সন্দেহ ও ভালোবাসা

সন্দেহ ও ভালোবাসা

ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন আশিক চৌধুরী ও জাহানারা খানম। বছর দুয়েক….. পরে তাদের ঘর আলো করে এক কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। বেশ চলছিলো তাদের সুখের সাঁজানো সংসার।

কিন্তু একদিন…… একদিন আগুন লাগলো তাদের সেই স্বপ্নের সংসারে। সে আগুনে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল তাদের সোনার সংসার।

শার্ট ধুতে গিয়েই বেশ অবাক হলেন জাহানারা খানম।শার্টে স্পষ্ট লিপস্টিকের ছাপ। পুরো একটা ঠোঁটের অবয়ব ফুটে উঠেছে সেই ছাপে। আশিক চৌধুরীকে তিনি কিছুই বললেন না। ব্যাংক লোন নিয়ে কেনা গাড়িটা ঋণের দায়েই বিক্রি করে দিয়েছেন জাহানারা।

এতে আশিক চৌধুরী বেশ অসন্তুষ্টও হয়েছিলেন।ঠিক তারপর থেকেই প্রায়ই তার শার্টে লিপিস্টিকের ছাপ নয়তো মেয়েদের মাথার চুল পাওয়া যাচ্ছে। জাহানারা ভাবলেন কাল নাস্তার টেবিলে কথাটা তুলবেন।

কিন্তু…… পরদিন বেশ দেরিতে ঘুম ভাঙলো আশিক চৌধুরীর। আজ অফিসে জরুরী একটা মিটিং আছে তার বলি বলি করেও আজও বলা হলো না ঘটনাটি।

প্রতিদিনের ন্যায় আজও শার্টের বোতাম লাগিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে পায়ের মোজাটাও পড়িয়ে দিলেন জাহানারা খানম। সবার…. অলক্ষ্যে জাহানারার কপালে একটা চুমু খেলেন আশিক চৌধুরী।

তারপর…… সোজা বেরিয়ে গেলে। ইদানিং খুব বেশী পাল্টে গেছেন আশিক চৌধুরী। ব্যস্ততার অজুহাতে বিকেলে এখন আর বেলকোনিতে তাকে নিয়ে বসেন না।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে আগে তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতেন আর এখন সারাটি দিন ঘুমিয়ে এবং টিভি দেখেই কাটিয়ে দেন। আজ অফিস থেকে ফিরতেই কথাটা তুললেন জাহানারা। আশিক চৌধুরী কথাটা হেসেই উড়িয়ে দিলেন।

— তুমি অযথাই আমাকে সন্দেহ করছো জাহান॥

— সন্দেহ করার মতো যথেষ্ট কারণ অবশ্য আছে।

–তুমি কি ভাবো আমি অন্য নারীর কাছে যাই?

— না গেলে এসব আসবে কোথা থেকে?

— আমিও জানিনা কোথা থেকে লেগেছে।

এভাবে প্রায় প্রতিদিনই তাদের মধ্যে রেষারেষি হতে লাগলো। একটা সময় সেটা বিচ্ছেদ এ রুপ নিলো।

একমাত্র মেয়ে জান্নাতি কে নিয়ে আলাদা হয়ে গেলেন জাহানারা॥ আশিক চৌধুরী অনেক বার চেষ্টা করেছেন কিন্তু জাহানারাকে আর ফিরিয়ে আনতে পারে নি।

জাহানারা আশিক চৌধুরীকে কসম দিয়ে বলেছেন যে আমি মরে যাবো তবুও তোমার কাছে ফিরবো না।আশিক চৌধুরী বুক ভরা হতাশা আর কষ্ট নিয়ে শূন্য হাতে ফিরে এলেন।

ফিরে আসার সময় অাশিক চৌধুরী জাহানারাকে উদ্দেশ্য করে বলেন…… “বড্ডো ভালোবাসি তোমাকে, নিজের খেয়াল রেখো।”

তারপর দেখতে দেখতে, পার হয়ে গেলো দশটি বছর। দশ বছর পরের কথা…… আশিক চৌধুরীর মেয়ে জান্নাতির এইচ এস সি পরিক্ষা চলছে।

মেয়েকে প্রতিদিনের ন্যায় আজ ও বাসে করে পরিক্ষার কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন জাহানারা সিট না পেয়ে মা ও মেয়ে দু’জনকেই দাড়িয়ে যেতে হচ্ছে।

হাঠত্ ড্রাইভার জোরে ব্রেক কষলো। টাল সামলাতে না পেরে জাহানারা খানম অন্য একজন লোকের শরীরের উপর পড়লেন,আবার তার শরীরের উপর এসে পড়লো জান্নাতি।

মেয়েকে পরিক্ষার কেন্দ্র ঢুকিয়ে দেয়ার পরপরই জাহানারা খানম আবিষ্কার করলেন তার সাদা রঙের শাড়ীর উপর স্পষ্ট লিপস্টিক মাখা ঠোঁটের ছাপ। পরমূহুর্তেই পানির মতোই পরিষ্কার হয়ে গেল দশ বছর আগের ঘটনাটি।

বুক ভরা অভিমান নিয়ে অজানা গন্তব্যে আশিক চৌধুরী পাড়ি জমিয়েছেন বছর তিনেক পূর্বেই। জাহানারার মনে হলো তার চেয়ে বড় অপরাধি এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই শাড়ীর আঁচলে মুখ লুকিয়ে ডুঁকরে কেঁদে উঠলেন তিনি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত