–আচ্ছা নিহা, আমি যদি তোকে প্রপোজ করি তুই কি আমাকে এক্সেপ্ট করবি??..!
আরশের মুখে প্রশ্নটা শুনে নিহা মোবাইল থেকে চোখটা সরিয়ে ভ্রু কুচঁকে আরশের দিকে তাকায়… আরশের মুখ থেকে এরকম প্রশ্ন শুনার জন্য নিহা একদম তৈরি ছিলোনা…!!
–জানিনা,, কেউ প্রপোজ করার আগে জিজ্ঞাস করে প্রপোজ করে সেটা জানতাম না…!! (আরশের দিকে তাকিয়ে একটু রেগে কথাটা বলে নিহা)…!!
নিহার মুখে জানিনা শব্দটা শুনে আরশ মুখটা কালো করে একটু দূরে গিয়ে বসে… এক্সেপ্ট করবো শব্দটা বললে কি এমন ক্ষতি হতো??…!!
এদিকে নিহা একবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার আড়চোঁখে আরশের দিকে তাকাচ্ছে… আরশের মুখে এমন প্রশ্ন শুনে ভিতরে ভিতরে রাগ হচ্ছে নিহার… ‘ভালোবাসি’ শব্দটা শুনার জন্য ২বছর ধরে অপেক্ষা করছে নিহা… ফ্রেন্ডশীপ নষ্ট হয়ে যেতে পারে’ এই কথাটা ভেবে কেউই আগে ‘ভালোবাসি’ শব্দটা বলতে পারছেনা,, কেমন যেনো একটা অজানা ভয় কাজ করছে দুজনের ভিতর..!!
.
এই মুহৃর্তে দুজনেই বসে আছে চুপচাপ… কেউ কিছু একটা শুনার অপেক্ষায়… কেউ কিছু একটা বলার জন্য সাহস সঞ্চয় করার অপেক্ষায়…!!!
.
হুট করেই আরশ নিহার সামনে হাটু ভেঙে বসে পড়ে… কেমন মায়াভরা চোখে নিহার দিকে তাকিয়ে বলে-
–ভালোবাসি নিহা, বিশ্বাস কর অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে… তোর ইচ্ছা হলে এখন আমাকে এক্সেপ্ট কর,, না হলে ঠাসসসস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে চলে যা… কিন্তু প্লিজ আমার সাথে কথা বলা অফ করে দিসনা…!!!
এমন প্রপোজাল শুনে হিহিহি করে হেসে দেয় নিহা… লাইফে অনেক প্রপোজ পেয়েছে সে, কিন্তু এরকম প্রপোজ এর আগে কেউ করেনি…!!
–তুই কি আমাকে প্রপোজ করলি?? না’কি থাপ্পড় মারার জন্য অফার দিলি?? (একটু মুচকি হেসে বলে নিহা)…!
–জানিনা, তোর যা ইচ্ছা ভাবতে পারিস… কিন্তু প্লিজ এখন দয়া করে তাড়াতাড়ি এক্সেপ্ট কর, আমি বেশি সময় হাটু ভেঙে বসে থাকতে পারিনা….!
–এহহহ, তাড়াতাড়ি এক্সেপ্ট কর বললেই হয়ে গেলো না’কি?? এক্সেপ্ট করতে পারি একটা শর্তে…!!
–আবার শর্ত? কি শর্ত? (একটু ভয়ে ভয়ে বলে আরশ)
— আজ থেকে তুই তুই করে বলা যাবেনা… যদি ভুল করেও তুই করে বলছিস তাহলে তোর জিহ্বা কেটে পিছ পিছ করে কুত্তাকে খাওয়াবো, রাজি??..!!
–হুউউউম রাজি, জিহ্বা কেনো? যদি আর ভুল করেও তুই করে বলি তাহলে আমার হাত-পা-আঙুল সব কেটে পিছ পিছ করে কুত্তাকে খাইতে দিস…!!
–খাইতে দিস মানে? আবার তুই????..!
–না না, খাইতে দিস বলিনি, খাইতে দিও হুম…!!
–হুম গুড বয়…!!
এভাবেই শুরু হয় আরশ নিহার নতুন পথচলা…!!
.
“””৩ বছর পর””
.
আরশ আর নিহার রিলেশনের আজকে ৩বছর পূর্ণ হলো… দুজনেই পড়া শেষ করে এখন ভালো একটা জব করে…অফিসে প্রচন্ড কাজের চাপ থাকা সত্বেও নিহার জন্য আরশ কি করে জানি সময় বের করে নেয়… আরশ আজ ও ঠিক ততোটাই নিহাকে ভালোবাসে, যতোটা সে প্রথমদিন বেসেছিলো.. কিন্তু নিহা আর আগের মতো নেই… আরশকে সে ইদানিং ইগনোর করা শুরু করছে,, আরশ নামটা এখন তার কাছে পেইন,, আরশ মানে এখন তার কাছে ক্যারিয়ার গড়ার পথে একটা বাধাঁ… নিহার একটাই চিন্তা, “ক্যারিয়ার”… ক্যারিয়ার গড়তে হবে তার,, যে করেই হোক ভালো একটা ক্যারিয়ার গড়তেই হবে…!!!
.
আরশ প্রতিদিনের মতো আজকেও একটা রিক্সা ঠিক করে রেখে দাড়িঁয়ে আছে নিহার বাসার সামনে… নিহা অফিসে যাওয়ার সময় রিক্সা খুজঁতে যাতে কষ্ট না হয় তাই আরশ প্রতিদিন-ই একটা রিক্সা আগে থেকে ঠিক করে রাখে…!!
–নিহা, আজকে ১টা দিন অফিস না গেলে হয়না?? চলোনা একটু ঘুরে আসি…!!
–পাগল হইছো তুমি?? আজকে অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে,, যে করেই হোক আজকে অফিস যেতেই হবে..!
–ওও আচ্ছা, তাহলে যাও,, যাওয়ার সময় রিক্সার হুডটা তুলে দিও যাতে তোমার রোদ না লাগে…!!
নিহা রিক্সা থেকে একবার বিরক্তি নিয়ে তাকায় আরশের দিকে… প্রতিদিন এই ঢং টাইপের কথা তার একদম ভাল্লাগেনা…!!
.
–নিহা, আজকে দুপুরে ফ্রি আছো??..!
— না না, আজকে দুপুরে আমাদের অফিসে অনেক জুরুরি মিটিং… রাতের আগে ফ্রি হতেই পারবনা…!!
–ও আচ্ছা…!
কিছুক্ষন পরেই নিহার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে… “লাঞ্চ টাইম, আগে লাঞ্চটা করে নাও, তারপর কাজ করিও”…!!!
নিহা আরো একবার বিরক্তি নিয়ে মোবাইলের দিকে তাকায়… প্রতিদিন এই ঢং তার সত্যিই আর সহ্য হচ্ছেনা…!!
.
–নিহা, তুমি বলছিলা রাতে ফ্রি হবে,, চলো দুজনে ডিনারটা বাইরে কোথাও একসাথে করে আসি…!!
–আরশ, সারাদিন অনেক কাজ করতে হইছে আমাকে,,, আমি তোমার মতো অফিসে গিয়ে ঘুমাই না.. আমি অনেক টায়ার্ড… আমি এখন ঘুমাবো,, বাইইই…!!!
–ও আচ্ছা, গুডনাইট…!
কিছুক্ষন পর নিহার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে, “আমি জানি তুমি এখন ফেসবুকে চ্যাটিং নিয়ে বিজি… বেশি রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে তোমার,, ফেসবুক বন্ধ করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো…!!
নিহা মেসেজটা পড়ে আরো একবার বিরক্তি নিয়ে মোবাইলের দিকে তাকায়,, প্রতিদিন এই অসহ্যকর মেসেজ তার আর সহ্য হয়না…!!!
আরশ চিন্তা করতে থাকে, কি এমন হলো নিহার?? নিহা কেনো তাকে সহ্য করতে পারছেনা? কেনো এতো ইগনোর করছে?? অনেক প্রশ্নের উত্তর আরশের কাছে অজানা রয়ে গেছে,, নিহার কাছ থেকে যে করেই হোক উত্তর গুলো জানতে হবে… আরো একটা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে আরশ পরদিন সকালে আবার নিহার বাসার সামনে যায়,, অপেক্ষা করে নিহা বাসা থেকে বের হওয়ার….!!!
.
–নিহা তোমার সাথে আমার কিছু জুরুরি কথা বলার আছে…!!
–এখন সময় নাই, আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে,, আমরা পরে কথা বলবো…!
কথাটা বলেই নিহা হাটাঁ শুরু করে দেয়,, আরশ পিছন থেকে হাত ধরে ফেলে নিহার…!!
— না নিহা, আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর এখন-ই চাই…!!
–আরশ হাতটা ছাড়ো আমার…!
–কেনো এতো ইগনোর করছো আমায়??…
–আরশ হাতটা ছাড়োওওওও..!
–না ছাড়বনা…!!
ছাড়বনা বলার সাথে সাথেই ঠাসসসসসসস করে আরশের গালে থাপ্পড় মারলো নিহা… কিছুক্ষনের জন্য চারপাশটা একদম নীরব হয়ে যায়… সবাই আরশের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে… আরশ নিহার হাতটা ছেড়ে দেয়,, নিহা আরশের দিকে আরো একবার বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে চলে যায়… আরশ একটা হাত গালে দিয়ে অবাক হয়ে নিহার চলে যাওয়া দেখতে থাকে…!!
.
“””পরেরদিন সকাল”””
.
অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয় নিহা… বাসা থেকে বের হয়েই থমকে যায় নিহা… আজকে তার বাসার সামনে কোনো রিক্সা নেই… রাস্তার ওপাশে আরশ ও দাঁড়িয়ে নেই… এই রোদের মধ্যে অনেক কষ্ট করে একটা রিক্সা খুজেঁ অফিসে চলে যায় নিহা…!!
.
কাজ করতে করতে কোনদিক দিয়ে দুপুর ২:২৫মিনিট হয়ে গেছে নিহার খেয়াল নেই… আরশ প্রতিদিন ২টায় মেসেজ করে মনে করিয়ে দিতো ‘লাঞ্চ টাইম’… আরশ মেসেজ করছে কি’না এটা দেখার জন্য নিহা তাড়াতাড়ি মোবাইলটা হাতে নেয়… না, আজকে আরশ আর কোনো মেসেজ দেয়নি…!!
.
রাতে নিহা বালিশে মাথা রেখে চিন্তা করতে থাকে,, কাজটা একদম ঠিক করেনি সে, যা কিছুই হয়ে যাক, আরশকে থাপ্পড় মারা তার উচিত হয়নি… কেমন যেনো নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে… হুট করেই আরশের জন্য ভিতরটা নাড়া দিয়ে উঠে নিহার… আজ কেমন জানি নিজেকে খুব একলা একলা মনে হচ্ছে তার… আরশের মেসেজগুলো খুব বেশি মিস করছে নিহা… ‘বেশি রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো’ এরকম ১টা মেসেজ দেওয়ার মতো আজ তার কেউ নেই…!!!
নিহা বুঝতে পারছে আরশকে ছাড়া তার ১টা দিন কাটানো কি’রকম কষ্টকর…!!
.
আজ ৩দিন হয়ে গেলো আরশের নাম্বার সুইচ অফ… লাস্ট ৩দিনে আরশের সাথে ১টা কথাও হয়নি নিহার… নিহা ঠিক করে আজকেই আরশের বাসায় যাবে… যে করেই হোক আরশের সাথে তার কথা বলতে হবে… আরশের কাছে তার ক্ষমা চাইতেই হবে…!!
.
এই মুহৃর্তে রিক্সায় বসে আছে নিহা… উদ্দেশ্য আরশের বাসা…!!
.
আরশের বাসায় পৌছে নিহা থমকে যায়… গেইটে তালা দেওয়া,, গেইটে তালা দেখে নিহা তাড়াতাড়ি মোবাইল বের করে আরশের বেস্টফ্রেন্ড নিলয়কে কল করে…!!
–হ্যালো নিলয় ভাইয়া? আমি নিহা বলছি…!!
–হ্যা নিহা বলো, কিছু বলবা??…!!
–ভাইয়া আরশের নাম্বার সুইচ অফ, বাসায় এসে দেখি গেইটেও তালা দেওয়া,, আরশ কোথায় ভাইয়া??…!!
–আরশ তো ৩দিন আগেই ওর পুরাতন নাম্বার অফ করে নতুন একটা সিম ইউজ করছে,, আর আরশ তো আজকে ওর বাবার কাছে যাচ্ছে..!!
–বাবার কাছে মানে?? মেহরাব আংকেলের কাছে?? কিন্তু ওনি তো বিদেশ থাকেন…!!
–হুম, ও দেশ ছেড়ে ওর বাবার কাছে বিদেশ চলে যাচ্ছে,, আজকে বিকাল ৪টায় ওর ফ্লাইট…!!!
নিহা পাগলের মতো হাতঘড়ির দিকে তাকায়, এখন টাইম ৩:৩৫মিনিট,, ২৫মিনিটে আরশের বাসা থেকে এয়ারপোর্ট পৌছে যাওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব নয়… নিহার চোখ থেকে এখন অবিরাম পানি পড়ছে,, কি করলো এটা সে?? এত্ত এত্ত কেয়ারিং, এত্ত ভালাবাসাকে সে কি করে ইগনোর করলো?? কি করে আরশের গালে থাপ্পড় মারলো?? নিহা আরশের বাসার গেইটের সামনে বসে কান্না করতে থাকে…!!
.
হুট করে চোখটা হাত দিয়ে মুছে নিহা আবার নিলয়কে কল দেয়…!!
–নিলয় ভাইয়া, আপনি না বললেন আরশ নতুন নাম্বার ইউজ করছে,, নাম্বারটা দিন প্লিজ..!!
–ঠিক আছে নাও, ০১৭********..!!
.
নিলয়ের কাছ থেকে নাম্বারটা নিয়ে নিহা তাড়াতাড়ি কল দেয় আরশের নাম্বারে…!!
আরশ মোবাইলের দিকে তাকাতেই দেখে সেই পরিচিত নাম্বারটা থেকে কল আসছে,,, আরশ কলটা না ধরে কেটে দেয়,, নিহার কান্না করার গতি আরো বেড়ে যায়… নিহা আবার কল দেয়,, আরশ এবার কলটা রিসিভ করে…!!
–হ্যালো, কি জন্য কল করছো??…!
ওপাশ থেকে শুধু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করার আওয়াজ পাচ্ছে আরশ… আরশ আবারো বলে-
–কি জন্য কল করছো?? আবার ভালোবাসার অভিনয় করতে? আবার ইগনোর করতে? আবার পাবলিক প্লেসে থাপ্পড় মারতে??…!
নিহার ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করার শব্দ বেড়ে যায়,, অনেক কষ্টে সে কাদঁতে কাদঁতে বলে-
–মাফ করে দেওয়া যায়না আমাকে?? আরো একটাবার সুযোগ দেওয়া যায়না? প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা…!!
–সরি নিহা,, এখন আর সেটা সম্ভব না, আমার ফ্লাইটের আর মাত্র ১০মিনিট বাকি আছে… এই কলটা তোমার ৩দিন আগে করা উচিত ছিলো…!! কথাগুলো বলে নিহার কোনো কথা শুনার আগেই আরশ ফোনটা কেটে দেয়,, মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বাবার কাছে কল দেয় আরশ…!
–হ্যালো পাপা, আমি আসছিনা আজকে…!!
–নিহার সাথে সব ঠিক হয়ে গেছে তাইনা?? ( ওপাশ থেকে মুচকি হেসে বলেন মিঃ মেহরাব)…!
–হুম,, নিহা ওর ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইছে,, আর তুমিই তো বলতে আমাকে, কেউ ভুল করার পর ভুলটা বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত…!!
–ঠিক আছে বাবা, কয়দিন পর বউমাকে সাথে নিয়ে একসাথে পাপার কাছে চলে আসবি, কেমন??…!!
–ঠিক আছে পাপা, লাভ ইউ… বাইই…!!
.
এই মুহৃর্তে আরশের কথা চিন্তা করে মিঃ মেহরাব মুচকি মুচকি হাসছেন,, বড্ড বেশি পাগল তার ছেলেটা…!!
.
এই মুহৃর্তে আরশ গাড়িতে বসে কপালে হাত দিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে… আরশ মনে মনে বলছে- উহহহহু, না জানি কত্ত কান্না করছে এখন নিহা… কান্না করুক, একটু কান্না করার মজা কি’রকম তা বুঝা উচিত…কিন্তু এটাই লাস্ট কান্না, আর পাগলিটাকে সে কখনো কান্না করতে দিবেনা… কখনোই না…♥♥
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা