– এই যে, উঠে পড়ুন।
– ধুর! এইমাত্র না ঘুমালাম! আরেকটু ঘুমাতে দাও।
– না। অলরেডি সাড়ে ৫ ঘন্টা হয়ে গেছে।
– আজ না গেলে হয় না? কাল থেকে সত্যি সত্যিই যাব।
– দুনিয়ার সব ক্যালেন্ডার ঘেটেও ‘কাল’ নামে কোন দিন, মাস, বছর পাইনি। ওটা ফাঁকিবাজদের শব্দ। দেখি, একবার গা ঝাড়া দিন তো!
মেয়েটির চাপাচাপিতে ছেলেটি আর শুয়ে থাকতে পারে না। ঢুলুঢুলু চোখে কোনমতে খাটে হেলান দিয়ে বসে। দুচোখে এখনো রাজ্যের ঘুম। চোখজোড়া কচলাতে কচলাতে ছেলেটি অনুভব করে, দুটো নরম হাত তার দুই কাধে চেপে বসেছে। পরক্ষণেই নরম হাতের প্রাণপণ ঝাঁকুনি তার শরীর থেকে আলসেমি নামক শয়তানটাকে ছাড়িয়ে নিতে চায়। কিন্তু তাতেও অলস ছেলেটির আলসেমি দূর হয় না। শেষ পর্যন্ত নরম হাত দুটো ছেলেটির গলায় কোনমতে একটা পাঞ্জাবী গলিয়ে দিয়ে টানতে টানতে দরজা পর্যন্ত নিয়ে যায়।
– এখনো ঘুম পাচ্ছে?
– হুম।
– তাহলে তো মরিচবাটা ছাড়া কাজ হবে না। ফ্রিজে মরিচবাটা আছে। নিয়ে আসব?
– না। একটা বালিশ এনে দিবা?
মেয়েটি কোমরে হাত রেখে রক্তচক্ষু নিয়ে ছেলেটির দিকে তাকায়। পরক্ষণেই ছেলেটিকে জোর করে ঠেলে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে দরজায় দাড়িয়ে থাকে। ঢুলুঢুলু চোখে পাঞ্জাবী ঠিক করতে করতে ছেলেটি কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে আসে।
– কি হল?
– চশমা ছাড়া যাব কি করে?
– উফ! চশমাটা পর্যন্ত নিতে মনে থাকে না। এর নাম ভূলোবাবু না হয়ে কানাবাবু হল কিভাবে, বুঝি না।
মেয়েটি গজরাতে গজরাতে চশমা এনে ছেলেটির চোখে পরিয়ে দেয়। চশমা পরা ছেলেটি একটু হেটে আবার ফিরে আসে।
– আবার কি হল?
– ফ্রিজে মরিচবাটা আছে?
– না তো! কেন?
– তাহলে একটা বালিশ এনে দিবা?
জগতের অল্প কয়েকটি অদ্ভুত সৌন্দর্যের একটি হল হরিণীর মত চোখের অধিকারিণী মেয়েদের নাকের পাটা ফুলিয়ে রাগ করতে দেখা। ছেলেটি হাঁ করে সেই অদ্ভুত সৌন্দর্যটা গিলতে থাকে। কিন্তু এগুলো বেশিক্ষণ দেখা যায় না। তার আগেই দড়াম করে দরজা বন্ধ হয়ে যায় এবং সাথে সাথেই ওপাশ থেকে সেই অদ্ভুত সৌন্দর্যের মানুষটি চেঁচামেচি শোনা যায়, “আজ যদি কেউ নামাজ না পড়ে বাসায় আসে, তাহলে তার জন্য এই বাসার দরজা চিরতরে বন্ধ। দেখি, নামাজ পড়া ছাড়া কে বাসায় ঢুকায়! আজকে আর কোন অজুহাত শুনব না। কানাবাবু, অন্ধবাবু, ভূলোবাবু, কোন বাবুকেই আমি চিনি না।”
ছেলেটি হাসে। দরজার ওপাশে মেকি রাগ করে থাকা মেয়েটিও নিশ্চয় দরজায় হেলান দিয়ে মুচকি হাসছে। ঘর থেকে শয়তান বের করে দেওয়ার হাসি। ছেলেটি জানে, আর কিছুক্ষণ পর দরজাটি খুলে কেউ একজন তার অপেক্ষায় বসে থাকবে। সাত-সকালের নিষ্পাপ একটি ছেলের জন্য অদ্ভুত সৌন্দর্যের অধিকারিণী মেয়েটি অবশ্যই অপেক্ষা করে থাকবে।