আমি ও আমার কতগুলো বন্ধু মিলে
ডকুমেন্টারি তৈরি করার কথা ভাবছিলাম।যেটার মূল কেন্দ্র চরিতে ছিল পতিতাবৃত্ত নিয়ে।
আর এটার জন্য আমাদের শহরের বেশ কিছু পতিতালয়ে গিয়ে পতিতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়েছিল। আমরা জানতাম যদিও কাজটা অনেক কঠিন।কারন বেশির ভাগ পতিতারাই অামাদের সাথে কথা বলতে চাইতেছিল না।
অাজ আমরা গেলাম শহরের এক নাম করা হোটেলে, যেখানে একজনের টাকার চহিদা আর অন্যদিকে অন্যনের যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য এইরকম একঝঁাক পতিতা নিয়োজিত আছে। অনেক সাথে কথা বলতে চাচিছলাম যদিও তারা আমাদের কথা শুনে কেন যানি এরিয়ে যাচিছল।
তাদের মধ্যেথেকে একজন পতিতা আমাদের কথা শুনতে রাজি হলো।
অামি: পতিতাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম।আর অন্যদিকে শুভ আমাদের কথাগুলো ভিডিও করতে লাগলো। আমি তখন শুভকে এটা করতে নিষেধ করলাম। অার পুরো ঘটনা নোট করার দায়িত্ব দিলাম জয়ের কধে।
.
প্রথমেই শুভ মেয়েটাকে প্রশ্ন করে বসল, অাপনার নাম?
-জবা।
অামি: শুধুই জবা?
-হুম, অামি রাতের জবা সারারাত টাকার জন্য বিছানা রাঙাই কিন্তু সকাল হলেই ঝরে যাই।
অাবার,
অামি: তো জবা অাপনি কেমন অছেন?
-মেয়েটি এবার কড়া নজরে তাকিয়ে বলল আপনাদের মতলোবটা কি?
কোথায় যাইতে হবে বাসায় নাকি প্রাইভেট কোন হোটেলে।
আর যেটা শুনার জন্য অামরা একদম
প্রস্তুত ছিলাম না।
তারপর আমরা মেয়েটিকে অামাদের ডকুমেন্টারির কথাটা বুঝিয়ে বললাম।
সে মাথা নাড়ালো।
তখন মেয়েটি বলল আমাকে কি করতে হবে?
অামি বললাম শুধু অামাদের প্রশ্নের উত্তর দিলেই হবে।
-এবার শুরু হলো অামাদের প্রশ্ন………..
.
অাপনি এই ব্যবসায় কতদিন আছেন?
-৪ বছর।
আপনি এ ধরনের কাজ কেন করেন?
-পেট চলানোর জন্য।
পেট চালনোর জন্য তো অনেক পেশাও
অাছে, এটাই কেন বেছে নিলেন অাপনি?
-চেষ্টা করেছিলাম তো অনেক, কই অাপনাদের সমাজ তো অামাকে কাজ দিলনা। কারন অামি বসতির মেয়ে।
আমি যে পিতৃপরিচয়হীন।
.
আপনার সমাজের কোন এক রাতের পাপের ফসল অামি। আমার বয়স যখন ১৩-১৪ তখন মাও মারা যায়।
তখন পেটের ক্ষুদায় কত মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি, কেউ একবেলা খেতেও দেয়নাই।
.
মেয়েটির এইগুলো কষ্টের কথা শুনে তাকে সান্তনা দিয়ে বললাম-
-এই লাইনে এসেছেন কার মধ্যমে?
মেয়েটি কান্না কান্না অাওয়াজে বলল,
কাজের জন্য এসেছিলাম ঢাকায় এক দালালের কাছে।দলাল তাকে এখানে বিক্রি করে দেয়।
তারপর থেকেই এখানে।
শুভ: আপনার সংসার করতে ইচ্ছা করেনা।
-সে বলল এক সময় করত।এখন অার করেনা। কারন অামার এই নষ্ট জীবনের সাথে অন্য কোন ভাল
মানুষকে জড়াতে চাইনা।
.
মেয়েটি বলতে লগলো,
-ভাল পথে থাকতে, ভাল একটা কাজ করে নিজের পেট চালাতে চাইছিলাম।
কিন্তু অাপনাদের সমাজের পশুর ন্যায় মনুষগুলো অামাকে ভাল পথে থাকতে দেয়নাই। শুধু এই কাগজের তৈরী টাকার জন্যই অাজ আমাদের মত মেয়েদের নাম হইছে পতিতা।
অাজ ঔই মানুষগলোই অামাকে টাকা দিচ্ছে, এর বিনিময়ে অামাকে দিতে হচ্ছে অামার সারা শরীর।
.
.
এবার,
অামি বললাম: এ ধরনের কাজ করেন পুলিশের ভয় নাই অাপনাদের?
-মেয়েটি মুখ বাকিয়ে নিয়ে বলল, পুলিশ অার পতিতা তো একই। পার্থক্য শুধু অামরা কাপড় খুলে হাত পেতে টাকা নেই, অার ওরা কাপড় পড়ে।
শুভ: আপনি যে দেহ বিক্রি করে টাকানিয়ে জীবিকা চলান, এতে অাপনার লজ্জা কিংবা অনুশোচনা কাজ করে না।
– মেয়েটি মৃদু হেসে জবাব দিল, লজ্জা
কাদের দেখে পাবো হুম, যারা নিলজ্জ।
যারা অামাদের মত পতিতাদের সাথে সারা কাটিয়ে দিয়ে, দিনে ভদ্র মানুষ সাজতেছে তাদের দেখে লজ্জা পাব।
আমরা পতিতালয়ে অামাদের দেহ বিক্রি করছি ঠিকই,
-আর শিক্ষক তার শিক্ষা বিক্রি করছে কচিং সেন্টারে।
-রাজনৈতিক নেতারা তার নীতি বিক্রি করছে রিলিফের চাল-গমে।
-প্রশাশন তার শাসন বিক্রি করে জাল নোটে।
-প্রেমিকা তার প্রেম বিক্রি করে রেস্টুরেন্টে।
তবে ওদের লজ্জা না করলে আমাদের কেন করবে।
অামরাও ভাল থাকতাম, অামরাও সংসার করতাম, আমরাও একজন পুরুষের ভাল বউ হতাম।
কিন্তু সামান্য এই কাগজের তৈরী টাকা আমাদের তৈরী করেছে পতীতা।
আজ যদি অামাকে আমার পেট চালানোর জন্য, কোন ভাল একটা কাজ দিত কেউ। তাহলে হয়ত আমাকে এই খারাপ কাজ করতে হতোনা।
.
.
সামান্য কয়টা টাকার জন্য আজ আমরা অামােদর মূল্যবান দেহ অন্য সব মুখোশধারী পুরুষের আনান্দের জন্য বিলিয়ে দিচ্ছি।
তারপর আমি যখনি তাকে পরের প্রশ্ন করতে যাব, ঠিক তখনি বাহির থেকে আওয়াজ আসলো-
জবা রেডি হ্। কাস্টমার আইছে……
তখন আমরা সকাই জবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার মুখে যেন প্রাপ্তির হাসি।
এই হাসি শুধু একমুঠো খাদ্য কিংবা একটুখানি বঁাচার আশায়।
কিন্তু যে হাসির অারালে লুকিয়ে থাকে অনেক দুঃখ ও বেদনা।
যে হাসি জবাকে সাজায় কারো বিছানা রাঙানোর জন্য।
তারপর অামরা যখন সেখান থেকে বিদায় নেব তখন, আমরা জবাকে কিছু টাকা দিতে চাইলাম, কিন্তু জবা তা নিল না।
পতিতারা ভিক্ষাবৃভি করেনা। অন্যের দয়ায় বঁাচেনা।
এক একটি পতিতার জীবনে রয়েছে এমন অনেক করুনাময় ও দুঃখের ট্রাজেডি।
অামরা পতিতাকে ঘৃনার দৃষ্টিতে দেখবনা।
একজন অসহায় মেয়ে যদি তার খাবার, টাকার জন্য পতিতা পেশা গ্রহন করতে বাধ্য হয়, তাহলে কিন্তু আল্লাহর কাছে এর হিসাব আমাদেরি দিতে হবে।
.
বরং আমরা সেইসব মানুষকে ঘৃনা করব যারা সারারাপ পতিতাদের সাথে কাটিয়ে দেয়, আর দিন হলে তারা সাজে ভদ্র ঘরের, ভদ্র সমাজের ভদ্রলোক।
.
.
এইসব মুখোশধারী ভদ্রলোকগুলোকে জুতা পেটা করা দরকার। পতিতাদের সাথে রাত কঁাটানোর আগে কি? তাদের মনে এইটুকুও প্রশ্ন আসেনা মনে, যদি তার পরিবারের কোন মা, বোন এই পেশায় নিয়োজিত থাকত তখন।
তবে আমি দেখেছিলাম জবার হাসির মাঝে একটা নিষ্পাপ প্রান।
যে প্রানকে একটু ইচছা করলেই ভালবাসা যায়, কাছে টেনে নেওয়া যায়। তবে কেন এইগুলো……………….
[বিদ্র: একজন পতিতার চরিতের
প্রেক্ষ ্পটে সমাজের ভদ্র শয়তান ও মুখোশধারী অভিনেতাদের অসঙ্গতি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।]
গল্পের বিষয়:
অন্যান্য