প্রতিশোধটা তেতো ছিলো

প্রতিশোধটা তেতো ছিলো

আমি এখন ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।ভাবটা এমন যেন আমি কাউকে খুজছি।বাট আসল ব্যাপার হলো আমি আমার ক্রাশকে দেখবো বলে দাঁড়িয়ে আছি।যথারীতি আমার জান্টু আমার ক্রাশের আগমন।নাম অর্ণব। আমার ক্লাসমেট।শ্যামলা চেহারা, মুখে খোচাখোচা দাড়ি, চোখে চশমা লুকটা দেখে যেন আমি কল্পনার রাজ্যে চলে গেলাম।কিন্তু একি অর্ণবের সাথে লাবণী আসছে কেন?ওই হারামীটা ওকে কি না কি বলবে আল্লাহ জানে।কাছাকাছি আসতেই অর্ণব আমাকে কিছু বলতে যাবে ওই মুহূর্তে লাবণী হারামী বললো
–কিরে সাথি ক্লাসে যাবি না?ইচ্ছে করছে হারামীটারে চিবিয়ে খায়।বাট উপায় নাই ও আমার কলিজার বান্ধবী।রাগ থামিয়ে বললাম
-ওই তুই অর্ণবকে কি বলছিলি রে?
-ভালো আছে কিনা জিজ্ঞেস করছিলাম!
-আর?
-আর বললাম অর্ণব আমি তোমারে ভালোবাসি।
-কি বললি তুই!দাড়া তোরে দেখাচ্ছি
লাবণী দৌড়ে ক্লাসে ঢুকে পড়েছে।আমিও হালকা দৌড়ালাম।একেবারে অর্ণবের পিছে এসে ব্রেক করলাম।আরএকটু হলেই ঢাক্কা দিয়ে দিতাম।সামনে থেকে হলে দিয়েই দিতাম বাট পেছন থেকে ঢাক্কা মারা কেমন হয় তাই দিলাম না।অর্ণব আমার দিকে ঘুরে বললো
-কি হয়েছে!এভাবে দাঁড়িয়ে আছ যে!
আহ মনে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল।কথা বলার ধরণটা কি সুন্দর।
-এই সাথি!
-না কিছু না।
বলেই পগারপার। লাবণীর পাশে এসে বসলাম।যথারীতি মনিরুজ্জামান স্যারের আগমন।আজকের আলোচ্য বিষয় মুদ্রাস্ফীতি। বাট আমার নজর অর্ণবের দিকে।পড়াশোনায় ততটা ভালো না হলেও অর্ণব সবসময় ফার্স্ট সিটে বসে।ব্যাপারটা ভালো লাগে আবার খারাপও লাগে।কারণ আমি তো ফার্স্ট সিটে বসি না।অর্ণবকে পিছন থেকে দেখতে হয় মুখের একপাশ দেখা গেলেও পুরোটা দেখা যায় না।পিছনে বসলে কি হত! পুরো মুখখানি দেখতে পেতাম।ইচ্ছে হয় একদিন অর্ণবকে বকা দিয়ে বলি ”এই ছেলে তুমি পিছনের সিটে বসতে পারো না!” বাট উপায় কই।
ক্লাস করার পর আমরা কলেজ মাঠে বসে থাকি।কারণ আমাদের প্রাইভেট থাকে।আর বাসা অনেক দূরে হওয়ায় এটুকু সময়ে যাওয়া আসা অসম্ভব।প্রতিদিনকার মত আমরা কয়েকজন গোল করে বসে আছি।আমি,লাবণী,জিনিয়া,ফাহিম,সুজন,শাহীন।একটু পর সাগরের আগমন।সাগর আমাদের কলেজের না হলেও আমাদের কলেজের স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে।সেই সূত্রেই ওর সাথে পরিচয়।আড্ডাই সবার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলেও আমি কেন জানি সাগরকে মোটেই সহ্য করতে পারি না।ফর্সা বেটে নাকওয়ালা ছেলেটাকে দেখলেই মনে হয় ওর মুন্ডু চাবিয়ে খাই।কি ন্যাকা ন্যাকা ভাবে তাকায় মনে হয় যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না।ঢং দেখে বাচি না।আড্ডার সবাইকে রেখে আমার দিকে ন্যাকা ন্যাকা ভাবে তাকিয়ে বললো
-সাথি ম্যাডাম কেমন আছেন আপনি?
আমি মুখটা ঘুরিয়ে বললাম
-ভালো আছি।
সবাই বলছে সাগর বস সাগর বস।বাট লাটসাহেব না বসে মুখটা ন্যাকা ন্যাকা করে বললো
-সাথি ম্যাডাম না বললে বসবো না।
রাগে পা জ্বলে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে গিয়ে গালে একটা ঠাটিয়ে চড় দিই বাট সবার জোরাজুরিতে ওকে বসতে বলতে হলো।আড্ডার সবাই আমাকে কি ভাবে বোঝা যায় না। প্রাইভেট পড়ার সময়ও অশান্তি।আমি যে কয়বারই সাগরের দিকে তাকাই ততবারই ওর চোখের সাথে আমার চোখাচোখি হয়।ন্যাকা মাস্টার কি এদিকেই তাকিয়ে থাকে নাকি!ইশ অর্ণবের সাথে যদি এমন চোখাচোখি হত কতই না ভালো লাগত।আমি সারাটা ক্লাস অর্ণবকে দেখি আর সারাটা প্রাইভেট সাগর আমাকে দ্যাখে বাহ কি কোএক্সিডেন্ট।মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়।
.
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়হয়।আমার এই সময়টা অনেক ভাল্লাগে।একা একা হাটতে হাটতে আসছি।বাড়িতে এসে গেট খুলতেই আমার সব ভাল্লাগা মুহূর্তেই ভ্যানিশ হয়ে গেল।উঠানে চেয়ারের গোল বৈঠক।সেটার মধ্যমণি হয়ে বসেছেন সিয়াম ভাইয়া।সিয়াম হলো আমার মামাতো ভাই। আগে অনিকা নামের একটা মেয়ের সাথে প্রেম করত মেয়েটার খুব মায়াময় চেহারা ছিল বাট বিয়ে করেছেন অন্য একটা মেয়েকে।নতুন বিয়ে করেছেন বলে আমাদের বাড়িতে অনেকদিন পর আসলেন।আমি মামাবাড়ি গেলে সবসময় পালিয়ে বেড়াতাম বাট এখন কি করবো!!সিয়াম ভাইয়া এমন একজন লোক যিনি কিনা আমার সব খবর কোনো না কোনো ভাবে জেনে ফেলেন।আর সারাক্ষণ সেটা নিয়ে ক্ষেপাবে। বাব্বা একবার এলাকার বড় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসার অপরাধে আমাকে না কতই লজ্জিত হতে হয়েছিলো কি বলবো।সিয়াম ভাইয়া ওখান থেকে চিৎকার দিয়ে বললো
-ওই হাতি তুই কি গেটেই দাড়িয়ে থাকবি নাকি ভিতরে আসবি?
কেউ আমারে হাতি বললে মেজাজ ৫০০ডিগ্রি হাই হয়ে যায়।মুখে বেশ রাগ রেখেই রুমে চলে গেলাম।এর সাথে কথা বলতে গেলে নিজেরই অপমান হবে।ওনার থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ভালো।
.
ভাবী(সিয়াম ভাইয়ার বউ)আমার রুমে এসে বকবক করা শুরু করে দিল।এখন ৭টা বাজে।পড়তে বসেছি।পড়া না হলে সবার মধ্যে অপমানিত হতে হবে।ওনাকে মানাও করতে পারছি না।হঠাৎ একটা কথাতে কান আটকে গেল
-অর্ণব কেমন দেখতে!
অর্ণবের কথা শুনে শক খেলাম।প্রশ্নানু চোখে তাকিয়ে ভাবীকে বললাম
-কোন অর্ণব ভাবী?
-ওহ সাথি ন্যাকা হইও না।তোমাদের ক্লাসের অর্ণব
-তুমি জানো কিভাবে?
-তোমার ভাইয়া বলেছে।
এমন অবস্থায় কি করা উচিত বুঝতেছি না।মাঝসাগরে পড়লে মানুষের উদ্বেগ হওয়া উচিত বাট আমার হাসি লাগতেছে।ভাইয়া এত খোজ পায় কোথা থেকে! হিহি!ধ্যাত।
.
খাওয়ার সময় ভাইয়া ভাবী কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসেছে।আমার প্রচুর অস্বস্তি লেগেছে পুরোটা সময়।রাত ১১টা বাজে মনে হয়।অনেকসময় ধরে উঠানের মেহেদীগাছের কাছে বসে আছি।ভালো লাগছে না কিছু।ঘুমাতে পারছি না। ভাইয়ার গলা শুনে পিছনে তাকালাম।
-কিরে হাতি একা একা বসে কি করছিস?
-ভাইয়া ভালো লাগছে না কিন্তু।
-ওকে ওকে সরি। মন খারাপ কেন বল।
-তোমাকে শুনতে হবে না।যাও।
-আরে বল না।
-তুমি অর্ণবের কথা জানলে কিভাবে বলোতো?
-হা হা অর্ণব!আমি আরো অনেক কিছুই জানি।
-কি জানো!
-এটাই যে অর্ণব তোকে কখনো ভালোবাসবে না।ও তোর টাইপের না।তুই চাসতো সাগরকে ভালোবাসতে পারিস।হি লাভস ইউ!
-মানে?তুমি এসব জানলে কোথা থেকে?
-যাক বাদ দে।আমাদের বংশের একমাত্র ফুপুর তুই একমাত্র মেয়ে। জানিসই তো তুই ছাড়া আমার আর আপন,চাচাতো,মামাতো কোনো বোন নেই তাই আমি চাইনা তুই এসব চক্করে পড়ে কষ্ট পাস।গুড নাইট।
-ভাইয়া শোনো..
ভাইয়া আর কিছু না বলে চলে গেলো।বাট আমার ভয় করছে।অর্ণব আমাকে ভালো না বাসলে আমি খতম।কালকেই যা বলার বলবো অর্ণবকে।
.
অর্ণব কলেজ আসতেই ওকে ডাক দিলাম।
-অর্ণব তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
-বলো।
-ইমম এখানে না। নিচে চলো।
-এখন তো ক্লাস শুরু হবে।
-আরে চলো তো!
অর্ণবের হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে আসলাম।নিজের সাহস দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছি।
-কি বলবা বলো!
-তোমাকে আমি প্রচুর পছন্দ করি।তোমার সান্নিধ্য পেতে চাই আমি!
-ওকে বাট আমার একটা শর্ত আছে।
-কি শর্ত?
-তোমার এই স্কার্পের আড়ালে লুকানো চেহারাটা আমায় দেখাতে হবে।
-হিহি।ওকে দেখাব।বাট কালকে পার্কে গিয়ে।
-আচ্ছা।এবার তবে ক্লাসে যাওয়া যাক।
অর্ণব এত সহজে আমায় মেনে নিবে ভাবতেই পারিনি।সিয়াম ভাইয়া তাহলে ভুল বলেছিলো।অর্ণব আমাকে ভালোবাসবে।
.
বাসায় এসে সিয়াম ভাইয়াকে দেখে বেশ গর্বে ওনার সামনে দিয়ে গেলাম।হিহি।হেব্বি আনন্দ লাগছে।
পরদিন বেশ সাজুগুজু করলাম।মুখে মেরিল রিভাইভ পাউডার দিলাম।হালকা লিপগ্লস দিলাম।চোখে আইশ্যাডো, কাজল,মাশকারা দিলাম। সবশেষে স্কার্ফ দিয়ে মুখ ঢেকে কলেজ আসলাম।
গেটে ঢুকেই দেখলাম সাগর দাঁড়িয়ে আছে সাথে লাবণী।আমাকে দেখে লাবণী চলে গেল আর সাগর আমাকে বললো
-আজকে তোমার চোখদুটো খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।অর্ণবের জন্য সেজেছ বুঝি।
-তোমার জেনে কি কাজ!
-হাহা।
-হাসছ কেনো?
-তুমি আমারই হবে।অর্ণব তোমায় ভালোবাসবে না সাথি।
-তো কি আমায় তোমায় ভালোবাসতে হবে?নিজের চেহারা আয়নায় দেখেছ কখনো?রাবিশ কোথাকার। পথ ছাড়ো
সাগরকে ক্রস করে চলে আসলাম।বাট ওকে হঠাৎ নিজের চেহারা আয়নায় দেখতে বললাম কেন!ওতো সেইরাম দেখতে।রাবিশ বললাম কি জন্য।ধুর ভাল্লাগেনা।
পার্কের এককোণায় অর্ণবের সাথে বসে আছি।অর্ণব আমার বেশ কাছাকাছি বসেছে।আমার অস্বস্তি হচ্ছে।
-এবার তোমার স্কার্ফ খুলো।তোমায় দেখি!
-আমাকে না দেখে ভালোবাসা যাবে না অর্ণব?
-অবশ্যই ভালোবাসা যাবে।
-বাট আমাকে তুমি এত জলদি হ্যা বলে দিলে কেন?আমাকে না দেখেই ভালোবাসবে?কেন?
-কারণ আমি তোমার চোখ দেখেছি ওখানে আমার জন্য শুধু ভালোবাসা দেখেছি আমি।আমাকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা দেখেছি আমি।ব্যস এটুকুই।
আনন্দে আমার কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে।অর্ণব অনেক ভালো।বাকিরা ওকে যত খারাপ বলেছিলো ও ততটাই ভালো।সিয়াম ভাইয়া, সাগর সবাই ভুল বলেছিলো।অর্ণবের সাথে অনেক অনেক অনেক গল্প করলাম।ওর পরিবার ওর শখ সব শুনলাম। অর্ণবের বাবা নেই।ওর মা সরকারি চাকুরি করে এক বছরের ছোট একটা বোন ছিলো বাট সুইসাইডে মারা গেছে।এটা শুনে খারাপ লাগলো বাট অর্ণবকে পেয়ে আনন্দও লাগছিলো।
.
বাড়ি এসে আমার আনন্দ দেখে কে।মন যেন পাখির মত উড়াউড়ি শুরু করে দিয়েছে। বাট যখন শুনলাম সিয়াম ভাইয়া আমাকে না বলেই বাড়ি চলে গেছে তখন একটু খারাপ লাগলো।তাতে কি আমি যা পেয়েছি তার কাছে এটা কিছু না।
.
দেখতে দেখতে আমার আর অর্ণবের রিলেশনের তিন মাস হয়ে গেলো। ও আরেকটা কথা এই তিনমাসে সাগরকে কোথাও দেখিনি।কি হয়েছে কে জানে!মরুক গা আমার কি তাতে!
-এই অর্ণব তোমার দাড়িতে হাত দিব একটু!!
-দাও বাট টানবে না কিন্তু।
খোচাখোচা দাড়িতে হাত দিতে এত ভালো লাগে আগে জানতাম না।হঠাৎ ই অর্ণবের মন খারাপ হয়ে গেলো।
-কি হয়েছে অর্ণব?
–আজ আমার বোনের মৃত্যুর এক বছর সাথি।
-তোমার বোনের নাম কি ছিলো?আর সুইসাইড ই বা করলো কেনো?
-ওর নাম অানিকা ছিলো।একটা খারাপ ছেলের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে আমার বোনটা শেষ হয়ে গেলো।
আনিকা নাম শুনেই বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো।
-তোমার বোনের কোনো পিক থাকলে দেখাতে পারো।
–পরে একসময় দেইখো।এখন বলো আজ সকালে কি কি করলে?
-ওই তো।তেমন কিছু না।এখন বাড়ি যেতে হবে।
-আচ্ছা। চলো তোমাকে গাড়িতে তুলে দিই।
যথারীতি সন্ধ্যে হয়হয় সময়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রাস্তায় হাটছি।প্রেমে পড়লে মানুষের জীবনে আরেকটা রং যোগ হয়।ভালোবাসার রং।অর্ণবের ভালোবাসায় পাগল হয়ে গেছি আমি।
.
ইদানীং অর্ণব আমার সাথে খারাপ বিহেভ করছে! লাবণীর কাছে শুনলাম ও নাকি আরেকটা মেয়ের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো।জ্বরআসার কারণে ওসব দেখতে পারি নি। এই চারদিনে অর্ণব একবারও আমার খোজ নেইনি।এতটা চেঞ্জ হলো কিভাবে?আজ কলেজে এসে অর্ণবকে বললাম
-আমার সাথে এমন করছ কেনো তুমি?
-তোমার সাথে রিলেশন রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না।
-প্লীজ অর্ণব এমন করে বলো না।আমি মারা যাব
-তো যাও!
আমার চোখে পানি টলমল করছে।মাথা নিচু করে কলেজ থেকে চলে আসলাম।কারো দিকে তাকানোর সাহস ছিলো না আমার।হঠাৎ করেই সাগরের আওয়াজ শুনলাম। ও কি আজকে এখানে এসেছে আমার তামাশা দেখতে!কোথাও না দাঁড়িয়ে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে আম্মার রুমে ঢুকলাম। একপাতা ঘুমের ট্যাবলেট ছিলো সেগুলা নিয়ে রুমে আসলাম। গোসল করে সুন্দর একটা ড্রেস পরলাম। আম্মা তখনই আমার রুমে আসলো
-কিরে আজ নতুন ড্রেস পরেছিস যে! চোখ ফোলা ফোলা লাগছে কেন? জ্বর এখনো আছে? গোসল করলি কেনো? জ্বর এসে যায় নি তো? দেখি?
-আমি ঠিক আছি।তুমি না রান্না করছ।যাও..
-তোর পছন্দের কই মাছ রান্না করছি।জ্বর মাত্র সারলো তো। এগুলা খেলে গায়ে জোর হবে।
-আচ্ছা যাও।
আমার খুব কান্না পাচ্ছে।এত বড় একটা ডিসিশন নিয়েই নিলাম।আমি কি অন্যায় করেছিলাম।রাগে রাগে সবগুলা ঘুমের ওষুধ হাতে নিলাম।খেয়েই নিব যা হয় হোক।জগ হাতে নিয়ে দেখি জগে পানি নেই। হায়রে কপাল।ওষুধ রেখে পানি নিতে রান্নাঘরে এলাম।
-সাথি!
-হ্যাঁ আম্মা।
-পানি খাবি?
-হ্যাঁ
-খা।আর এখানে একটু দাড়া। আমি কাপড়গুলা রুমে তুলে দিয়ে আসি।
-আচ্ছা যাও।
অনেকক্ষণ পর আম্মা আসলো। আমার খুবই অস্থির লাগছিলো।আবার আম্মাকে খুবই চিন্তিত দেখাচ্ছে।
-তোমার কি হয়েছে আম্মা?
-আসলে কি জানিস আমি তোকে খুব ভালোবাসি।তুই আমার একমাত্র সন্তান।তোর কিছু হলে আমি…
-কি ব্যাপার কাঁদছ কেনো? কি হয়েছে তোমার?
আম্মা কেঁদেই চলেছে।আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে।আম্মা কি তাহলে কিছু আচ করতে পেরেছে! আম্মা আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে কেঁদে উঠলো।আমার মাথা ঝিমঝিম করছে।মনে হচ্ছে আমার আবার জ্বর আসছে।আম্মা কাঁদতে কাঁদতেই বললো
-তোর কপাল,হাত এত গরম লাগছে কেনো।কি হচ্ছে সোনা?
-আমি শোব।আমার খারাপ লাগছে।
রান্না নামিয়ে আম্মা আমাকে রুমে এনে শুইয়ে দিলো।আমার হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। আম্মার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। আম্মা আমাকে এত ভালোবাসে অথচ আমি তাকেই কাঁদাচ্ছি।আল্লাহ ক্ষমা করো আমাকে।
.
কাল রাতে কি কি হয়েছে সব আবছা আবছা মনে আসছে। এখন অবশ্য সকাল ১০টা। শুনেছি জ্বর আসলে মানুষ খেতে পারে না কিন্তু আমি তো দিব্যি খেয়ে যাচ্ছি। আমার পছন্দের জয় ম্যাংগো জুস।আমি আবার জয় ছাড়া অন্য কোনো জুস খাই না।পাশেই ছিলো একটা জুসের নলটা মুখে নিয়ে খেতে শুরু করলাম।তখনই সিয়াম ভাইয়ার গলা
-কিরে হাতি… বাচ্চাদের মত তুইও কুমড়ার জুস খাচ্ছিস?
সিয়াম ভাইয়াকে দেখে ভালো লাগছে কিন্তু আমাকে হাতি বলায় মেজাজ ৫০০ডিগ্রি হাই হয়ে গেল।মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে বললাম
-তুমি এখানে এসেছ কেনো? হুহহহ
-তুই নাকি সুইসাইড করতে যাচ্ছিলি? আমি তো ভাবতাম তুই বুদ্ধিমতী বাট তুই তো দেখি পুরাই খালি ডাব্বা।
-একবার মনে হয়েছিলো তারপর আর করিনি।
-লাবণীর কাছ থেকে ওগুলা শোনার পর আমি কালই আসব ভেবেছিলাম। কাজের জন্য আসতে পারিনি।তারপর ফুপু ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছিলো তুই নাকি ওষুধ খেতে যাচ্ছিলি।তাই আজ আসতেই হলো।
-তুমি তাহলে লাবণীর কাছ থেকে সব খবর নাও?
-ও আমার বন্ধুর একমাত্র বোন আবার আমার একমাত্র বোনের একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড। ওর কাছ থেকে তো খবর নিতেই হত।
-ও
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম।
-মন খারাপ করিস না।তুই যার জন্য মরতে যাচ্ছিলি সে তোর যোগ্যই ছিলো না। অর্ণব একজন নিরব খুনি।ওর জন্য ওর বোন মানে আমার প্রেয়সী মারা গেছে।কিন্তু ও ভাবে ওর বোন আমার জন্য সুইসাইড করেছে। তাই আমার বোনকে মানে তোকে মারার চেষ্টা করেছিলো।তুইও যদি সুইসাইড করতিস তাহলে ওর লক্ষ্যে ও সফল হত।কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ সেটা হয়নি।
-তারমানে অর্ণব আমার সাথে অভিনয় করেছিলো?
-হুম তোকে ওর প্রেমে পাগল করে তোকে মারাই ওর লক্ষ্য ছিলো।তুই কষ্ট পাবি বলে আমি এগুলো বলি নি। কিন্তু পানি দেখি অনেকদূর গড়িয়ে গেছে তাই বললাম। ওসব ভুলে যা।নতুন করে আবার শুরু কর।সাগর তো আছেই।ও তোকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু।আমার বোনকে কোনো কষ্ট পেতে দেবে না দেখিস।
আমার খুব খারাপ লাগছে ভাইয়ার কথা শুনি নি বলে। আম্মা,ভাইয়া,লাবণী,সাগর আমাকে কতো ভালোবাসে কিন্তু আমি কেনো বুঝলাম না।আমার কান্না আসছে ভাইয়ার হাত ধরে বললাম
-আমাকে মাফ করে দাও ভাইয়া।আমি আর কখনো তোমাদের অবাধ্য হব না।
-ধুর পাগলি তুই কোনো অন্যায়ই করিস নি। সাগর, লাবণী তোরা ভিতরে আয়।অল ক্লিয়ার।
-কিহ!ওরাও এসেছে নাকি।
ভাইয়া বলা মাত্রই ওরা ভেতরে চলে আসলো।লাবণী এসেই জান্টু বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।সাগর একপাশে দাঁড়ালো। লাবণী বকবক করেই যাচ্ছে। আমার অস্বস্তি হচ্ছে সাগরকে দেখে।এমন অবস্থায় ওর সামনে আমাকে কি বিশ্রী দেখাচ্ছে মনে হয়।ভাইয়া,লাবণী চলে গেলো আর বললো সাগরের সাথে একটু কথা বলতে।সাগর ওখানেই ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।ওরা চলে গেলে আমাকে হাত নেড়ে বললো
-হাই..
কি আজব।সাগর মনে হচ্ছে ভয় পাচ্ছে।
-বসো।
-আসলে তুমি এমন একটা কাজ করার কথা ভাববে সেটা আমি কল্পনাতেও ভাবিনি।আমি তো তোমাকে বুদ্ধিমতী ভাবতাম…
সাগরকে থামিয়ে দিলাম।সবাই এক কথা বলছে।মনে মনে বললাম মাঝে মাঝে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়।কিন্তু আমি কাল ছ্যাঁকা খেয়ে আজ সাগরকে ভালোবাসব কি করে!
-শোনো সাগর তুমি তো জানোই আমার সাথে কত বড় ছলনা হয়েছে। আমি মনে হয় তোমাকে ভালোবাসতে পারব না।
-আমার ভালোবাসাই যথেষ্ট।তুমি হাসিখুশি থাকো আমার আর কিচ্ছু চাই না!
-হুমমম
-আমার মনে হয় তুমি এরকম ভেঙে পড়লে অর্ণব খুশি হবে।তোমাকে নরমাল হতে হবে। তোমাকে দেখাতে হবে তোমাকে কষ্ট দেওয়া এত সোজা না!
-ঠিক তো! ওকে!আজ প্রাইভেট যাবে না?
-তুমি বললেই যাব।
-আচ্ছা তাহলে দেখা হচ্ছে।
.
বিকেলে রেডি হয়ে নিলাম।সাজলামও।অর্ণব তোমাকে বোঝাব আমি-প্রতারণা করার ফলাফলটা কেমন তেতো হয়!
কলেজ গেটের সামনে আসতেই দেখি সাগর দাঁড়িয়ে আছে।হালকা সবুজ কালারের শার্টে ওকে তো হেব্বি দেখাচ্ছে। ওর হাত ধরে কলেজে প্রবেশ করলাম।কিছুদূর আসতেই দেখি অর্ণব সেই মেয়েটার সাথে দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করছে।এত হাসি কিসের?আমার মরার? আমাদের চোখাচোখি হলো।আমার আর সাগরের দিকে তাকিয়ে অর্ণবের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।ওর সামনের একটা গাছতলায় বসলাম।সাগরকে বললাম
-আমি স্কার্ফ সরানোর পর তুমি আমার দিকে বেশ খানিককাল তাকিয়ে থাকবে তারপর তোমার হাত আমার মুখে দিয়ে আদর করবে!ওকে?
সাগর বেশ কনফিডেন্স নিয়ে বললো
-ওকে!
স্কার্ফ খোলার আগে একটু অর্ণবের দিকে তাকালাম।এখনো তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।স্কার্ফ খোলার পর যথারীতি সাগর তার কাজ করছে।অর্ণব বেশ হিংসে ফিল করছে সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
সাগরের হাত ধরে ওখান থেকে উঠে আসার সময় অর্ণবকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম
-চলো জান আমরা বরং ক্লাসে গিয়ে রোমান্স করি।এখানে একটা জানোয়ার আমাদের দিকে নজর দিচ্ছে।
.
কয়েকদিন পর
সাগরের সাথে বসে আছি। হঠাৎ অর্ণব এসে আমাকে বললো
-সাথি কিছু কথা আছে।চলো আমার সাথে।
সাগর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো
-সাথি তোমার মত জানোয়ারের সাথে কোথাও যাবে না।
অর্ণব বেশ রেগে গিয়ে সাগরের কলার চেপে ধরলো।আমি অর্ণবের হাত ছাড়িয়ে বললাম
-অর্ণব তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই।তুমি যেতে পারো।
-প্লীজ সাথি আমার একটা কথা শোনো আমি মানছি তোমার সাথে আমি ঠিক করি নি।কিন্তু এই কদিনে বুঝেছি আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
-হিহি ভালোবাসো?কিন্তু সরি আমি যে সাগরকে ভালোবেসে ফেলেছি।
এটা বলে সাগরের হাত শক্ত করে ধরলাম।নিজের মধ্যে একটা অদ্ভুত শান্তি হচ্ছে।অর্ণবের জায়গা সাগরকে দিতে পারি নি কিন্তু অর্ণবের চেয়ে ওকে অনেক উচুতে জায়গা দিতে পারব!
-আমি তোমাকে আর কষ্ট দিব না বিশ্বাস করো!
-আমি সাগরকে ভালোবাসি।
-তুমি না আমাকে অনেক ভালোবাসতে।এত সহজে ভালোবাসা ফুরিয়ে গেলো!
-হিহি।যে ভালোবাসা জীবন নিয়ে নেয় আমি সে ভালোবাসা চাই না।
আর কথা বললাম না।সাগরের হাত ধরে ওকে টানতে টানতে নিয়ে এলাম।অর্ণবের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। মনে হয় প্রতিশোধের স্বাদ বুঝেছে!
এখন ক্লাসের এক কোণায় আমি বসে আছি সাগর দাঁড়িয়ে আছে।অনেকক্ষণ যাবৎ কেউ কোনো কথা বলছি না।সাগর নিরবতা কাটিয়ে বললো
-তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাসো?
-এখনো পর্যন্ত না।
সাগর একটু ঝুকে আমার হাতে হালকা চাপ দিয়ে চেপে ধরে বললো
-আমার ভালোবাসাই যথেষ্ট। তুমি শুধু হাসিখুশি থাকো আমার আর কিচ্ছু চাই না।
আমি উঠে সাগরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।সাগর প্রথমে থতমত খেয়ে গেলো তারপর দরজার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে উঠলো মনে হচ্ছে।দরজায় কে!অর্ণব!হা হা!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত