আমাকে অবহেলা করছেন।
আয়ান- আবার তোমার ভাই কেন? আচ্ছা ঘুমাবো না। বাথরুম থেকে মুখ ধুয়ে আসি, তাহলে ঘুম আসবে না।
।।
আয়ান- কোন মেয়ে জুটল রে, প্রথম রাত থেকেই এভাবে ভয় দেখাচ্ছে।

……………………………………..সমাপ্ত…………………………

গল্পের বিষয়:
অন্যান্য · ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত