ওরা দেখতে অবিকল মানুষের মতোই। মানুষের মতো করেই জন্মগ্রহণ করে, হাঁটাচলা করে, চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়, বাজার থেকে লাউ, বেগুন কিনে নিয়ে আসে বাসায়। কিন্তু তারপরও ওরা মানুষ নয়। ওরা পিশাচ। মানুষের মতো একটা সত্ত্বা আছে বটে তবে সেটা চামড়ার মতো করে তাদের পিশাচ সত্ত্বাটাকে আড়াল করে রাখে। যে কারণে কেউ বুঝতে পারে না যে তারা আসলে কি। তবে বিশেষ বিশেষ মুহুর্তে তাদের সেই পিশাচ সত্ত্বাটা জেগে ওঠে। তখন তাদের চেহারা পাল্টে যায়। চোখ দুটো হয়ে যায় ভাঁটার মতো রক্তলাল, দুই ঠোটের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসে চোখা ধারালো শ্বদন্ত, হাত পায়ের নখ বড় বড় হয়ে যায়, শরীরে বড় বড় পশম গজায়, কন্ঠ থেকে নিঃসৃত হয় গরগর শ্বাপদ ধ্বনি। চেহারার সাথে সাথে তাদের মনুষ্য আবেগ-অনুভূতিও লোপ পায়, বিবেকবুদ্ধি বিলীন হয়ে যায়, তাদের চেতনায় তখন থাকে শুধুই জিঘাংসা আর কাউকে ধারালো নখর-দন্ত দিয়ে চিরে ফেলার উন্মাতাল আকাঙ্খা। তাদের মনুষ্য সত্ত্বা স্বাভাবিক মানুষের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু তাদের পৈশাচিক সত্ত্বাটা নরমাংসভোজী। এজন্য তারা পথে ঘাটে শিকারের সন্ধানে থাকে। নির্জন রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী কোনো পথিক, বাসে বা সিএনজিতে একাকী কোনো মানুষ প্রায় সময়ই তাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। সুযোগ পেলে নারী-পুরুষ কাউকেই তারা ছাড়ে না। তবে নারীদের প্রতি তাদের আলাদা একটা আকর্ষণ আছে। নারীমাংস তারা বেশ পছন্দ করে। তাই তারা সবসময় তক্কে তক্কে থাকে কখন কোন মেয়ের সর্বনাশ করবে। এই নরপিশাচরা সমাজে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকে। কেউ দর্জির দোকানে জামা সেলাই করে, কেউ হোটেলে বেয়ারার চাকরি করে, কেউ বাস-সিএনজি চালায়, কেউ কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে, কেউ ব্যবসা করে, কেউ আবার বড় বড় পদে চাকরিও করে। মোট কথা সমাজের সব জায়গাতেই তাদের দেখতে পাওয়া যায়।
বগুড়া বাসস্টান্ড। সন্ধ্যা নেমেছে। বাসস্টান্ডে অনেকক্ষণ যাবত বসে আছে লাবনী আর হুমায়ুন। তারা দুজন ময়মনসিংহে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে। সম্পর্কে শুধুই কলিগ। বগুড়ায় এসেছিলো শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে। পরীক্ষা শেষে দুপুরে লাঞ্চ করে এবং আরো কিছু কাজ সেরে বাসস্টান্ডে আসতে আসতে বিকেল গড়িয়ে গেছে। এসে জানলো ময়মনসিংহগামী একটা বাস আছে বটে তবে সেটা সন্ধ্যার পর ছাড়বে। সেই থেকে তারা দুজন বাসস্টান্ডে বসে আছে। রাত হয়ে গেলেও লাবনী উদ্বিগ্ন নয়। এই বগুড়াতেই তার শিক্ষাজীবন কেটেছে, সবকিছুই তার পরিচিত। বহুদিন পর আবার এখানে এসে তার ভালোই লাগছে। অবশ্য একটু পর পর তার বড় ভাই রেজা তাকে মোবাইলে ফোন দিচ্ছে। ফোন দিয়ে তার অবস্থা জানছে।
