জামাই-শ্বশুর

জামাই-শ্বশুর

অনেক দিন জামাই শ্বশুরবাড়ি আসে না। সেই জন্য শ্বশুরের বড় নিন্দা। গাঁয়ের লোকেরা বলে, তোমাদের বাড়ি জামাই আসে না কেন? নিশ্চয়ই ইহার মধ্যে একটা গোপন কারণ আছে। কারণ যাহা আছে, শ্বশুর তো তাহা ভালোই জানেন। শ্বশুরবাড়িতে জামাইর শালা নাই, শালি নাই। ইয়ারকি-ঠাট্টা করিবার কেহ নাই। সেই জন্যই তো জামাই শ্বশুরবাড়িতে আসে না।

অনেক ভাবিয়া-চিন্তিয়া শ্বশুর ঠিক করিলেন, এবার যেমন করিয়াই হোক, জামাইকে আনিতে হইবে। না হয় শ্বশুর হইয়াই জামাইর সঙ্গে একটু ঠাট্টা-ইয়ারকি করিবেন। বাড়িতে অন্য লোক নাই। কেহ তো দেখিতে আসিবে না। হাটের মধ্যে জামাইর সঙ্গে শ্বশুরের দেখা হইল।

শ্বশুর জামাইকে বলিলেন, ‘তা বাবাজি, আমাদের ওমুখো যে হন-ই না, আজ চলুন আমাদের ওখানে।’
জামাই উত্তর করিল, ‘আপনাদের ওখানে কি আর যাইব! শালা নাই, শালী নাই, কাহার সঙ্গে কথাবার্তা কহিব?’
শ্বশুর মিথ্যা করিয়া বলিলেন, ‘তা এবার ঢাকা হইতে আমার এক ভাইজি আসিয়াছে। কলেজে পড়ে। সম্পর্কে তোমার শালী, তাহার সঙ্গে অনেক হাসি-তামাশা করিতে পারিবে।’

জামাই রাজি হইয়া শ্বশুরবাড়িতে আসিল। আসিয়া দেখে, ঢাকা হইতে কেহই আসে নাই। শ্বশুর তাহাকে ফাঁকি দিয়াছেন। জামাই ভাবিল, আজকের দিনটি মাটি হইল। শ্বশুর যাহা ভাবিয়াছিলেন, তাহা তো তাহার মনেই আছে! আহারের সময় হইল। শ্বশুরবাড়ি আসিয়া জামাইরা শালা-শালী লইয়া এক থালায় ভাত খায়। শ্বশুর তাঁহার স্ত্রীকে বলিলেন, ‘দেখো, বড় থালাখানায় আজ আমাদের ভাত দাও। আমি আর জামাই এক থালায় ভাত খাইব।’

শ্বশুর আর জামাই একসঙ্গে এক থালায় ভাত খাইতে বসিলেন। নানা রকম তরকারি দিয়া খাওয়া চলিতে লাগিল। শ্বশুর ভাবিলেন, চালাকি করিয়া জামাইকে ক্ষীর খাইতে দিব না। তিনি জামাইকে বলিলেন, ‘জামাই খাওয়া তো হইয়াছে, এবার হাত ধোও।’

জামাই দেখিল, শ্বশুর তাহাকে ক্ষীর না খাওয়াইয়া ঠকাইবার মতলব করিয়াছেন। জামাই তখন এক গল্প ফাঁদিয়া বলিল, ‘হাত আর ধুইব কি? আপনাদের বাড়িতে আসিবার সময় সামনে পড়িল এক প্রকাণ্ড সাপ। কহিলে বিশ্বাস করিবেন না, আমাকে না দেখিয়া, ওই যে শিকার ওপরে ক্ষীরের হাঁড়িটা ঝুলিতেছে না? ওই অত উঁচু একটা ফণা মেলিয়া ধরিল সাপটা আমার দিকে।’

শ্বশুর দেখিলেন, ধরা পড়িয়াছেন। জামাই ক্ষীরের কথা টের পাইয়াছে। তিনি তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিলেন, ‘তাই তো! ক্ষীরের কথা তো একেবারে ভুল হইয়া গিয়াছে। আন আন, ক্ষীর আন।’

শাশুড়ি একটু মুচকি হাসিয়া তাড়াতাড়ি ক্ষীর আনিয়া দিলেন। ক্ষীরের সঙ্গে মাখিয়া খাইবার জন্য কিঞ্চিত্ ভাতও দিলেন। জামাই ভাবিল, ‘শ্বশুর আমাকে ক্ষীর খাওয়া হইতে বঞ্চিত করিতেছিলেন, এবার আমি তাঁহাকে ক্ষীরই খাইতে দিব না।’

জামাই শ্বশুরের সঙ্গে গল্প আরম্ভ করিল, ‘এখনকার কলিকালের কথা আর কি বলিব? বউরা স্বামীকে মানিতে চাহে না। এই আপনাদের মেয়ে, যাহাকে আমি বিবাহ করিয়াছি; আমি যদি তাহাকে বলি এদিক থাকো, সে চলিয়া যায় ওদিকে।’ বলিবার সঙ্গে সঙ্গেই তাহা দেখাইয়া দিবার অজুহাতে জামাই পাতের ক্ষীরটুকু নিজের দিকে টানিয়া লইয়া ভাতগুলি শ্বশুরের দিকে ঠেলিয়া দিল।

শ্বশুর দেখিলেন, ‘ঠকাইবার মতলবে জামাই আমাকে ক্ষীর খাইতে দিবে না। আচ্ছা দেখাইতেছি!’
উপদেশের ছলে শ্বশুর জামাইকে বলিলেন, ‘তা বাবাজি! তোমরা ছেলেছোকরা মানুষ। মিলমিশ হইয়া থাকো, মিলমিশ হইয়া থাকো।’ বলিতে বলিতে তাহা দেখাইয়া দিবার অজুহাতে ক্ষীর ও ভাত একসঙ্গে মাখিয়া ফেলিলেন।

গল্পের বিষয়:
অন্যান্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত