মেয়েটা নিশ্চুপভাবে বসে আছে বাসার পেছনে বাগানের বেঞ্চটাতে। মাঝে মাঝে আবার শীতের কারণে হালকা কেঁপে উঠছে। তবুও তার রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না,আর পাশের বাসার বারান্দা থেকে ছেলেটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মেয়েটা যে রেগে গিয়ে ওখানে বসে আছে তা ছেলেটা জানে। হঠাৎ মেয়েটা তার গায়ে একটা চাদর অনুভব করলো……..
.
-কি রে…!!!.তুই এত রাতে এখানে???
– হুম,দেখলাম যে মেয়েটা শীতে কাঁপতেছে।তাই ভাবলাম একটু সঙ্গ দেয়া যাক
-তোরে কে বলছে যে আমি কাঁপতেছি.?? ভাগ এখন এইখান থেকে….
-নাহ,যাবো না। আগে বল যে আজকে আবারবাসায় কি নিয়ে রাগ করছিস??
-আর বলিস নাহ,আজকে মা বলতেছে যে আমার জন্য নাকি একটা ভাল বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ছেলে ভালো,ভালো একটা জব করে… এইসব হাবি-জাবি বলতেছিলো।তাই রাগ করে বের হয়ে আসছি এখানে।
-এতে খারাপ কি.?? সব বাবা-মা তো এটাই চায় যে তার মেয়েকে ভাল কারো সাথে বিয়ে দিতে, এই চাওয়াটা কি অন্যায় নাকি????
-তুই জানিস না যে আমার পড়ালেখা এখনো শেষ হয় নি???(রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো)
-পড়া-লেখা..!! নাকি অন্যকিছু??? (একটু উপহাস করেই বললো ছেলেটা)
-একদম কথা ঘুরাবি না…আমার কেউ থাকলেতুই জানতি।তবে……
-তবে কি.???
-আছে কেউ একজন,কিন্তু তাকে আমি কোনদিনও বলতে পারবো না
-কে সে??? বলবি..???(খানিকটা বিষণ্ন মুখেই বললো ছেলেটা)
-নাহ,বলা যাবে না।সত্যি করে বল তো তুই কেন এখানে এসেছিস???
-কোনদিন কি একা এভাবে তোকে বসে থাকতে দিয়েছি.??তারউপর আবার মেয়েটা শীতে এভাবে রয়েছে…….(একটু হেসেই বললো ছেলেটা)
-এহ্হ…!! আসছে।।তবে আমি কিন্তু জানতামযে তুই এখানে আসবিই
-তার মানে তুই আমার অপেক্ষাতেই ছিলি.??
-নাহ,আমার বয়ফ্রেন্ডের অপেক্ষায় ছিলাম (তাচ্ছিল্যের সুরেই বললো মেয়েটা)
-ছেলেটা কিছুক্ষণ নীরব হয়েই বসে রইলো।হঠাৎ মেয়েটা ছেলেটার হাত স্পর্শ করলো…….
-কি রে,তোর হাত তো একদম ঠাণ্ডা হয়ে গেছে(বলেই চাঁদরের এক পাশটা এগিয়ে দিলো)
-থাক,লাগবে নাহ……
-চুপ..!!! একটাও কথা বলবি নাহ(খানিকটা ধমকের সুরে)
-ছেলেটা চাদরে নিজেকে জড়িয়ে নিল।তারপর মেয়েটা আচমকা ছেলেটার কাঁধে মাথা রাখলো। ছেলেটা কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না, তাই সে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়েই বসে রইলো। নীরবতা ভেঙে মেয়েটাই বলে উঠলো,
-কিছু বলবি.??
-নাহ…….
-তুই কি কিছুই বুঝিস না.????(অভিমানী সুরে বললো মেয়েটা)
-আচ্ছা,বুঝে গেলেও কি এভাবেই কাঁধে মাথা রাখবি.??
-যদি বলি “না”
-তাহলে আমি সারা জীবন আমি অবুঝ হয়েই থাকবো(মুচকি হেসে বললো ছেলেটা)
-তোর কিচ্ছু বুঝতে হবে না। শুধু প্রত্যেক মন খারাপেই তোর কাঁধটা যেন কাছে পাই, শীতের রাতে যেন তোর এই চাদরটা এগিয়ে দেয়ার জন্য তোকে পাই। আচ্ছা,তোর চাদরে এত সিগারেটের গন্ধ কেন.? (কিছুটা রাগ করেই বলল মেয়েটা)
ছেলেটা প্রতি উত্তরে আর কিছুই বলল না। শুধুই মুচকি হেসে মেয়েটাকে এক হাত দিয়ে কাছে টেনে নিল।
মেয়েটাও আর কিছুই জিজ্ঞেস করলো না। দুজনই নিশ্চুপ,কেউ কোনো কথাই বলছে না। কিছু নীরবতা সত্যিই সুখের হয়,যেগুলা ভাঙতে হয় না……………..