ভিক্টোরিয়া পার্কে বসে বসে নেটফ্লিক্সে সুপারন্যাচুরাল নাটক দেখছিলাম। লেটেস্ট পর্বটা খুবি ইম্পরট্যান্ট, এই পর্বে একটা ডার্ক ভেম্পায়ার মারা যায়। খুবি এক্সাইটমেন্ট নিয়া দেখছিলাম। কিন্তু আমার এক্সাইটমেন্ট এ পানি ঢেলে দেয় দুই জোড়া কপত-কপতি। আমার দুই পাশে বসে বসে চরম আকারে হেঙ্গআউট করতাছে, নাটক টাতে মনোযোগ দিতে পারতাছি না। ওদের হাঁসির শব্দ আর ফ্লাটি ডায়লগ আমার কানে তীরের মত লাগতাছে। বিষয়টা আমার কাছে খুবি বিরক্তিকর ঠেকল, আসলে বিরক্তিকর এই কারণে না যে আমি এগুলা অপছন্দ করি, বিরক্তিকর এই কারণে যে আমি কেন করি না, আমার কেন গার্লফ্রেন্ড নাই।
মেজাজ এবং মন দুনোটাই প্রচণ্ড খারাপ, আরেক জনের প্রেম আর কত দেখমু, অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, এখন যদি সিঙ্গেল থাকি তো এই স্বার্থপর পৃথিবী আমারে একসেপ্ট করব না। এইবার আমারও একটা প্রেম করতে হইব। কিন্ত কার সাথে করমু? কিভাবে করমু? কোন যায়গা থেকে শুরু করমু? কিছুই বুজতাছি না। অবশেষে ঠিক করলাম গুগলে সার্চ দেই।
গুগলে “কিভাবে মেয়েদের কে পটাতে হয়” লেখে সার্চ দিলাম। অনেক গুলা আর্টিকেল এসে হাজির, কিন্তু সব গুলা পোস্ট ই ফালতু, ওগুলা ফলো করলে আমার ব্যাক্তিত্ববোধ বলতে কিছু থাকবো না।
ঠিক করলাম যা করমু নিজের দমেই করমু। ফেইসবুকে যাইয়া রেন্ডম মেয়েদের নাম দিয়া সার্চ করা শুরু করলাম। প্রথম সার্চ দিলাম নাসরিন লেখে, অনেক গুলা আইডি আসল কিন্তু একটাও পছন্দ হয় নাই। এর পর সার্চ দিলাম মানসুরা লেখে একটা সুন্দরী মেয়ের আইডি আইছে কিন্তু মেয়েটা বিবাহিত। এরপর জথাক্রমে, আফসানা, নিতু, সুমা, কারিমা, তানিয়া, আফরোজা, নুসরাত জাহান, ইসরাত জাহান, ফেইসবুকের যত পপুলার নাম আছে সব নাম দিয়া সার্চ করলাম কিন্তু একটারেও পছন্দ হয় নাই।
অবশেষে আমার দুরবস্থা দেইখা ফেইসবুক নিজেই একটা মেয়ে সাজেস্ট করছে আমার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড দের থেকে।
নাম এঞ্জেল জেরিন, নিক নেইম নীল পরি। প্রোফাইল পিক টা অনেক ফাটাফাটি, চুলগুলা হালকা লাল করা, লিপস্টিকের চার-পাচটা লেয়ার দিয়া ঠোঁট জোড়া রক্তজবার মত লাল কইরা রাখসে। মনে হয় মেয়টা অনেক আধুনিক, সমস্যা নাই ওর সাথে প্রেম করলে ইন্টারনেট বিল একেবারে উসুল।
প্রফাইলে ঢুকলাম, ফটোস এ ক্লিক করে অনেক গুলা ফটো দেখলাম, সব গুলা ফটোতে একটা জিনিস কমন- মেয়েটা অনেক কড়া করে লিপস্টিক মারে। এই মাইয়ার সাথে ডেটিং মারলে আমার অনেক লিপস্টিক খাওয়া লাগবো, ইয়াক থু, এক সায়েন্স জার্নালে পড়ছিলাম লিপস্টিক বানায় মাছের আঁশ দিয়া। আর টাইম লাইনের অবস্থা তো আরও মারাত্মক, পুরা টাইমলাইন ইন্ডিয়ান টিভি অভিনেতা কাবির সিং এর এডিট করা পিক আর হিন্দি গানের লিরিক দিয়া ভরা।
ইয়ে মসাম কা বারিস-বারিস কা পানি-পানিকা বুন্দে-
মিলনেকা খায়েস- খায়ের পুরানি- ব্লাব্লা ব্লা ব্লা
মাইয়াগ যে কাম, ফেইসবুকেই আইয়া পোস্ট দিব- আমার সাথেই কেন এমন হয়, কি দোষ ছিল আমার। যার কোন আগাও থাকে না মাথাও থাকে না, তার মধ্যে আবার বান্ধবীরা কমেন্ট করে- কিরে তর আবার কি হইল। লুচু পলাপাইনরাও কমেন্ট করে- আমাকে ফ্রেন্ড মনে করে আপনার মনের কষ্ট আমাকে বলতে পারেন। কয়দিন পর আবার পোস্ট করব- পৃথিবীর সব মেয়েরা এক না, পরের দিন পোস্ট করব সব ছেলেরাই এক। এর কয় দিন পর আবার একটা হিন্দি গানের লিরিক পোস্ট করব। যাক ঐ সব বেপার বাদ দেই,
জেরিন কে একটা রেকুয়েস্ট পাঠায় দিলাম, প্রায় এক সপ্তাহ পর মেডাম আমার রেকুয়েস্ট একসেপ্ট করসে, খারাপ না, কারণ সুন্দরী মেয়েদের রেকুয়েস্ট দেয়ার আগেই পাঁচ হাজার ফ্রেন্ড হইয়া যায়।
মেয়েটার সব কিছুই ভাল লাগছে, যেটা ভালো লাগে নাই সেটা হল মেয়েটা একটা হিন্দি সিরিয়ালের লিপিস্টিক মার্কা হিরো রে পছন্দ করে, বিষয়টা আমারে খুবি প্যারা দিতাছে। আমি ঐ হিরোর একটা পিক এডিট কইরা, শাড়ী পরাইয়া, লিপিস্টিক লাগাইয়া ফেসবুকে পোস্ট করছি, সাথে জেরিন রেও ট্যাগ দিলাম। আর ফটো ক্যাপশন দিছি- “বিশ্বের শ্রেষ্ঠ হিজড়া”
মাগরিবের পর ফেইসবুকে ঢুইকাই দেখি অনেক গুলা নোটিফিকেশন, এর মধ্যে একটা নোটিফিকেশন জেরিনের- “angel jerin commented on your photo”
নোটিফিকেশন টা ওপেন করলাম-
জেরিন= নিজের চেহারা আয়নায় দেখসেন, পুরা বান্দরের মত। কোন দিন পারবেন ওর মত হইতে?
কমেন্ট টা পড়ার পর মনে মনে খুব খুশি হইলাম, যাক ঢিল টা মৌচাকে যাইয়া পরছে। আমি রিপ্লাই করলাম= ঐ লিপিস্টিক মার্কা হিরোর মত হওয়ার কোন দরকার নাই আমার, এর চেয়ে ভালো বাংলাদেশের হিরো আলম।
কিছুক্ষণ পর জেরিন আবার রিপ্লাই করছে= কি? আপনে এত বড় একজন সেলিব্রেটি কে হিরো আলমের সাথে তুলনা করছেন।
পরের দিন আবারো ঐ হিরোরে নিয়া একটা ফেইক নিউজ শেয়ার দিলাম। জেরিন রেও ট্যাগ দিলাম। পুরা এক দিন পার হওয়ার পরেও জেরিনের কাছ থেকে কোন নোটিফিকেশন আসে নাই। পরে মনে হইল আরে আমিত ওরে পডাইয়া গার্লফ্রেন্ড বানামু আর আমি ওরে টিজ করতাছি। ধুরু মেয়েটারে আর পাইতাম না। জেরিন রে পাওয়ার আশা ছাইড়া দিয়া তেলেগু মুভি ডাউনলোড দেয়া শুরু করলাম।
দুইদিন পর ফেইসবুকে একটা হিন্দি গান আপলোড দিলাম
= ইয়ে মসাম কা বারিস-বারিস কা পানি-পানিকা বুন্দে-
মিলনেকা খায়েস- খায়েস পুরানি…
গানের ভিডিও টা চেঞ্জ কইরা একটা হিন্দি নাটকের কয়েকটা রোম্যান্টিক সিন লাগায়া দিলাম। আর সাথে ক্যাপশন দিলাম- প্রিয় গানের সাথে প্রিয় ভিডিও, সত্যি গানটা যতবার শুনি ততবারই ভাল লাগে।
পরের দিন সকাল বেলা কলেজে পরীক্ষা ছিল, পরীক্ষা দিয়া আসতে আসতে দুপুর হইয়া গেসে। তখন বৃষ্টি ছিল, এক ছাতার নিচে আমরা তিনজন ছিলাম, এই কারণে ছাতা থাকা আর না থাকা সেইম-টু-সেইম। এক মেয়ে এক ছাতার নিচে তিন জনরে দেখে সুন্দর একটা হাসি দিল। মেয়েদের হাঁসির খোরাক হতে পারাটা ছেলেরা খুব ইঞ্জয় করে। এই কারণে ক্লাসে কিছু কিছু ছেলে একেবারে শুধু শুধুই পাগলামি করে, আর আমি ওদের দিকে তাকায়া আস্তে কইরা কই- হালা আবুল।
ঠিক করলাম বৃষ্টি উপলক্ষে একটা স্ট্যাটাস দিমু, সবাই দেয় আমিও দিমু। ফেইসবুকেই ঢুইকাই আমি থ হয়ে গেলাম। আমার হৃদপিণ্ড জোরে জোরে পাম্প করা শুরু করছে। জেরিন কমেন্ট করছে আমার ভিডিওতে—গান টা আগে থেকেই সুন্দর, ভিডিওটাও চরম হইসে। আমি রিপ্লাই দিলাম থ্যাংকস। পিরিতের নাতা এহনও মুঞ্জে নাই মনে অয়।
শুরু কইরা দিলাম টুকটাক চেটিং, হায়, হ্যালো, হাউ আর ইউ, ফাইন, থেঙ্ক ইউ, গুড মর্নিং। এক দিন সাহস কইরা কইয়াই দিলাম I LOVE YOU. জেরিন রিপ্লাই দিল
জেরিন= সরি, আমার পক্ষে সম্ভব না।
আমি= কেন সম্ভব না?
জেরিন= আমি এই সব নিয়া ভাবি না
আমি= তো এখন ভাব
অনেকক্ষণ যাবত কোন রিপ্লাই নাই, প্রায় দশ মিনিট পর আবার রিপ্লাই দিসে
জেরিন= আমার বয়ফ্রেন্ড আসে
আমি= বুজলাম
জেরিন= কি?
আমি= এতক্ষণ বইয়া বইয়া কথা বানাইছ।
জেরিন= সত্যি আমার বিএফ আসে
আমি= হুম, বিএফ থাকতেই পারে, বিএফ মানে বেস্ট ফ্রেন্ড।
জেরিন= বিএফ মানে বয়ফ্রেন্ড, আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।
আমি= কই? আমিত দেখলাম তোমার এবাউট এ সিঙ্গেল দেয়া
জেরিন= ঐটা আমি ইচ্ছা করে দেই নাই, আমার বয়ফ্রেন্ড নিষেধ করছে।
আমি = নিশ্চিত ও একটা চিটার।
জেরিন = মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ
আমি = ওকে সরি, ওর আইডি দেও
জেরিন= না
আমি = কেন?
জেরিন = আমার ইচ্ছা।
আমি= ওকে, AS YOUR WISH
= তাহলে তুমি আরেকটা কাজ কর। ঐ বলদ টারে ভুইল্লা যাও
জেরিন= আপনি কিন্তু আপনার লিমিট ক্রস করছেন।
আমি= আরে রাগ কর কেন, যেইখানে আমার মত ভেম্পায়ার কিং তোমার পিছনে পাংখার মত ঘুরতাছে, সেইজাগায় ওইটার সাথে প্রেম করার কি দরকার।
জেরিন = আপনে ভেম্পায়ার?
আমি= হুম, আমি ভেম্পায়ার, কোন ডাউট?
জেরিন= প্রমান কি?
আমি= প্রমাণ? আমার সাথে প্রেম না করলে তোমার ঘাড় মটকামু, তখন বুজবা প্রমাণ কারে কয়।
জেরিন = আপনে খুবি ফানি লোক, এখন যদি কেও আমাকে দেখে তাহলে ভাববে আমি পাগল, কারণ আমি একা একা হাসছি।
আমি= এইবার দেখছ, তুমি আমারে কত লাইক কর। কিন্তু তুমি নিজেও জাননা।
জেরিন= হুম, আপনে তো সব জানেন, সব জানতা জামশেদ।
= ওকে, বায়।
আহা আরেকটু থাকলেই পডায়া লাইতাম। মেয়েটা অফ লাইনে চলে গেল।
পরের দিন কলেজ থেকে এসেই ম্যাসেজ দেয়া শুরু করলাম
আমি= অয়ান টু থ্রি, এখন আমি ফ্রি
= অয়ান টু থ্রি ফোর, কখন তুমি করবে ফোন
= পঞ্চাশ ষাইট সত্তুর আশি, বন্ধু তোমায় ভালবাসি।
= টমাটু লাল, কাচা মরিচ ঝাল, এর চেয়েও বেশি কিছু তোমার ঐ গাল
এই ভাবে হাই স্কুলের টয়লেটের যত লিজেন্ড কবিতা আছে সব গুলা সেন্ড করা শুরু করলাম। নাক ছিটকায়েন না। পৃথিবীতে যত বড় বড় কবি আছে এরা সবাই টয়লেটের দেয়ালে লেইখাই কবি হইছে। কবি নজরুল, রবিন্দ্রনাথ, সেক্স পিয়র এদের সবার প্রতিভা টয়লেটেই বিকশিত হইছে। একবারতো কবি নজরুল রে ছোট বেলায় কে জানি টয়লেটে আটকায়া দিছিল নজরুল সাথে বিদ্রহি কবিতা লেখা শুরু করছে- মার লাথি, ভাঙ্গরে তালা, সাহস থাকলে একটু দাড়া।
থাক কথা না বারাই, কিছুক্ষণ পর জেরিন রিপ্লাই দিল এগুলা কি
আমি= ভালবাসার ইমোশনাল এবং রোম্যান্টিক কবিতা
জেরনি= এগুলা রোম্যান্টিক কবিতা!!! এক কাজ করেন এগুলা হাই স্কুলের মেয়েদের কে গিয়ে শুনান, মেয়বি ইম্রেসড হতেও পারে
আমি= তুমি ইম্রেসড হইবা না কেন? তুমি কি হাই স্কুলে পড় না?
জেরিন= আমি অনার্সে পড়ি
আমি = ও মাই গড! তাইলে তো তুমি ফ্রেন্ড দের সাথে হেং ওভার করতে করতে বাত্তি অইয়া গেছ।
জেরিন= মান্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ
আমি = আরে রাগ কর কে। তোমারে একটা গান শুনাই
= মায়ু মিল্লাই, কান্দিরু মিল্লাই, জানাম মিল্লাই।
জেরিন= এইটা গান!!
আমি= হুম
জেরিন= কোন ভাষার গান?
আমি = এটা লেটেস্ট তেলেগু সং বেবি,
জেরিন= বাংলাদেশের মানুষ তেলেগু সং শুনে?
আমি = আবার জিগায়, যারা আমার মত ওভার স্মার্ট তারা শুনে।
= শুন আমার সাথে প্রেম কর, তাহলে তোমারই লাভ হবে।
জেরিন = মানে?
আমি = আমার সাথে প্রেম করলে আমি তোমারে কোন আইসক্রিম খাওয়ামু
জেরিন = মাত্র আইসক্রিম, ছেলেরা তাদের গার্লফ্রেন্ড কে গিফট দেয়, কে.এফ.সি তে নিয়া খাওয়ায়।
আমি = আরে কে.এফ.সি তে মরা মুরগি বেঁচে। ওগুলা খাইলে তোমার পেট খারাপ হইয়া যাইব। এর চেয়ে ভাল আমারে তোমার বিএফ হিসেবে একসেপ্ট কইরা লও।
জেরিন= ওকে আমি তোমারে বিএফ হিসেবে একসেপ্ট করলাম।
আমি= সত্যি, তার মানে আজকে থেকে আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড
জেরিন= নেভার, তুমি আমার বিএফ
আমি= বিএফ মানেত বয়ফ্রেন্ড-ই
জেরিন= নাতো, বিএফ মানে বেস্টফ্রেন্ড, তুমিই তো বলছ।
হায় হায়!! নিজের কথায় নিজেই প্যাচে পইরা গেলাম। সমস্যা নাই, পরে আবার ট্রাই করমু গুণী জনেরা কইছে একবার না পারিলে দেখ শতবার।