রাজ্যের চিন্তা মাথায় নিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছি। আগামীকাল আমার ভালবাসার স্বপ্নকণ্যা অবণির জন্মদিন। অবণির জন্মদিনে কি গিফট দেয়া যায় সেটাই চিন্তা করছি। সেই সাথে নানা হিসাব-নিকাশও করছি।পকেটে আছে মাত্র এক হাজার টাকা। মাস শেষ হতে আরও ১০ দিন বাকী। একহাজার টাকার মধ্যে অবণিকে একটা ভালো উপহার দিয়ে কিভাবে বাকী দিনগুলো চলবে সেই চিন্তায় মগ্ন আমি।
কিছুদূর যাওয়ার পর কিছু লোকের ভীড় দেখতে পেলাম। কাছে গিয়ে দেখলাম ৮-১০ বছরের একটা ছেলে মাটিতে পড়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কোন গরীব ঘরের সন্তান বা পথশিশু। ছেলেটা মাথা ফেটে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।এতগুলো মানুষ আছে সেখানে কিন্তু কেউই ছেলেটাকে হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাই করছে না!! গরীব বলেই হয়তো এমন অবহেলা!! আমার কেমন যেন মায়া লাগল।আর কোন উপায় না দেখে নিজেই একটা সিএনজি ডাকলাম। কয়েকটা লোকের সহায়তায় ছেলেটাকে সিএনজিতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে এলামতাকে। চিকিৎসা শেষে ছেলেটার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ কিনে নিলাম। ছেলটার কাছ থেকে বাসার ঠিকানা নিয়ে তাদের বাসায় এলামবাসা বললে ভুল হবে, একটা বস্তি এলাকায় ঝুপড়ির মত বাসা তাদের।ছেলেটার নাম সবুজ।
আমাদেরকে দেখে তার মা বের হয়ে এল। সবকিছু খুলে বললাম সবুজের মাকে।সবশুনে তার মায়ের চোখের জলই আমার প্রতি নিরব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলো। তাদের পারিবারিক অবস্থা দেখে আমি চিকিৎসার খরচের ব্যাপারটা নিয়ে কোন কথা না বলেই বিদায় নিয়ে চলে এলাম।রাতে মেসে এসে মানিব্যাগে দেখি আর মাত্র বিশ টাকা অবশিষ্ট আছে। অবণির জন্য কিছু কেনাও হলো না।
পরদিন সকালে ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গল। অবণি ফোন করেছে।
—- অভি, এখনো ঘুমাচ্ছো তুমি?—
—- না, এইতো উঠলাম ঘুম থেকে।: তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে রমনা পার্কের সামনে চলে আসো।
—–হুম আসছি। একঘন্টা পর……।
…পার্কের একটা বেঞ্চিতে অবণির পাশে বসে আছি। অবণি বলে উঠল
–আজ কয় তারিখ? –
–— কেন? ৫ ই জানুয়ারি
—তুমি ভুলে গেছো তাই না?-কিসের কথা বলছ?
অবণি আর কিছু না বলে মাথাটা নিচু করে রাখল। ওর চোখ থেকে পানি পড়ছে।
আসার সময় কিনে আনা গোলাপটা পকেট থেকে বের করে হাঁটুগেড়ে ওরসামনে বসলাম। গোলাপটি বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, ” শুভ জন্মদিন। এর বেশি কিছু আর দিতে পারলাম না। আমার হাতটা কি ধরবে সারা জীবনের জন্য? কোন কথা না বলে ও শুধু গোলাপটা নিল আর মাথাটা উপর নিচে ঝাঁকাল। ঠোঁটে হাসি, চোখের পানি গাল বেয়ে পড়ছে। কিযে সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে। আমি ওর পাশে বসে ওকে কালকের ঘটনাটা খুলে বললাম। তোমার এসব কাজের জন্যই তোমাকে আমার এত ভালোলাগে।
এভাবেই সবসময় মানুষের উপকার করে যাবে, তাতেই আমি খুশি। এরপর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ” তুমি সারাজীবন আমার পাশে থেকে আমাকে এভাবেই ভালোবাসলে হবে।