সকালে ছাদে আমার ফুলের গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছিলাম। তখন পিছনে আমার ছোট বোন দিয়া এসে হাজির।
ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলবে কিন্তু চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। আসলে দিয়া আমায় একটু ভয় পায়।
তাই আমিই বললাম..
— কিরে কিছু বলতে আসলি নাকি?
— হুমম…
— তাহলে দাড়িয়ে না থেকে কি বলবি বল?
— আসলে ভাই আজ তো আমাদের কলেজে আমাদের ইন্টারের বিদায় অনুষ্ঠান আর সবাই রং খেলবো।
কিন্তু মাকে এটা বলার পর বলছে রং যেন না খেলি। সবাই খেলবো কিন্তু আমিই….
— কিন্তু কোন কিছু না। সবার সাথে তুইও খেলবি।তবে আমি তোর সাথে তোদের কলেজে যাবো। তবে তোদের ক্লাসে যাবো না। কলেজের আশে পাশে থাকবো। তোর অনুষ্ঠান শেষ হলে আমায় ফোন দিস আমি তোরে নিয়ে বাসায় আসবো।
— উম্মা আমার মিষ্টি ভাই।
— হইছে এবার যা রেডি হতে যা।
দিয়া খুব হাসি মুখে চলে গেল। সবার সাথে মজা করবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই দিয়ার হাসিটা নষ্ট হতে দিতে চাই না।
দিয়া এমনিতেই আমায় ভয় পায় আর যদি এখানে রাগ দেখিয়ে বলতাম না তোর যেতে হবে না তাহলে হয়ত কেদেঁই দিতো।
আর দিয়ার সাথে আমি গেলে হয়ত মা কিছুই বলবে না। তাই আমিও রেডি হতে চলে গেলাম ওর কলেজে যাওয়ার জন্য।
.
দিয়ার কলেজে চলে আসলাম। এই কলেজ থেকে আমিও পাশ করে বার হইছি তাই সবই চিনি।
যাদের বিদায় অনুষ্ঠান তাদেরকে একটা করে সাদা টি-শার্ট দেওয়া হচ্ছে। দিয়া ওর টি-শার্ট টা নিয়ে পরে নিল।
আমি ওর পিছনেই আছি। আমি কলেজের বাইরে যেতে চাইছিলাম কিন্তু দিয়া বলল ওর ফ্রেন্ডসদের সাথে দেখা করে যাওয়ার জন্য। তাই বাধ্য হয়েই ওর পিছনে হাটছি। ওদের অনুষ্টান যে রুমে হচ্ছে সে রুমের সামনে যেতেই কে যেন রং দিয়ে ঢিল দিলো।
কিছু রং পরলো দিয়ার টি-শার্টে আর রংয়ের বেশি অংশ পরলো আমার শার্টে। এটা দেখে ওইখানের সব চুপ হয়ে গেল।
কে রং দিলো এটা দেখার জন্য যখন তাকালাম তখন দেখি একটা মেয়ে জিব্বায় কামড় দিয়ে আরেকটা মেয়ের পিছনে সরে গেল। দিয়া নিজে এখন মাথা নিচু করে আছে। হয়ত ও ভয় পাচ্ছে যদি আমি ওরে বকি।তখন আমি বলে উঠলাম…
— কিরে দিয়া তোর ফ্রেন্ডসদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি না।
দিয়া কিছুটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
সেই সুবাদে জানতে পারলাম আমারে যে রং মারছে তার নাম নিত্তিয়া।
নামটা খুব মিষ্টি আর তার সাথে নিত্তিয়া ছেলে মানসী ভাবটাও খুব মজার।
তারপর সবার সাথে পরিচয় শেষ করে বেড়িয়ে আসলাম।
ওদের এমন অানন্দ করা দেখে আমার জীবনের ফেলে আসা দিন গুলোর কথা মনে পরে গেল।
আমিও তো একদিন বন্ধুদের সাথে রং খেলেছি।আজ আমাদের বন্ধুদের মাঝে অনেকই নিজের জীবন গুছাতে ব্যস্ত।
কেউ কেউ তো বিয়েও করে ফেলেছে। আমিও অবশ্য একটা কোম্পানিতে জব করি। তবে এখনি বিয়ে করার শখ নেই।
ইচ্ছা আছে নিজের বোনকে ফ্যাশন ডিজাইনার বানাবো। তাই অন্য কোন দিকে মাথা ঘামাতে চাই না।
সবাই বলে প্রেম জিনিসটা নাকি হঠাৎ হয়ে যায় কিন্তু আমার জীবনে কেন যে হয়নি সেটাই বুঝি না।
আমি সবাইকে তার প্রেমে সাহায্য করছি কিন্তু নিজে করি নি।
আমি তো চশমা পরি তাই বন্ধুরা আমায় বলতো চার চোখে নাকি কোন মেয়েই পছন্দ করা যায় না।
কাউকে ভালবাসতে হলে মনের দুই চোখ দিয়ে দেখতে হয়।
হয়ত অনেককে দেখেই মনে ভাল লাগার তৈরী হইছে তবে সেটা ক্ষনিকের। তাই আমার মনে তেমন কেউ নেই।
দিয়ার অনুষ্ঠান শেষ হতেই দিয়া আমায় ফোন দিলো আর আমি ওরে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় আসার পর মা বলতেছে ভাই বোন সমানে রং খেলে আসছে। বড় ভাইটা যেমন বাদর আর বোনটা তার সেনা।
তবে মায়ের কথা কি বেশি শুনে থাকা যায়। এক কান দিয়ে কথা ডুকে আর আরেক কান দিয়ে বার হয়ে যায়।
.
রাতে শুয়ে শুয়ে অফিসের কিছু কাজ করছি। এমনি সকালে আজ অফিস বন্ধ করতে হয়েছে। তখন দিয়া রুমে আসলো…
— কিরে এখানে কি? তোর পড়াশুনা নাই।
— ভাই পড়েই আসছি। একটু তোর সাথে কথা বলার ছিল।
— হুমম বল।
— ভাই তোরে না আমাদের গ্রুপের একটা মেয়ে খুব লাইক করছে।
বলছে তুই নাকি খুব কিউট আর তোর সাথে ফ্রেন্ডশীপ করতে চায়।
— নাম কি তোর ফেন্ডের?
— ওর নাম অর্নিয়া।
— সুন্দর নাম। কিন্তু মেয়ে তো ভাল না। এখন আমার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করবে আর তারপর রাত দিন কথা বলবে আর পরে পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হলে বলবে আমার দোষ। এর থেকে ভাল হবে তুই বলে দিস তোর ভাই কোন অপরিচিত মেয়ের সাথে ফ্রেন্ডশীপ করে না। আমার ফ্রেন্ড হতে গেল কোন না কোন ভাবে স্পেশাল হতেই হবে ।
— তাও ঠিক। আচ্ছা ভাই তুই যে আমার সাথে ওইখানে গেলি, তোর কি কোন মেয়েকে পছন্দ হয় নি।
— হুমম নিত্তিয়া নামের মেয়েটা দেখতে কিউট।
— যাক কাউকে তো ভাল লাগছে। এখন থেকে নিত্তিয়ার সাথে আমার ভাব জমাতে হবে। শত হলেও আমার ভাইয়ের ভাল লাগছে।
— আমি শুধু বলছি মেয়েটা দেখতে কিউট। ভাল লাগছে বা ভালবাসি কিছুই বলি নি।
— আরে কিউট থেকেই ফিউট হয়ে যাবে নে।
— ফিউট কি?
— আরে ভালবাসা আর কি?
— ওই তুই যাবি নাকি মার খাবি।( দিয়ার কান ধরে)
— যাচ্ছি তো।
— হুমম….
দিয়া চলে যেতে লাগলো। দিয়া দরজার সামনে গিয়ে বলল, ” ভাইয়া নিত্তিয়া একটু পাগলী টাইপের তবে মেয়ে ভাল।
“কথাটা বলেই দৌড় দিলো। পাগলী বোন আমার। ও আমায় মাঝে মাঝে বলত যে আমার কোন জি এফ আছে কি না?
ওর নাকি কাউকে ভাবি ডাকার খুব শখ।
.
আজ শরীরটা একটু জ্বর জ্বর ভাব লাগছিল তাই অফিস থেকে বিকালে চলে আসছি।
রাস্তায় একটাও রিকশার দেখা মিলছে না তাই হাটতেঁই লাগলাম।
প্রায় ১৫ মিনিট হাটাঁর পর একটা ছোটদের স্কুলের পাশ দিয়ে যাচ্ছি আর হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো।
এমনি এখন শীতকালের শুরু হয়েছে আর সাথে বৃষ্টি।
এই অসময়ের বৃষ্টি খুব খারাপ তাই বাধ্য হয়ে স্কুলের পাশে যাত্রী ছাউনিতে গিয়ে দাড়ালাম। অনেক গার্ডিয়ানই দাড়িয়ে আছে। হয়ত তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে নিয়ে আসছে। হঠাৎ একটা মেয়ে পাশে এসে বলল……
— হাই, আপনি দিয়ার ভাইয়া সিহাব না??
— হুমম কিন্তু তুমি?
— এতো তারাতারি ভুলে গেলেন। কিছুদিন আগে যে আপনাকে রং দিয়ে ঢিল মারলাম।
— ও কি যেন নাম তোমার। ও হ্যা নিত্তিয়া, তাই তো।
— হুমম আসলে ওই দিন মজার ছলে আপনার উপর রংটা পড়ছিল। তাই সরি।
— সরি বলার কোন দরকার নেই। আমি কিছু মনে করি নি।
— ও আচ্ছা আপনি বাচ্চাদের স্কুলের সামনে কেন? আপনি বুঝি আপনার বাচ্চাকে নিয়ে যেতে আসছেন?
— আরে না। এখনো বিয়ে করি না আর বাচ্চা তো দূরের কথা।
আসলে শরীরটা জ্বর জ্বর লাগছিল তাই অফিস থেকে চলে আসলাম। আর কোন রিকশা পাচ্ছিলাম না তাই ভাবলাম যদি স্কুলের সামনে এসে একটা রিকশা পেয়ে যাই। কিন্তু এখানে এসে অসময়ের বৃষ্টির কবলে পড়লাম।
— খারাপ নয় বরং ভালই হলো।
— কীভাবে ভাল হলো?
— এই যে আমাদের পরিচয়টা মজবুত হলো।
— পরিচয় মজবুতে লাভটা কি হলো?
— আসলে দিয়ার কাছে শুনলাম আপনি কোম্পানির সিভিল বিভাগের ইন্সট্রাক্টর।
— হুমম তো।
— না আমি যখন বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করবো তখন আপনি আমার বাড়িটা বানিয়ে দিয়েন।
— তুমি লেখাপড়া শেষ করতে আরো ৫ বছর। আর যদি তারাতারি চাকরীও পেয়ে যাও তাহলে একটা বাড়ি বানানোর টাকা কামাতে সব মিলিয়ে মোট ৫ বছর লাগবে। মোট ১০ বছর লাগবে। আর ১০ বছর আগেই তোমার বাড়ি বানানোর কন্ট্রাক্ট দিচ্ছো।
— হি হি হুমম। কত্তো ফাস্ট আমি দেখলেন তো।
— প্রথম দিনের দেখায়ই বুঝে ফেলছিলাম তুমি কেমন?
— মানে?
— মানে তুমি স্কুলের সামনে কেন আসছিলে?
— ও আমার ছোট ভাইকে নিতে।
— সব সময় বুঝি তোমার ভাইকে নিতে আসো।
— না, মা আসে। আসলে আজ বাড়ি পরিষ্কার করছে তো। তাই মা ব্যস্ত থাকায় আমিই চলে আসলাম।
— ও আচ্ছা ।
— ওই শুনেন।
— হুমম বলো।
— আচ্ছা আপনি কি সব সময় এমন পেচাঁ মত মুখ ঘোমড়া করে রাখেন।
— মানে?
— মানে কিছু না? এমন রাগি ভাব না রেখে একটু হাসতে তো পারেন। মনে হয় না আপনি হাঁসলে আপনায় খারাপ লাগবে। এমন রাগি ভাবে থাকলে হয়ত সবাই আপনাকে ভয় পায় কিন্তু সম্মান কম মানুষেই করে।আপনাকে দেখে একটা কবিতা মনে পরে ” রামগরুড়ের ছানা, হাঁসতে তাদের মানা। “।
— আচ্ছা বৃষ্টি প্রায় শেষ, আমি আসি।তুমিও ভাল ভাবে বাসায় যেও।
— হুমম একটু হাসতে চেষ্টা তো করো।
নিত্তিয়ার কথার কোন জবাব না দিয়ে একটা রিকশা নিয়ে চলে আসলাম। যখন চলে আসছিলাম তখন ওর মুখে রাগ ছিল কিন্তু যখন আমি রিকশা দিয়ে একটু পথ আসার পর পিছন ফিরে তাকালাম তখন ওর মুখে হাসি ছিল। এইসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে কারন মেয়ে চরিত্র বুঝা বড় কষ্ট।
.
রাতে ছাদে বসে একা একা চাদঁ দেখছি। হঠাৎ মোবাইলটা বেজেঁ উঠলো আর তাকিয়ে দেখি তুহিনের ফোন। অনেক দিন পর আমার এই বন্ধুর ফোন। ছেলেটা আগের থেকে অনেক বদলে গেছে। ও আগে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিল কিন্তু যখন থেকে তুহিন ধুমপান করা শুরু করে আর বাজে ছেলেদের সাথে মিশে তখন আমি ওর থেকে দূরে চলে আসি। প্রথমে আমি ওরে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু যখন দেখি ও আমার কথার বিরুদ্ধে যাচ্ছে তখন আমিই বন্ধুত্বের পথটা পাল্টে দেই। ওরে আমি বলেছিলাম যদি কখনো প্রিয় বন্ধুর অভাব অনুভব করে তখন যেন আমায় ফোন দেয়। আজ ঠিক সেই সময়টা আসলো। আমি ফোনটা রিসিভ করে খুব সাধারন ভাবেই বললাম….
— হুমম তুহিন বল।
— দোস্ত আগামী শুক্রবারে আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবি।
— কোন দরকার?
— আসলে তুই তো জানতি যে আমি নিধিকে ভালবাসতাম।
— হুমম তো।
— আসলে ও আমার সাথে এখন রিলেশন রাখতে চাচ্ছে না। ওরে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু আমার কথা শুনছেই না। তাই আমার সাথে শুক্রবারে একটু যাবি। প্লিজ ভাই নিধি হয়ত তোর কথা শুনবে কারন নিধি তোরে বড় ভাইয়ের মত মানে।
— আচ্ছা কয়টায় আসতে হবে।
— ১০ টার দিকে নদীর পারে চলে আসিস।
— আচ্ছা।
তারপর ফোনটা রেখে দিলাম। আমি জানতাম এমন কিছু একটা হবে। মেয়েরা যতই সিগারেট খোর,স্টাইলিস্ট এইসব ছেলে পছন্দ করুক না কেন কিছু মেয়ে আছে যারা ধুমপান করাকে ঘৃণা করে। আর নিধিও এমন মেয়ে। হয়ত তুহিনকে একদিন বদলাতেই হতো।
.
সকালে আমি আর তুহিন নদীর পাড়ে দাড়িয়ে কথা বলছি তখন নিধিকে আসতে দেখলাম কিন্তু অবাক হলাম নিধির সাথে নিত্তিয়াকে দেখে। এখানে নিত্তিয়া কেন? নিধি এসে নিত্তিয়াকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। যদিও একটু অবাক হয়েছি তবু নিত্তিয়া নিধির কাজিন লাগে বলায় নরমাল মোডে আসলাম। নিধির চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখের নিচে কালি জমে গেছে। হয়ত এইটা তুহিনের জন্যই হয়েছে। তখন আমি নিধিকে বলল…
— নিধি নিজের এ কি অবস্থা করে রেখেছো?
— ভাইয়া এটা আপনার বন্ধু খুব ভালই জানে। ও শুধু পারে মানুষকে কষ্ট দিতে।
— কি হয়েছে সেটা বলো?
— ভাইয়া আমি ওর কাছে কোন দামী জিনিস চাই নি। শুধু চাইছি তুহিন যেন এই সব ছাই পাশ খাওয়া ছেড়ে দেয় আর বাজে বন্ধুর সংঙ্গ ছেড়ে দেয়। কিন্তু ও রাজি না।
— হুমমম বুঝলাম। তাছাড়া তোমার আবদারও ভুল না।আচ্ছা নিধি আমি আজ তুহিনকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো যেন সে নেশা জাতীয় দ্রব্য ছাড়তে পারে। আর হা তুহিন তোমায় সত্যি ভালবাসে। যদি তোমায় ভাল না বাসতো তাহলে তোমার সাথে ব্রেকআপ করে দিতো। কিন্তু তুহিন তা করে নি বরং তুহিন আমায় নিয়ে আসছে যেন তুমি ওরে ছেড়ে না যাও।যাই হোক, তোমার এই সিহাব ভাইয়ের দিকে চেয়ে তুহিনকে ৭টা দিনের সুযোগ দাও।
— আচ্ছা ভাই আপনি যা বলবেন তাই। পারলে তুহিনকে একটু আপনার মত বানান।
— আচ্ছা ।
তারপর সবাইকে নিয়ে ফুসকা খেলাম। ফুসকা খাওয়ার সময় খেয়াল করলাম আমার পায়ের সাথে কে যেন পা দিয়ে আমার পায়ে টাচ করলো। আমার সামনে নিত্তিয়া বসে ছিল। আমি ওর দিকে তাকাতেই নিত্তিয়া আমায় চোখ মারলো। দিয়া বলে ছিল নিত্তিয়া একটু পাগলী কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে নিত্তিয়া পুরো পাগলী। তারাতারি খাওয়া শেষে আমিই বিলটা দিয়ে দিলাম।তারপর ওদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। তবে নিত্তিয়ার আচরন গুলো খুব ভালই লাগছিল।
.
প্রায় তিন দিন পর আজ তুহিনকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসছি।ধুমপানে কারনে ওর যে ক্ষতি গুলো হইছে এই গুলোর সমাধানের জন্য। আর তুহিনকে খারাপ সংঙ্গ থেকে দূরে রাখার জন্য আমাকে প্রতিদিন তুহিনকে সময় দিতে হচ্ছে। একটা ভাল বন্ধুই পারে আরেকটা বন্ধুকে নতুন জীবন দিতে। ডাক্তারের চেম্বারে গেলাম আর ডাক্তার তুহিনকে কিছু টেষ্ট করলো। প্রায় ২ ঘন্টা বসিয়ে রেখে রিপোর্ট দিলো। যখন ডাক্তারকে রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে চাইলাম তখন ডাক্তার তুহিনকে রুম থেকে বাইরে যেতে বলল।তারপর আমি জানতে চাইলাম…
— কোন নেগেটিভ হয় নি তো ডাক্তার?
— ওর ফুসফুস প্রায় ২০% ড্যামেজের কাছে চলে এসেছে। যদি এখনি ধুমপান না ছাড়ে তাহলে ফুসফুস সম্পূর্ণ নষ্ট হতে পারে হতে পারে।
— হুম বুঝলাম। আচ্ছা আমি তুহিনকে বুঝাবো।
তারপর ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে চলে আসলাম।
.
রাস্তা দিয়ে আমি আর তুহিন হাটছিঁ। তুহিন হয়ত কয়েকশ বার জানতে চেয়েছে কি হয়েছে কিন্তু আমি আমি কিছুই বলি নি।
— তুহিন তুই নিধিকে ফোন দিয়ে বল কাল যেন সকালে তোর সাথে দেখা করে।
— কেন?
— বলতে বলছি তাই বল। এতো প্রশ্ন করিস না। এমনিতে তে নিজের জীবন নষ্ট করছোস। এবার কি নিধির জীবনটা নষ্ট করতে চাস।
— হইছে টা কী?
— তোর গলায় ক্যান্সার হয়েছে।
আমার কথা শুনে তুহিন রাস্তায় বসে পরলো। আমি মিথ্যা বলছি যেন নিজেকে একটু বদলায়। এখন তুহিনকে বললাম..
— তুই নিজে যদি ভেঙ্গে পড়িস তাহলে তোর বাবাকে দেখবে কে? আর ওদের এখনই এইসব বলিস না।
–( তুহিন চুপ করে থাকলো)
— তুহিন তোর মোবাইলটা দে।
আমি তুহিনের মোবাইলটা নিয়ে তুহিনের বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিলাম যে তুহিন আজ আমার সাথে ঘুমাবে। তারপর নিধিকে ফোন দিয়ে বলে দিলাম যেন কাল দেখা করে। তারপর তুহিনকে নিয়ে আমার বাসায় আসলাম আর আমাদের সবার সাথে বসিয়ে ডিনার করালাম। তুহিনকে নিয়ে যখন ছাদে গেলাম তখন তুহিন চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। একটু কান্না করুক, এটা ওর প্রাপ্য। তুহিনের জন্য নিধি অনেক কেদেছেঁ। সারাটা রাত আমি তুহিনকে বুঝালাম যেন এখন থেকে হাসি খুশি থাকে। সবাইকে ও ভালবাসে আর ধুমপান বন্ধ করে দেয়।
.
সারা রাত হয়ত ঘুমাতে পারি নি কারন তুহিন নিজের কি ক্ষতি করে বসে? এখন ও বুঝতে পেরেছে ও জীবনে কতজনের মুখের হাসি নষ্ট করতে বসেছে।
আমি আর তুহিন দাড়িয়ে আছি নদীর পাড়ে। একটু পরই নিধি আর নিত্তিয়াকে আসতে দেখলাম। আমার হাতে তুহিনের রিপোর্ট গুলো ছিল।নিধি আমায় বলল…
— ভাইয়া এই গুলো কিসের রিপোর্ট?
— কাল তুহিনকে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আসলাম আর এই গুলো ওরই রিপোর্ট ।
— রিপোর্টের রেজাল্ট কি ভাই?
— তুহিনের গলায় ক্যান্সার ধরা পরছে।
নিধিও নির্বাক হয়ে গেল। নিজেকে যেন সামলাতে পারছে না তুহিন আর নিধি। তখন নিধি তুহিনকে বলল…
— বাহ্ তুহিন আমি তো তোমায় ভয় দেখিয়ে ছিলাম তোমার সাথে রিলেশন রাখবো না। যেন তুমি এই কারনে ভাল হয়ে যাও। কিন্তু তুমি তো চির বিদায়ের পরিকল্পনা করে রেখেছো।
তখন তুহিন আর নিধি একজন আরেকজনের হাত ধরে কাদছেঁ। প্রায় ৫ মিনিট চলে গেল। তখন আমি বললাম…
— এই যে রোমিও জুলিয়েট তোমাদের প্রেম কাহিনী এখনি শেষ হয়ে যাই নি যে এত্তো কান্নাকাটি করছো।
— মানে?
— মানে তুহিন তোর কোন ক্যান্সার হয় নি। সামান্য ফসফুস ড্যামেজ হয়েছে।
— তাহলে তুই মিথ্য বললি কেন??
বললেই আমাকে মারতে শুরু করলো তখন আমি বললাম…
— মিথ্যা বলবো না তো কি করবো? তোরে দেখাতে চেয়েছি আমরা সবাই তোকে কত ভালবাসি। তুই এইসব খেয়ে শুধু নিজের ক্ষতি করছিস না বরং আমাদের হাসিটাকেও মেরে ফেলছিস। একবার ভেবে দেখ তো তুই মরে গেলে তোর বাবা মায়ের কি হবে? নিধি তোরে কত্তো ভালবাসে এটা একবার ভেবেছিস। শুধু তোকে বুঝাবার জন্য আমি মিথ্যার নাটক করেছি। নে এবার যদি মনে হয় আমি ভুল করেছি তাহলে আমায় মার।
তুহিন আমার কথা শেষ না হতেই আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আর বলল..
— দোস্ত তুই আমার জীবনের সত্যিকারের বন্ধু যে আমায় আজ একটা নতুন জীবন দিল। হুমম আমি আজ থেকে কখনো নেশা করবো না। আজ ক্যান্সারের মিথা নাটকটা আমায় বুঝিয়ে দিল ” কিছু ক্যান্সার বেচেঁ থাকার আরেক নাম “।দোস্ত তোরে অনেক ভালবাসিরে।
— হইছে এবার ডায়লগ কম মার নয়ত ইমোশনে কেদেঁ দিবো।
আচ্ছা যাই হোক, তোরা তোদের নিজের জীবনটা নতুন করে শুরু করো।
আর আমি অফিসে যাই নয়ত চাকরী আর থাকবো না।
— আচ্ছা বায়।
সবাইকে বায় দিয়ে চলে আসবো এমন সময় পিছন থেকে নিত্তিয়া এসে বলল…
— এই মিষ্টার শুনেন..
— হুমম
— ওদের জীবনের গল্পের তো একটা মোড় এনে দিলেন। এবার নিজের জীবনেরও একটা নতুন গল্পের প্রেম কাহিনী শুরু করেন।
— এটা কোন গল্প নয় যে শুরু করবো। হয়ত এখনও তুমি কিছু বুঝতেই পারো নি।
কিন্তু নতুন একটা প্রেমের কাহিনী অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে। পাবলিকের কাছে জানতে চাও। বুঝে যাবে…
.
নিত্তিয়া কি উত্তর দিবে তা জানার জন্য আর না দাড়িয়ে চলে আসলাম। কারন সব কথা বুঝিয়ে দেওয়া যায় না।
কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।সব গল্প বলে শুরু হয় না তবে মনের গভীর থেকে শুরু হয়ে যায়।