দু’জনেরই হিরো রাজ্জাক, সালমান দু’জনেরই প্রিয় কক্সবাজারের সৈকত। সন্ধে হলে দু’জনেই দেখেন সিরিয়াল।
তাতে কী ? এ-রকম লোক তো কতই !একে অন্যকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট। তাই একজনের লিভারের কিছু অংশ রয়েছে অন্য একজনের শরীরে৷ মন তো বটেই , শরীরও যে বাঁধা পড়েছে কবে৷ এমন দম্পতি আর কত ? বেশি তো নয়।
‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে ’ কথাটা শুনেই একে অন্যের দিকে চেয়ে লাজুক হাসি হাসলেন অথই -অনই। লোকে কত কাজের জন্য সংবর্ধিত হয় , ওঁরা সংবর্ধনা পেয়েছেন ভালবেসে। প্রেমের প্রতীক হিসেবে। প্রায় বছর আড়াই আগেও যাঁরা বেঁচে থাকার দিশা না-পেয়ে ভাবতে বসেছিলেন আত্মহননের পথ।
একে অন্যকে ছেড়ে থাকার ভাবনায় শিউরে উঠে খুঁজতে চেয়েছিলেন প্রেমের সমাধির সন্ধান। আর আজ তাঁরাই ঠিক করেছেন , প্রেমের দিন ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে ’ উপলক্ষে বেড়াতে যাবেন নতুন ভালো লাগার খোঁজে।
যদিও দু’জনে কিছুতেই ভুলতে পারেন না , ২০১৫ -র সেই জুন মাসের কথা। যেদিন সিটি স্ক্যান রিপোর্ট জানান দিয়েছিল , অনইয়ের শরীরে বাসা বেঁধেছে ‘সিরোসিস অফ লিভার ’ নামক মারাত্মক রোগ। লিভার অপারেশন না -করালে বাঁচার আশা বড়ই ক্ষীণ।
কিন্ত্ত কোথায় পাওয়া যাবে লিভার ! কে স্বেচ্ছায় দেবেন অর্ধেকটা যকৃতের অংশ ? কোথা থেকে মিলবে অপারেশনের বিশাল পরিমাণ অর্থ? কত্তা -গিন্নি সেদিন চোখের সামনে দেখেছিলেন শুধুই নিকষ অন্ধকার৷ বছর চুয়াল্লিশের অনইয়ের তখন যেটুকু আয় , ফুসকা -মুখরোচক খাবার সরবরাহ করে।
উনত্রিশ বছরের অথই, সাদামাটা গৃহবধূ। দু’জনে বিয়ে করেছিলেন ভালোবেসে। অনইয়ের কথায় , ‘আমাদের সব কিছুতেই খুব মিল।
ওর যেটুকু অপছন্দ , তা হল আমার সময়মতো বাড়ি না আসা। আমায় ছেড়ে কিছুতেই একা থাকতে পারে না। ’একা থাকেনওনি অথই অনইকে ছেড়ে একদিনের জন্যও। যেদিন জানতে পেরেছিলেন ঠিকমতো লিভারদাতা পাওয়া গেলে , তাঁর লিভারের অংশই রোগীর লিভারে প্রতিস্থাপন করে রোগীকে বাঁচানো যেতে পারে৷
সেদিনই ডাক্তারবাবুদের কাছে জানিয়েছিলেন তাঁর কাতর আর্তি, ‘আমার লিভার দিয়ে , ওকে বাঁচান ডাক্তারবাবু৷‘ অথইয়ের এমন সিদ্ধান্তে প্রচণ্ড ক্ষিন্ত ছিল তাঁর পরিবার। কিন্ত্ত কর্ণপাতও করেননি তিনি। তাঁর কথায় , ‘যার জন্য বেঁচে থাকা , সে -ই যদি চলে যায় , তা হলে আমার কীসের বাঁচা !’
এমন ভালবাসা দেখে নড়েচড়ে বসেছিলেন হাসপাতালের ডাক্তাররা। মিলেছিল সরকারি সাহায্য। অপারেশনের প্যাকেজ ফি -র বিশাল টাকার অনুদান।
২০১৫ -র ১ নভেম্বর , ভয়ানক এক জটিল অস্ত্রোপচারে অথইয়ের লিভারের প্রায় ষাট শতাংশ নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল অনইয়ের লিভারে।
অনইয়ের কথায় , ‘কিছুদিন আগে এক ভদ্রমহিলা তাঁর লিভার দিয়েও বাঁচাতে পারেননি স্বামীকে। আমি বেঁচে গেলাম বোধহয় মহান আল্লাহ -ডাক্তারবাবুদের কৃপায়। বন্ধু আকাশ , সুমনের মতো সারথি আর সাথী অথইয়ের জন্যই। ’
২৭ অক্টোবর থেকে ২৭ নভেম্বর , টানা এক মাস স্বামীর সঙ্গে হাসপাতালে থেকে অনইকে সুস্থ করিয়ে তাঁর হাত ধরেই বাড়ি ফিরেছিলেন অথই! অথইয়ের এমন ভালোবাসার উজানে গর্বিত তাঁদের গোটা গ্রাম।
বিভিন্ন সংগঠন থেকে সংবর্ধনাও জানিয়েছে প্রেমিক যুগলকে। আজ দু’জনে সুস্থ। অনইয়ের কথায় , ‘এখন সাইকেল , বাইকও চালাই। অথই একাই ঘরের সমস্ত কাজ করে। ও বলেছে , আজ ওকে ‘ পার্কে’ বেড়াতে নিয়ে যেতে …যাব। ’না -গিয়ে উপায়ও নেই। একা যে থাকতে পারেন না কেউই।