অবুঝ ভালবাসা ২

অবুঝ ভালবাসা ২

নতুন একটা চাকরি হলো কুষ্টিয়ায় ,ওইখানে একটা বন্ধুর সাথে পরিচয় হলো ছেলেটির নাম সম্রাট ।আমাকে খুব ভালবাসে এবং আমিও খুব ভালবাসি সম্রাট কে,।
—-দোস্ত মনির,চলো মামার দোকানে চা খেয়ে আসি।
—-ঠিক আছে দোস্ত চলো।
—-মামা দুই কাপ চা দাও আমাদের ।
—আচ্ছা দোস্ত সম্রাট , ক্রাস খায় কীভাবে ?
—-দোস্ত ,তুই যেদিন প্রেম করবি সেদিন বুঝবি ক্রাস কাকে বলে ।
আমি যেদিন আমার জানু #সারাকে প্রথম দেখি সেদিন ক্রাস খেয়েছিলাম ।
—-ভাল ,তবে আমি এখনও কাউকে দেখে ক্রাস খাইনি।
সম্রাট এবং মনির চা খাচ্ছে ,হঠাত্ করে একটা মেয়ে দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছে ।
—দোস্ত, আমি শেষ ,আমার এমন লাগে কেন ?বুকের ভিতরে ঘন্টা বাজে কেন ?
—-কেন কি হয়েছে ?((অবাক হয়ে ))
—-ওই পিছনে তাকিয়ে দেখ কি সুন্দর মেয়ে ।
—-এটাকেই ক্রাস বলে
—-দোস্ত , আমি এই মেয়ের সাথে প্রেম করবো,তুই বলে দে একটু প্লিজ।
—-আরে বোকা কিছুদিন যাক তারপর বলে দিবো চিন্তা করিস না।

মেয়েটির নাম#বৃষ্টি ।
সেদিন থেকে মনিরের মনের ভিতরে নতুন কেউ আগমন করলো।খাইতে গেলে শুইতে গেলে অফিসে গেলে ,শুধু ওই মেয়ের কথাই মনে পরে ।
হঠাত্ একদিন
—-হ্যাঁলো ভাইয়া ,এভাবে আমার পিছনে প্রতিদিন ঘুরেন কেন ?
—-এই শোনেন আপনার পিছনে ঘুড়বো কেন ?আপনি আমার কি যে আপনার পিছনে ঘুরতে হবে ?
—-শোনেন আমার পিছনে ঘুরে লাভ হবে না।আমি এগুলো পছন্দ করি না।
—-ধুর,আপনাদের জন্য কোথায় যেতে পারবো না।
,,
এদিকে মনির শুধু বৃষ্টির কথাই ভাবে ,
কোন কিছুই ভাল লাগে না ।
১৪ই ফেব্রুয়ারিতে মনির সাহস করে বলতে গিয়ে দেখে যে ,,,,বৃষ্টি অন্য একটা ছেলের হাত ধরে ঘুড়ছে।
—-মনির ভাইয়া, এখানে ফুল নিয়ে কার জন্য অপেক্ষা করেন ?
—-আমার জিএফ এর জন্য অপেক্ষা করছি,,,,(হৃদয় ছিড়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুই করার নেই )
—-আপনার জি এফ কখন আসবে ?
—-এইতো একটু পরে ,কিন্তু এই ছেলে তোমার বিএফ??
—হুম, আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসি ,,
—-ঠিক আছে ,দোয়া করি তোমরা। সুখী হও।
—–ধন্যবাদ ভাইয়া।
”এই বলে বৃষ্টি চলে গেল ।মনির না পারছে গলা ফাটিয়ে চিত্কার দিতে ,,মনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে ।পারবেই কীভাবে ,,যার জন্য পৃথিবী ছেড়ে যেতে দ্বিধাবোধ করবে না,সে আজ নিজের চোখের সামনে অন্য ছেলের হাত ধরে ঘুড়ছে।
,,
কিন্তু বৃষ্টি জানতো মনির অনেক ভালবাসে,জানার পরেও না জানার ভাব ধরতোক।কারণ বৃষ্টি ভালবাসে #রাকিব কে।’
—-মনির দোস্ত তুই কোথায় ?
—-দোস্ত ,আমি জাহান্নামের আগুনে পুরছি
—তুই থাক আমি আসছি ।

সম্রাট মনির কে অনেক বুঝানোর পরে একটু স্বাভাবিক পর্যায়ে আসলো মনির।
কিছুদিন পরে জানতে পারে বৃষ্টি রাকিবের সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছে ।
”’
”’


১বছর পর
দিনটা ছিল শুক্রবার ,,মনির এবং তার নতুন বন্ধু আতিকুর ঘুরতে যাবে ।
—মনির দোস্ত তোকে আজকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাবো,তুই নিজেও কল্পনা করতে পারবি না।
—-আরে যাহ,,তাহলে আমি যাবো না।
—-দোস্ত ,প্লিজ চলো আমার একা একা যেতে ভাল লাগছেনা।
—-ওকে ,,চলো।
,,
,,
মনির এখন চাকরি করে টাঙ্গাইলে ছোট্ট খাটো একটা অফিসে ।
আর আতিক অনেক পুরাতন টাঙ্গাইলের অলি গলি সব চিনে।আতিক খুব দুষ্টু টাইপের ছেলে কিন্তু মনটা অনেক ভাল,,,
—দোস্ত এই কোন জায়গায় নিয়ে আসলি আমাকে ??এতো মেয়ে কেন ?
—-আরে দোস্ত,এটা বাংলাদেশের সব থেকে বড় #পতিতালয়(খা,,,,,,?)­পাড়া।
—–আতিক তুই আমাকে এমন জায়গায় নিয়ে আসবি ভাবতেও পারিনি,,,,,ছিছিছিছি
—-দোস্ত ভুল হয়ে গেছে আমার মাফ করে দে।
—ঠিক আছে ,আর কোন দিন এখানে আসবি না,,,ওকে ?
—ওকে ।তুই দাড়া আমি একটু পরে আসছি।
—ওকে ।
এই বলে আতিক চলে গেল ।পিছনে থেকে চেনা চেনা কন্ঠে মনির কে কেউ ডাকছে ।
—-মনির ভাই ও মনির ভাই শুনছেন ?
—কি!(পিছনে তাকাতে দুচোখে অশ্রুর বন্যা বয়ে গেল )
—-এদিকে আসেন ।
—-তুমি এখানে কেন ?(হৃদয় ছিড়ে যাচ্ছে ,যেমন কেঁদে ছিল বৃষ্টি কে অন্য ছেলের সাথে পার্কে ঘুরতে ))
—-রুমে চলেন কথা আছে (বলেই বৃষ্টি কেঁদে ফেলল)
—ঠিক আছে চল।

রুমে যাওয়ার পর
—-বৃষ্টি তুমি এখানে কেন ?(কেঁদে কেঁদে বলছে)
—-এটাই আমার ভাগ্য (দু চোখে পানি টলটল করছে )
—-বলো প্লিজ এখানে কীভাবে আসলে ?(দম বন্ধ হয়ে আসছে)
—তাহলে শোন,,,,,,,আমার আর রাকিবের পরিচয় হয় #ফেইচবুকেতারপর আমরা বন্ধুত্ব করি,,,,,,এক পর্যায়ে রাকিব প্রোফোজ করে আমাকে ,,,আমি রাজি হয় নাই,,,,,কিন্তু দিনের পর দিন কাদতো আমার জন্য ,,না খেয়ে থাকতো,,,নিজের হাত কেটে ফেবুকে দিত আমাকে ।পরে আমি রাজি হয়ে যাই,এবং দেখা করি।এদিকে আমার ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে পাশ করি।বাবা মা বিয়ে ঠিক করে ফেলে ।
আমি রাকিব কে সব ঘটনা খুলে বলি,।রাকিব তখন আমাকে বিয়ে করার কথা বলে ।আমি রাকিব কে আমার বাসায় তার বাবা মা কে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতে বলি।কিন্তু রাকিব তাতে রাজি হয় না।তখন নিরুপায় হয়ে পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেই ।((কাদতে কাদতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে গেছে ))
—–বুঝলাম কিন্তু এই নোংরা জায়গায় আসলে কীভাবে ??((হৃদয় ছিড়ে যাচ্ছে )))
—-যেদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে আসলাম,,,আমার ছোট্ট ভাইটা বলছে আপু তুমি কোথায় যাও?আমার জন্য চকলেট কিনে আনবে ,,,,,,মা বলছে বৃষ্টি বাসায় তারাতারি ফিরে আসিস ,দিনকাল খুব খারাপ ।বাবা বলছে ,,বৃষ্টি মা কোথায় যাবি?এত সাজুগুজু করছো???
তখন আমি বললাম এইতো আমার বান্ধবীর বাসায় অনুষ্ঠানে যাবো,,,আমি না গেলে রাগ করবে তাই যাবো,,,চিন্তা করো না বাবা খুব তারাতারি ফিরে আসবো,,।
এই বলেই মা ,,বাবা,,ছোট্ট আদরের ভাই টাকে শেষ বারের মতো দেখে বিদায় নিলাম ।
তখন রাকিব ফোনে বললো আমি বাস স্টান্ডে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি তারাতারি আসো। পরে আমি বাসে উঠে রাকিবকে বললাম,,,,আমরা এখন কোথায় যাবো? রাকিব বললো আমার এক নানীর বাড়ি আছে টাঙ্গাইলে ওই খানে যাবো,,,তার পর পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হলে তোমাকে আমার বাড়ি নিয়ে যাব,,,,
তার পর সরাসরি এখানে নিয়ে আসে
—–কিন্তু রাকিব এখন কোথায় ???আর তুমি #মদ খাচ্ছো কেন ?
—-মদ খাইলে মনের কষ্ট টা একট
কম হয়। তার পর রাকিব আমাকে এখানে নিয়ে এসে এক রাত আমার ইজ্জত শেষ করে ,,,,,তারপর দোকানে যাবার কথা বলে পালিয়ে যায় ,মাত্র 50হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় আমাকে ((বলেই কাঁদতে শুরু করলো))
তখন আতিক ফোন দিয়ে বলে
—–দোস্ত তুই কোথায় ???
—-দোস্ত তুই কাজী রেডি কর
—মানে!!!
—-আমি বউ নিয়ে আসছি
—-ওকে
,
,
৩বছর পর,
,
-ওলেলে বাবু কান্দে না,ঐ তোমার আব্বু আসছে ,এই দেখো না তোমার ছিলে তোমার জন্য কান্না করছে ,
-না বাবা কান্দে না,তোমার আম্মু পচা,
দেখ তোমার জন্য খেলনা নিয়ে আসছি,আমার লক্ষী বাবা কান্দে না,
,
তখন আমাদের ছেলে ঘুমিয়ে পড়লো,
খাবার খাওয়া শেষে রাতে শুতে গেলাম, দেখি পাগলিটা নীল শাড়ী ,হাতে কাচের চুরি ,বসন্তের মাথাল হাওয়া চুলগুলো উড়ছে ,কাজল কালো
চোখ দুটি ইশারায় ডাকছে আমাকে ,
পাগলিকে দেখে আমার চোখ কপালে
উঠে গেছে ,এত সুন্দর আমার বৌ!!!
-এই পাগল হা করে কি দেখছো?
-এই লক্ষী বৌ কে দেখছি,এত সুন্দর কেন তুমি ?
-ইহহহহ ঢং দেখে বাঁচি না,একটা জিনিস ভুলে গেছ তুমি ,,(বলেই মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিল)
-এই এরকম মুখ গম্ভীর করে আছো কেন ?আর এত সাজাগুজু করছো কেন ?
-আজ কত তারিখ মনে আছে তোমার ?
-ওহ সরি সরি সরি,এই কান ধরলাম
আর ভুল হবে না,আসলে ব্যাস্ততার কারণে সবকিছু ভুলে গেছি ,আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকি,
-মাফ করতে পারি একটা শর্ত আছে,
-কি শর্ত ?
-আমাকে সারাজীবন পাগলের মতো
ভালবাসতে হবে ,
-হুম লাভ ইউ পাগলি
-লাভ ইউ টু পাগল ,
এভাবে কাটছে আমার আর বৃষ্টির
আর আমাদের ছোট্ট খোকাকে নিয়ে
সুখেই কাটছে আমাদের জীবন ,
;
,
#মরাল অফ দা স্টোরি–আসলে ভালবাসা অন্য রকম একটা অনুভূতি ,
প্রিয় মানুষটি যতই খারাপ হোক না কেন,তার প্রতি ভালবাসা কমবে না বরং বেড়েই চলবে ,ভাগ্য এমন একটা জিনিস কখন কি হবে কেউ বলতে পারে না,যদি কেউ কে ভালবাসেন তাহলে নিঃস্বার্থ ভাবেই ভালবাসুন,
#মেয়েদের_বলছি,তোমাক­ে জন্ম দিছে তোমার মা বাবা ,মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তোমাকে এতবড় করছে,আর প্রতিদান হিসেবে তাদের কথাগুলো মেলে চলুন ,কোন বাবা মা কোন দিনও সন্তানের ক্ষতি চাইবে না,
আর ভুলেও পালিয়ে বিয়ে করার মত ভুল করবেন না,যদি পালিয়ে বিয়ে করেন তাহলে বৃষ্টির মতো অবস্থা হবে কি না তার কোন গ্যারান্টি আছে ??
বিয়ে যদি করতেই হয় আগে মা বাবা কে জানান ,যদি তারা রাজি থাকে তাহলে জীবন টা অনেক সুন্দর হবে ,
যদি তারা রাজি না হয় তাহলে ভাগ্যের উপড়ে ছেড়ে দাও,প্রেমিক কে খুশি করতে পার আর না পার অন্তত যে মা দশ মাস মাস দশ দিন আপনাকে গর্ভে ধারন করেছে সে তো খুশি হবে ,মা বাবা খুশি হলে মহান আল্লাহ তায়ালাও খুশি হবে ,
ভালবাসায় না পাওয়ার সংখ্যা টাই বেশি ,সুখের থেকে দুঃখ বেশি ,আর যদি কপালে থাকে তাহলে এই গল্পের
মতো অদ্ভুত ভাবে আপনার জীবনে আসবে প্রিয় মানুষ টি,,
,
রাকিবের মতো ছেলেদের আমার পক্ষ
থেকে ধিক্কার জানাই ,তাঁরা মানুষ নামের অমানুষ ,
,
এবং স্যালুট জানাই মনিরের মতো ছেলেদের ।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত