অসমাপ্ত সপ্ন

অসমাপ্ত সপ্ন

→ওস্তাদ ডানে।
ওস্তাদ সামনে গাড়ি আছে….
.
এভাবেই দিন কাটে সোহাগের।
সোহাগ ট্রাকের হেলপার (ড্রাইভারের সহযোগি)
সোহাগের বয়স যখন ৪ বছর তখন তার বাবা মারা যায়।
মা, দুই বোন আর সোহাগ, এই নিয়ে তার পরিবার।
সোহাগের বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বলতে তেমন কিছুই নেই। শুধু ২ কাঠা জমির ওপর তাদের কুড়ে একটা ঘর।
.
অভাবের সংসারে প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্তেও সোহাগ বেশিদুর লেখাপড়া করতে পারে নাই।
ক্লাস ৫ এ থাকা অবস্থায় সে তার পারার বড় ভাইয়ের সাথে ট্রাকের হেলপাড়ি শুরু করে।
.
যখন সোহাগ হেলপারি শুরু করেছিলো তখন সে এই জগৎটা সম্পর্কে বুঝতো না। সাভাবিক ভাবে এমনটাই হওয়ার কথা।
কিছুদিনের মধ্যে সোহাগের পরিচয় হয় আরেক ট্রাকের হেলপার রাজুর সাথে।.
.
রাজু ৫ বছর যাবত ট্রাকের হেলপারি করে। সে এই জগৎ এর পুরাতন বাসিন্দা।
.
আস্তে আস্তে রাজুর সাথে সোহাগের বন্ধুত্ত তৈরী হয়।
মাঝে মাঝে সোহাগ লক্ষ করতো রাজু কোথায় যেনো যায়।
একদিন রাজু সোহাগকে ডেকে বলেঃ
→সোহাগ ২টা বিড়ি আনতো (রাজু)
→ঐ হানে বয় আনতাছি (সোহাগ)
→ কি বিড়ি আনছোস??
→ মামা গোল্ডলিফ।
→ জাল্বা। সোহাগ একটা যায়গায় যাবি?
→ কৈয় মামা?
→ আছে, যাবি নাকি ক?
→ ওস্তাদরে জিগাই।
→ আরে ওস্তাদরে জিগানো লাগবো না। তোর ওস্তাদ ও যায় ঐহানে।
→ তাইলে চল যাই।
.
→ আমারে কই নিয়া আইলি রাজু? এইহানে দেহি অনেক মাইয়া।
→ আরে বেটা এইডা শশুর বাড়ি। এইহানে সব পাওয়া যায়।
→কসকি মামা।
→হ রে পাচু। সোহাগ গান্জা খাবি?
→ কোনোদিনতো খাই নাইরে মামা। চল খাই।
→আরে পাগলা গান্জা খাইলে পাওয়ার বাড়ে।
→ কিসের পাওয়ার বাড়ে মামা? আর পাওয়ার বারায় আমি কি করমু?
→ তুই এইহানে প্রথমতো, কামের সময় বুঝবি পাওয়ার বাড়ায় লাভডা কি।।।
→ ওক্কে মামা।
.
গাজা খেয়ে আসার পর সোহাগকে পাঠানো হয় তার
চেয়ে দশ বছরের বড় একটি পতিতার সাথে। ঘরে ঢুকে প্রথমে সোহাগ ভয় করে।

কিন্তু যখন তার গাজার নেশাটা প্রকট হয় তখন সে কি করে নিজেও বুঝে ওঠতে পারে না।
তবে সোহাগের মেয়েটার সাথে কাটানো সময় ভালো লাগে। সেদিনের মত রাজু আর সোহাগ সেখান থেকে চলে আসে।
.
→কিরে হালা কেমন খাইলি? (রাজু)
→ মামা কিছুই বুঝি নাই, তয় মজা পাইছি ভালো লাগছে।
→ মাঝে মাঝে আইবি মজা পাইবি।
→ হ, আইবো।
.
.
এইভাবেই কেটে যায় সোহাগের আরও ১টি বছর।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০—আজ ভালোবাসা দিবস।
রাজু আর সোহাগ আজ আনন্দ করার জন্য একটা নতুন পতিতালয়ে যায়।
.
→তোমার নাম কি? (সোহাগ)
→সাবিনা।
→কতদিন থেকে এইহানে আছো?
→আজকে দিয়ে ২দিন। আপনি আমার জিবনে ৪ নাম্বার।
→ তোমার বয়সতো খুবি কম। এইহানে কিভাবে আইলা?
→ সে অনেক কথা। আপনারে বলা যাবে না।
→না কইলে না কও।
→এতো প্রশ্ন না করে যে কাজ করার জন্যে আসছেন সেটা করে চলে যান।।
.
মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে এক অজানো অনুভুতি কাজ করে সোহাগের মনে।

সেদিনের মত সোহাগ সাবিনাকে স্পর্শ না করেই চলে আসে।
.
রাস্তা দিয়ে সোহাগ আর রাজু হাটছে। সোহাগের দিকে রাজু তাকিয়ে দেখলো সোহাগের মুখটা গম্ভির হয়ে আছে।
.
→কিরে সোহাগ মন খারাপ কইরা আছোস ক্যান? মাল ভালো ছিলো না?
→আর কইস না। মাইয়াডার ভিতরে কিছু একটা আছে। ওর চোখের দিকে তাকাই আমার কি জানি হইয়া গেলো।
→কস কি? পিরিতে ধরলো নাকি তোরে?
→ ধুর মামা কিজে কস তুই। আমাগো মত হেলপারের আবার পিরিত। বিড়ি জ্বালা।
.
সকাল থেকেই সোহাগের মনটা খারাপ। তার ভাবনা শুধু সাবিনাকে নিয়ে। সোহাগ কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
আসলে মনের অজান্তে ভালোবাসা এভাবেই হয়। হ্যাঁ সোহাগ ও তার মনের অজান্তেই সাবিনাকে ভালোবেসে ফেলেছে।

হোক না সে পতিতা। তা নিয়ে সোহাগের কোনো ভাবনা নেই।
ভালোবাসা কখনো জাত বিচার করে হয় না।
.
→ঔ সোহাগ, এইহানে আয় (ওস্তাদ)
→হ ওস্তাদ কন?
→ কুমিল্লা টিপ আছে। গাড়িডা পরিষ্কার কর।
→ওস্তাদ কয়দিনের সফর হইবো?
→৪ দিন লাগবো।
.
সোহাগ ৪ দিনের জন্য কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
কিন্তু তার মনের মধ্যে থাকে কখন সে আবার সাবিনাকে দেখবে।
৪ দিন পর সোহাগ আসার পর ছুটে যায় সাবিনার কাছে।
এক পলক তাকে দেখবে বলে। ৫০০ টাকার বিনিময়ে সোহাগ সাবিনাকে ভাড়া নেয়।
কি ভাবছেন? হ্যাঁ আজকেও সোহাগ সাবিনাকে স্পর্শ না করে শুধু দেখেই চলে আসে।
এইভাবেই দিনের পর দিন সোহাগ সাবিনাকে এক পলক দেখেই চলে আসে। সে পারে না সাবিনাকে তার মনের মধ্যে জমে থাকা কথাগুলো বলতে।
.
তেমনি একদিন,
→আপনি প্রতিদিন ৫০০ টাকা দিয়ে আমার কাছে আসেন,
কিন্তু আপনি আমাকে স্পর্শ না করেই চলে যান। কেন এমন করেন আপনি? (সাবিনা)
→বুঝবার পারো না তুমি? ক্যান আসি তোমার কাছে? (সোহাগ)
→ না আমি বুঝি না। বেশ্যাদের বোঝার ক্ষমতা নেই। টাকা যার বেশ্যারা তার।
→ এইডা হইতে পারে না। আমি তোমারে ভালোবাসি।
আর তোমারে আমি এইহান থাইকা মুক্ত করুম। যাবা না আমার সাথে?
→তোমার সমাজ?
→ আমি সমাজ বুঝি না। পৃথিবীতে ভালোবাসা সব থাইকা বড় সমাজ।
→আমিও চাই খোলা আকাশের নিচে কারো হাতে হাত রেখে বাচতে। তুমি সত্যি আমাকে নিয়ে যাবে তোমার করে?
→ হ সাবিনা। আমি সত্যি তোমারে নিয়া যামু। আমি তোমারে অনেক ভালোবাসি।
.
এইভাবেই শুরু হয় সোহাগ আর সাবিনার প্রেম। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তাদের ভালোবাসা, কাছে আসা আর দুজন দুজনকে পাওয়ার আকাঙ্খা।

তারা হারিয়ে যেতে থাকে ভালোবাসার নীল সমুদ্রে।
.
তিন মাস পর,
→সাবিনা আমরা বিয়া করবো।
→ কবে?
→ পাচঁ দিন পর।
→ ঠিক আছে, তাহলে আমিও তৈরী হয় আর তুমি ও টাকার ব্যবস্থা কর।
→ তাইলে এই পাচঁ দিন আমি তোমার লগে দেখা করতে পারুম না। আজ থাইকা ঠিক পাচঁ দিন পর তুমি তৈরী থাইকো। আমি তোমারে নিয়া যামু।
.
সোহাগ মনের আনন্দে আর নতুন বিয়ে করার আনন্দে বিড়ি টানতে টানতে সাবিনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।
.
→ওস্তাদ আমার কিছু টাকা লাগবো।
→কয় টাকা?
→ হাজার দশেক।
→এতো টাকা কি করবি?
→ দরকার আছে ওস্তাদ। আমি আপনেরে পরে কমু।
→ ঠিক আছে যশোরের টিপডা মাইরা আইয়া দিমু নি।
→ কয় দিনের টিপ ওস্তাদ?
→৪ দিন।
.
সোহাগ রাতে টিপ নিয়ে বের হয়। দেখতে দেখতে কেটে যায় ৪ দিন। সোহাগ আজকে যশোর থেকে চলে আসবে।
কাল সকালে সে সাবিনাকে বিয়ে করবে। এইসব ভাবতে ভাবতে সোহাগ তার সময় পার করছে।
ঠিক সেই মুহূর্তে,, সোহাগের ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সোহাগের ওস্তাদ বেচেঁ যায়।

কিন্তু হয় না সোহাগের সাবিনার কাছে ফিরে আসা। সোহাগ সেখানেই মারা যায়। পরে থাকে সোহাগের অসমাপ্ত সপ্ন।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত