মাজহার মিয়াকে তার অফিসের লোকজন কিপটা মাজহার নামে চিনতো। তাদের ব্যাংকে দুইজন মাজহার ছিল। একজন কিপটা, আরেকজন পেটমোটা মাজহার।
ব্যাংকের কেরানি ছিলেন। অবসর নিয়েছেন কিছুদিন আগে। এখন বাসাতেই থাকেন আর মোবাইল টিপেন। মোবাইল যখন প্রথম গণমানুষের হয়ে গেল, তখন থেকেই তার হাতে সবসময় ফোন থাকতো। এখন তার হাতে একটা নতুন স্যামসাং স্মার্টফোন। জে৭ মডেলের। কেরানি সাহেবকে নতুন স্মার্টফোন কিনে দিয়েছে তার জামাই। জামাই তার বড়ই বিদ্বান। মাথার টাক দেখলেই পেটের বিদ্যার অনুমান করা যায়।
অথচ তার কাছে মোবাইল মানেই ছিল নকিয়া ১১০০। কীপ্যাডের নম্বরগুলো উঠে যাওয়ার পরেও দুইবছর আন্দাজে নম্বর চাপতেন। পরে গত তিনবছর দেশীয় ওয়ালটন সেট ব্যবহার করেছেন। আসলে তিনি ফোন দিতেনই শুধু ঘরে তার স্ত্রী আর ছেলেকে। আর কল শুধু রিসিভ করতেন। মেয়ের কাছেও ফোন ছিল। ওটা অবশ্য তিনি কিনে দেন নাই। মেয়েই কোথা থেকে যেন জোগাড় করেছিল। প্রেমটেম করত মনে হয়।
চাকরি ছোট করলেও মাজহার মিয়ার তেজ অনেক বেশি। পূর্বপুরুষ জমিদার ছিল। উচ্ছৃংখলতার অবশ্যম্ভাবী ফলাফল, জমি বেচে সংসার চালাতে গিয়ে একপর্যায়ে তার বাবা কপর্দকশুন্য হয়ে মারা যান। অবশ্য তিনি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন, এটাতে তার বনেদিয়ানা টের পাওয়া যায়। জমিদারি না থাকলেও ঠাট বজায় রেখেছেন। অফিসের লোকজন যদিও তাকে অকৃতজ্ঞ বলেই চেনে। জীবনে কারও কাছ থেকে উপকার নিয়ে তিনি সেটা পরে স্বীকার করেন নাই।
বাসায় ওয়াইফাইয়ের কানেকশন লাগানো হয়েছে। মাসে ৫০০ টাকা বিল দেয় তার বাড়ীর নিচতলায় ভাড়া থাকা শ্যালকের ছেলে। দুইতলা বাসার ৭-৮ জন বান্দা এই লাইন ইউজ করে।
মাজহার মিয়ার কাছে ইন্টারনেট মানে ফেসবুক আর ইউটিউব। ফেসবুকে দুইচারটা ইসলামি কথাবার্তা লেখেন আর ওয়াযের ভিডিও শেয়ার করেন প্রায়ই। দেশের অবক্ষয় নিয়েও যে তিনি চিন্তিত এটা বোঝা যায় তার কিছু কিছু পোস্টে। তবে মাজহার মিয়ার সবচেয়ে প্রিয় পাসটাইম হচ্ছে ইউটিউবে হূমায়ূন ফরিদীর অভিনীত সিনেমার কিছু চুম্বক অংশের ভিডিও ক্লিপ দেখা। তিনি দেখেন আর ভাবেন, কী এক দারুণ অভিনেতা ছিল বাংলাদেশের! ফরিদীর ‘তেল গেলে ফুরাইয়া, বাত্তি যায় নিভিয়া’ গানটা তার খুব পছন্দের।
স্কুলের পুরনো কতক বন্ধুবান্ধব কেও খুঁজে পেয়েছেন ফেসবুকে। কিভাবে পেলেন তিনি জানেন না। জাকারবার্গ মিয়া কায়দা করে এই কৌশল করেছে। যেই নম্বরগুলো সেভ করা আছে তার ফোনে আর যাদের সাথে তিনি নিয়মিত কথা বলেন, তাদের প্রোফাইলের ফ্রেন্ড সাজেশন চলে আসে অটোমেটিক। ফেসবুকে যেই ফোননম্বর দিয়ে রেজিস্টার করেছেন, অজান্তেই তিনি তাদের অনুমতি দিয়েছেন ফোনের সবকিছুকে এক্সেস করার।
মাজহার সাহেব ইউটিউব দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছেন বারান্দার ইজিচেয়ারে। মুখ হালকা হা হয়ে আছে। এর মধ্যে তিনি স্বপ্ন দেখলেন, তিনি মারা গেছেন। তার বেহেশত নসীব হয়েছে। নিউ এন্ট্রি হিসাবে তাকে ফেরেশতারা বেহেশতের সবকিছু ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন। তিনি হুরপরীদের দেখলেন, বেহেশতি খানাদানা দেখলেন, দুধের নহর দেখলেন। কিন্তু সেখানে তার হাতে কোন মোবাইল ফোন পেলেন না।
এই নিয়ে তার ভিতরের চিরাচরিত নেমকহারামি বের হয়ে আসলো, তিনি চিৎকার করে উঠলেন, ‘ ***র একটা বেহেশত বানাইছে!’