এক জিবনের গল্প

এক জিবনের গল্প

হারুন সাহেব , কম্পানির মালিক হলেও, তাকে দেখে কখনো মনে হয় না যে সে কম্পানির মালিক, তাকে আমি যতবারই দেখি ততবারই মুগ্ধ হই,

স্যার এর সাথে মিলটা আমার একটু অন্যরকম! বলা যায় সবার থেকে বেশি, মাঝে মাঝে, তাকে আমি বন্ধু ও মনে করে ফেলি, সব সময় হাশি তামিসা করার তালেই থাকে, একজন কম্পানির এডমিন এর কাছে থেকে এরকম ব্যবহার আমি কখনোই আশা করি না,
তার মতে,
আমি একজন বোকা ছেলে, আমাকে কম্পানিতে রেখে সুধু বেতন দেওয়া, একটা কাজ ঠিক ভাবে করতে পারি না,
আমাকে তাড়াতে পারলে সে হাফ ছেরে বাচবেন!
জিবনে কোন কাজেই আমি উন্নতি করতে পারব না,
ঠিক ঠাক ভাবে বিয়ে করতে পারব কি না সেটা নিয়েও তার সন্ধেহ,

আমার মতে,
স্যার একজন প্রতিবন্ধি, তা না হলে কম্পারির সব অফিসার এর সুনামে আমি পরিপৃর্ন, আর তার মতে আমি একজন অকর্মার ঢেকি , বোকা ছেলে,
একজন কম্পানির মালিক হয়েও প্রতিদিন অফিসে আছে, এসেই আমার দোষটুটি নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেয়, তারপর একটু বকাযকা করেন, তারপর একটু জ্ঞান দিবেন, এটা তার প্রতিদিনের রুটিনে পরিনত করেছে, আর আমার তার সাথে শুধু হ্য হ্যা করতে হবে। ভুল হলেও হ্যা ঠিক হলেও হ্যা, নইলে আমার চাকরি যাওয়ার আশংকা আছে,
আমাকে তার খুব পছন্দ,সারাদিনের অর্ধেক সময় তিনি, আমার সাথে গল্প করে কাটিয়ে দেন আর বাকি অর্ধেক সময় তার কাজে আমাকে ব্যবহার করেন ,তার কাজের মধ্যে, তার ফাইল টানা, মাঝে মাঝে সে ভুল করে এটা ওটা বাসায় থুয়ে আসবে, আর আমার সেগুলো টেনে আনতে হবে, আর সব থেকে বড় যে সমস্যা সেটা হল, তার গুনবতি মেয়েকে মাঝে মাঝে এগিয়ে দেওয়া, মেয়েটা দেখতে সুন্দরী হলেও, মনের মধ্য একশ রকমের জিলাপির প্যাচ, একটু অহংকারী, বজ্জাত টাইপের মেয়ে, আমাকে একদম সহ্য করতে পারে না, আমাকে দেখলেই তার শরিরে নাকি আগুন জ্বলে ওঠে, কিন্তু চাকরি বাচানোর জন্য সেই কাজটাই বেশি করে করতে হয় ,

আমাকে তিনি তার অফিসের ম্যানেজার না বানিয়ে, তার পি এস বানালেই হতো, অন্তত সম্মান টা বাচানো যেত,
হারুন সাহেব, আমাকে তার সাথে সব সময় রাখেন , একদম তার পি এস এর মতো, হারুন সাহেবের কোন পি এস নেই, তাই আমাকে দিয়েই তার পি এস এর কাজ করিয়ে নেয়, এতে আমার কোন আপত্তি নেই কারন বেতন ভালো পাই, সাথে ঘুরা-ঘুরিও হয়। হারুন সাহেবের র্স্ত্রী, তার কোন তুলনা হয় না, এতো ভালো মানুষ আমি কমই দেখেছি, আমি মা কে দেখিনি তবে, হারুন স্যারের স্ত্রীকে দেখেছি, যাকে মায়ের সাথে তুলনা করা যায়, চাকরি না ছাড়ার এই একটা কারন,
আন্টির মতে, স্যার এর দ্বারা কম্পানি টিকিয়ে রাখা সম্ভব না, তাই যেন আমি কম্পানি ছেরে না যাই। আমি তার কথায় মাথা নেরে সায় দেই!
আমি যদি স্যার এর বাসায় কয়েকদিন না যাই,
তখন আন্টির অভিযোগের ঠিক থাকে না, তার অভিযোগ গুলো এ রকম, আমি নাকি তাদের ভুলেই গেছি, নিজের মা নই তো সে জন্য, নিজের মা হলে প্রতিদিন ই দেখতে আসতি,
এ রকম কিছুক্ষণ বকাযকা করবে, তারপর ডেকে নিয়ে গিয়ে খাওয়াবে, এমন কোন দিন নেই যে না খেয়ে আসতে পেরেছি, মাঝেমাঝে আন্টির আদর দেখে একাই, চোখ ভোরে পানি জমা হয়, মনে হয় আমার মা বেচে থাকলে বুঝি এ রকমই হতো,
তবে এ বাসায় আসার ঐ একটা প্রবলেম তার মেয়ে, তার বাবা মা এতো ভালো, আর মেয়েটা হয়েছে বডের হাড্ডি,
তার বাসায় গেলে, কোথেকে সামনে হাজির হয় কিছু বুঝিনা। আমি যে খানে যাব সেখানেই একটা করে শত্রু থাকবে, এ বাসায় আছে তার মেয়ে, নাম হিয়া, তার বাবা অনেক আশা করে নাম টা দিয়েছিল, যে মেয়ের অনেক বড় হৃদয় হবে, তা না হয়ে হয়েছে উল্টো টা,
আমি এখন হিয়ার সামনে দাড়িয়ে, হিয়া চোখ দুটো বড় বড় করে , আমার দিকে তাকিয়ে আছে,
আমি কাচুমাচু করতে করতে বললাম, স্যার ফাইল টা নিতে….
যান নিয়ে তাড়া তাড়ি বিদেয় হন, যতসব ঊক্ত ঝামেলা, বলেই হন হন করতে করতে চলে গেল,
আমি বিরক্তি চোখে তাকিয়ে আছি তারদিকে, কি মেয়েরে বাবা অর্নাস এ পড়ে আর মুখে মধু বলে কিছুই নেই?
আমি আন্টির থেকে ফাইল টা নিয়ে চলে আসব, এমন সময় আন্টি আবার ডাকলেন,
কি আন্টি?
কালকে সকাল বেলা, আমরা সবাই গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি, হিয়ার চাচাতো বোনের বিয়ে, তোমাকেও যেতে হবে,
না আন্টি আমি যেতে পারব না, অফিসের অনেক কাজের চাপ
ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না, কালকে সকালে জামা কাপড় গুছিয়ে সোজা বাসায় চলে আসবি,
-কিন্তু স্যার?
-আপনের স্যার কে আমি বলেছি,
আমি মাথা নেরে বল্লাম আচ্ছা।
অনেকদিন গ্রামে যাওয়া হয় না, শহরে থাকতে থাকতে একদম রোবট হয়ে গেছি, গেলে ভালোই হবে গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতে পারব!

সকাল বেলা গোসল করে নাস্তুা সেরে নওনা হলাম,
স্যারের বাসায় গিয়ে দেখি সবাই রেডি, আমি যাওয়া আন্টি অনেক খুশি হলো, তার মেয়ে কে দেখে বোঝা যাচ্ছে না, আসলে সে রেগেছেন না খুশি হয়েছেন, আন্টি বললেন নিরব তুই আমার সাথে বসবি,
আমি মাথা নেরে সায় দিলাম,
আমারা গাড়িতে উঠে গেলাম, এক পাশে আমি আর আন্টি। আর অন্যপাশে, হিয়া আর স্যার।
গাড়ি চলতে শুরু করেছে, আমি আর আন্টি গল্প করছি, স্যার আর হিয়া চুপ,
এতে স্যার কিছুটা বিব্রত বোধ করছে। কারন তার মেয়ের সাথে তিনি আবল তাবল প্যচাল পাড়তে পারছে না, হিয়া একটু রাগী টাইপের মেয়ে, আবল তাবল প্যাচাল পছন্দ করে না, হিয়া মোবাইল টিপছে, স্যার চুপ করে বসে আছে,
আন্টি তার শৈশব কালের গল্প শুরু করলেন, অনেক জোরে জোরে কথা বলছে, আর হাসাহাসি করছে,
স্যার বারবার আর চোখে তাকাচ্ছে, মনে হচ্ছে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে কথা না বলতে পেরে, আন্টির অনেক সৃতি এই খুলনা কে ঘিরে, আন্টি যখন কথা বলছে তখন চোখে পানি টলমল করছে
আবার মাঝে মাঝে ফিক ফিক করে করে হাসি দিচ্ছে,
এবার আমি বলতে শুরু করলাম আচ্ছা আন্টি আপনার আর স্যারের বিয়েটা কি ভাবে হলো?
আন্টি এবার বেশ শব্দ করে হাসি দিয়ে বলল শুনবে?
আমি মাথা নেরে বললাম, হুম
আমি তখন অর্নাস এ ভর্তি হই, তোমার স্যার তখন ফাইনাল ইয়ারে পড়ে, পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল তোমার স্যার, তবে খুব বোকা ছিল, মোটা ফ্রেমের চশমা পড়তো অন্যদিকে আমি ছিলাম খুব চন্চল টাইপের মেয়ে, সারা কলেজ একাই মাতিয়ে রাখতাম,
কলেজের বিদায় অনুষ্ঠানে সেদিন তোমার স্যার একটা কবিতা আবৃত করেছিল, তার নিজের লেখা,
কবিতা টা শুনে আমি যেমন মুগ্ধ হয়েছিলাম, তার থেকে বেশি অবাক হয়েছিলাম,
যে হাদারাম টা আবার কবিতাও লিখতে পারে?
মোটা ফ্রেমের চশমা, বোকা বোকা চেহারা, লাজুক একটা ছেলে,
হঠাৎ করেই ভালোলেগে গেল, কথায় আছে না love in fast side? ঠিক সেই রকম!
ঠিক তখন থেকে পিছু নিতে শুরু করলাম, কিন্তু তোমার স্যার কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না
এদিকে আমিও ছারবার পাএী নই। কথায় আছে না
যে জিনিস সহজে পাওয়া যায় না, তার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি, আমার ও ঠিক সে রকমই হয়েছিল,
হঠাৎ
একদিন, কলেজ শেষে পিছু নিলাম তোমার স্যারের, একদম চলে গেলাম তার বাসায়, হারুন তো দেখে পুরাই অবাক! আমাকে গালি গালাজ করতে লাগল,
তার বাসায় এসেছি তার আম্মু দেখলে কি মনে করবে,
আমি তখন আস্তে করে বল্লাম দেখতে খুব বোকা দেখা যায়, আর এতো মেজাজ?
হারুন আমাকে খুব জোরে ধমক দিয়ে ঠেলে ঠুলে বাসা থেকে বের করে দিচ্ছিল, এমন সময়, তার আম্মু এসে হাজির! আমি তো মহা খুশি!
তার আম্মু যে এতো ভালো আগে জানতাম না!
কি রে হারুন এতো চেচামেচি করছিস কার সাথে! বলে দরজা খুলেই অবাক! আমাকে দেখে!
আমি দৌরে তার আম্মুর পিছে গিয়ে দাড়ালাম, তার আম্মু একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে একবার হারুনের দিকে!
হারুন হকচকিয়ে আমতা আমতা করে বলতে শুরু করল, মা এই মেয়েকে আমি চিনি না, এখানে এখানে এসে পাগলামি করছে, ওকে বের করে দাও, না হয় পুলিশে দাও!
হারুনের আম্মু আমার দিকে তাকালো,
আমি কান্না শুরে বলতে শুরু করলাম, আম্মু আম্মু আমি হারুন কে ভালোবাশি, ও আমাকে কিছুতেই মেনে নিচ্ছে না,
হারুনের আম্মু আমাকে ভিতরে নিয়ে গেল, আমি হারুনের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে আম্মুর পিছে পিছে চলে গেলাম,
হারুনের আম্মুকে সব খুলে বললাম, সেদিন আম্মু খুব হেসেছিল,
একটু পর হারুন আসলো, এসে আমাদের সামনে বসলো, আম্মু হারুনের দিকে গরম চোখে তাকিয়ে আছে,
হারুন মাথা নিচু করে বসে আছে,
আম্মু বলতে শুরু করল, এত সুন্দর একটা মেয়ে তোকে ভালোবাসে আর তুই পাত্তা দিচ্ছিস না,
আম্মু,,,,তুমি জানো না ও কি সাংঘার্তিক মেয়ে?
থাক আর বলতে হবে না, তুই এই মেয়েকেই বিয়ে করবি? অনেকটা রাগি শুরে কথা টা বলল আম্মু,
আমি তো আম্মুর কথা শুনে পুরাই অবাক হয়ে গেলাম, আম্মু এতো ভালো???
হারুন মাথা নিচু করে বলল, ঠিক আছে, (তখন তাকে দেখে অনেক টা পরাজিত সৈনিকের মত লাগছিল)
মা এদিকে আয় তো রান্না করতে হবে, আমি আর মা রান্না ঘরে চলে গেলাম, রান্না শেষে তিনজন একসাথে বসে খেলাম, এখন চলে আসার পালা
আমি কিছুতেই আসতে চাইছিলাম না, আম্মু জোর করে পাঠিয়ে দিলেন, আর বলে দিলেন, কয়েকদিন পড়ই আমারা তোমাদের বাসায় যাবো, তোমার মা কে বলে রেখ! আমি মাথা নেরে হ্যা সম্মতি দিলাম!
আম্মু হারুন কে পাঠিয়ে দিলেন আমাকে এগিয়ে দিতে, আমি আম্মু কে সালাম করে চলে আসলাম, হারুনের সাথে রাস্তায় হাটছি, ও কোন কথা বলছে না, আমি হারুনের হাতটা ধরলাম, ও হাতটা ছারানোর কয়েকবার চেষ্টা করল কিন্তু কাজ হলো না,
আমি বলতে শুরু করলাম আমি এই হাত টা ধরেছি সারা জিবন ধরে রাখতে চাই, হারুন আমার দিকে অবাক দিষ্টিতে তাকালো, কিছু বলল না,
আর যদি নাই ধরতে দাও, তাহলে থাক আর বিরক্ত করব না, বলে হাতটা ছেড়ে দিতে লাগলাম, কিন্তু সে ছারল না, আরো শক্ত করে ধরল,
তখন আমি বুঝে নিলাম হয়ত ভালোবাসা জম্মেছে, বোকা টার মনে,
আমাকে রিকশায় তুলে দিয়ে বলল, দেখশুনে বাসায় যেও,
আমি মাথা নেরে সায় দিলাম। তখন আমার চোখে পানি টলমল করছে,
তার কিছুদিন পড়ই দুই পরিবারের সম্মতি তে আমাদের বিয়ে হয়, !
আমি আন্টির দিকে এতোক্ষন অবাক দিষ্টিতে তাকিয়ে আছি,
আন্টি বলল কি হলো,
আমি মাথা নেরে বললাম কিছু না, অনেক সুন্দর লাভ স্টোরি!
আন্টি একটা মৃদূ হাসি দিলেন,
স্যার এতোক্ষন কথা না বলতে পেরে ত্যক্ত হয়ে গেছেন,তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে,
স্যার এবার আমাকে গম্ভির গলায় ডাক দিলেন,
নিরব এখানে এসো জরুরি কথা আছে,।
আন্টি স্যার ডাকছে,
ওকে যাও,
হিয়া কিছুটা বিরক্ত বোধ করলেও উঠে তার মার কাছে গিয়ে বসল,
স্যারের মুখে এবার হাসি ফুটলো, কারন তার পেচাল শোনার মত একজন কে পাওয়া গেছে,
স্যার কথা বলা শুরু করেছে, আমি শুধু হ্যা না উওর দিচ্ছি,
গাড়ি চলছে আপন গতিতে, হিয়া জানালা খুলে কানে হেডফোন গুজে বাইরের গ্রাম দেখছে, তার চুুল গুলো বাতাশে উরছে, বারবার মুখে এসে পড়ছে, চুলগুলো সরিয়ে কানের কাছে গুজে দিতেই আবার এসে পড়ছে, দেখতে খুব ভালো লাগছে, অনেক টা মায়াবি চেহারা, তার মায়ের মত,
এই নিরব,
জি স্যার?
কিছু বলছো না কেন?
স্যার গ্রাম দেখছি, অনেক সুন্দর আপনাদের গ্রাম,
হুম, খুব সুন্দর! যত দেখবে ততই মুগ্ধ হবে!
আমি জানালার দিকে তাকিয়ে বল্লাম স্যার এখন একটা গান শুনলে কেমন হয়?
স্যার হকচকিয়ে বলল, বাহ গ্রেট আইডিয়া,
ডাইভার ক্যাসেট টা চালু করে দাও তো?
ডাইভার ক্যাসেট চালু করল,
গান বাজতে শুরু করল, জহির রায়হান উপন্যাসে নির্মিত হাজার বছর ধরে ছবির গান টা,
তুমি সুতোয় বেধেছো শাপলার ফুল
নাকি তোমার মন,
আমি জিবন বেধেছি মরন বেধেছি
ভালোবেশে সারাক্ষন, ভালোবেশে সারাক্ষন,
হিয়া কানের হেডফোন টা খুলে গান টা শুনতে লাগলো,
এদিকে স্যার গান টা বলা শুরে করে দিছে, আমরা সবাই স্যারের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি,
এদিকে আন্টি সবাই কে চমৎকিয়ে দিয়ে আন্টিও বলতে শুরু করল, এবার স্যার গান বলা বন্ধ করে আন্টির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে, এত সুন্দর লাগছিল আন্টির গলায় গান টা, যা বলার মত না,
সব থেকে অবাক হয়েছিল হিয়া, হয়তো কল্পনাও করতে পারে নি, আন্টি গান বলবে,
আন্টির গান শেষে আমরা, করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানালাম, স্যার এখনো হা করে তাকিয়ে আছে, এসব দেখে আন্টি বেশ লজ্জাই পেল,
আমি বললাম আন্টি আপনে এতো সুন্দর গান বলতে পারেন?
আন্টি হাসতে হাসতে বলল পারি একটু আকটু,
খুব সুন্দর হয়েছে আন্টি,
আন্টি হাসতে, বলল ধন্যবাদ,
আমরা এক হোটেলের সামনে গাড়ি থামালাম, সবাই নেমে, হালকা লান্স করে , স্যার আর আন্টি গাড়িতে উঠে গেছেন, আমি এখনো উঠি নি, কারণ একটা সিগারেট খেতে হবে, সকাল থেকে খাই নি, তাই মাথা টা ঝিম ধরে আছে, দোকানে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম, দুটো টান নাই মারতে, হিয়া এসে হাজির,
নিরব, এই নিরব এখানে কি করছ,অনেক টা রাগন্তুিত ভাবে বলল হিয়া,
আমি তারাতারি সিগারেট টা ফেলে দিয়ে বল্লাম, কিছু না ম্যাম, চকলেট কিনতে এসেছি,
এসো বাবা তোমাকে খুজছে,
আসছি, তার মুখে একটা বিরক্তির ছাপ,
হিয়া, যাকে নাম ধরে ডাকার সাধ্য আমার নেই, ম্যাম বলে ডাকতে হবে,
আর সে আমার দু বছরের ছোট হলেও আমার নাম ধরে ডাকবে, মাঝে মাঝে মনে হয়, কষে একটা থাপ্পর মারি, কিন্তু চাকরি যাবে সে ভয়ে মারতেও পাড়ি না ,
গিয়ে গাড়িতে বসলাম, গাড়ি আবার চলতে শুরু করল, আমরা এখন খুলনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, অনেক সুন্দর গ্রাম, মনে হচ্ছে আলপনা দিয়ে আকা, কোন প্রত্তিচ্ছবি, এর আগে এতো সুন্দর গ্রামের দৃশ্য দেখার ভাগ্য আমার হয় নি, একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে শান্ত নদী, তার নাম শিপসা, নদীতে কোন স্রোত নেই, নদীর কোন গর্জন নেই, এতদম দিঘির মত, নদীর নামের সাথে মিল রেখেই মনে হয় তার প্রবাহ দ্বারা,

নদিতে কিছু নৌকা চলছে, আর কিছু নৌকা ঘাটে বাধা রয়েছে। এরা কেউ মাছ ধরছে, আবার নদী পারাপার করছে, কত শান্ত তাদের জিবন দ্বারা,

আমরা যখন বাসায় প্রোছালাম, তখন বিকাল চারটা, বাসার সামনে সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে,
গ্রামের মানুষ গুলো মনে হয় এ রকমই হয়, কেউ আসার কথা শুনলে সবাই এক সাথে অপেক্ষা করে,
আমরা যাওয়াতে, বাসার সামনে হইচই শুরু হয়ে গেল, সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল, কুশলয়াদি করতে, আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি, তাদের কান্ড কারখানা।
হিয়াকে নিয়ে সবাই কি যে টানাটানি করছে, বলার মত না, মেয়েটা অতিষ্ট হয়ে উঠেছে, তবুও কিছু বলতে পারছে না, হিয়ার মুখ টা দেখে আমার কি যে হাসি পাচ্ছিল, তবুও হাসতে পাড়ি নি , দাতে দাত রেখে সহ্য করেছি,
সবার নজর এখন আমার দিকে, আমি কে? সবাই চোখাচোখি করছে, আন্টির দিকে তাকাতেই আন্টি বলতে শুরু করল,
ওর নাম নিরব মাহমুদ, আমাদের কম্পানির ম্যানেজার, খুব ভালো ছেলে, বিয়ে বাড়ি বলে নিয়ে এসেছি, মা বাবা মারা গেছে অনেক আগেই তাই গ্রাম দেখার ভাগ্য তার হয় নি,, এখানে কয়েকদিন থাকলে একটু একাকিত্ব দূর হবে, আর গ্রামে বিয়ে বাড়িতে যে কি মজা হয় সেটাও বুঝতে পারবে,
সবার মুখে একটা মলিন হাসি। তারপর আন্টি সবার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন,
আমি সবার সাথে পরিচিত হলাম, পরিচিত হয়ে খুব ভালো লাগলো,
, আমরা বাসায় ঢুকে ফ্রেস হয়ে খেতে বসল্লাম
হরেক রকমের খাবারের আইটেম, একজন এটা দেয় তো আরেকজন আরেক টা।
কে শুনে কার কথা, না করলে ধমক খেতে হয়, খাবার খেতে বসেও জোর পৃর্বক নির্যাতিত হচ্ছি, অন্যদিকে হিয়াও পড়েছে মারার্তক প্যারায়, কিছুতেই উঠতে পারছে না, সবাই বলছে শেষ করেই উঠতে হবে, হিয়া এখন আর খাচ্ছে না, সুধু ভাত নারছে, অন্যদিকে, স্যার, সুধু খেয়েই চলেছে, তো খেয়েই চলেছে, খাচ্ছে, আর বলতেছে, আহ কতদিন পর এ রকম টাটকা নদীর মাছ দেশী মুরগীর মাংস খাচ্ছি,
পাশে থেকে ছোট আন্টি বলছে ভাইয়া আর একপিচ মাছ দেব?
দাও দাও, একটু ঝোল বেশি করে দাও, খুব সুস্বাদু হয়েছে,
এবার আমি রিতীমত অবাক, স্যার এসব কি করছে,
তবে একটা জিনিস বুঝলাম, খুলনার মানুষ খুব অথিতিপরায়ন, তবে খেতে খুব পছন্দ করে,
অবশেষে খাওয়া শেষ করে, উঠে আসলাম, এখন একটু বির্সামের দরকার, কিন্তু বলব কাকে, বলার মত কেউ নেই, হিয়া কে বলব?
সে তো বদ মেজাজি, একটা বললে আরেকটা ভেবে নেয়,
ভাইয়া, ভাইয়া,
পিছনে ঘুরে দেখি, মেঘলা, ডাকছে, (মেঘলা হচ্চে ছোট আন্টির মেয়ে)
-হ্যা,
-আসো তোমার রুমটা দেখিয়ে দেই, (আমি মেঘলার কথা শুনে হকচকিয়ে গেছি, আজকেই প্রথম দেখা আর আজকেই তুমি?)
বলেই হাটা শুরু করল মেয়েটা, আমি তার পিছে পিছে যাচ্ছি, মনে মনে বলছি যাক ভালোই হলো একটা রুম তো পাওয়া গেল!
এই যে ভাইয়া এটা তোমার রুম, তুমি এখানেই থাকবে,
আমি মাথা নেরে হ্যা সূচক উওর দিলাম,
আমি খাটের পর গিয়ে বসলাম,
মেঘলা সামনে দাড়িয়ে, আছে,
ভাইয়া আমি তোমার সাথে তুমি করে কথা বলেছি, বলে তুমি খুব অবাক হয়েছো?
আমি এবার আরেকটা ধাক্কা খেলাম,বললাম না না।ঠিক আছে,
ভাইয়া আমি এ রকমই মানুষকে খুব সহজেই আপন ভেবে নেই, তোমাকেও ভেবে নিয়েছি,
বাহ খুব রোমান্টিক তো তুমি?
হুম আমি এ রকমই, অনেক টা আল্লাদি ভাবে বলল
আচ্ছা তুমি কোন ক্লাসে পড়?
অর্নাস ফাষ্ট ইয়ার,
বাহ খুবই ভালো,
আচ্ছা ভাইয়া তুমি সিগারেট খাও?
আমি অনেটা চমকে গিয়ে, ভয়ে ভয়ে বললাম কেন?
না, তোমার ব্যাগে, সিগারেট আর একটা ম্যাচ পেলাম তো,
আমি কি বলব, ঠিক ভেবে পাচ্ছি না,
এমন সময় মেঘলা আবার বলে উঠলো, আচ্ছা ভাইয়া সমস্যা নেই, তবে তুমি কি স্যাকা খেয়েছেন?
আমি মাথা নেরে বল্লাম না। আমি কোনদিন প্রেম করি নি,
আমার কথা শুনে কেমন যানি, মেঘলার মুখটা চকচক করে উঠল,

আচ্ছা ভাইয়া তুমি বির্সাম নাও, আর এই নাও তোমার সিগারেট, বিকাল বেলা নদীর পারে বেড়াতে নিয়ে যাবো!
আমি মাথা নেরে হ্যা সম্মতি দিলাম, মেঘলা চলে গেল,
আমাকে যে রুম টা দেয়া হয়েছে রুমটা আসলেই অনেক সুন্দর, মেঘলা ইতিমধ্যই, আমার ব্যাগ থেকে জামা কাপর বের করে, সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে,
আমি মেয়েটার, কথাবার্তা, কাজকর্ম দেখে মুগ্ধ।

বিকাল বেলা, আমি সিগারেটের প্যাকেট টা নিয়ে, বাসা থেকে একটু দূরে বসে সিগারেট খাচ্ছি, ইতিমধ্যেই, মেঘলা এসে হাজির সাথে হিয়া ও আছে, দুজনেই খালি পায়,
ভাইয়া তুমি এখানে বসে সিগারেট খাচ্ছো? তোমাকে খুজতে খুজতে আমি প্রায় পাগল! হয়ে গেছি,
মেঘলার কথা শুনে, হিয়া হা করে তাকিয়ে আছে, মেঘলার মুখের দিকে,
আমি হিয়াকে দেখে তারাতারি সিগারেট টা ফেলে দিলাম, না জানি কখন আবার কোন বিপদ এসে ঘারে পড়ে,
ওঠো ওঠো বলছি, বলে হাত ধরে টান দিল, আমি তারাতারি উঠে পরলাম,
হিয়া এবার বৃশ্মিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,
মেঘলাঃ আপু তুই ভাইয়ার দিকে এভাবে তাকিয়ে আসিস কেন? চল,
ভাইয়া চলো!
হুম, চলো,
তিনজন হাটছি, মেঘলা মাঝখানে, আমি একপাশে হিয়া অন্যপাশে, মেঘলা, আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে, আমি সিম্পল ভাবে সব উওর দিচ্ছি, মেঘলার প্রশ্ন গুলো ঠিক এরকম,
আচ্ছা ভাইয়া তুমি প্রেম করো না কেন?
আমি সিম্পল ভাবেই বলি, এমনি, আমার মত অনেক ছেলেই আছে যারা প্রেম করে না, এখনো সিংগেল,
মেঘলা বেশ শব্দ করেই হাসি দিয়ে বলল, আমার বিশ্বাস হয় না,
-কেন?
তোমার মত এতো স্মাট ছেলে যে সিংগেল থাকতে পারে, ? কিভাবে বিশ্বাস করি বলো তো?
আমি এবার একটা হাসি দিয়ে বললাম, তোমার খবর কি?
হিয়া আমার চন্চলতা দেখে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে, ঠিক ধরতে পারছে না, এটাই কি আমি?
মেঘলা একটা দির্ঘ নিঃশ্বাস ছেরে, বলল, আসলে ভাইয়া অনেক ছেলেই প্রোপস করলেও এখনো প্রেম করি নি কারন মনের মত কোন ছেলেই পাই নি! বলেই হিয়ার মুখের দিকে তাকাল,
হিয়া বিস্মিত চোখে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে,
মেঘলা যে গুছিয়ে মিথ্যা বলার যেষ্টা করছে, সেটা আমি খুব ভালো করেই, বুঝেছি, এখন আমাকে পটানোর ধান্ধা নিচ্ছে।
মেঘলা আবার বলল, আচ্ছা ভাইয়া তোমার কি রকম মেয়ে পছন্দ?
কেন?
না খুজে দেখতাম আমাদের গ্রামে এমন মেয়ে আছে নাকি!
আচ্ছা, যখন সময় হবে তখন তোমায় বলব, হুম?
আচ্ছা,
এখন আমার বসে আছি, সিপসা নদীতে বাধা একটা ছোট নৌকাতে, এক পাশে আমি আর অন্ন্যপাশে, মেঘলা, আর হিয়া,
সৃর্য টা লাল হয়ে গেছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই অস্ত যাবে, মাঝি রা সবাই ঘরে ফিরে যাচ্ছে, এতো সুন্দর লাগছে সময় টা, নদীর পাশেই বাশ বাগান পাখিরা সব কিচিরমিচির করছে, নদীর উপর দিয়ে সাদা বক উরে যাচ্ছে, এক সারি ধরে, এদের গন্তব্য অজানা, গ্রামে না আসলে দেখতেই পারতাম না, এতো সুন্দর মনো মুগ্ধকর দৃশ্য,
মেঘলা মেয়েটা যে এতো কথা বলতে পারে আমি আগে ধারনা করতে পারি নি,
আমি বললাম চলো বাসায় যাই সন্ধা হয়ে গেছে?
মেঘলা হ্যা সম্মতি দিল, সারা রাস্তা বকরবকর করতে করতে মাথা টা ঝালাপালা করে ফেলেছে মেয়েটা, ওরা দুজন বাসায় চলে গেল, আমি বললাম একটু পরে আসছি,

এবার দোকানের দিকে পা বাড়ালাম, দোকানে গিয়ে সিগারেট খেতে খেতে বাসায় চলে আসলাম।
রুমে বসে আছি, এমন সময়, মেঘলা ও হিয়ার আগমন,
এসেই প্রশ্ন এতোক্ষন কি করলা, কখন থেকে অপেক্ষা করছি তুমি যানো?
আমিঃ কেন?
মেঘলা, একটু বির্বত হয়ে, বুঝো না? ন্যাকা।
মেঘলার কথা শুনে, হিয়ার চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেছে,
আমি একটা ডোক গিলে বললাম কি বুঝবো?
তোমাকে বুঝতে হবে না, কালকে মার্কেটে যেতে হবে, একটা শারি কিনবো, হুম?
আমি মাথা নেরে হ্যা সম্মতি দিলাম,
শারি টা কিন্তু তোমাকে পছন্দ করে দিতে হবে?
-মেঘলা আমি তো কোন দিন শারি কিনি নাই, তো বুঝবো কি ভাবে?
তোমাকে বুঝতে হবে না সুধু আমার সাথে যাবে, তোমার যেটা পছন্দ, আমার ও সেটা পছন্দ, বলেই একটা হাসি দিয়ে চলে গেল!
হিয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে সাংঘার্তিক ভুল করে ফেলছি,
হিয়াঃএই শোন মেঘলা তোমার সাথে প্রেম করতে চাচ্ছে, যদি হ্যা বলছো তবে তোমার খবর আছে,
আচ্ছা ম্যাম,
হিয়া চলে গেল, এখন আমি মহা সমস্যায়, কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না,
সকাল বেলা, খাওয়া দাওয়া করে, মার্কেটে এসছি, এখন সন্ধা, সারাদিন পাগলের মত ঘুরাইছে, কি সমস্যায় পড়ছি বলার মত না, মেয়েরা যে এতো পেইন জানা ছিল না, এক তো সারাদিন ঘুরা, আরেক তার বকরবকর, একদম পাগল হয়ে গেছি, সন্ধা বেলা ঘুমিয়ে গেছি, মাথা ব্যাথা করছিল, কালকে বড় আপু বিয়ে,আজ সারা বাড়ি লাইটিং করা হচ্ছে, ফুল ভলিয়মে গান বাজছে, তার মধ্যেও ঘুমিয়ে গেছি,
সকাল বেলা উঠে দেখি সব আরেজমেন্ট কম্পিট,, হিয়া ও মেঘলা একই শারি কিনেছে, অনেক সুন্দর লাগছিল, হিয়াকে, একদম পরির মত,
মেঘলা, এসে বল্ল দেখো তো কেমন লাগছে আমাকে?
আমি হাসি মুখে বললাম ভালো!
সুধু ভালো? মুখটা ছোট করে,
না খুব ভালো, একদম পরির মত,
এবার কিন্তু বেশি বেশি বলে ফেলছো, ভাইয়া
না একদমই না, সত্যি বলছি,
মেঘলার মুখে রহস্যর হাসি,
হিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে, রাগে দাত কটমট করছে,
বিয়ে হয়ে গেল, আমরা দাড়িয়ে আছি রাস্তায়,আমি হিয়া আর মেঘলা,
স্যার এসে বলল নিরব, ব্যাগ গুছিয়ে রেখ কাল সকালে চলে যেতে হবে,
আমি হ্যা সম্মতি দিলাম,
মেঘলার চোখে জল ছলছল করছে, মনে হয় অনেক কথা বলার ছিল, বিন্তু আর বোধ হয় বলতে পারবে না, রাতে অনেকক্ষণ কথা হলো কিন্তু কিছু বলল না,
আমি মনে মনে বললাম যাক বাবা বাচা গেল, একবার বলে ফেল্লেই বিপদ, অন্তত সম্মান নিয়ে ফিরতে পারব,
…………
সকাল বেলা, চলে যাচ্ছি , মেঘলা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, মেঘলা কে বললাম ভালো থেকো,
মেঘলা একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলল, তুমি ও ভালো থেকো,
চলে যাচ্ছি, সিপসা নদীর তীর থেকে, চলে যাচ্ছি মেঘলা, নামক একটা, বাচাল মেয়ের কাছে থেকে, ভাবতেই কেমন খারাপ লাগছে, মাএ কয়েকদিনেই কি রকম মায়ায় পরে গেছি।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে , আবার কালকে থেকে, সেই অফিস, আবার ব্যাস্ত নগরী। ভাবতেই কেমন লাগে।
দুইদিন পর,,,,,
হিয়াকে বাসায় প্রোছে দিতে যাচ্ছি, হঠাৎ হিয়া বলে উঠল, মেঘলার কথা মনে আছে,
হুম,
মেয়েটা এমনি ভালো হলেও মিথ্যা কথায় পটু সেটা কি তুমি জানো?
হুম!
হিয়া বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বলল কি ভাবে জানলে, ?
মেঘলাই বলেছে,
ওর অতিত সম্পর্কে জান?
হুম, সেদিন রাতে সব বলেছে,
কি বলেছে?
বলছে আমি যদি রাজি থাকতাম তাহলে ওর তিন নাম্বার বিএফ টা আমি হতাম। কিন্তু সে আমাকে বিয়ে করতো!!!

কিছুক্ষন পর, হঠাৎ হিয়া বলে উঠল, আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই,
হিয়ার কথায় আমি চমকে উঠলাম, বলে কি মেয়েটা, ভালোবাস মানে জানো?
জানি না জানতেও চাই না, আমি তোমাকে বিয়ে করব ব্যাস।
-সেটা সম্ভব না, বলে নামিয়ে দিয়ে চলে আসলাম, ।
রাত নয়টা,
স্যারের ফোন!
ধরতেই তারাতারি বাসায় এসো দরকার আছে, বলেই ফোনটা কেটে দিল,
আমি পড়ে গেলাম মহা সমস্যায়, হিয়া আবার কিছু করে বসে নি তো?
তারাতারি করে চলে আসলাম, স্যার আর আন্টি বাসার বাইরে বসে আছে , মনে হচ্ছে আমার জন্যই অপেক্ষা করছে,
যেতেই আন্টি ডাক দিলেন,আমি গিয়ে আন্টির পাশে বসলাম
শোন বাবা, হিয়া আমাদের অনেক আদরের মেয়ে, ও তোমাকে খুব ভালোবাসে, তুমি না করছ, তাই বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিসে,
একজন মা হয়ে কিভাবে সহ্য করি বলো তো?
তুমি ওকে আর ফিরিয়ে দিয়ো না, বাবা। স্যার আমার দিকে, অসহায়দের মত তাকিয়ে আছে, আমি সেদিন তাদের না করতে পারি নি, , আমাদের বিয়ে টা হয়ে যায়,
কিন্তু বিয়ের পর, শুরু হয় ঝামেলা, তিনি রান্না করতে পারবেন না, তাই প্রতিদিন আমার ই রান্না করতে হয়, দশটার আগে ঘুম থেকে উঠে না, ডেকে তুলে খাওয়াতে হয়। আসলে আমার জিবনে কি এটা হবার ছিল?
সেদিন রাতের বেলা, দুজনে খেতে বসেছি, এমন সময় হিয়া বলে উঠল রান্না ভালো হয় নি, বলে প্লেট টা ছুরে মারল, তখন আর নিজেকে কন্টোল করতে পারি নি, উঠে গিয়ে কষে একটা থাপ্পর মেরে ছিলাম,
থাপ্পর মারার পর হাত টা চিন চিন ব্যাথা করছিল,
হিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে, এটা কার কল্পনার বাইরে!
আমি বলতে শুরু করলাম, তোকে বিয়ে করে, আমার জিবন টা শেষ, তুই কি একটা মেয়ে,
একটা মেয়ে কে তখনই সুন্দর লাগে, যখন সে স্বামির সুখ কেই নিজের সুখ মনে করে, তোকে এতো ভালোবাসি তারপরও তোর এতো অবহেলা,অফিস করে এসে নিজে রান্না করে খাওয়াই, তাও তোর মন ভরে না, এখনই বাসায় চলে যাবি, তোর সাথে সংসার করা আর সম্ভব না। বলেই বাইরে চলে আসলাম, রাতে বাইরে বসে বেশ কয়েকটা সিগারেট খেয়ে, আবার বাসায় গেলাম,
হিয়া এখনো যায় নি, খাটে শুয়ে আছে, চলের উপর পাচ আঙ্গুলের ছাপ এখনো বোঝা যাচ্ছে, ফর্সা গাল টা লাল টকটক করছে,
কাছে গিয়ে দেখলাম হিয়া কাপছে, কপালে হাত দিতেই বুঝলাম অনেক জ্বর এসেছে,
হিয়ার চলের পর হাত দিতেই চোখ বেয়ে দুফোটা অশ্রু পরল, হিয়ার মুখে,
কেমন করে মারলাম এতো জোরে, ? যাকে ভালোবাশি তাকে মারতে পারলাম আমি? নিচের কাছে নিজেকেই প্রশ্ন করছি,
নিচে তাকাতেই দেখি, হিয়া এক ভাবে তাকিয়ে আছে, আমার মুখের দিকে!!
আমি উঠে চলে যাচ্ছি এমন সময়, নিরব একটু শুনবে?
হুম বলো?
একটু জ্বরিয়ে ধরবে?
তখন আর নিজেকে কন্টোল করতে পারি নি, এক দৌরে গিয়ে জরিয়ে ধরে ছিলাম হিয়াকে,
কতক্ষণ ধরে ছিলাম তা বলতে পারব না।
হিয়া সুধু বলছিল, আমার ভুল হয়ে গেছে নিরব আমাকে মাফ কে দাও, আমি তখন আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরেছিলাম হিয়া কে,
জানো হিয়া ছোট বেলায় মায়ের আদর পাইরনি তো, তাই, খুব সখ ছিল এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করব, যে সব সময় আদর করবে, ভালো বাসবে, আমাকে খুব কেয়ার করবে, অনেক ভালোবাসবে,
হিয়া তখন আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরেছিল,
সেদিন রাতে, সারা রাত জরিয়ে ছিল আমাকে,
.
সেদিনের পর থেকে আমি এক অন্য হিয়া কে, যে হিয়া সব সময়, আমার কেয়ার করে, ভালোবাসে,

আজ সকাল, হিয়াকে জরিয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছি,
এই উঠো, উঠো বলছি,
না উঠবো না, আরেকটু ঘুমাই!
আমাকে তো ছারো, রান্না করতে হবে তো,
না তুমি চলে গেলে আর ঘুম হবে না, , আমি এখন ঘুমাব,
তাহলে আজকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ তাইতো
হুম,
আমার খুব খুদা পেয়েছে, রান্না করতে হবে, বলে ঠেলেঠুলে অনেক কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেল,
আমার ও আর ঘুম হলো না, উঠে সোজা চলে গেলাম, রান্নাঘরে, গিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম
এ্যই এখন আবার দুষ্টুমি, ছারো রান্না করতে দাও,
কে শোনে কার কথা, আমি জরিয়ে ধরেই আছি,
ছারানোর একটু বিথা চেষ্টা করল কিন্তু কোন কাজ হলো না,
হিয়া রান্না করছে, আর আমি তাকে জরিয়ে তার চুলের ঘ্যান নিচ্ছি,
তার চুলে ঘ্যানটা মাতাল করে দিচ্ছে,
খুব সুখে আছি, কে বলেছে মেয়েদের মনে ভালোবাসা নেই, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়, যে টা সবাই পারে না।

……………………………………………..সমাপ্ত………………………………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত