একটা কোম্পানিতে ম্যানেজার পদে চাকরি করি, অনেকদিন পর ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি, মনটা অনেক খুশি, আবার বাড়ির সবাইকে দেখতে পাবো, বিশেষ করে মোহনা কে! বিয়ের পর দ্বিতীয় বারের মত দেখতে যাচ্ছি তাকে, একটা মেয়ে এত সুন্দর কিভাবে হতে পারে?? ভেবেই পাই না! ও অনেক ধনি পরিবারের মেয়ে, ওর বাবা আমার উপর কেন নজর দিল বুজলাম না,পরে জানতে পারলাম ওর নাকি একটা বাজে ছেলের সাথে প্রেম ছিল, আর আমি অনেক শান্ত,ভদ্র ছিলাম, সেই সুবাদে ওর বিয়েটা আমার সাথে ঠিক করা হয়। ওর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলের সাথে। শুনেছি জোড় করেই বিয়ে দিয়েছে। বিয়ের পরেরদিন ও আমাকে বলে দিয়েছিল যেন ওর আসেপাশেও কখনো না থাকি।
বাড়িতে সবাই আমাকে খুব আদর করে, বড় ছেলে বলে কথা। বাড়িতে যাওয়ার পর সবার সাথে দেখা করলাম কথা বললাম, আমাদের উঠোনে বসে সবাই আমাকে ঘিরে ধরে আমার খোজ খবর নিচ্ছিল, মোহনা কে দেখতে পাচ্ছি না কেন?? সবার সাথে কথা বলে আমার ঘরে গেলাম, ঘরে ঢুকতেই ওর সাথে ধাক্কা খেলাম।
আমি: সরি..
মোহনা: চোখ হাতে নিয়ে হাটেন নাকি?
আমি: আমি বুজতে পারিনি
মোহনা: দিলেন তো আমার মেকআপ নষ্ট করে?
আমি: কোথায় যাচ্ছেন?
মোহনা: জাহান্নামে!
আমি: আমিও যাই আপনার সাথে?
মোহনা: মানে কি? আপনাকে না বলেছিলাম আমার থেকে দূরে থাকতে?
আমার মন খারাপ হয়ে গেল! আমার চেহারা দেখে মোহনা একটা হাসি দিয়ে বলল..
মোহনা: চলেন..
কনফিউশন,একটু আগে বলল দূরে থাকতে এখন আবার যেতে বলছে..
আচ্ছা চলেন বলেছে ভালো কথা, এইরকম হাসি দেওয়ার কি দরকার ছিল? এখন যদি আমার হার্টআ্যাটাক হয়ে যেত?? ও কি একটা ভেবে আবার বলল..
মোহনা: শর্ত আছে..
আমি: কি?
মোহনা: আমার আসেপাশে আসার চেষ্টাও করবেন না!
আল্লাহ একটা রশি ফালাও উপরে চলে যাই! আবারো কনফিউশন।
রাতে ঘুমোতে গেলাম, বউ আমার আগেই শুয়ে আছে, তাকে বললাম আরেকটু ওপাশে যেতে আমিও ঘুমাবো..
মোহনা: সোফায় গিয়ে ঘুমান।
আমি: মানে কি? আমার ঘর, আমার বিছানা, আমার সবকিছু আর আমাকেই বলছেন সোফাতে ঘুমাতে?
মোহনা: আপনাকেই বলছি।
আমি: আমি পারবোনা।
মোহনা: ঠিক আছে তাহলে আমিই যাচ্ছি।
মাঝরাতে মোহনা আমাকে ডেকে তুলল..
আমি: কি?
মোহনা: আমি সোফায় ঘুমাতে পারছি না।
আমি: তো?
মোহনা: আরেকটু ওপাশে যান ঘুমাবো।
এত কনফিউজড করে কেন!!!
আমার ছুটি শেষ হয়ে গেল, আবার ফিরে যেতে হবে, বাড়ির সবাইকে বিদায় দিয়ে ওর কাছে গেলাম..
আমি: যাচ্ছি ভালো থাকবেন।
ও কিছু বলছেনা দেখে আবারো বললাম..
আমি: যাবেন?? আমার সাথে
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম ওর চোখে পানি।
ও হঠাৎ দৌড়ে চলে গেল, আমি চলে যাচ্ছি দেখে কষ্ট পাচ্ছে? আচ্ছা আমি কি একবার গিয়ে জিজ্ঞেস করবো? না থাক দেরি হয়ে যাচ্ছে। ওর সাথে আবার কোনদিন দেখা হয় কি জানি। মিস করবো অনেক, ফোন নাম্বারটাও সাহস করে নেওয়া হয়নি, যদি আবার বকা দেয়। তিন মাস পর আবার বাড়িতে আসলাম, সবার সাথে দেখা করার পর ঘরে গেলাম, ওকে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন? ও এমন একটা ভাব করলো যেন আমাকে চিনেই না, মেয়েদের মন বোঝার কোন মেশিন যদি আবিষ্কার হত?? পরেরদিন আমার এক ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে গেছিলাম, বাড়ি ফিরে দেখি কি জানি লেখালেখি করছে, আমাকে দেখে ভুত দেখার মত তাকিয়ে ছিল কতক্ষন, তারপর তাড়াতাড়ি করে খাতা টা লুকিয়ে ফেলল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
আমি: ওটা কি?
মোহনা: আপনাকে কেন বলবো?
আবারো আমার উপর রাগ দেখানো শুরু হয়ে গেল, আচ্ছা একটু সুন্দর করে কথা বললে কি হয়? আমি বললাম,
আমি: আচ্ছা বলা লাগবে না, আমার জন্য এক কাপ চা বানিয়ে আনেন।
মোহনা: কিহ?
আমি ওর কাছে গিয়ে ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলাম, তারপর বললাম
আমি: তুমি আমার বিয়ে করা বউ, তোমাকে মারবো, চা বানিয়ে আনতে বলবো, যেখানে খুশি যেতে বলবো, কিস করবো মিস করবো, যা ইচ্ছা হয় করবো, সেই অধিকার আমার আছে, যাও চা বানিয়ে নিয়ে এসো..
ও কেমন চোখে জানি আমার দিকে তাকালো, মেয়েরা লজ্জা পাওয়ার পর যেভাবে কথা বলে ঠিক সেভাবে ও আমাকে বলল,
মোহনা: আবার বলেন তো।
আমি ওকে ছেড়ে দিলাম, আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, আমি এমন একটা কাজ করেছি? খুব লজ্জা লাগছিল, ধুর এটা কি করলাম, চলে আসলাম ওর সামনে থেকে, তারপর দুইদিন আর ওর সামনে যেতেই পারিনি, তিনদিন পর ও আমার চাচাতো বোনের কাছে একটা চিরকুট পাঠালো, সেখানে লেখা ছিল..
*এত লজ্জা পেলে চলে? সব কিছু কি বলে দিতে হয় আদায় করে নিতে পারেন না?*
আমি আবার কনফিউশিনে পড়ে গেলাম, একবার বলে আসেপাশেও যেন না যাই আবার এখন বলে আদায় করে নিতে? নাহ, আর কনফিউশনে পরতে চাই না, এবার ওকে ভালোবাসি কথাটা বলতেই হবে..
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা