চলুন, জন্ম থেকেই শুরু করি তর্ক পরিক্রমা । একজন নামকরা গাইনি পেশেন্ট দেখছেন, ‘আপনার তো আগেরটি মেয়ে, এবার একটা ছেলে হলে ভালো হয় । তাই না ? ছেলের জন্যই বোধহয় আবার নিচ্ছেন?’
মধ্যবয়স্ক মহিলা লজ্জায় লাল হয়ে বলছেন, ‘আরে না, পিওর মিস্টেক । বাট আই ওয়ানট ইট’।
ডেলিভারির দিন ওটিতে আছেন সেই গাইনি, জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র নার্স, আন্যাস্থেটিসট । বাইরে অস্থির পায়চারি করছেন হবু বাবা। পেশেন্টকে পুরো অজ্ঞান করা হয় নি । লোকাল অ্যানাস্থেসিয়া করা হয়েছে । হাত পা নাড়তে পারছে না ঠিক ই, শ্রবণেন্দ্রিয় পুরো সজাগ । কানে আসছে ডাক্তারদের মশকরা । হাত চলছে দ্রুত । সমান তালে মুখ ।
গাইনির বউ ও ডাক্তার । ছেলে মেয়ে নামি স্কুলের দামী ছাত্র । মেয়ে আই সি এস সি তে দুর্দান্ত রেজাল্ট করে মেট্রোপলিসে পড়তে গ্যাছে । ছেলেকেও দিদির স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে । ছেলে মেয়েকে পাহারা দেবার জন্য মা প্র্যাকটিস ছেড়ে ওদের সঙ্গে আছেন । রাঁধুনি টিফিন বানিয়ে দিয়েছেন গাইনিকে । লুচি আলুর দম । খুব খিদে পেয়েছে । এই ওটিটা করেই খেতে যাবেন । তাকে সঙ্গ দেবার জন্য সাধাসাধি করছেন জুনিওরকে ।
–
জুনিওর লুচির প্রলোভন টপকে লঘু রসিকতা করছেন, ‘এই অ্যাত্তখানি কেটে ফেললেন, পার্টি আপনাকে দেবে’! সিনিয়র হা হা করে উঠলেন, ‘না না, কিস্যু বলবে না, এটা হল ডক্টর সরকারের শালি । আমারও তবে তাই । এই যে সিস্টার, এদিক থেকে চাপুন দেখি – হ্যাঁ – এইবার – এই যে মাথা- এই তো, আয় আয় – যাহ্, আবার একটা মেয়ে – কার যে মুখ দেখে উঠেছি আজকে, পরপর মেয়ে হচ্ছে, ভাবলাম এটাকে দিয়ে বউনি করবো, তা সেটাও গ্যাল’।
পেশেন্ট মনে মনে ছকে ফেলছে অনেককিছু । বড় মেয়ে হবার খবর শুনে পিকনিক করতে যাওয়া শাশুড়ি হাপুস নয়নে কেঁদেছিল, তার বাবার দেওয়া সোনা বাঁধানো বাঘনখ অন্য পরিবারে চলে যাবে বলে দেবেন না বলেছিলেন, এবার খুব আশায় আশায় ছিলেন, সে গুড়ে বালি ।
সন্ধ্যের পর পেশেন্ট এর ঘরে আয়াদের গুলতানি আড্ডা । উঁকি মারছে বেবিকট এ, শুয়ে আছে একটা গাবলু গুবলু মেয়ে, প্রায় প্রত্যেকে চুকচুক করে সমবেদনা জানাতে ভুলছে না সদ্য মা কে, ‘কি করা যাবে, ভগবানের মার, উনি বড্ড একচোখো । পাশের কেবিনের মহিলাই তো এক ছেলের পর চেয়েছিলেন একটা মেয়ে, তা না তার আবার ছেলেই হোল’। পেশেন্ট এসব শুনছে আর মুচকি মুচকি হাসছে । সেই যখন প্রেম সেভেন হর্স পাওয়ার বেগে ছুটছে সেই তখন নদীপারের শিমুল গাছতলায় বসে ঠিক করা ছিল, ওদের দুটো মেয়ে থাকবে, আস্থা আর আকাঙ্খা ।
দিন দুই পরে পারিপার্শ্বিক শোকের আবহ থিতিয়ে এলে এক বাচ্চা নার্স বেড়াতে এলো এ ঘরে । মা তখন বেবি কোলে আদর করছিলেন । নার্স টুল টেনে বসে গল্প জুড়ল । একথা সেকথার পর যাবার আগে মেয়েটি বলল, ‘জানো, দিদি, আমরা গল্প করি, কাউকে এত আদর করতে দেখিনি দুই নম্বর মেয়েকে, ভগবান বুঝে শুনেই পাঠান’!
মহিলার শাশুড়ি অবশ্য এক মাস কুড়ি দিন নিয়েছিলেন নাতনির মুখ দেখতে !