অবশেষে স্পর্শ পরিবহনের বাসটির হেলপার অপেক্ষমান যাত্রীদের উদ্দেশ্যে হাঁক ছেড়ে তাদেরকে বাসে উঠতে বললো। অন্যান্য যাত্রীদের সাথে লাবনী এবং হুমায়ুনও বাসে উঠে পড়লো। বাস একরকম ফাঁকাই বলা যায়। তারা ছাড়া আর মাত্র অল্প কয়েকজন যাত্রী আছে বাসে। সবমিলিয়ে জনা দশেক হবে। বাস ছাড়লে লাবনী জানালা খুলে রাতের বাতাস উপভোগ করতে লাগলো। হুমায়ুন কয়েকবার এটাওটা বলে আলাপ জমাবার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু লাবনীর হু, হ্যা গোছের দায়সার উত্তর শুনে সে শীঘ্রই কথা বলার চেষ্টায় ইস্তফা দিলো। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাসের ঢুলুনি আর রাতের বাতাসে লাবনীর তন্দ্রা এসে গেলো। সে সীটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো। তবে ঘন্টা দুই পরে কোলের উপর ব্যাগের ভিতরে রাখা মোবাইলের ভাইব্রেশন ও রিংটোনের শব্দে লাবনীর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। মোবাইল বের করে দেখলো রেজা ভাই ফোন দিয়েছে। সে কল রিসিভ করে মোবাইল ফোন কানে ধরলো। হ্যালো ভাইয়া। ওপাশ থেকে রেজা বললো, কোথায় এখন? লাবনী বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে অন্ধকারে অপসৃয়মান গাছপালা ছাড়া কিছুই দেখতে পেলো না। হুমায়ুনকে সে জিজ্ঞেস করলো, দেখেন তো হুমায়ুন ভাই, কোন জায়গা এটা? হুমায়ুন উত্তর বললো টাঙ্গাইল। লাবনী রেজাকে সে কথা জানিয়ে ফোন কেটে দিলো।
হুমায়ুন অনেকক্ষণ যাবৎ উসখুশ করছিলো লাবনীকে কিছু বলার জন্য। এক পর্যায়ে সে বললো, আপা, আমাকে একটু বাড়ি যেতে হবে। এলেঙ্গা নেমে গেলে আমার জন্য ভালো হয়। লাবনী বললো, কালকে তো আপনারও অফিস আছে। অফিস করবেন কিভাবে? উত্তরে হুমায়ুন বললো, একদম ভোরে বাড়ি থেকে রওনা দিবো। তাতে যথাসময়েই অফিস ধরতে পারবো। লাবনী বললো, আচ্ছা ঠিক আছে যান। হুমায়ুন বললো, আপনার কোনো সমস্যা হবে নাতো? লাবনী বললো, না, কোনো সমস্যা হবে। আপনি চিন্তা করবেন না। বাস্তবিক লাবনী বেশ সাহসী নারী। পথে ঘাটে একা একা চলাফেরা করার তার অনেক অভিজ্ঞতা আছে। ময়মনসিংহে চাকরী করার পাশাপাশি ঢাকায় সে একটা কলেজে ল-ও পড়ছে। আইন পড়ার কারণে তার ভিতরে আলাদা একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। বাসটি এলেঙ্গা আসলে হুমায়ুন লাবনীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাস থেকে নেমে যায়।
বাসটির সুপারভাইজার দেলোয়ার অনেকক্ষণ যাবত চোখে চোখে রেখেছিলো লাবনীকে। হুমায়ুন নেমে গেলে বাসে লাবনীসহ আর মাত্র দুজন যাত্রী অবশিষ্ট রইলো। এলেঙ্গা অতিক্রম করার পর বাসের হেলপার আবুলের সাথে দেলোয়ারের চোখে চোখে কথা হয়ে গেলো। দেলোয়ারের নীরব ইশারা বুঝতে আবুলের কষ্ট হলো না। সে বাসের দরোজা বন্ধ করে দিয়ে ইঞ্জিন কভারের উপর বসে ফোন বের করে তাদের অন্য দুই সহযোগী মালেক ও কবিরকে ফোন দিলো। এক পর্যায়ে ড্রাইভার জয়নালের সাথেও আবুলের ফিসফিস করে কিছু কথা হয়ে গেলো। জয়নাল লুকিং গ্লাসে লাবনীকে একবার দেখে নিয়ে মাথা ঝাঁকালো। লাবনী এসবের কিছু না বুঝলেও তার দিকে আবুল এবং দেলোয়ারের ঘন ঘন তাকানোতে একটু অস্বস্থি বোধ করলো। বাস কালিহাতি আসলে বাসে থাকা অন্য দুজন যাত্রী নেমে গেলো এবং অপেক্ষমান দুইজন নতুন যাত্রী বাসে উঠলো। তারা আসলে মালেক এবং কবির। লাবনীর দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে তারা লাবনীর ঠিক পিছনের সিটে গিয়ে বসলো। জয়নাল বাস ছেড়ে দিলো। আবুল বাসের দরোজা বন্ধ করে দিয়ে ইঞ্জিন কভারের উপর গিয়ে বসে পড়লো এবং এক দৃষ্টিতে লাবনীর দিকে তাকিয়ে রইলো।
আবুলের দিকে একবার তাকিয়ে দেলোয়ার উঠে গিয়ে গুটি গুটি পায়ে লাবনীর পাশের সিটে এসে বসলো। এতো সিট থাকতে তার পাশে এসে বসায় লাবনী বেশ বিরক্ত হলো। সে গুটিশুটি মেরে দেলোয়ারের ছোঁয়া বাঁচিয়ে জানালার দিকে আরো সরে বসলো। তা দেখে দেলোয়ার দাত বেরে করে হাসলো। তারপর তরল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, ম্যাডাম, ময়মনসিংহে কার কাছে যাবেন? লাবনী বললো, তা দিয়ে আপনার কি দরকার? দেলোয়ার বললো, না, মানে অনেক রাত হয়ে গেছে তো তাই। বিরক্ত হলেও লাবনী বললো, ওখানে আমার বাসা আছে। ও তাই, ভালো। তা দুলাভাই কি করে? দেলোয়ারের পরের প্রশ্ন। এবার লাবনী ক্ষেপে গেলো। ঝাঁঝালো কন্ঠে সে বললো, এতো কথা বলতেছেন কেন? যান, অন্য সিটে গিয়ে বসেন। দেলোয়ার এই কথায় বেশ মজা পেয়ে গেলো। হ্যা, হ্যা করে সে হেসে উঠে খুব স্বাভাবিকভাবে তার ডান হাতটা লাবনীর বাঁ উরুর উপর রাখলো। ভয়ে, আতঙ্কে, ঘৃনায় লাবনী শিউরে উঠলো। সে একরকম চিৎকার করে বললো, হাত কোথায় রেখেছেন? হাত সরান। সরান বলছি। কিন্তু দেলোয়ার হাত সরাল না। লাবনী ডান হাতে তার কোলের উপর থাকা ব্যাগ ধরে রেখে বাঁ হাত দিয়ে দেলোয়ারের হাত সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো। একই সাথে সে চিৎকার করে ড্রাইভার ও হেলপারকে ডাকতে লাগলো। দেলোয়ার লাবনীর বাঁ হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। ড্রাইভার লুকিং গ্লাসে একবার তাকিয়ে দেখে আবার বাস চালানোয় মন দিলো। কিছু বললো না। আবুল উঠে আসলো। কী হইছে? চিল্লান ক্যান? তারপর পিছনে তাকিয়ে মালেক ও কবিরকে উদ্দেশ্য করে বললো, বইস্যা রইছস ক্যান? ধর এইডারে। তারপর নিজেই লাবনীর চুল খামচে ধরলো। হিসহিস করে বললো, চুপ, একদম চুপ, চিল্লাবি না। একদম চিল্লাবি না। মালেক ও কবির উঠে দাড়ালো এবং সবল হাতে লাবনীর হাত, ঘাড়, মাথা, গলা চেপে ধরলো। লাবনী তারস্বরে চিৎকার করে উঠলো। কিন্তু দেলোয়ার সাথে সাথে তার মুখ চেপে ধরলো। এরপর চারজন মিলে লাবনীকে টেনে হিচড়ে বাসের ফ্লোরে এনে ফেললো। লাবনী ভয়, বিস্ময় আর সীমাহীন আতঙ্কের সাথে দেখলো, তাকে ঘিরে দাড়ানো চারজন পুরুষের চেহারা, শরীর খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। তারা ভেঙ্গেচুড়ে এক ধরনের পৈশাচিক আকৃতি নিচ্ছে। সুঁচালো কান, বড় বড় শ্বদন্ত, শ্বাপদের মতো চোখ আর নেকড়ের মতো মুখ নিয়ে তার সামনে দাড়িয়ে আছে চারটা নরপিশাচ। পিশাচগুলো সময় নষ্ট করলো না। অনেকদিন ধরে ক্ষুধার্ত তারা। দ্রুত ফড়ফড় করে লাবনীর জামাকাপড় ছিড়ে ফেলেলো। একটা পিশাচ লাবনীর গলা কামড়ে ধরে এক ঝটকায় কন্ঠনালী ছিড়ে ফেললো। সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলো। চিৎকাররত লাবনীর কন্ঠ থেমে গেলো সেখানেই। এরপর পিশাচগুলো লাবনীর দেহ আয়েশ করে খুবলে খুবলে খেতে লাগলো। একপর্যায়ে হেলপার আবুলের খাওয়া শেষ হলে তার হাতে স্টিয়ারিং হুইল ধরিয়ে দিয়ে ড্রাইভার জয়নালও চলে আসলো ভোজে শরীক হতে। তাদের খাওয়া সমাপ্ত হতে হতে বাস মধুপুর জঙ্গলে প্রবেশ করলো। জঙ্গলের গভীরে রাস্তার ধারে বাস থামিয়ে পিশাচগুলো লাবনীর দেহের অবশিষ্টাংস যা ছিলো তা ছুড়ে ফেলে দিলো।
রেজা অনেকক্ষণ যাবত লাবনীর মোবাইলে ফোন দিচ্ছিলো। কিন্তু বারবার রিং বাজলেও লাবনী ফোন ধরছিলো না। যত সময় যাচ্ছে রেজার মনে ততই দুশ্চিন্তার মেঘ গাঢ় হচ্ছে। এক পর্যায়ে হঠাৎ কেউ তার কল কেটে দিলো। রেজা হতভম্বের মতো ফোনটার দিকে চেয়ে রইলো। তারপর আবার ফোন দিলো। কিন্তু এবার শুনলো একটি নারীকন্ঠ বলছে, আপনি যে নাম্বারে ফোন দিয়েছেন তা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে, অনুগ্রহ করে একটু পরে আবার ডায়াল করুন। ধন্যবাদ। রেজা পাগলের মতো লাবনীর নাম্বার ডায়াল করতেই লাগলো। একবার, দুইবার, তিনবার, চারবার, পাঁচবার…….কিন্তু ফলাফল একই থাকলো।
পরেরদিন রেজা থানায় তার বোনের নিখোঁজ সংবাদ অবহিত করলো। এর দুইদিন পর মধুপুর থানা থেকে খবর আসলো যে মধুপুর জঙ্গল থেকে একটি নাম না জানা মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তবে তারা মৃতদেহটির পরিচয় না পাওয়ায় কয়েকটি ছবি তুলে রেখে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করে ফেলে। সাথে সাথে রেজা আর অন্যান্য ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজনরা ছুটে গেলো মধুপুর থানায়। সেখানে ছবি দেখে তারা সহজেই লাবনীকে চিহ্নিত করে। তাদের কান্নায় সেদিন গাছের পাতা পর্যন্ত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
বাংলাদেশে কোনো অপরাধীকে ধরা খুব বেশি কঠিন কাজ নয়। হুমায়ুনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পুলিশরা খুব সহজেই স্পর্শ পরিবহনের বাসটির ড্রাইভার, হেলপার আর সুপারভাইজারকে গ্রেপ্তার করে ফেললো। এসব নরপিশাচদের মনুষ্য সত্তাটা সাধারণত খুব দুর্বল প্রকৃতির হয়। একটু জেরা করতেই তারা সেদিনের ঘটনার দায় স্বীকার করলো এবং নির্বিকারভাবে অসহায় লাবনীর প্রতি তাদের পৈশাচিক আচরণের বর্ণনা দিয়ে গেলো। তাদের বর্ণনা শুনতে শুনতে রেজার দুই চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো। পাঠক, আদরের ছোটো বোনের প্রতি নরপিশাচদের বীভৎস অত্যাচারের বিবরণ শুনে রেজার বুকে কী ভাঙচুর চলছিলো তা অনুধাবন করার ক্ষমতা বোধ করি আমাদের কারোরই নেই। সেটা সৃষ্টিকর্তাই ভালো বলতে পারবেন। আমরা শুধু প্রত্যাশা করি লাবনীর মতো করুন পরিণতি যেন আর কোনো মেয়ের না হয়। এরপর পুলিশরা কবির আর মালেকের ঠিকানা নিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। কবির স্পর্শ পরিবহনেরই একজন কর্মী ছিলো। আর মালেক কালিহাতি বাজারে একটা দর্জির দোকানে কাজ করতো।
মালেক কালিহাতি বাজারে যে দোকানে দর্জির কাজ করতো সেটার নাম ছিলো কুদ্দুস টেইলার্স। মালিক কুদ্দুস সাহেব নিজেই প্রতিদিন দোকানে বসতেন। তার দুইজন কর্মচারীর মধ্যে একজন মালেক আর আরেকজন নজরুল। তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মালেক আর নজরুল শার্ট, প্যান্ট কেটে সেলাই করে কাস্টমারদের সরবরাহ করে। কালিহাতি বাজারে কুদ্দুস টেইলার্সের একটা আলাদা সুনাম আছে। সবাই এক নামে চেনে এই দোকানটাকে। সেদিন দুপুরে পুলিশের একটি ভ্যান কালিহাতি বাজারে প্রবেশ করলো। পিছনে ছয়জন পুলিশ বসা। সামনে পুলিশের একজন এস আই এবং তার সাথে আছে পুলিশের সোর্স রহমান। রহমানই পথ দেখিয়ে পুলিশের ভ্যানটাকে নিয়ে যাচ্ছে কুদ্দুস টেইলার্সের দিকে। এস আই একপর্যায়ে রহমানকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি সিওর যে আছে দোকানে? জ্বী স্যার, আমি আসার আগেও দেখে গেছি। এস আই আবার সামনের দিকে দৃষ্টি ফিরালেন। সকাল থেকে মালেক একটানা কাজ করে যাচ্ছে। বেশ কয়েকটা অর্ডার জমে গেছে। এর মধ্যে একটা মাছি এসে ভনভন করতে লাগলো। মালেক বিরক্তিতে নাক কুঁচকালো। পুলিশের ভ্যানটা এসে থামলো কুদ্দুস টেইলার্সের সামনে। এস আই দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন। পিছনে বসা পুলিশরাও টপাটপ লাফিয়ে নামলো। তারপর সবাই মিলে পা বাড়ালো কুদ্দুস টেইলার্সের দিকে। শিকারী তার শিকার পেয়ে গেছে। সমাপ্ত।
গল্পের বিষয়:
অন্যান্য