গোলাপ ফুল

গোলাপ ফুল

শুক্রবার সকল চাকরিজীবিদের কাছেই ঈদের দিন তেমনি আমার কাছেও।আমি (তৌহিদুল আলম) আমি একটা কোম্পানিতে চাকরী করি। বেতন মোটামোটি ভালোই। পরিবার বলতে আমি আর আমার মা। বাবা মারা গেছেন প্রায় ৪ বছর আগে। তো বাড়ির বাজার-ঘাট সব আমার ই করতে হয়। আজ যেহেতু শুক্রবার তাই ঘুমিয়ে ছিলাম।হঠাৎ মা এসে ডাকদিলো বললো বাজারে যাওয়ার জন্য। আমি রেডি হয়ে বাজারে গেলাম। আসার সময় বাজারের লিষ্ট নিয়ে আসছিলাম। আনমনা হয়ে হাটতেছিলাম হঠাৎ করে চোখ গেলো ফুলের দোকানের দিকে। একটি মেয়ে গোলাপ ফুলের চারা কিনছে। সাথে দুইটা ফুল ও কিনেছে। মেয়েটার চেহারা ততোটা সুন্দর না তবে কাওকে তার মায়ায় বসানোর জন্য জথেষ্ট। সে চারা আর ফুল নিয়ে মিটিমিটি হাসছে হাসিটাও সুন্দর। হঠাৎ তার হাসি দেখে আমার দুই চোখ আটকে গেলো এতো সুন্দর করে হাসতে পারে তা আমার জানা ছিলোনা। ওর ভাবনায় ডুবে থাকতে থাকতে হঠাৎ বাস্তবে ফিরলাম আর এদিক দিয়ে মেয়েটা কখন চলেগেলো খেয়াল ই নেই। নিজের মাথায় নিজেই চড় দিলাম।
তারপর রওনা হলাম বাজারের উদ্দেশ্যে।
বাজার করার পর বাড়িতে ফিরে আসলাম
কলিংবেল বাজাতেই মা দরজা খুলে দিলো আমি ভিতরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে গোসল করতে গেলাম। তারপর আযান দিলো আমি জুম্মার নামাজ পড়তে গেলাম নামাজ পড়ে এসে মাকে বললাম খাবার দিতে তারপর আমি আর মা খেতে বসলাম। খাওয়া শেষ করে রুমের দিকে গেলাম আগামিকাল অফিস আছে তাই তারাতারি শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে গেলো। আমি নিজে নিজেকে বলতে লাগলাম যদি আবার দেখা হতো আমাদের। কি আর করার এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলো ফজরের আজান দিলো তাই ওজু করে নামাজ পড়তে গেলাম। নামাজ পড়ে এসে একটু বিশ্রাম নিতে লাগলাম মা এসে চা দিয়ে গেলো। আমি চা পান করিলাম। তারপর নাস্তা করে অফিসের দিকে যেতে লাগলাম। মর্মব্যাস্ততায় ভুলেই গেছি গতকাল আমার কারো সাথে দেখা হয়েছিলো। অফিস ছুটি হয় চারটাই বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে খেতে বসলাম আর তখনি মা বললো যেঃ-
মাঃ-তোকে কাল একটা কথা বলতে ভুলেই গেছিলাম।
আমিঃ- কি কথা মা?
মাঃ-গতকাল আমাদের বাসায় নতুন ভারাটিয়া আসছে।
আমিঃ- তো কি হয়েছে ভালো।
মাঃ- একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন ঘরটা অনেক খালি খালি লাগে। সারাদিন একা থাকি ভালো লাগেনা। তাই বলছিলাম এইবার বিয়ে করে বৌ মা ঘরে আন আর কতো।
আমিঃ- মা সবেতো চাকরীতে ঢুকলাম।
মাঃ- আমি ওতোসব বুঝিনা তুই বিয়ে করবি ব্যাস
আমিঃ- (কোনোরকম কথা কাঁটিয়ে দিয়ে বললাম) আচ্ছা মা আমাকে দুই মাস সময় দাও।
মাঃ- আচ্ছা দিলাম তবে দুই মাস পর আমি আমার নিজের পছন্দের পাত্রীর সাথে তোর বিয়ে দেবো।
আমিঃ- ঠিক আছে।
তারপর খেয়ে একটু ছাদের দিকে গেলাম।
ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছি আর লাল সূর্যটার অস্ত যাওয়া দেখছি। হঠাৎ পিছনে কারো উপস্থিতি বুজলাম পিছনে ফিরতেই আমি হাজার ভোল্টেজের শক খেলাম। আরে এই কি দেখছি আমি দুইদিন আগে যেই মেয়েকে দেখছিলাম সে আমার বাড়ির ছাদে এলো কী করে। মেয়েটি বাগানের ফুল গাছে পানি দিতেছিলো। আমি দেখলাম আমি বাগানে যেই ফুলের টব এনেছিলাম সেই সাথে আরো দুওইটি টব যুক্ত হলো বুঝলাম মেয়েটির। সে আমার গাছের ও যত্ন নিতেছে। তার পানি দেয়া শেষ হলে আমার দিকে ফিরে তাঁকায়। তারপর মুখ ঘুরিয়ে চলে যায় নিচে সন্ধযা হয়ে আসছে তাই আমিও নিচে আমার রুমের উদ্দেশ্যে গেলাম
তারপর রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম
সকালে ঘুম থেকে জেগে শুনতে পেলাম কে যেনো আমাদের ড্রইং রুমে বসে মার সাথে গল্প করছে মেয়েলী কন্ঠ। আমমি গেলাম গিয়ে দেখি ওই মেয়েটি মায়ের সাথে বসে গল্প করছে। আমাকে দেখে মাকে বললো।
মেয়েটিঃ- আন্টি আমি তাহলে আসি।
মাঃ- সেকি তুমি এলে নাস্তা করে যাও।
মেয়েটিঃ- না আন্টি আমার কলেজ আছে পরে অন্যদিন আসবো।(তারপর ও চলে গেলো)
আমি মাকে বললাম
আমিঃ- মা মেয়েটা কে??
মাঃ- আমাদের বাড়ির নতুন ভারাটিয়ার মেয়ে।
আমিঃ- ও, আচ্ছা ওনি কি করেন?
মাঃ- অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে। ওর নাম নিতু।
মেয়েটি কতো ভালো। ইত্যাদি ইত্যাদি।
তারপর আমি খাওয়া দাওয়া করে আবার অফিসের উদ্দেশ্যে রবনা দিলাম।
বিকেলে বাড়িতে এসে যে সিড়ি দিয়ে উঠতে যাবো ওমনি ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম মেয়েটির উপর। দুজন দুজনের দিকে চেয়ে আছি। হঠাৎ ঘোর কাটলে আমি তারাতারি করে নিজেকে সামলে নিলাম আর রুমের দিকে যেতে লাগলাম। তারপর আজ আবার ও ছাদে গেলাম তারপর গতকালের মতো মেয়েটি আজও ছাদে এলো আর ফুল গাছে পানি দিতে লাগলো। হয়তো তার গোলাপ ফুল বেশী প্রিয়। আমি তাকে ডাক দিলাম সে আমার দিকে ফিরে তাকালো। তারপর আমি তাকে বললাম।
আমিঃ- আসলে বিকালের ওই কাজটার জন্য আমি দুঃখিত বিঝে ঊঠতে পারিনি।
সেঃ- না না ঠিক আছে মানুষ মাত্রই ভুল। আমি কিছু মনে করিনি।
আমিঃ- আচ্ছা আমরা কী পরিচিতো হতে পারি?
সেঃ- জি অবশ্যই আমি ( ফাহমিদা ইসলাম নিতু)। আপনার নাম?
আমিঃ- আমার নাম (তৌহিদুল আলম)
নিতুঃ- আপনি কি করেন?
আমিঃ- দাঁড়িয়ে আছি???
নিতুঃ- আরে বলছি কাজ কিছু করেন?
আমিঃ-জি চাকরী করি একটা কোম্পানিতে।
তা আপনি কি করেন?
নিতুঃ-আমি অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ি। আব্বুর চাকরীর সুবাদে আমরা ঢাকা থাকি। আমাদের বাড়ি (ভৈরব)।
আমিঃ-ও আচ্ছা সন্ধযা হয়ে গেছে।
তারপর আমি আর ও একসাথে ছাদ থেকে নেমে এলাম। পরিচয় পর্ব শেষ হওয়ার পর।
এখন প্রতিদিন আমি আর ও কথা বলি আস্তে আস্তে আমরা আপনি থেকে তুমিতে নেমে এলাম। নিতু প্রতিদিন আমাদের বাড়িতে আসে আর মার কাজে টুকটাক সাহায্য করে। আমার নিতুর প্রতি অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতো আর এই থেকে শুরু হয়ে গেলো ভালোবাসার। নিতু ও হয়তো আমাকে ভালোবাসে। আমি একদিন সাহস করে বলে ফেললাম।
আমিঃ-নিতু আমি তোমাকে ভালোবাসি।
নিতুঃ-,,,,,,,,,,(নিশ্চুপ)
আমার সামনে থেকে চলে গেলো। দুইদিন আর তার দেখা পাইনি মটা বড়ই উতলা।
ছাদে গেলাম হঠাৎ একটা চিরকুট দেখতে পেলাম।আমি হাতে নিয়ে তা পড়তে লাগলাম।
,,,,,,,,,,,,,,
আমিও তোমাকে ভালোবাসি তৌহিদ কিন্তু এতোদিন তা বলতে পারিনি। তাই চিরকুটে লিখলাম। আমি তোমার সাথে বাকী জীবন কাটাতে চাই। আমার কিছু শর্ত আছে।
১. আমাকে অনেক ভালোবাসতে হবে। অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাঁকানো যাবেনা।
২. বাড়ি ফেরার পথে প্রতিদিন একটা করে গোলাপ ফুল আনতে হবে আর যেদিন আনবেনা সেদিন রাতের খাবার বন্ধ।
৩.চাঁদনি রাতে দুজন একসাথে বসে চাঁদ দেখবো।
আমি তো চিরকুট পেয়ে খুশিতে আত্মহারা
আমি মা কে গিয়ে বললাম। তোমার আর কষ্ট করতে হবেনা তোমার বৌ মা পেয়ে গেছি। তারপর মাকে সব খুলে বললাম।
মা ও খুশি হয়েছে। তারপর বললেন।
মাঃ- আমিও তাই ভাবছিলাম নিতু কে তোর বৌ করবো। মেয়েটা ভারি মিষ্টি।
তারপর মা তার পরিবারের সাথে বিয়ের কথা পাকা করে ফেললো। সামঅনের শুক্রবার বিয়ে। অবশেষে সেই দিন এলো।
আমি অফিস থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়েছি। বিয়ের দিন রাতে। নিজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ভেতরে যেতে ভয় করছে অথচ এই ঘরটা কতো চিনা আমার।
সব ইগো মাটিচাপা দিয়ে ঘরে ঢুকলাম। নিতু উঠে এসে আমাকে সালাম করে আবার খাটের উপর বসলো। আমি তার ঘুমটা সরিয়ে মুখ দেখে বললাম মাশাল্লাহ। তখনি সে লজ্জায় মুখটা নিচে নামিয়ে রাখলো।
আমরা শুয়ে পরলাম। সকাল্লে নিতু আমাকে ডাকলো নাস্তা করে ফ্রেস হয়ে আবার শুয়ে পরলাম আর ও মাকে সাহায্য করচে কাজে।
ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় অফিসে গেলাম। ফেরার পথে তার জন্য ফুল নিয়ে এলাম। সে খুব খুশি হলো। এভাবে প্রতিদিন আমার রুটিন অনুযায়ী চলতে লাগলাম। একদিন বাড়িতে এসে মার মুখ থেকে খুশির সংবাদ শুনলাম আমি বাবা হতে যাচ্ছি। অমনি রুমে গেলাম নিতুকে জরিয়ে ধরে বললাম।
আমিঃ- মা যা বললো তা সত্যি।
নিতুঃ-হুম।
তারপর থেকে তারবপর কেয়ারিং বেড়ে গেলো।
এভাবে চলতে থাকলো দিন। একদিন অফিসে বসে কাজ করছি হঠাৎ মা ফোন দিয়ে বললো।
মাঃ- নিতুর ব্যাথা উঠেছে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি তুই তারাতারি আয়।
আমিও বসের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে তারাতারি চলে গেলাম হাসপাতালে। গিয়ে দেখি নিতুর বাবা মা সবাই এসেছে একটুপর।
অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার এসে বললো অভিনন্দন আপনাদের মেয়ে বাবু হয়েছে। আমি খুশিতে আত্মহারা। বাবা হয়ে গেলাম। মিতুকে কেবিনে আনা হলো।
সবাই দেখতে গেলো। আমি দেখতে পারলাম না মা বললো।
মাঃ- খালি হাতে মেয়ে দেখতে নেই।
তারপর আমি আমার মেয়ের হাতে ১০০০/- দিয়ে নিজের কোলে নিলাম। বড়ই তৃপ্তি পাচ্ছি। আমার মমেয়েটা ততার ছোট্র হাতে আমার শার্টে ধরে রেখেছে। বাবা হওয়া যে কতো আনন্দের তা বলে বোঝাতে পারবোনা। আমাকে কেও বাবা বলে ডাকবে।
মেয়েটা পুরোই নিতুর মতো হয়েছে।,,
শাশুরি আম্মা বললেন।
শাশুরি আম্মাঃ- দেখ নিতু তোর স্বামী মেয়ে পেয়ে তোকে ভুলে গেছে।
আমিঃ- মা ওরা দুজনই আমার পৃথিবী।
তারপর হাসপাতাল থেকে নিতুকে বাড়ি নিয়ে আসি। এখন আমি ওদের দুজনের খেয়াল রাখি। অফিস থেকে দুপুরে ফিরে আসি।
আস্তে আস্তে আমাদের মেয়েটাও বড় হতে লাগলো। এই প্রথম সে আমাকে বাবা বলে ডেকেছে। আর নিতুকে মা বলেছে। আমার চোখ দিয়ে টুপ করে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
আমাদের জন্য দোয়া করবেন যাতে আমরা সুখে থাকতে পারি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত