হৃদয়ে লেখা নাম

হৃদয়ে লেখা নাম

এই বিরক্তিকর অ্যার্লাম এর সাউন্ডটা এবার চেঞ্জ করতে হবে… প্রত্যেকদিনই ভাবি করবো কিন্তু আর করা হয়না….

ফোনটার স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি ৪২ টা মেসেজ আর দু-তিনটে মিসডকল ও আছে, ব্যাপারটা কি ?

হঠাৎ করে মনে পরলো আজ তো আমার জন্মদিন কাজের চাপে ভুলেই গিয়েছিলাম। অবশ্য মনে থাকলেই বা কি আজ ৫ বছর হয়ে গেল জন্মদিন পালন করি না…
আমার নাম কিরন , আমি এখন USA এর একটা কোম্পানির ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এর হেড… কোম্পানির দৌলতে ফ্লাট আর গাড়ীও হয়েছে। কিন্তু লাইফটা কোথায় যেন এখনো অসম্পূর্ণ।

এই সব ভাবতে ভাবতে যেন ফাস্ট ইয়ারের ফাস্ট দিনটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো….

ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রথমদিন ভয়ে ভয়ে কলেজে ঢুকেছিলাম যাতে সিনিয়রদের চোখ এড়িয়ে ক্লাসে যেতে পাড়ি, কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।

– ওই ফাস্ট ইয়ার, এইযে এদিকে এদিকে পিছনে তাকিয়ে দেখি ১০-১২ টা দাড়ি-গোঁফয়ালা বড়ো ভাই আর ২ টো আপু, আর আমারই মত আরও তিন চারটে
– আমাকে ডাকছিলে
– হ্যাঁ বাবু তোমাকেই, একটা আপু বলে উঠলো, অগত্যা যেতেই হল, মনেমনে ভাবছিলাম আজ আমি শেষ, কিন্তু সিনিয়র বলে কথা ডেকেছে যখন যেতে তো হবেই।

– কিরে বাল ডাকছিলাম কানে শুনিস না নাকি? (একটা ভাই বলে উঠলো)
– সরি ভাইয়া শুনতে পাইনি
– ঠিক আছে নেক্সট টাইম যেন দুবার না ডাকতে হয়
– ঠিক আছে ভাই
– তারপর বল নাম কি?
– কিরন
– বাবার নাম কি?
-??
– আবার…
-?
– আবার…
– অমুক
– হ্যাঁ, এবার হয়েছে, চল এবার ইন্ট্রো দাও দেখি
(পাশের আর একটা ভাইয়ের হস্তখেপ)
– সেটা কি?
– বাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছ আর ইন্ট্রো কি জানো না? নিজের ফুল ইন্ট্রোডাকশন দে হয় পুরো ইংলিশ না হলে পুরো বাংলা।
১০-১২ বার ট্রাই করেও হল না, তারপর আরো নানান কথা শোনালো, তারপর একটা আপু বললো
– গার্লফ্রেন্ড আছে?
– না আপু
– প্রোপোস করতে পারিস? কাউকে করেছিস?
– না
– ওকে চল আজকে প্রোপোস করে দেখা, আমার তো বুকটুক শুকিয়ে গেল, আস্তে করে বললাম
– কাকে?
– কেন আমাদের কলেজের সেক্সি গেটটা তোর চোখে পরছে না? ওকে কর
– মানে?
– মানে টানে বুঝিনা, তাড়াতাড়ি প্রোপোস করে আয় তাহলে তোর ছুটি….

ভাবলাম নাহ এবারে বাছলাম মনে হয়, এক ছুটে কলেজের গেটের কাছে চলে গেলাম গিয়ে দেখি এখানেও বিপদ কত লোক যাচ্ছে আসছে, বুঝলাম আমার মান সন্মান আজই শেষ, পিছনে তাকিয়ে দেখি সিনিয়রগুলো আমাকেই দেখছে, অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে চোখ বুজে গেট কে I Love You বলেই দিলাম,

– আর ইউ ম্যাড
– ওরে তেরি গেট দেখি আবার রিপ্লাই দিচ্ছে
– ননসেন্স
আমি অবাক হয়ে চোখ খুলে দেখি সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে।

আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে কেমন দেখতে ছিল
একদম সিম্পল লুক, চোখে হাল্কা কাজল, কোমর পর্যন্ত বিনুনি, লিপস্টিক ছাড়া ঠোট তাও যেন গোলাপি, আর একটা ব্লু চুরিদার পরা, পুরো যেন নায়িকা,
দেখার পর আমি বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম কিছুই বলতে পারলাম না,

মেয়েটা বললো
– পাগল নাকি রে বাবা!
– হুম
– ইডিয়ট
এই বলে মেয়েটা চলে গেল, মনে মনে ভাবলাম এটাই বুঝি লাভ এট ফাস্ট সাইট!!
সেদিনের মত সিনিয়রদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম

তারপর অনেক বার মেয়েটাকে দেখেছি কিন্তু লজ্জায় কথা বলতে পারি নি। খোজ নিয়ে জেনেছিলাম মেয়েটা ফার্স্ট ইয়ার টেলিকমিউনিকেশন, যেহেতু আমার ইন্সট্রুমেনটেশন তাই সাহস করে কথা বলতে পারিনি, কিন্তু মনের মধ্যে ওর জন্যে একটা আলাদা জায়গা তৈরি হয়েছিল সেটা ভালই বুঝেছিলাম।

যেখানেই ওকে দেখতাম ক্যাবলার মতো দেখেই যেতাম, ও হয়তো সেটা বুঝতেও পেরেছিল। তাই মুচকি হেসে চলে যেত।

অনেক ভাবার পরও ওকে মনের কথাটা বলার সাহস হয়নি, আমার নিম্নবিত্ত পরিবার যাদের এইসব প্রেম ট্রেম ভুলেও করতে নেই আর ২-য়ত ভয় পেতাম , হয়তো এটা শোনার পর আমাকে ঘৃণা করবে, আমার দিকে আর তাকাবেই না, তার চাইতে ওর মুচকি হাসিতেই খুশী থাকি।
এই ভাবে প্রায় ৪-৫ মাস কেটে গেলো,মিসু যেন আমার মনের আরো গভীরতায় প্রবেশ করতে লাগলো। হ্যাঁ, ওর নাম ছিল মিসু,
কলেজে প্রত্যেকদিন র্যাগিংএর মুখোমুখি হলে, ওর ওই এক চিলতে হাসি যেন সব ভুলিয়ে দিতো।

এই ভাবে চলতে চলতে কলেজে নতুন বছর এলো, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বলে কথা বিরাট আয়োজন, সব্বাই নতুন জামা কাপড় পরে কলেজ এসেছে, কতো ছাত্র, কতো পাস আউট, কলেজ ক্যাম্পাস পুরো ভর্তি হয়ে আছে।

কিন্তু কথায় বলে না যে যে যার যার তালে থাকে, তেমনি আমিও সিনিয়র আর পাস আউট ভাইয়া দের দিয়ে নজর বাঁচিয়ে মিসুকে খুজ্জিলাম, কিন্তু খুজেই পাচ্ছিলাম না, এমন সময় এক সিনিয়র এর খপ্পরে পরলাম, ব্যাস আর কোথায় যাই, সে আর একজন পাস আউট ভাইয়া মিলে আমাকে নিয়ে প্রায় ঘণ্টা খানেক চাটাচাটি করে তারপর ছাড়ল।
তারপর মনের দুঃখে কলেজর পাশের পুকুরপাড়ে গিয়ে পুকুরের দিকে তাকিয়ে বসে রইলাম, মনে মনে ভাবছিলাম যার জন্য এলাম সে তো এলোই না উল্টে চাটন খেয়ে গেলাম,ধুর ধুর!!
এমন সময় পিছনদিক দিয়ে একটা মেয়ের গলা শুনতে পেলাম….

– কিরে এখানে কার জন্য অপেক্ষা করছিস?
গলাটা খুব পরিচিত মনে হল, পিছনে ঘুরে দেখি মিসু। আমার তো পুরো মাথা ঘুরে পুকুরে পরে যাবার মত অবস্থা, কোন রকমে নিজেকে সামাল দিয়ে বললাম

– তুই মানে তুমি এখানে?
– পুরো কলেজে তো আমাকে খুঁজেছেন শুনলাম, তারপর না পেয়ে এখানে আগমন, তো এখানে আসবো না কোথায় যাব? আর প্লিজ তুই করে বল।
– না মানে, কই না তো।
– একটা দেবো না ঠাটিয়ে চর পুরো পুকুরে গিয়ে পরবি। কলেজের ফার্স্ট দিন থেকে দেখছি আমাকে দেখলেই কেমন ক্যাবলামো শুরু করিস কেন বলতো?
– না কিছুনা।
এই বলে আমি উঠে চলে যাচ্ছলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম আমার ভালবাসা আমার আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হেরে গেল। এমন সময় মিসু আমার হাতটা টেনে ধরলো বললো
– ভালবাসিস আমাকে? সত্যি বলবি আমার কসম
আমি মাথা নিচু করে উত্তর দিলাম
– হ্যাঁ, খুব।
– তাহলে কিছুনা বলছিস যে?
– দেখ আমি খুব গরিব ঘরের ছেলে আমাদের এইসব মানায় না।
– বুদ্ধু আর একবার এইসব হাবিজাবি বললে না এক ঘুষিতে তোর নাকটা ফাটিয়ে দেব।
এই বলে ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। আর কানের কাছে এসে বলেছিল
– আই লাভ ইউ টু পাগল।
এই ভাবেই আমাদের ভালবাসা চলতে থাকে, কখনো সিনেমা দেখা কখনে,কলেজ ডুব মেরে পার্কে যাওয়া।
তারপর একদিন হটাৎ সকালে ফোন আসে, ঘুম চোখে ফোনটা কানে দিয়ে সুনি মিসুর গলা
– কিরন কোথায় তুই?
– বাড়ীতে কেন? কী হয়েছে?
-সকালে শ্রীমঙ্গলের নতুন চাঁ বাগানের পর্যটন কেন্দ্র দেখতে এসেছিলাম, কিন্তু অন্ধকারে সিরি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গেছি, আর উঠতে পারছিনা, প্লিজ আসবি একটু?
– মাথামোটা তুই একা কেন গেলি কাউকে নিয়ে যেতে পারলি না? বেশী নড়াচড়া করিসনা আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসছি।
আমি পড়ি কি মরি করে ছুটলাম, কি জানি পাগলিটার কী হল? খুব চিন্তা হচ্ছিল। ওখানে পৌঁছে দেখি নিচতলা পুড়ো অন্ধকার, দোতালায় উঠে একটু আলো দেখতে পেলাম, আর দেখি একটা ঘরের দরজা খোলা কিন্তু ভিতর অন্ধকার, একটা আওয়াজ দিলাম
– মিসু তুই কোথায়?
ওই ঘরের ভিতর থেকে শব্দ এলো
– আমি এখানে, অনেক কষ্টে উপরে এসেছি, তাড়াতাড়ি আয়। খুব ব্যাথা করছে।
আমি এক ছুটে ওই ঘরে গিয়ে ঢুকলাম এবং সাথে সাথে লাইট টা জ্বলে উঠলো।
.
– হ্যাপি বার্থডে বুদ্ধু।
এই বলে মিসু আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। সেদিন ওর মিথ্যের জন্য খুব রাগ হয়েছিল। বলেছিলাম
– রাখ তোর বার্থডে তোর কাছে, জানিস আমার কতো চিন্তা হচ্ছিল তোর জন্য তোর কোনো আন্দাজ আছে?
কথাটা বলে কেঁদেই ফেলেছিলাম।
– ওরে বুদ্ধু তুই কাঁদছিস কেন? আমার কিচ্ছু হয়নি, দেখ আমার দিকে আমি একদম ঠিক আছি। তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। কাল রাত থেকে এত প্লানিং করলাম আর বুদ্ধুটা সুধু কেঁদেই যাচ্ছে এই পাগলটা কে নিয়ে আমি কি যে করি।
– তুই তো বললি পা মনে হয় ভেঙে গেছে, জানিস আমার কত কষ্ট হচ্ছিলো।
– বাব্বা! সুধু তো পা ভেঙেছে বলেছি। যদি মরে গেছি শুনিস তাহলে কি করবি?
– হুহ, থাক তুই আমি চললাম।
আমি এই কথা বলে প্রচন্ড রাগে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিলাম, এমন সময় ও পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো
– এত ভালোবাসে আমাকে আমার পাগলটা?
– হ্যাঁ খুব। প্রমিস কর আর এইসব কথা বলবি না।
– ওকে, পাক্কা প্রমিস। পাগল একটা।
এই বলে আমার কপালে একটা আলতো চুমু খেয়েছিল আমার কপালে, পাঁচ বছর আগের কথা কিন্তু মনে হয় এখনো সেটা অনুভব করতে পারি। সেদিন আমরা খুব হুল্লোর করেছিলাম।

আমাকে ও একটা ওয়াচ গিফট করেছিল সেদিন, যেটা আমি এখনো ব্যবহার করি। আমার অনেক জুনিয়ার বলে যে আমার সবকিছু এত দামি দামি শুধু ওয়াচটা এত কমদামী কেন? আমি সুধু বলি এটা আমার কাছে একটু স্পেশাল ব্যাস আর কিছুনা।
এরপর আমাদের প্রেম আরো গভীরতম হতে থাকে দেখতে দেখতে আমাদের ফাইনাল ইয়ারের পরিক্ষা শেষ হল, দুজনই ফ্রি খালি আড্ডা আর ঘোরা দিন গুলো ভালই কাটছিল। কিন্তু ভালোদিন আর কদিন থাকে, একদিন দুপুর নাগাত মিসুর ফোন।
– কোথায় আছিস রে তুই?
– বাড়ীতে, কেন কি হয়েছে? এমন হাপাচ্ছিস কেন?
আর কাল দেখা করছিস তো?
– কাল না আজ, আজই বিকেলে একবার দেখা করতে পারবি?
– হ্যাঁ পারব, কিন্তু কেন? কি হয়েছে বলবি তো?
– এখন বলা যাবে না। তুই বিকেলে নদীর পাড়ে আয় সব বলছি।
– কিন্তু..
– কোন কিন্তু না যা বললাম তাই কর, ডট চারটে মিস করলে মেরে ফেলবো কিন্তু।
এই বলেই ফোনটা কেটে দিল, আমি তো বুঝতেই পেরেছিলাম আবার কোন ইয়ার্কি মারবে।
তাই এবার আমিও রেডি হয়ে গেছিলাম, প্রত্যেকবার কি আমি বোকা হবো নাকি।

রেডি হয়ে চারটে বাজার দশ মিনিট আগেই আমি পৌছে গেলাম। কিন্তু ও আর আসছিল না, চারটের টাইম পেরিয়ে ঘড়িতে ছটা বাজলো কিন্তু মিসুর দেখা নাই। এবার একটু চিন্তা হচ্ছিল, একটা কল করলাম সুইচ অফ বলল। মনে মনে ভাবলাম নিশ্চই কিছু বড় প্লান, আসুক দেখাচ্ছি মজা। ভাবতে ভাবতেই ম্যাডামের আগমন। আমার ওর জন্মদিনে দেওয়া সেই সি-গ্রিন চুড়িদারটা পড়েছেন। এত সুন্দর লাগছিল চোখ ফেরাতেই পারছিলাম না। একবার দেখাতেই যেন সব অপেক্ষা তুচ্ছ মনে হল। সামনে আসতেই বললো

– অনেকক্ষন এসেছিস না? সরি আসতে একটু দেরি হয়ে গেল। সবার নজর বাঁচিয়ে আসতে হল।
– ওহ তাই। গুড গুড। তো কি বলবি বলছিলিস বল।
( আমি তো রেডি, এবার আর ফাসছি না অনেক বোকা বানিয়েছিস এভাবে।)
– হ্যাঁ, যা বলছিলাম, জানিস আমার ভাই সেদিন আমাদের দেখে নিয়েছে।
– সত্যি? ভালো তো।
– না, মোটেই ভালো নয়, ভাইয়া বাবাকে এসে বলেছে, বাবা আমার জন্য ছেলে দেখে ফেলেছে, সামনের মাসে বিয়ে। তুই কিছু একটা কর।
– ওহ তাই? তা তোর বিয়েতে আমাকে নিমন্ত্রণ করবি তো? বল তোর কি গিফট চাই।
– আমি কিন্তু ইয়ার্কি মারছি না।
– আমি ইয়ার্কি করছি নাকি? বিরিয়ানি করতে হবে কিন্তু তোর বিয়েতে, নাহলে যাব না।
ঠাসসসসসসসস…….. একটা চড় মেরে কাঁদতে কাঁদতে বলল
– তোর তো সব কিছুই ইয়ার্কি মনে হয়, যা তোর কিছু করতে হবে না, পরশু রেসাল্ট আর পরশুই ছেলের বাড়ি থেকে দেখতে আসছে। পরের মাসেই বিয়ে, তারপর যত ইচ্ছে ইয়ার্কি করিস।
– মানে? কিসব বলছিস? তুই ইয়ার্কি মারছিস না?
– না।
– কবে হল এইসব? আমাকে জানাসনি কেন এতদিন?
– কি করে জানাতাম? বাবা ফোন কেরে নিয়েছিল। সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। তুই প্লিজ কিছু একটা কর নাহলে আমি বাচবো না।
– আরে তুই এত ভাবছিস কেন? আমি আছি তো, আর আমি তো জবও পেয়ে গেছি, আমি কালই তোর বাবার সাথে কথা বলবো। সব ঠিক হয়ে যাবে।
– পাক্কা তো?
– আরে পাক্কা, একদম পাক্কা, এবার তো একটু হাস,
– হিহিহি, হয়েছে? আমি এখন আসি বাড়ীতে মিথ্যে বলে বেড়িয়েছি। কাল বিকেলে ৬টার দিকে আসিস ওই টাইমে বাবা বাড়ীতে থাকে।
– ওকে আর তুই বেশি ভাবিস না, আমি সব ঠিক করেই ছাড়ব।
– ওকে বাই।
এই বলে ও চলে গেল। আর আমি বাড়ীতে এসে ভাবছিলাম, কাল যে কী হবে?
পরেরদিন যথাযথ সময়ে ওর বাড়ী পৌঁছে গেলাম, বেল চাপতেই একজন চাকর এসে দরজা খুলল
– কাকে চাই?
– মিসুর বাবা আছেন?
-হ্যাঁ আছেন, বসুন এখানে বাবু এখুনি আসছেন।
আমাকে ড্রয়িংরুম এ বসতে দিয়ে চাকরটা চলে গেল।আমি চারিপাশ এ চোখ ঘোরাতে থাকলাম, দেখে বুঝলাম ভালই বড়োলোক। এর মধ্যে মিসুর বাবার আগমন
– who are you young man? and why are you searching for me?
– আঙ্কেল আমি মিসুর বন্ধু কিরন
আমার নামটা শুনে তার হাসি মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল।
– ওহ তুমি। কী করতে এসেছ আমার বাড়ীতে? আমার নামটা শুনে তার হাসি মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল।
– ওহ তুমি। কী করতে এসেছ আমার বাড়ীতে?
– মানে আমি আমার আর মিসুর ব্যাপারে কিছু কথা বলতে এসেছি, আমি আর মিসু দুজন…..
– ব্যাস। আমি আর কিছু শুনতে চাই না। আমি মিসুর বিয়ে ঠিক করেছি, পাত্র ঢাকা জব করে মাসে ৮০ হাজার মাইনে পায়। এবার বল তোমার কি যোগ্যতা? কি করো?
– আমি এখন টিউশন করি কিন্তু আমিও জব পেয়েছি। নেক্সট উইকে জয়েনিং।
– কত পাবে? ১৫ হাজারের বেশি পাবে কী, আর তোমার বাড়ীও আমি দেখেছি, তোমার কি মনে হয় মিসু থাকতে পারবে ওই বাড়ীতে? ওর মাসে হাত খরচ ১০ হাজার টাকা, দিতে পারবে ওকে? দিতে পারবে ওকে এখনের মত লাইফস্টাইল? পারবেনা, তাই ভুলে যাও ওকে, আমরা দুজনই ওর ভাল চাই তাই বলছি ওর জীবন থেকে সরে যাও, ভুলে যাও ওকে। মিসু এখন একটু বাইরে গেছে ও আসার আগে চলে যাও।
আমি আর একটা কথাও বলতে পারলাম না। মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলাম।বাড়ী আসার পর মিসু অনেক বার ফোন করেছিল কিন্তু আমি ধরিনি।
পরেরদিন দিন কলেজে রেসাল্ট আনতে গিয়েও ওর চোখের আড়ালে ঘুরছিলাম। রেসাল্ট পেলাম আমার ৯৩% আর ওর ৬৮%, ওর অনেকটাই অখুশি হল ওর রেসাল্ট নিয়ে তবুও আমি ওর সামনে গিয়ে সান্তনা দিতে পারিনি। কিন্তু কলেজের গেট থেকে বেড়োনোর সময় ওর কাছে ধরা পড়ে গেলাম।

কিরে কাল যাবি বলেছিলি আমাদের বাড়ী এলিনা যে? বাবা কিন্তু বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলেছে, কিছু একটা কর।
– আমি কী করবো?
– তুই বাবার সাথে কথা বলবি না?
– না আমি ওসব করতে পারবো না
– তাহলে আমাদের ভালবাসা?
– কিসের ভালবাসা? আমি শুধু তোর টাকার জন্য তোর পিছনে ঘুরতাম।
– তার মানে এতদিন যা ছিল সব মিথ্যে? সব অভিনয়?
– হ্যাঁ আবার কি? তোর টাকা খাওয়ার ধান্দা করেছিলাম কিন্তু তোর ভাই সব বুঝে গেল। আর তুই আমার যোগ্যও না নিজের মার্কস দেখেছিস? জব পাবি কোথাও? যা তো যা মাথা খাস না এখন আবার অন্য কাউকে খুজতে হবে।

কিচ্ছু বললো না ও সুধু ওর দুটো চোখ জলে ভেসে যেতে লাগলো। আমি খুব কষ্টে নিজের চোখের জল লুকিয়ে ওখান থেকে চলে এসেছিলাম, ওটাই ছিল লাস্ট দেখা আমাদের, বাড়ী ফিরে খুব কেঁদেছিলাম, খুব ঘৃণা হয়েছিল নিজের উপর। আমি পরদিনই ঢাকা চলে এসেছিলাম কাউকে না বলে। তারপর মন দিয়ে কাজ করেছি, শুধু কাজ আর কাজ। চাকরি পাবার ১মাস পরই বাবা মারা যায়। আমি পুরো একা হয়ে যাই। তার ২ বছর পর আমি USAএর জব অফার পাই। আর এখন আমি USA তে। সব আছে আমার কাছে তবুও যেন কিছু নেই।
৫ বছর আগের এই দিনটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। বারবার ভেবেছি সিলেটে ফিরে যাব, তারপর ভেবেছি কার জন্য? মিসুর তো বিয়েও হয়ে গেছে, এই ভাবতে ভাবতে ফোনটা বেজে উঠলো। দেখি রিমুর ফোন। রিমু আমার ছোট বেলার বন্ধু, বেচারা ভাল নম্বর না পাওয়ার জন্য কোন জব পাচ্ছিল না, তাই ওকে এখানে এনে আমার এসিসট্যন্ট এর জব দিয়েছিলাম। ফোনটা রিসিভ করতেই চেঁচিয়ে উঠলো
– হ্যাপি বার্থডে ভাই।
– থ্যাংকস রে।
– অফিস আসছিস তো? আমার কিন্তু ট্রিট চাই।
– হ্যাঁ অফিস তো আসবই। কিন্তু আমি তো বার্থডে সেলিব্রেট করি না।
– ওরে কিপ্টে তোকে সেলিব্রেট করতে বলিনি। জাস্ট আমাকে ট্রিট দিতে বলেছি।
– ওকে ঠিক আছে। বাট আমাকে কিন্তু একটা গিফট দিতে হবে।
– ওকে কথা দিলাম। হেব্বি একটা গিফট দেব। ওকে বাই।

রেডি হয়ে অফিস পৌঁছে গেলাম, ওখানে গিয়ে আর এক ঝামেলা, আমাদের বস আমার জন্য একটা সেক্রেটারি রিক্রুট করেছে, আমি কতবার বলালাম আমার সেক্রেটারি লাগবে না। কিন্তু ওনার এক কথা
-সবার আছে তোমাকেও নিতেই হবে। অনেক দিন তোমার জেদের জন্য দেইনি এবার নিতেই হবে, আফিসের সুবিধের জন্য, তোমার টেবিলে সেক্রেটারির ফাইল আছে দেখে নাও।কাল জয়েনিং।
আমি কিছু বলতে না পেরে ওখান থেকে বেড়িয়ে এলাম নিজের রুমে এসে দেখি টেবিলের উপর একটা ফাইল রাখা, রাগের চোটে ওটাকে ডাস্টবিন এ ফেলেদিলাম।
অফিস শেষ হবার পর রিমু এসে হাজির। এসেই বলে
– কিরে তুইও নাকি সেক্রেটারি নিচ্ছিস শুনলাম।
– ধুর, আর বলিস না। বস জোর করে আপয়েন্ট করেছে। দেখ না এমন টর্চার করবো দুদিন পরেই পালাবে।
– আমি বলি কি অনেকদিন তো হল এবার সেক্রেটারি টাকেই পটিয়ে নে না।
– তুই মার খাবি না ট্রিট খাবি?
– অবস্যই ট্রিট।
– তাহলে বাজে না বকে চল। কিন্তু আমার গিফট?
– চলনা গিফটটা ওখানেই দেব।
– ওকে
আমরা দুজনে পাশের একটা রেস্টুরেন্ট এ চলে গেলাম। আমি বললাম
– কি খাবি? অর্ডার দে।
– দে না তোর পছন্দমত, আমি একটু টয়লেট হয়ে আসছি।

আমি অর্ডার দিয়ে বসে আছি। পুড়নো স্মৃতি গুলো যেন আজ একটু বেশিই মনে পড়ছে। হাতের ঘরিটার দিকে তাকিয়ে চোখটা ভারি হয়ে যার, কারন এটা সেই প্রিয় মানুষটার দেওয়া। আমার প্রিয়তমার দেওয়া। না, সে তো এখন আমার প্রিয়তমা নয়। এখন সে অন্য কারোর। এসব ভাবতে ভাবতে মিসুর মুখটা যেন চোখে ভেসে উঠল। সেই আমার দেওয়া সি-গ্রীন চুড়িদার পড়া। মনে হচ্ছে যেন আমার দিকেই হেটে আসছে।
– কিরে বুদ্ধু, কেমন আছিস? মনে আছে আমাকে?
আমি অবাক হয়ে চোখ রগড়ে নিলাম। আমি ভুল দেখছিনা তো। না, এত সত্যি মিসু। তারপর নিজের আবেগ গুলো মনের মধ্যেই রেখে বললাম
– ভালই আছি। তুই কেমন আছিস?
– ভালো।
– তো এখানে কি করতে? তোর বরকে দেখতে পাচ্ছি না।
– বিয়ে করলে তো বর থাকবে, আমি বিয়ে করিনি।
– ওহ।
কিছুক্ষণ সব চুপ, আবার মিসু বলে উঠলো
– ভালবাসিস এখনো আমাকে?
– কোথায় না তো। (আমি অনেক কষ্টে উত্তর দিলাম)
– তাহলে আমার ঘরির দিকে তাকিয়ে চোকের জল ফেলছিলস কেন?
– কোথায় না তো।
– তাই?
– হ্যাঁ, আমি তো আমার সেক্রেটারি কে ভালবাসি।
– ওহ কী নাম তার?
– ওই তো কি যেন নাম…
– অনেকদিন চড় খাসনা, মনে হচ্ছে লাগবে একটা।
– কেন?
– ঠিক করে মিথ্যেও বলতে পারিস না, তোর সেক্রেটারি হয়ে কাল আমি জয়েনিং করছি।
– কী???
– হ্যাঁ। তুই চলে যাবার পর আমি বাবার সাথে তোর কথা জানতে পেরেছিলাম। তোকে অনেক খোজার পরও তোকে পাইনি। তোর কোন বন্ধুর কাছেও তোর খবর পাইনি। তুই চলে যাবার ৩ দিন পর একটা এক্সিডেন্ট এ আমি সবাই কে হারিয়ে ফেলি। জানিস তোর কথাগুলো খুব লেগেছিল আমার। তাই বিয়েটা আর করিনি। নিজের পায়ে দাড়াতে চেষ্টা করে গেলাম। নিজের ক্ষমতায় একটা ভালো জব পেয়েও গেলাম। ৫ বছরে কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হয়েগেছিলাম। এই বছরগুলোতে নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত করে তোকে ভুলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি খুব ভালবাসি যে তোকে। এটা সেদিন আরো ভাল বুঝতে পেড়েছিলাম যেদিন ফেসবুকে রিমুকে খুঁজে পেলাম আর ও আমাকে বললো তোর সব কথা। ভাবলাম তোর সামনে গিয়ে আর একবার নিজেকে তুলে ধরবো দেখবো তোর যোগ্য হতে পেরেছি কি না। ওই জব ছেরে দিলাম আর রিমুর সাহায্যে তোর সেক্রেটারি পদে ইন্টারর্ভিউ দিলাম। আগের জব হিস্টরির জন্য খুব সহজেই জবটা পেয়েও গেলাম। কিন্তু এখন দেখছি তুই আমাকে ছাড়া ভালই আছিস। আমি আর তোকে বিরক্ত করবো না, আসি রে ….

এই বলে মিসু চলে যেতে লাগলো। আমি ছুটে গিয়ে ওর হাতটা ধরলাম। আর বললাম
– এত কথা বললি আমাকে কিছু বলতে দিবি না?
– বল কি বলবি?
– আই লাভ ইউ! আমি এখনো তোকে আর শুধু তোকেই ভালবাসি। সেদিন তোর বাবা বলেছিল আমি তোর যোগ্য নই তোকে সুখি রাখতে পারব না। তাই তোর সুখের জন্য নিজের ভালবাসা কে বুকে নিয়ে সরে এসেছিলাম। এখনো তোকে আগের মতই ভালবাসি হয়তো আগের চাইতে বেশি। পাড়লে আমাকে ক্ষমা করে দিস রে।
এই বলে আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আর বলল

– পাগল একটা,যে নামটা হৃদয়ে লিখে রাকচিস তার থেকেই পালিয়ে থাকিস।

গল্পের বিষয়:
অন্যান্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত