সততার পুরস্কার

সততার পুরস্কার

কিরে তুই রুয়ানি না?(রোদ্র)
___কেন ঢং করছ কেন, আমাকে ভুলে গেলি নাকি?(রুয়ানি)
___কবে আসলি, আর কে কে আইছে? কাকু আইছে?
___ঐ তোর প্রবলেম কি? আমার হাতে ব্যাগটা দেখেও বুঝতে পারলি না? আমি এই মাত্র আসলাম।
___হুম, তাই দেখতেছি। কিন্তু তোর একা আসার কথা না, একা আসলি যে?
___কেন একা আসলাম বলে কি আমাকে জায়গা দিবি না?
___না, তা বলি নাই। আসলে তুইতো একা আসবি না তাই আর কি!
___হুম, আমি একা আসি নাই, আব্বুও আসছে। আব্বু দেলোয়ার ভাইয়ার দোকানে সবার সাথে কথা বলতেছে। তোর সাথে একটু মজা করলাম।
___তাহলে ঠিক আছে, চল ঘরে চল।
___তুই ব্যাগটা ঘরে রেখে আয়, আমি পুকুর ঘাটে পা ভিজিয়ে নেই। কতদিন পুকুরের পানি স্পর্শ করিনি।
___আম্মুর সাথে কথা বলে নিবি না? আম্মু কি বলবে, আয় আগে আম্মুর সাথে কথা বলে নে।
___তুই যা, আমার পা গরম হয়েগেছে, আগে পা ভিজিয়ে নেই।

___আরে কাকিমা তুমি পুকুরে!
___কিরে রুয়ানি, এতোদিন পর কাকিমার কথা মনে পরলো? কেমন আছিস, আর কে আইছে মা?
___কে আছে আর! আব্বু ছাড়া! আর গ্রামে আসলে খারাপ থাকবো কেন? অনেক ভাল লাগতেছে, আমাকে তোমাদের এখানে রেখে দাও না?
___ থাকবি?
___হুম, তুমি রেখে দাও, তাহলেই তো থাকতে পারি।
___আমারা তো তাই আশা করি মা। চল ঘরে চল, হাত-মুখ ধুয়ে নে। কতদূর থেকে আইছত, আইতে কোন সমস্যা হয় নাই তো?
___না, ঠিক মত আসলাম। চল কাকিমা ঘরে যাই, রোদ্র তোমাকে খুজতেছে।

___এই রোদ্র, তুই আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হইবি?
___হ্যা, কই যাইবি?
___ঐযে নদীর ঘাটে।
___অকে চল, আগে কিছু খেয়ে নে।
নদীর তীরে,,,
___রোদ্র তোর মনে আছে তুই আর আমি ঘুরি উড়াতাম?
___হুম, মনে থাকবে না কেন? তুই ইচ্ছে করে প্রত্যেকটা ঘুড়ি নদীতে ভাসিয়ে দিতি। আর ঘুরির একপাশে রোদ্র অপর পাশে রুয়ানি নাম লিখে দিতি।
___হুমম, আজ খুব ইচ্ছে করছে তোর নামটা বুকে লিখতে। ঘুড়িতে তো অনেক লিখেছি, কবে যে বুকে লিখতে পারবো! আচ্ছা রোদ্র তুই আমাকে আমার মত করে ভালবাসিস তো?
___রুয়ানি তুই জানিস না, তুই আমাকে যতটা ভালবাসিস আমি তার থেকে বেশিই ভালবাসি।
___ আমার জন্য তোর কষ্ট হয়?
___নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেখ কতটা কষ্ট হয়। তোকে ছাড়া আমার প্রত্যেকটা মুহূর্ত এমন কষ্টে গেছে।
___তোকে অনেক লাভ করি, রিয়েলি অনেক লাভ করি।
___চল সন্ধ্যা হয়ে আসতেছে, বাড়ি চলে যাই। সবাই চিন্তা করবে।

রাতে খাবার সময়ে রুয়ানির বাবা, আর রোদ্রের মায়ের কথোপকথন।,,,,,,
___ভাবী আগামিকাল আমরা চলে যাবো, আমাদের ভাড়াটিয়া সাত্তার সাহেব খুন হয়েগেছে! কে নাকি খুন করছে। আমাদের বাসায় পুলিশ গেছে। আমার ঢাকা যাওয়া খুব দরকার। পরে সময় পেলে আসবো।
___কি কন আপনে, মাইয়াডা কতদিন পর আইলো, মাইয়াডা না হয় থাকুক। আপনে যান, রুয়ানি থাকুক।
___না, মা ছাড়া মেয়েটাকে আমি একা রেখে যেতে পারবো না।

___রুয়ানি আর রোদ্রের কথোপকথন,,,,
____তুই চলে যাবি, আমার খারাপ লাগবে না?(রোদ্র)
___রোদ্র আমার তো কান্না পায়, কিছু বলতেও পারছি না। লোকটা আর মরার টাইম পায় নাই।(রুয়ানি)
___সব উপর আল্লাহর ইচ্ছা, আমি আর আম্মু তোদের বাসায় যাবো। সামনের শীতের ছুটিতে আম্মুর স্কুলের ক্লাশ বন্ধ হলে আম্মুকে নিয়ে তোদের বাসায় যাবো।
___ভাল থাকিস রোদ্র, তারাতারি ঢাকায় আসবি, আমি তোর অপেক্ষায় থাকবো।

এক মাস পর আজ রোদ্র আর তাঁর মা ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো। অতঃপর রুয়ানিদের বাসায়
___ভাবী আপনারা চলে আসলেন, খুব ভাল করেছেন, আমি নিজেই আপনাদের খবর দিতাম। তার আগেই চলে আসলেন। জানেন ভাবী একটা সুখবর আছে! আমাদের রুয়ানির বিয়ে ঠিক করে ফেলছি। ছেলে বড় ব্যবসায়ী। আমার মেয়ে অনেক সুখে থাকবে। আচ্ছা যান ফ্রেশ হয়ে নেন। খাওয়া দাওয়া করেন, আমি দুই ঘন্ট পর আসবো। রোদ্র, আমার সাথে আয়তো বাবা, আমি রুয়ানির বিয়ের জন্য কেনাকাটা করবো। (রুয়ানির বাবা)
___ ঠিক আছে আপনি যান।(রোদ্রের মা)
___কাকিমা! তুমি আসছো! রোদ্র কোথায় রোদ্র আসে নাই? কি ব্যাপার, কাকিমা তুমি কান্না করতেছো কেন?
____কই নাতো!
___রোদ্রের কিছু হয়েছে? কি হলো কিছু বলেন না কেন?
___আসলে কি কমু মা, সবাই সময়ের লগে পাল্টাতে পারে, শুধু আমি আর আমার ছেলেটা পারলাম না।
___কাকিমা , আপনি জানেন আমি এখন কি অবস্থায় আছি? নিশ্চই যানেন না। আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছে। আমি রোদ্রকে অনেক ভালবাসি। আমি যেভাবে হোক বিয়ের আগে আপনাদের বাড়ি চলে যেতাম। বাসায় তো কাজের মানুষ ছাড়া আর কেউ থাকে না। এক সময় পালিয়ে যেতে পারতাম।
তবে একা গ্রামে যেতে খুব ভয় হতো তাই যেতে পারছি না। এই দেখুন ট্রেনের টিকেট কিনে রেখেছি।
___আমি তো তোমাকে তোমার বাবার মত বড় অহংকারী ভেবেছিলাম। তোমার কাকু জীবিত থাকা অবস্থায়, তোমাকে রোদ্রের বউ করে নিবে এমন প্রস্তাব তোমার বাবার কাছে করেছিল। কিন্তু তোমার বাবা উল্টো অনেক কথা বলেছ। বড় অহংকারী তোমার বাবা।
___জ্বী কাকিমা, আমার বাবা অনেক অহংকারী। তবে বাবারা তো সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। সন্তানের জন্য ভাল স্বামী, ভাল সংসার দেখে বিয়ে দিতে চান।
___হ মা, তা হাচা কথা কইছো। তবে পয়সাকড়ি হইছে বলেই ভাইয়ের কথাটা রাখতে পারে নাই। নইলে ঠিকই রাখতো।
___ কাকিমা, আপনি চিন্তা করবেন না। আমি রোদ্রকেই বিয়ে করবো।

বিয়ের বাজার নিয়ে রোদ্র আসলো। রোদ্রের চোখের কোণে জল, বুকে কষ্টের পাহাড় বইছে।
___কিরে রোদ্র কেমন আছিস?
___তুই একবার আমার কথা ভেবেছিস? আমি তোকে কতটা ভালবাসি? একটা খবরও দিলি না। এমন নিষ্ঠুর হয়ে গেলি কি করে?( রোদ্র)
___জানি তুই এমনটা বলবি। তবে আমার চোখের দিকে তাকা, তাহলেই বুঝবি আমার কি দোষ ছিলো! যদি বিয়ে করতেই হয় তোকেই করবো। (রুয়ানি)
___কিন্তু তোর বাবা যে তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলছে! তার কি হবে? কাকু তো অনেক কষ্ট পাবে!
___তুই আমাকে যদি পেতে চাস, তাহলে আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে হবে। পারবি পালাতে?
___ না! আমি এটা পারবো না। কাকুকে আমি আমার বাবার চোখে দেখি। স্বাধীনতার যুদ্ধে বাবা যে গেলো আর ফিরে নাই। তখন থেকে কাকুকে বাবার চোখে দেখতাম। এখনও তাই দেখি। আমি তোকে নিয়ে পালাতে পারবো না। ক্ষমা করে দিতে পারবি না জানি, তাও ক্ষমা চাই।
___তুই এই কি বললি, তুই না আমাকে আমার থেকে বেশি লাভ করিস! আর তুই এমন কথা বলতে পারলি?
___আসলে তোকে আগের মতই লাভ করি। সারাজীবন এতটাই লাভ করে যাবো। তবে পালিয়ে বিয়ে করতে আমি পারবো না। আমাকে ক্ষমা করে দিস। কাকু আমার বাবার মতই। বাবাকে কষ্ট দিতে পারবো না। নিজের না হয় অনেক কষ্ট হবে, হোক না কষ্ট। তবে আমি এই অসৎ কাজ করতে পারবো না।
___এটা অসৎ হবে কেন?আমিও তোকে লাভ করি, তুইও আমায় লাভ করিস। আমি তোকে ছাড়া সুখি হতে পারবো না। প্লীজজ আমাকে ছেড়ে যাসনে।
___মা চল আমরা বাড়ি চলে যাবো। এখানে থাকলে বুক ফেটে মরে যাবো। রুয়ানি আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমরা চলে যাচ্ছি
___ এই ভাবী কই যান আপনি? কিরে রোদ্র তুই কই যাবি? তুই চলে গেলে আমার মেয়েকে বিয়ে করবে কে? বিয়ে না করে এক পা সামনে বাড়ালে পায়ের রগ কেটে ফেলবো। (রুয়ানির বাবা) রোদ্র, রোদ্রেরর মা এমনকি রুয়ানি সবাই অবাক!

রোদ্র ও রুয়ানির কথাগুলো রুয়ানির বাবা আড়াল থেকে শুনেছিল। রোদ্রের কথায় রুয়ানির বাবা মুগ্ধ হয়ে গেলেন। মা হারা মেয়ের মুখে সুখের হাসি দেখতে চেয়ে বিয়েটা মেনে নিলেন। দুমদাম করেই বিয়ে হল। আর এভাবেই সততার পুরস্কার পেলো রোদ্র। লেখকের এমন একটা পুরস্কার পাওয়ার বড্ড বেশি সখ।
কে জানে কপালে কি আছে!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত