রবি আর তাসফিয়ার সংসারটা ছিল বেশ ছিমছাম।সংসারে নানা অভাব-অনটন নিত্য লেগেই ছিল।কিন্তু,ওদের মধ্যে যেটার অভাব কোনোকালেই ছিল নাা সেটা হল ভালবাসা।দু’রুমের একটি ভাড়া বাসায় তারা দু’জনে বেশ ভালোভাবেই সংসার গুছিয়ে নেবার চেষ্টায় ছিল।কিন্তু,প্রকৃতি কারোর ভালোই সহ্য করতে পারে না।হঠাৎ করেই একদিন তাসফিয়া মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে গেল।শব্দ শুনে পাশের রুম থেকে দৌড়ে আসে রবি।এসেই তাসফিয়ার এ অবস্থা দেখে রবি কালক্ষেপণ না করে একটা সি.এন.জি’কে ডেকে এনে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।হাসপাতালে এসে তাসফিয়াকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।কিন্তু,বিধি বাম!
সারা হাসপাতাল তন্ন তন্ন করে খুজেও একটা খালি বেড পাওয়া যায় না।অগত্যা ওকে নিয়ে রবি আবার ছুট লাগায় অন্য হাসপাতালে। সেখানে এসে তাসফিয়াকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে শিফট করা হয়।রবি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে তাসফিয়ার কি হয়েছে কিন্তু ডাক্তার তাড়াহুড়া’র দরুন কিছুই বলতে পারে না ওকে।
তাই বাধ্য হয়ে ওকে বসে থাকতে হয় অপারেশন থিয়েটারের সামনে।প্রায় তিন ঘন্টা পড় অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হয়ে আসেন।ডাক্তারকে দেখতে পেয়ে রবি দ্রুত জিজ্ঞেস করে তাসফিয়া এখন কেমন আছে? ডাক্তার সাহেব বলেন ওকে যে,এখন ও নরমাল রয়েছে।এ কথা শুনে রবি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কিন্তু ডাক্তারের পরবর্তী কথা শুনে রবি’র মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।
তখন,ডাক্তার ওকে বুঝিয়ে বলেন যে,ব্রেনে ক্যান্সার হয়েছে ওর। বাঁচার আর কোনো সম্ভাবনা নেই।ডাক্তারের পরবর্তী কথা গুলো রবি’র কান দিয়ে আর প্রবেশ করে না।ও তখন কল্পনার রাজ্য হাতড়ে বেড়াচ্ছে।স্মৃতির পাতা উল্টে-পাল্টে দেখছে।কতই না সুখে ছিল দু’জনে। দু’জন দু’জনার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল যে,কেউ কাউকে ছেড়ে কক্ষণো কোথাও যাবে না।
কিন্তু,এখন তাসফিয়া তার প্রতিজ্ঞা ভেঙে ফেলতে চাচ্ছে।পাড়ি জমাতে চাচ্ছে অজানা-অচেনা এক জগতে।ভাবতে ভাবতেই মাথা ঘুরে পড়ে যায় রবি।জ্ঞান ফিরলে রবি নিজেকে আবিষ্কার করে হাসপাতালের বেডে।তার আশেপাশে বাবা,মা,ভাই-বোন সবাই ঘিরে বসেছে।
মা আচঁল চাঁপা দিয়ে কান্না লুকানোর চেষ্টা করছেন।বাবাকে উদভ্রান্তের মতো লাগছে। তখন,ওর তাসফিয়ার কথা মনে পড়ল।মা’কে তাসফিয়ার কথা জিজ্ঞেস করতেই মা আবারও হু হু করে কেঁদে ওঠেন।কিছুই বুঝতে পারে না ও।
বার বার এক কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে মা’কে।শেষপর্যন্ত মা বাধ্য হয়ে ওকে বলতে বাধ্য হন যে, তাসফিয়া আর বেঁচে নেই।এ কথা শুনে রবি একটা ধাক্কার মত খায়।আসলে,সে তখন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। কিন্তু,পরেই সে লাফ দিয়ে বেড থেকে নেমে যায়।নেমে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে যে,তাসফিয়াকে কোথায় রাখা আছে।
একটু পরেই তারা গিয়ে হাজির হয় মর্গে।সেখানেই তাসফিয়াকে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।কাপড় তুলেই রবি দেখতে পায় একটি মায়াবী নিষ্পাপ মুখ।যে মুখ দেখে দু’বছর আগে সে তাসফিয়ার প্রেমে পড়েছিল।আজ সেই তাসফিয়া রবিকে ছেড়ে একলা পাড়ি জমালো না ফেরার দেশে।রবি তখন তাসফিয়ার মাথাটা আলতো করে উপরে তুলে তার বুকে চেপে ধরে।সে তখন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য।
রবির বাবা তখন তাকে কাধে হাত দিয়ে চেপে ধরেন।রবি ঝটকা মেরে হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।সে যে এখন তার জীবন সঙ্গিনীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখায় ব্যস্ত!