ভাই বোনের ভালবাসা

ভাই বোনের ভালবাসা

সকালের ঘুম ভেঙ্গে গেল ফোনের কারণে, ঘুম ঘুম চোখে স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখি নীলা আপুর ফোন ।
হ্যালো কিরে এত সকালে ফোন করে বিরক্ত করছিস কেন ?
কি এখন এত সকাল ?
নয়তো কিরে ?
ওরে জমিদার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ সকাল ১০ টা বাজে ।
তোর সকাল ১০ টা হতে পারে কিন্তু আমার এখন ভোর ৫ টা । আর এখন ফোন দিয়েছিস কিসের জন্য ?
ঐ কুত্তাআআআআআ গত রাতে আম্মু কি বলেছিল তোর মনে আছে ?
মনে নেই !
শয়তান ইচ্ছা করছে তোর বিছানায় এখুনি পানি দিয়ে আসি ।
ঘুম থেকে উঠ আর বিকেলের মধ্যেই বাসায় চলে আয় ।
কিন্তু কিসের জন্য ?
ঐ কুত্তাআআআআআ আগামীকাল ছেলে পক্ষ আমাকে দেখতে আসবে ।
তো আমি কি করবো ?
কি করবি মানে ! আগামীকালের সমস্ত কাজের দায়িত্ব আম্মু না তোকে দিয়েছে ?
হ্যাঁ তো ???
তুই বিকালে মধ্যে আসবি কি তাই বল ?
ওকে আসছি ।
সাবধানে আশিস বাই ।
ওকে বাই ।
আরে এখনো তো আমাদের পরিচয় দেওয়া হলো না
আমি #জাহিদ_হাসান
আর এতক্ষণ যে ফোন করে আজাইরা প্যাচাল পাড়ছিল সেটা আমার #নীলা আপু ।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে কলেজের দিকে রওনা দিলাম ।
প্রথম ক্লাসটা করে চলে আসলাম বাসায় ।
গোসল করে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে একটু রুমে এসে ফেসবুকে লগ ইন করে দেখি নীলার ম্যাসেজ
ঐ শয়তান কোথায় রে তুই ?
বাড়িতে
আসবি কখন ?
সন্ধ্যায়
তাহলে আমি মার্কেট যাবো কখন ?
আমি কি জানি !
আমি কিচ্ছু জানি না তুই বিকালের মধ্যেই আসবি একসাথে মার্কেটে যাবো ।
আচ্ছা আসছি ।
দুপুর ২ টার দিকে রওনা দিলাম ।
বাসের মধ্যে হেডফোন দিয়ে গান শুনতে শুনতে বিকাল ৫ টার দিকে আপুদের বাসায় ।
আম্মু আমাকে দেখে খুবই খুশি ।
তারপর হাতমুখ ধুয়ে হালকা নাস্তা করে আম্মু আপু আর আমি বেরিয়ে পড়লাম মার্কেটের উদ্দেশ্য ।
মার্কেট হাটা পথে ৫/৭ মিনিট লাগে ।
বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে বলতে যাচ্ছি
বিয়ের পরে আবার আমাদের ভুলে যাবি না তো ?
ঐ কুত্তাআআআআআ বিয়েটা মনে হচ্ছে এখুনি হচ্ছে ?
বেশি বকবক না করে মার্কেটে চল ।
আম্মু তোমার মেয়ে মনে আমাদের ভুলে যাবে ।
বাজে বখিস না তো আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি ।
তো আমি কি করবো এটাই সত্য যে তুই আমাদের ভুলেই যাবি হি হি হি হি হি
কুত্তাআআআআআ দাড়া দেখছি তোকে ।
দেখেছো আম্মু সত্যিটা বলছি বলে তোমার মেয়ে রেগে যাচ্ছে হি হি হি হি হি (আপু কে রাগাতে আমার খুব ভালো লাগে)
বিভিন্ন গল্প করতে করতে আমার মার্কেটে চলে আসলাম।
প্রথমে শাড়ির দোকানে এসে প্রায় পুরো দোকানটা উল্টা পাল্টা করে একটাও শাড়ি পছন্দ হলো না। চলে আসলাম অন্য দোকানে এখানেও একই অবস্থা হওয়ার উপক্রম।
একটা দেখছে আর একটা রাখছে আমি একটু বিরক্ত হয়ে গেছি।
জাহিদ দেখ তো এই শাড়িতে কেমন লাগছে?
একদম পেত্নীর খালাতো বোনের মত লাগছে রে 😁😁😁
ঐ কুত্তাআআআআআ এইটা কেমন ?
না এটা ভালো লাগছে না।
তাহলে কেমন কালার এর শাড়ি নেবো?
নীল !!!!
আচ্ছা নীল রঙের শাড়িটা দেখান(আম্মু বলল)
শাড়িটা হাতে নিয়ে আম্মু বলল জাহিদ দেখো তো
আম্মু এই শাড়িতে আপুকে একদম নীল পরির মত লাগবে।
আচ্ছা তাহলে এটাই রাখি(আম্মু বলল)
ঠিক আছে, তোকে এই শাড়িতে সেই লাগবে রে আপু
ধন্যবাদ।
তারপর আরও ২ ঘন্টার মত এটা ওটা কিনে বাসায় ফিরে আসলাম
আম্মু রান্না করছে, আপু তার বান্ধবীদের সাথে ফোনে কথা বলছে আর আমি ফেসবুকে
রান্না শেষ করে টেবিলে খাবার নিয়ে আম্মু আমাকে খেতে ডাকলেন
সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করতে করতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করছি ।
খাওয়া দাওয়া করে রুমে এসে আবার ফেসবুকে লগ ইন করে কয়েক জন বন্ধুর সাথে চ্যাট করতে করতে রাত প্রায় ৩ টা বাজে ।
সবাইকে বিদায় জানিয়ে ঘুমাতে গেলাম ।
কারন পরের দিন সকালে আমার কিছু কাজ করতে হবে ।
সকাল ৭:৩০ আম্মু ডেকে দিয়ে সকালের নাস্তা তৈরি করতে গেছে কিন্তু আমি আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
প্রায় সকাল ৯ টায় কাকের কা কা ডাকে মানে আপুর ডাকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল ।
ঐ তোকে আম্মু ডেকে দিয়েছে কখন ?
কই আম্মু ডাকেনি
তো এখন উঠ কুত্তাআআআআআ
ঐ আমারও একটা নাম আছে #জাহিদ_হাসান এর পর থেকে ঐ নামে ডাকবি না হলে……
না হলে কি ?
কিচ্ছু না পেত্নী 😁😁😁😁
বলেই উঠে সোজা বাথরুমে
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে কাজ শুরু করে দিলাম আম্মু দেখানো মত ।
ওদিকে আপুর বান্ধবীরা আপুকে সাজানোর কাজে ব্যস্ত ।
সমস্ত কিছু কমপ্লিট করে গোসল করে বর পক্ষের জন্য অপেক্ষা করছি ।
কিছু সময় পর বর পক্ষ আসে তাদের জন্য শরবত থেকে শুরু করে সমস্ত খাবার খেতে দিলাম ।
তারপর বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে বলতে কেউ একজন বলল মেয়েকে নিয়ে আসুন ।
কয়েক জন চলে গেছে আপুকে আনতে
আপু রুমে প্রবেশ করতেই সবাই অবাক নীল শাড়িতে আপুকে একদম নীল পরির মত লাগছে।
ছেলে তো প্রথম দেখাতেই হ্যাঁ বলে দিয়েছে।
সবাই বলল তাহলে তো কথাই নেই সোজা বিয়ের দিন তারিখটা ঠিক করে নেওয়া যাক আম্মু বলল নীলা ছেলেকে তোর পছন্দ তো ?
হ্যাঁ
তাহলে দিন তারিখ ঠিক করা যাক ছেলের বাবা বলল ।
আচ্ছা আবির ব্যাংক থেকে কবে ছুটি পাবি(ছেলের বাবা)
আগামী ২৩ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত ছুটি নিতে পারবো
তাহলে ২৫ তারিখ বিবাহের দিন ঠিক করা যাক ?(ছেলের বাবা)
সবাই সম্মতি জানালো হ্যাঁ ।
বর পক্ষ চলে গেছে ।
বিয়ের দিনটা কেমন যেন একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গেল(আম্মু)
(আমি) ব্যাপার না ঠিকই আছে শুভ কাজে দেরি করতে নেই ।
কিন্তু বিয়েতে তো অনেক কাজ এত কাজ তুমি একা সামলাতে পারবে ?
চিন্তা করতে হবে না আমার ২ জন বন্ধু আছে ওদের ডেকে নেবো ।
যেটা ভালো বোঝ তাই করো ।
আম্মু ওটা আমার উপর ছেড়ে দেন আমরা বোনের বিয়ে বলে কথা ।
২৫ তারিখ বিয়ে তাই ২২ তারিখ মেহেদী কে ফোন দিলাম
হ্যালো মেহেদী ?
হ্যাঁ, কিন্তু ঐ হারামি তোকে কলেজে দেখছি না কেন ?
আপুর বিয়ে ২৫ তারিখ আমি এখানে এসেছি, আর কালকের মধ্যেই তুই আর আকাশ চলে আসবি ।
ওকে কালকে যাচ্ছি ।
ধন্যবাদ দোস্ত ।
২৩-২৫ তারিখ বিবাহ বাড়িতে অনেক কাজ করতে হবে ।
মেহেদী আর আকাশ কে নিয়ে সমস্ত কাজ করছি । আর দেখছি কোথাও কোন কমতি নেই তো ।
দুই দিনে সমস্ত কাজ কমপ্লিট করে ফেলেছি দেখে আম্মু তো সেই খুশি ।
অবশেষে বিবাহের দিন
অনেক ব্যস্ততার কারণে আপুকে একবারও দেখিনি ।
দুপুরে বিবাহের জন্য বরের গাড়ি চলে এসেছে ব্যস্ততা আরও বেড়ে গিয়েছে মেহেদী কে বললাম সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো ?
হ্যাঁ কোন কমতি নেই রে ।
কিন্তু আকাশ কোথায় ?
ওতো আস্ত ফাঁকিবাজি দেখ গিয়ে কোথাও মেয়ে পটাচ্ছে ।
মীম আপু এসে বলল নীলা তোমাকে ডাকছে ।
আসছি ।
কিরে পেত্নী ?
সারাদিনের মধ্যে একবারও তোকে দেখলাম না তো ?
এত ব্যস্ততার মধ্যে আসতে পারিনি ।
ঠিক আছে আমাকে কেমন লাগছে এটা বল ?
একদম পেত্নীর মত লাগছে !!!! হি হি হি হি
কুত্তাআআআআআ ঠিক করে বল
একদম নীল পরির মত লাগছে ।
এবার আপুকে একটু হাসাতে দেখলাম
আচ্ছা ওদিকে কি হচ্ছে দেখিকে
যা
অনেক আনন্দের সাথে বিয়েটা হয়ে গেল ।
এখন নব দম্পতিকে বিদায় জানানোর পালা
ওরা দুজনেই আম্মুকে সালাম জানালো ।
আপু আম্মু এবং আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না 😩 করতে লাগতো ।
বর পক্ষরা বলল এবার আসুন ।
আমি দুলাভাই কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম আমার আপু খুব ভালো ওকে কখনো কষ্ট দিবেন না ওকে একটু দেখে রাখবেন ।
আপু তুই দুলাভাইকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করিস তোর শশুর শাশুড়ি কে সেবা যত্ন করিস ।
জাহিদ আসি রে ভাই ভালো থাকিস ।
আপু তুইও ভালো থাকিস ।
তারপর গাড়িতে উঠে সবাই চলে গেল তাদের গন্তব্য ।
যতদূর চোখ যায় আম্মু আর আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম ।
অবশেষে যখন কিছুই দেখা যাচ্ছে না তখন আম্মু কে নিয়ে ফিরে আসলাম ।
জাহিদ আমরা কি করবো রে ?
আকাশ বলল
মেহেদী আর আকাশকে সমস্ত কিছু গোছানোর দায়িত্ব দিয়ে ।
আমি আর আম্মু বাড়ির একপাশে মুখোমুখি দুটি চেয়ারে বসে আছি ।
একে একে সকল আত্মীয় স্বজনেরা আম্মুর সাথে দেখা করে চলে যাচ্ছে ।
এখন সন্ধ্যা পুরো বাড়ি ফাঁকা আমি আম্মু আনমনে বসে আছি ।
আর ভাবছি সেই দিন গুলোর কথা…
আজ থেকে প্রায় ৩ বছর আগের কথা একদিন রাতে ফেসবুক চালাচ্ছি এমন সময়
পরবর্তী অংশের জন্য অপেক্ষা করেন ।।।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত