বিয়ের চুক্তিপত্র

বিয়ের চুক্তিপত্র

আজও অনামিকা কে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে। বরাবরের মতো এবার ও বিয়েটা ভেঙে গেল।এই নিয়ে চারবার বিয়ে ভাঙল।অনামিকা কে দেখে অপছন্দ করবে এমন

নয়। আট – দশটা মেয়ে থেকে আলাদাই বলতে হবে।  এই যেমন আজ ও ওকে দেখার পর পাত্রের বাবা বললেন “তা বিয়াই  সাহেব কনে আমাদের পছন্দ হয়েছে ।

অনামিকার বাবা গদগদ কন্ঠে বললেন তাহলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলি ।এমন সময় অনামিকা পাত্রের সাথে একান্তে কিছু কথা বলার অনুমতি চাইল ।

বরের বাবা দিতে চাইলেও অনামিকার বাবা কথা বলতে দিতে চাইলেননা ।কারন তিনি জানেন অনামিকা যে শর্ত দিবে এতে বিয়ে ভাঙবে নিশ্চিত।তবুও অনামিকা কথা

বলল এবং একটু পর দেখা গেল বর অনায়াসে হেঁটে চলে গেল।এমনই তো হবে।কারন কে এমন কঠিন শর্ত মেনে বিয়ে করবে।তা ও আবার চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে। এ

বছরই অনামিকার পড়ালেখা শেষ হলো । পরিবারে ওর বাবাই একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। একমাত্র অবলম্বন ।

মাধ্যমিকের পর থেকে নিজের চেষ্টায় ও এ পর্যন্ত এসেছে । ছোট্ট একটা চাকরির উপর ভরসা করে ॥আর তাই ওর অনেক চিন্তা কিভাবে ওর  পরিবার চলবে ।এ জন্যই

এই দূর্লভ চুক্তিপত্রের ব্যবস্থা । তবুও বাবা মা বলে কথা।তারা একের পর এক বিয়ের পাত্র আনেন ॥আর অনামিকা তার চুক্তিপত্র তুলে ধরে।আর অমনিতেই পাত্রপক্ষ

পালায়।

আজও যখন পাত্রপক্ষ ওকে দেখা শেষ ।তখনই ও আড়ালে বরকে ওর চুক্তিপত্রে সাইন করতে বলল ।বর চুক্তি পত্র হাতে নিয়ে পুরাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল । এ

কোন আজব চুক্তি পত্র ।এ রকম চুক্তি পত্র তো জীবনে ও দেখিনি। পাত্রের মুখ থেকে বেরিয়ে আসল অসম্ভব। অনামিকার উত্তর সবার জীবন আমার জীবনের মতো

না। এতগুলো আজব শর্ত কে মানবে? অনামিকা চুক্তি পত্রটা পড়তে বলল,

*বিয়ের পর চাকরির সবটাকা আমার পরিবারকে দিয়ে দিব ।

*যৌতুক হিসেবে একটাকা ও দিতে পারবনা । এবং এ নিয়ে শুধু এখন না পরবর্তী তে ও কোনোরকম চাপ সৃষ্টি করা যাবেনা ।

*বিয়ে হবে সাদামাটা ভাবে । অতি সাধারণ কিছু নিয়ম পালনের মাধ্যমে। যেগুলো পালন না করলেই নয় ।

এবং স্বাক্ষর করতে হবে সবার সামনেই।এতে দুপক্ষের কয়েকজন গণ্যমান্য, চেনাজানা,এমনকি কয়েকজন অতি কাছের আত্বীয় স্বজনদের স্বাক্ষর ও থাকবে।

এখন কথা হলো….

বিয়ের পর সবটাকা দিয়ে দিতে হবে তাও চুক্তিতে সাইন করে।তা না হলে পরে না হয় আচ্ছা মতো ধোলাই দিয়ে চাকরির টাকা আদায় করা যেত । আবার যৌতুক দিবেনা

ভালো কথা স্বাক্ষর করতে হবে কেন? স্বাক্ষর না করলে হয়তো পরে মেরে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে উদ্ধার করা যেত ।

এভাবেই বিয়ের জন্য পাত্র পক্ষ আসছিল আর শর্ত না মানতে পেরে ভেঙে যাচ্ছিল অনামিকার বাবা মা ভাবলেন এবার পাত্রের সাথে কথা বলতে দেয়া যাবেনা ।যাইহোক

পাত্র পক্ষ দেখা শেষ করল । বরের বাবা খুবই খুশি ।এর মধ্যে অনামিকা পাত্রের সাথে দেখা করার অনুমতি চাইল । ওর বাবা দেখা করতে দিলেননা ।কোনো উপায় না

পেয়ে অনামিকা বলে উঠল  চাচা আমার কিছু কথা ছিল । বিয়ের আগে আমার একটা চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করতে হবে।

এমন কথা শুনে বরের বাবা অবাক হলে ও বর স্মিথ হেসে বলল, আমি তোমার চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করতে রাজি ।সবাইকে অবাক করে দিয়ে অনিক চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর

করে দিল । এবং আবার ও স্মিত হেসে বের হয়ে গেল ।

এক সপ্তাহ পর….

আজ অনামিকার বিয়ে ॥

রাতে অনামিকা অনিক কে জিঙ্গেস করল …অনেকে যেটা দেখে পালাত আপনি কেন সেটা অনায়াসে মেনে নিলেন?

অনিক বললো,দেখো তুমি যেটা করেছো আমি জানি সেটা তুমি তোমার পরিবারের জন্যই করেছো ।আর যে তার পরিবারের জন্য এমনটা করতে পারে সে অন্যর

পরিবারকে ও সমান ভালোবাসবে,এটা নিশ্চিত ।

অনামিকা চুপ করে রইলো, কারন তার নিজের থেকে ও এ মানুষ টা যে আরও মহান। অনামিকার চুপকরে থাকা দেখে অনিক স্মিত হেসে বললো তা তোমার হৃদয়ের

রাজধানীতে প্রবেশ করতে আর কী কোনো চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে? ?অনামিকা ও স্মিত হেসে উঠলো ।
!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত