> ওই সারাদিন মোবাইল নিয়ে কি করিস? (মেঘা)
> তুই বইয়ের পোকা, তুই বুঝবি না (আমি)
> কই দেখি… ও ফেসবুক?
> হুম
> কি এত করিস ফেসবুকে?
> চ্যাটিং
> মেয়েদের সাথে?
> হুম
> কি….
> ২টার সাথে প্রেমও করছি
> কি বললি??
অতঃপর কিছু এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি ৷ তারপর মুখ লাল করে চলে গেল মেঘা ৷
চিন্তা করার দরকার নেই, একটু পরেই আবার ফিরে আসবে৷ তার মধ্যে আসেন আপনাদের বিস্তারিত বলি…
·
আমি সিহাব৷……..
মেঘা আর আমার বন্ধুত্ব ক্লাস থ্রি থেকে৷এমন বন্ধু, যার টিফিন চুরি করে না খেলে আমার আর কিছু হজম হতো না৷
আর এখন ওর কিল-ঘুষি না খেলে দিনটাই নিরামিষ যায়৷ তাই সবসময় ওকে রাগানোর চেষ্টা করি৷
তবে ভালওবাসি অনেক, আর হয়তো মেঘাও আমাকে…..
কিন্তু কেউ কাউকে বলিনি, তবে দুজনেই জানি বলা যায়৷ মেঘাকে নিয়ে আমার স্বপ্নগুলো ডায়রীর পাতায় সংরক্ষিত আছে৷ লেখা শেষ হলে ওকে গিফ্ট করবো৷
কিছুক্ষন পরেই মেঘা ফিরে আসলো,
> বাড়ি যাবো (মেঘা)
> তো আমি কি করবো? (আমি)
> আমি একা যেতে পারবো না
> এটা আর নতুন কি, তোর বাবা তো আমারে বেতন দিয়ে রাখছে তোকে প্রতিদিন বাড়ি পৌছে দেওয়ার জন্য
> তুই যাবি কি না?
> না গিয়ে কি উপায় আছে, চল…
মেঘাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে আমিও বাড়ি চলে আসলাম৷
·
রাত্রে বেশি জাগার কারনে সকালে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেল৷ চোখ ডলতে ডলতে বাইরে আসলাম৷ কিন্তু একি?
মেঘা ও তার বাবা-মা আমাদের বাড়িতে এতো সকালে? বাবাও অফিস না গিয়ে ওদের সাথে কি গল্প করছে?
আমাকে দেখে মেঘা ওখান থেকে উঠে আসলো৷ আমাকে টেনে নিয়ে আমার ঘরে আসলো৷
> ছি, তোর ঘরের একি অবস্থা? (মেঘা)
> ও ম্যাডাম, এটা এক ব্যাচেলরের ঘর (আমি)
> তোর ব্যাচেলরেত্ব ঘোচাতেই এসেছি
> কি???
> (হটাৎ সিরিয়াস মুডে চলে গেল)
> এই, কি হয়েছে?
> কালকে আমাকে দেখতে এসেছিল
> তারপর?
> ওরা আমাকে দেখে পছন্দ করেছে
বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো৷ তারমানে মেঘা অন্য কাউকে বিয়ে করবে? আমাকে তার দাওয়াত দিতে এসেছে?
জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললাম,
> তাই নাকি? তা কবে বিয়ে করছিস?
> (ঠাস…..)
> আউ… এটা কি হলো? (হাতটা বাম গালে চলে গেল)
> আমি সারারাত কেঁদেছি কি অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য?
> মানে?
> মানে আমি মাকে আমাদের কথা বলে দিয়েছি
> অ্যা…
> বাবা এসেছে তোর পরিবারের সাথে কথা বলতে
> আমাদের কথা কি?
> আমাদের ভালবাসার কথা
> আমি কি তোকে ভালবাসি বলেছি কখনো?
> বাসিস না? (দুই হাতে কলার ধরে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো আমার দিকে)
> বা…বা…বা…বাসি তো
> Good boy
অতঃপর দুপক্ষের সম্মতির আমাকে পরাধীন করার দিন তারিখ ঠিক হলো৷
:
বিয়ের আর এক সপ্তাহ বাকি আছে৷ সেদিন সকালে ঘুম ভাঙলো মেঘার ফোনে,
> হ্যালো (আমি)
> Good Morning (মেঘা)
> হুম
> এখনো ঘুমিয়ে আছিস
> হুম
> এখন যা ঘুমাবার ঘুমো, আমি আসলে বুঝতে পারবি
> তাহলে আমি বিয়ে করবো না
> তোর চৌদ্দ গুষ্টি করবে
> ওরা সবাই বিবাহিত
> সে পরে দেখা যাবে, বিকালে শপিংয়ে যাবো
> আচ্ছা যাস
> যাস মানে? আমি একা যাবো নাকি?
> ok, কয়টায় বের হবি?
> ৬ টায়, তুই ৫:৩০ এর মধ্যে চলে আসবি
> Ok
> Ok, bye…
শপিং শেষ হতে হতে রাত ৯টা বেজে গেল৷ রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছি…
> চল হাটি (মেঘা)
> কি? কেন? (আমি)
> আমার খুব হাটতে ইচ্ছা হচ্ছে
এই মেয়ে যা বলবে করেই ছাড়বে, তাই জোর না করে হাটতে লাগলাম ওর সাথে৷ আমার হাতটা ধরে রেখেছে ও৷
> সিহাব(মেঘা)
> কি
> চিরদিন এভাবে আমার পাশে থাকবি তো?
> হুম
> প্রমিস কর
> আচ্ছা বাবা, প্রমিস
মেঘা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আবার নিরবে হাটতে শুরু করলো৷ হটাৎ কয়েকজন এসে সামনে পথ আটকে দাড়ালো৷
কিছু বুঝে ওঠার আগে মাথায় প্রচন্ড একটা আঘাত পেলাম৷
জ্ঞান হারাতে হারাতে মেঘার চিৎকার শুনতে পেলাম, কিন্তু কিছু করতে পারলাম না৷
:
চোখ মেলে নিজেকে আবিষ্কার করলাম হাসপাতলের বিছানায়৷ আমার জ্ঞান ফেরার খবর পেয়ে বাবা, মা, সবাই ছুটে আসলো৷ কিন্তু আমি খুজছি মেঘাকে৷ কিন্তু পাচ্ছি না,
> মেঘা কোথায় মা, ও কেমন আছে? (আমি)
> (সবাই নিরব)
> কি হলো, কথা বলছো না কেন তোমরা?
> (নিরব)
> ওর কিছু হয়নি তো মা?
ছোট বোন কাঁপা হাতে একটা খবরের কাগজ এগিয়ে দিল আমার দিকে৷ প্রথম পাতাতেই চোখ আটকে গেল একটা ছবিতে৷
হ্যা, ছবিটা মেঘার৷
নরপিশাচ গুলো ওর শরীরটাকে ভোগ করেই শ্রান্ত হয়নি, খুন করে ফেলে রেখে গেছে একটা নর্দমার মধ্যে৷
বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলাম না ছবিটার দিকে৷ চোখটা ভিষন ব্যথা করছে৷
মাথার ভেতরে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে মনেহলো৷ হটাৎ মেঘাকে দেওয়া প্রমিস মনে পড়ে গেল৷
সারাজীবন ওর পাশে থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটাও পারলাম না৷
সরি মেঘা, এই পৃথিবীটা দুষিত হয়ে গেছে৷
এখানে ন্যায়ের চেয়ে অন্যায়ের শক্তি বেশি, তাই তোমার বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায়েরও কোন বিচার হবে না এখানে৷
আমিও আর থাকতে চাইনা এখানে৷
একটু অপেক্ষা করো, আমি আসছি তোমার কাছে…..