সুরমার তীরে সেই রাত

সুরমার তীরে সেই রাত

কাউকে সত্যিকার অর্থে ভালবাসলে তার থেকে প্রতিপদে কষ্ট পাওয়াই স্বাভাবিক।
.
আমার কবি মন হুট করে কষ্টের একটা ছবি একে ফেলে।কিন্তু প্রকাশ করাটা নিতান্তই বোকামি, মূল্যহীন।

কষ্টের ছবি যদি স্বরূপে প্রকাশ করা যেত তার চিত্রটা কত খানি ভয়ঙ্কর হত তা আমার জানা নেই।
.
এটুকু জানি কোন একদিন আমার খুব প্রিয় মানুষকে ফোন করেছিলাম। এক মিনিট কথা বলার পরে অপাশ থেকে বলে উঠল একটা ফন এসেছে।

লাইনটা কাটতে। ঠিক তখনই মনে হল আমি কতটা মূল্যহীন।কতদিন পর কত আবেগ নিয়ে ফন করলাম, কত কষ্ট করে লোড নিলাম।

কিন্তু তা নিতান্তই মূল্যহীন ওর কাছে।
. তখন রাত দশটা বাজে। আমি অনেকটা আনমনে হেটে চলেছি সিলেটের ব্যস্ততম রাস্তা দিয়ে। পুরাতন ব্রীজটা প্রায় ফাকা।

দিনের বেলা ব্রীজটা পাড় হতে মিনিট দশেক লাগে। আজ দু মিনিটেই অপারে পৌছে গেলাম।

নদীর ডান পাশের রাস্তাটা মহাজনপট্টির দিকে চলে গেছে। রাস্তার পাশে অসংখ্য ফুচকার দোকান। সামনে সার্কিট হাউজ।

সার্কিট হাউজের পরিবেশের সাথে আশেপাশের পরিবেশের কোন মিল নেই।

একদিকে ভি আই পি দের আনাগোনা আর অন্যদিকে দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার লড়াই।
.
একটা ছোট মেয়ে ফুচকার দোকানগুলোতে ঘোরাঘুরি করছে। কনকনে শীত। মেয়েটার গায়ে পাতলা জামা। মৃদু কাপছেও বটে।
.
মেয়েটা ফুচকার দোকানে বসা যোগল তরুণ তরুণীদের হাতে পায়ে ধরছে। কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না মেয়েটার দিকে।

শ্যামলা বর্ণের কচি মুখটার প্রতি মায়া জন্মাল। সেই সাথে আমার মনেরও ভাবান্তর হল। হায়রে! আমি কি মানুষ হলাম।

সামান্য একটা ফন কেটে দেয়াতেই আমি ভেঙ্গে পড়েছি অথচও এই ছোট মেয়েটা কয়টা টাকার জন্য একের পর এক লোকের হাতে পায়ে ধরছে।

কোন ক্লান্তি নেই ওর মাঝে। বাঁচতে হবে এটাই ওর কাছে মূল্যবান। আমি ভাবনার সাগরে ডুবে আছি।
.
হঠ্যাৎ আমার খেয়াল হল একটা বিশ কি বাইশ বছরের ছেলে মেয়েটাকে কষে একটা চর দিল। আমি দৌড়ে মেয়েটার কাছে গেলাম।

মেয়েটার অপরাধ ভিক্ষা চাইতে গিয়ে ছেলেটার পা ধরে নাড়া দিয়েছিল।নাড়া খেয়ে ফুচকার প্লেইট থেকে কিছুটা পেন্টে পড়ে গেছে।

ছেলেটা আবার চর মারতে চাইলে আমি আটকে দেই। ছেলেটা প্রায় অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল।

আমি এসব তওয়াক্কা না করে ছেলেটাকে বললাম’ ভাই আমি মুছে দিচ্ছি ‘।
সবার দৃষ্টি ক্ষণিকের জন্য আমার দিকে। আমি পকেট থেকে টিসু বের করতেই ছেলেটা বলল ‘ লাগবে না, আমাকে দিন আমি করছি’।
.
পিচ্ছি মেয়েটা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম অমৃত দাদা সিগারেট আনার জন্য ষাট টাকা দিছিল ঐটা আছে,আর কোন টাকা নেই।

দাদাকে যেভাবেই পারি বোঝ দিয়ে দিব সেই ভাবনা থেকে ওকে জিজ্ঞেস করলাম
– কিরে পিচ্ছি ফুচকা খাবি???
– হু
– আচ্ছা বস। নাম কি তর?????
– রিয়া।
– কে কে আছে তর????
– মা আর আমি।
– বাপ কই????
– মায়ে কইছে বাপ নাই। মইরা গেছে।
– ও। বাসা কোথায় তর???
– ঐ যে পট্টির পিছনের বস্তিডায়।
– তর মা কি কাজ করতে পারে না??তুই রাস্তায় কেন?
– করে ত।আইজকা মায়ের শরীলডা খারাপ। হের লাইগা কামে যায়নাই। জ্বরে আম্মার গা পুইরা যাইতাছে।

ঘরে টাকা নাই। মায়ের লাইগা ঔষধ নিতে হইব যেমনেই হোক।
– আচ্ছা ফুচকা খা তাড়াতাড়ি। আমার কাছে ঔষধ আছে। তুই খেয়ে নে আমার সাথে গিয়ে ঔষধ নিয়ে আসবি।
-( ও চুপ। কোন কথা বলছে না।)
.
আমি মেডিকেলে চাকরির সুবাধে ফার্মেসিগুলোর সাথে পরিচিত ছিলাম কদমতলী ব্রীজের ফেমাস মার্কেটের।

এক দাদাকে বলে পিচ্ছিটাকে কিছু ঔষধ কিনে দিলাম। ফুচকা খেয়ে চল্লিশ টাকা বেঁচে ছিল।

ওর হাতে টাকাটা দিয়ে বললাম ওর মায়ের জন্য কিছু নিয়ে যেতে। পিচ্ছিটা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মায়ের কাছে ফিরতে লাগল।
.
আমি বাসায় ফিরছি। মনে মনে ছক আকছি অমৃতদাকে কি বলে বোঝ দিব। পারব না কেন।

একটা ছোট মেয়ে যেখানে তার মায়ের জন্য এত কিছু করতে পারে আমি কেন পারব না একটু মিথ্যে বলতে??????

গল্পের বিষয়:
অন্যান্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত