মেকাপহীন মেয়ে

মেকাপহীন মেয়ে

সোফার মাঝ খানে বসে আছে রিফাত,ডান দিকে তাকিয়ে রিফাত দেখতে পেলো পাশে বসে থাকা আব্বু তার দিকে হাঁসি হাঁসি মুখ করে তাকিয়ে আছে,মেজাজ খারাপের মধ্যে আব্বুর হাঁসি দেখতে ভালো লাগছে না,ঠিক তখনই এক বুক আশা নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বাম পাশে বসে থাকা আম্মুর দিকে তাকিয়ে তো এবার রিফাতের চোঁখ কপালে উঠলো,তার আম্মু ও তার দিকে তাকিয়ে হাঁসছে এক অদ্ভুত হাঁসি,সব আশার সবটুকু আলো নিরআশার অন্ধকার হয়ে নেমে এলো তার মাঝে,,সেদিক থেকে চোঁখ সরিয়ে রিফাত তাকিয়ে দেখছে আসে পাশে থাকা সব মানুষেরা তার দিকে কেমন কেমন ভাব করে যেনো তাকিয়ে আছে,তার দিকে সবার ওরকম ভাবে তাকিয়ে থাকা ব্যাপারটা ভালো লাগলো না রিফাতের,সেদিক থেকে চোঁখ ঘোরাতেই তার চোঁখ গিয়ে পড়লো লাল নীল শাড়িতে মুড়িয়ে থাকা একটা মেয়ের উপর,,
,
একটু পেছনে ফেরা যাক,
বাবা মায়ের আদরের একমাত্র সন্তান রিফাত,পড়ালেখা শেষ করে এখন বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করছে,দেখাশুনা করছে বললে কথাটাতে একটু ভুল হলে ও হতে পারে কারণ ব্যবসাটা রিফাতের কাছে তার বাবা ছেরে দিয়েছে, আর ২ বছর ধরে খুব শক্ত হাতে ভালোভাবে সেটা করে যাচ্ছে রিফাত,রিফাতের বয়স এখন ২৮ ছুঁই ছুঁই, তার বাবা মা তার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছে অনেক দিন থেকেই,কিন্তু মনের মতো মেয়ে তারা পাচ্ছে না ছেলের জন্য,আর যখন তাদের কাউকে পছন্দ হয় তার পরে সেখানে রিফাতের আগমন ঘটে,ব্যস্ততার মাঝ থেকে সময় বের করে আসতে হয় তাকে বাবা মায়ের সাথে মেয়ে দেখতে,সেরকম ভাবে আজ ও একটা মেয়ে দেখতে এসেছে তারা,
,
শাড়ি পড়ে রিফাতের সামনে বসে থাকা মেয়েটার নাম মিম,দেখতে শুনতে খারাপ না হলে ও তার দিকে তাকাতে ইচ্ছা করছে না রিফাতের,আর তাকালেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে,আর খারাপ লাগার কথাটা রিফাত সবার সামনে না, বলতে চাই একাকী মিমকে,মিমের দিকে তাকিয়ে,,
,
~ রিফাত- লজ্জা লাগছিলো কিন্তু রাগের কাছে লজ্জা তো কিছুই না,মিমের দিকে তাকিয়ে সে, “আপনার সাথে আমি একা একটু কথা বলতে চাই”
~ মিম- রিফাতের মুখ থেকে কথাটা শুনে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না মেয়েটা যে সে কি করবে,মিম মাথা উঁচিয়ে তার আব্বু আম্মুর দিকে তাকাতেই তার আম্মু তাকে হুম নামক ইশারা দিলো,রিফাতের দিকে তাকিয়ে মিম, “ঠিক আছে চলেন আমরা ছাদে যায়”
~ মিম কথাটা বলেই ছাদের দিকে হাটতে লাগে,আর তার পিছে পিছে রিফাত ও চলে আসে ছাদে,সেখানেই এসেই রুম থেকে হাতে করে নিয়ে আশা একটা পানির বোতল মিমের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে রিফাত, “আপনি এই বোতলের পানি দিয়ে মুখ ধুতে পারবেন”?
~ এখানে আসার আগে বা আসার পরে স্বপ্নে ও কোন দিন মিম ভাবতে পারেনি এরকম একটা পরিস্থির মুখোমুখি হতে হবে তাকে,কিছুটা অবাক হয়ে রিফাতকে সে, “মানে কি,? আমি কিছুই বুঝছি না”
~ মিমের দিকে তাকিয়ে চোঁখ বড় করে রিফাত, “কি পরিমান মেকাপ করেছেন সেটা কি নিজে ও জানেন আপনি,?মেকাপ ছাড়া ভেতরে কি আছে সেটা দেখার দরকার আছে আমার”
~ রিফাতের দিকে তাকিয়ে খুব আস্তে করে মিম, “ডেকে এনে এভাবে অপমান না করলে ও পারতেন”
~ মিমের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত এক হাঁসি হেঁসে রিফাত, “কি ব্যাপার বোতলটা নিন”
~ লজ্জায় লাল হয়ে রিফাতের দিকে তাকিয়ে মিম, “একটু হাল্কা মেকাপ করেছি আর তাতেই এই অবস্থা”
~ মনে মনে রিফাত ভাবলো, “এই যদি হয় হাল্কা মেকাপ তাহলে এর থেকে ও ভারি আছে নাকি”? রিফাত মিষ্টি করে মিমের দিকে তাকিয়ে, “বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছি ভূত না”
~ কথাটা শুনে মাথা গরম হলে ও তখন কিছুই বলতে পারছে না মিম,চুপ করে রয়েছে মেয়েটা,
~ অনেকক্ষন থেকেই মিমের হাত আর পায়ের দিকে চোঁখ পড়ছে রিফাতের,এতোক্ষন ভেবেছিলো কিছু বলবে না,কিন্তু সে সিদ্ধান্ত থেকে রিফাত সড়ে আসলো,মিমের দিকে তাকিয়ে সে, “আচ্ছা হাত বা পায়ের জন্য কি মেকাপ জাতীয় কিছু,,,,,”?
~ রিফাতের মুখ থেকে কথা শেষ হবার আগেই রাগি মুখ করে রিফাতের দিকে তাকিয়ে মিম, “কেনো আপনার লাগবে নাকি”?
~ মিমের হাতের দিকে তাকিয়ে রিফাত খুব অবাক হয়েছে এমন ভাব করে, “না আমার না,, আসলে ভাবছি কোনটা আসল আপনার হাত পা নাকি মুখ”?
~ রিফাতের মুখ থেকে কথাটা শুনেই নিজের কাছ থেকে তার হাত লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে মিম, “আপনি কিন্তু বেশি বেশি বলছেন”
~ মিমের দিকে তাকিয়ে হেঁসে দিয়ে রিফাত, “আপনি যদি মুখের সাথে সাথে হাত আর পায়ে ও একটু মেকাপ করতেন তাহলে আমি এরকম বেশি বেশি বলার সুযোগ পেতাম না”
~ রিফাতের দিকে তাকিয়ে বেশ জোর কন্ঠে মিম, “আমি সব সময়ই এরকম মেকাপ করি না,আজ একটু করলাম আর আপনি কিনা,,,,”
~ মিমের দিকে তাকিয়ে বোঝা যাচ্ছে লজ্জায় লাল হচ্ছে মেয়েটা,চোঁখের কোনে হাল্কা পানি জমতে শুরু করেছে, আর কিছুক্ষনের মধ্যে হয়তো কান্না নামের কোন খেলা শুরু হবে তার, এরকম ভাবতেই হাতে থাকা বোতলের মুখ খুলে মিমের দিকে তাকিয়ে রিফাত, “ফেস কাটিং দেখে যা বোঝা যাচ্ছে আপনার চেহারা একদম খারাপ না,কিন্তু আপনি নিজে ও বুঝছেন না এরকম মেকাপে আপনাকে কি রকম বিশ্র,,,,,,”
~ মাথা নিচু করে রেখেছে মিম,রিফাতকে মনে মনে অনেক কিছু বলতে ইচ্চা হলে ও মনের কথা মনে রেখে চুপ করে রয়েছে মেয়েটা,মিনিট ২ চুপ করে থাকার পর মাথা উঁচু করে রিফাতের দিকে তাকিয়েছে মিম কিছু একটা বলবে বলবে ভাব, ঠিক এরকম সময়,,
~ মিমের দিকে তাকিয়ে হাতে থাকা পানির বোতলে চুমুক দিয়ে রিফাত, “ঠিক আছে চলেন এবার নিচে নামা যাক”
,
মিমদের বাসা থেকে সেদিন বাসায় এসে রিফাত তার আব্বু আম্মুকে বললো “মেয়েটা দেখতে কেমন, অতিরিক্ত মেকাপের জন্য সেটাই নাকি সে দেখতে পাইনি,আর মেকাপী কোন মেয়েকে সে বিয়ে করবে না,কালো বা শ্যামলা হলে ও হবে কিন্তু মেকাপের অভ্যাস আছে এমন কাউকে কোন দিন সে বিয়ে করবে না” রিফাতের বলে দেয়া কথা মতো এবার থেকে মেয়ে খুঁজবে তার আব্বু আম্মু,,
,
পরের শুক্রবার,
আজ আবার রিফাত মেয়ে দেখতে এসেছে আব্বু আম্মুর সাথে,সোফার মাঝে বসে আছে সে, আর তার ডানে আব্বু বামে আম্মু,বেশ আনন্দময় একটা পরিবেশ সেখানে,শুধু দুজন মানুষ বাদে সবাই খুব হাঁসি খুশি,রিফাত আর আজ যাকে দেখতে আসা হয়েছে (নিশি) এরা দুজনে চুপ করে মাথা নিচু হয়ে বসে আছে,এদের দুজনের এরকম করার কারণ লজ্জা নাকি অন্য কিছু সেটা বুঝছে না দুপরিবারের কেউ,অবশেষে মুরব্বিরা রিফাত আর নিশিকে বারান্দায় পাঠিয়ে দিলো যাতে করে দুজন আলাদা কথা বলতে পারে,মনে মনে এরকমই একটা সুযোগ খুজছিলো রিফাত আর নিশি,,বারান্দায় আসার সাথে সাথে,,
,
~ রিফাত- নিশির দিকে ২/৩ মিনিট তাকিয়ে থেকে রিফাত বুঝলো মেয়েটা একদম মেকাপ করেনি,আর দেখতে ও মোটামুটি ভালোই,,কিন্তু সমস্যা একটা আছে,নিশির দিকে তাকিয়ে রিফাত, “আচ্ছা লাল কি আপনার অনেক পছন্দের রঙ”?
~ মনে মনে ভাবছে নিশি, “সে আজ যেভাবে লালের ব্যাবহার করেছে তাতে তাকে কোন ভদ্র রুচির মানুষের পছন্দ হবার কথা না” রিফাতের দিকে আর চোঁখে তাকিয়ে নিশি, “হ্যা লাল আমার অনেক পছন্দের,লাল ছাড়া আমার চলেই না”
~ ভ্রু কুঁচকে নিশির দিকে তাকিয়ে রিফাত, “লাল থ্রি পিচ,লাল চুরি,লাল টিপ,আর হ্যা আচ্ছা আপনার ঠোটে যেটা লাগিয়েছেন কি নাম যেনো ওটার”?
~ রিফাতকে মনে মনে ছাগল ভেবে নিশি, “লিপস্টিক,,,,রুমে আছে নিয়ে আসবো লাগাবেন নাকি”?
~ বেশ রাগ হচ্ছে রিফাতের, “আপনি তো পুরা লালে লাল হয়েছেন,আর লাল রঙ এর লিপস্টিক এতো গারো ভাবে কেউ দিতে পারে আপনাকে না দেখলে জানা হতো না”
~ হুম,বুদ্ধিতে কাজ হয়েছে ভেবে খুব খুশি নিশি,রিফাতের দিকে তাকিয়ে, “ইসস আপনি জানেন না,আমি আরো বেশি করে দিতাম কিন্তু লাগাতে লাগতেই আপনারা চলে আসলেন তো তাই আর হলো না,আমি তো এর থেকে বেশি গারো করে দিই”
~ লালে ব্যাপক অরুচি আছে রিফাতের,আর কারো ঠোটে লাল লিপস্টিক উফফ ভাবতেই তো তার কেমন কেমন লাগে,নিশির দিকে না তাকিয়েই সে, “পারলে একবার আয়নার সামনে যেয়ে নিজেকে দেখে নিয়েন”
~ বুঝতে পেরে ও রিফাতকে খেপানোর জন্য নিশি, “দেখার কি আছে,? জানি তো লালে আমাকে অনেক সুন্দর লাগে”
~ নিজেকে আর এতোক্ষন চাপিয়ে রাখা রাগকে আর ধরে রাখতে পারলো না রিফাত,নিশির দিকে তাকিয়ে, “নিজেই নিজেকে সুন্দর না ভেবে অন্য কারো কাছে শুনে নিয়েন লালে আপনাকে সুন্দর না বান্দর লাগে” কথাটা বলেই বারান্দা থেকে রুমের দিক যেতে শুরু করবে রিফাত ঠিক তখনই পেছন থেকে নিশির ডাক,
~ রাগি কন্ঠে রিফাতের দিকে নিশি, “শোনেন লাল রঙ আমার খুব অপছন্দের আর লাল লিপস্টিকের ব্যাবহার আজ আমার জীবনে প্রথমবার”
~ কথা গুলি শুনে অনেক্ষন পড়ে হলে ও রিফাতে মুখে হাঁসি ফিরলো,আনমনা হয়ে ভাবছে সে, “পছন্দ হোক আর না হোক মেয়েটা বেশ অদ্ভুত” লালের পিছে রহস্য কি,রিফাত যখন এরকম কিছু একটা প্রশ্ন করবে তখনই,
~ রিফাতের দিকে তাকিয়ে নিশি, “আমাকে যেনো আপনার পছন্দ না হয় সে জন্য এই লালের আশ্রয়, আর আপনার সব ফালতু কথা শুনে ভালো লাগছিলো না তাই সত্যি কথা বলে ফেললাম,এখন যদি আপনার আমাকে পছন্দ হয় তাহলে আমার আপনাকে ২/৩ মাসের জন্য বিয়ে করতে হবে”
~ নিশিকে বিয়ে করার মতো কোন সিদ্ধান্ত রিফাত নেইনি,আর নিবে কিনা সেরকম ও কোন কিছু এখনো ভাবেনি,কিন্তু নিশির ২/৩ মাসের জন্য বিয়ে কথাটা রিফাতের মনে দাগ কেটেছে,তাই জানার আগ্রহ হলো পেছনের কারণ,নিশির দিকে তাকিয়ে রিফাত, “২/৩ মাসের জন্য বিয়ে কথাটা ঠিল বুঝলাম না,একটু বুঝিয়ে বলেন”
~ বলার ইচ্ছা না থাকলে ও বলতে হবে এতে করে যদি রিফাতের মনে মায়া হয় আর তাতে যদি তাকে রিফাত বিয়ে না করে, এসব ভেবে রিফাতের দিকে তাকিয়ে নিশি, “আমার একজনের সাথে ৪ বছরের রিলেশন আছে,কিন্তু আমি বাসায় কিছু বলতে পারছি না কারণ ও কিছু করে না,একটা চাকুরী খুঁজছে হয়তো ২/৩ মাসের ভিতর পেয়ে যাবে,আর ও চাকুরী পাওয়ার আগে আমি বাসায় কিছু জানাতে পারছি না,আর জানালে ও আব্বু আমাকে অন্য যায়গা বিয়ে দিবে কারন সে প্রেম মেনে নিবে না,আর চাকুরী পাবার পর তখন যদি কেউ মেনে না নেই তাহলে আমরা পালাবো”
~ অবাক দৃষ্টিতে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে রিফাত, নিশির বলতে থাকা কথা গুলি সে শুনেছে কি না কে জানে,কারণ তার চোঁখ তো ছিলো অন্য দিকে,,রিফাতকে কথা গুলি বলতে বলতে ওড়না দিয়ে ঠোটের সব লিপস্টিক তুলে ফেলে নিশি,আর নিশির ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে রিফাত ওভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ হচ্ছে নিশির গোলাপি ঠোঠ,গোলাপি ঠোঠের প্রতি রিফাতের অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করে,রিফাত এখনো তাকিয়ে আছে নিশির ঠোটের দিকে,
~ রিফাতের দিকে তাকিয়ে নিশি, “এই যে মিস্টার কি দেখেন এভাবে”?

অবাক দৃষ্টিতে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে রিফাত, নিশির বলতে থাকা কথা গুলি সে শুনেছে কি না কে জানে,কারণ তার চোঁখ তো ছিলো অন্য দিকে,,রিফাতকে কথা গুলি বলতে বলতে ওড়না দিয়ে ঠোটের সব লিপস্টিক তুলে ফেলে নিশি,আর নিশির ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে রিফাত ওভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ হচ্ছে নিশির গোলাপি ঠোট,গোলাপি ঠোটের প্রতি রিফাতের অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করে,রিফাত এখনো তাকিয়ে আছে নিশির ঠোটের দিকে,
~ রিফাতের দিকে তাকিয়ে নিশি, “এই যে মিস্টার কি দেখেন এভাবে”?
~ মাথা নিচু করে আস্তে করে রিফাত, “আর যায় হোক আপনার ঠোটটা কিন্তু অনেক সুন্দর”
~ রিফাতের মুখ থেকে নিজের জন্য শোনা প্রশংসা শুনে ও যেনো ঠিক খুশি না নিশি,রিফাতের দিকে তাকিয়ে সে, “বিশ্বাস করেন আমি আর আমার ঠোট কোনটাই সুন্দর না,আর এর পর ও কি আপনি আমাকে বিয়ে করবেন”?
~ কিছুটা রাগি ভাব করে নিশির দিকে তাকিয়ে রিফাত, “হ্যা আপনাকেই বিয়ে করবো”
~ রিফাতের মুখ থেকে কথা শেষ হতেই নিশির চোঁখের কোণে পানি জমতে শুরু করেছে,চুপ করে আছে মেয়েটা,
~ নিশির চোঁখ মুখের ভাষা দেখে রিফাত বুঝছে যে মেয়েটা অনেক কষ্ট পাবার পর ও এখানে দাঁড়িয়ে আছে,তার সত্যিকারের ভালোবাসায় বাধা হয়ে দাঁড়ানোর মতো ছেলে রিফাত না,মিষ্টি করে হেঁসে নিশির দিকে তাকিয়ে সে, “আচ্ছা আপনি কি চান,আমি আপনাকে বিয়ে করি”?
~ মাথা নিচু করে নিশি রিফাতকে বলতে থাকে, “আমার চাওয়াতে কি আসে যায় আপনি যা করবেন সেটাই তো আমাকে মেনে নিতে হবে, তবে আমি আগে থেকে বলে নিচ্ছি আপনি যদি আমার অমতে কিছু করেন তাহলে বিয়ের মেয়াদ হবে কিন্তু ২/৩ মাস”
~ নিশির কথা শুনে হাঁসি চাপিয়ে রাখতে পারলো না রিফাত, “আচ্ছা আপনি তো অনেক বোকা দেখছি”
~ বেশ অবাক চোঁখে রিফাতের দিকে তাকিয়ে নিশি, “আমাকে আপনার কাছে বোকা মনে হবার কি কারণ”?
~ হাঁসি ভরা মুখ করে নিশির দিকে তাকিয়ে রিফাত, “আপনার কি মনে হয় আমি যদি আপনাকে বিয়ে করি তাহলে তার ২/৩ মাসের ভিতর চাকুরী পেলে ও আপনাকে নিয়ে আর আপনার এখনের যে বয়ফ্রেন্ড সে তখন পালাবে”?
~ কোন কিছু ভাবার সময় নিলো না নিশি,ছেলেটার প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস, রিফাতের দিকে তাকিয়ে জোর কন্ঠে বললো সে, “২/৩ মাস কেনো ২/৩ বছর হলে ও,,ও আমাকে নিয়ে পালাবে”
~ হা,হা,হা,করে নিশির দিকে তাকিয়ে প্রায় ৩ মিনিট হাঁসলো রিফাত,হাঁসি থামিয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে আস্তে করে রিফাত, “ঠিক আছে তাহলে আমরা এখন বিয়ে করি আর ২/৩ মাস পর না হয় আপনি পালিয়ে যেয়েন”
~ রিফাত মুখ থেকে এরকম কথা শোনার সাথে সাথে চোঁখের পানি মুখ বেয়ে পরতে শুরু করেছে নিশির,চুপ করে আছে মেয়েটা,
~ তাকে পছন্দ বা বিয়ে করবে এরকম কোন সিদ্ধান্ত এখনো নেইনি রিফাত,এতোক্ষন একটু মজা করছিলো সে,কিন্তু নিশির চোঁখের পানি দেখে রিফাত বুঝলো শুধু সে না, নিশিকে তার ভালোবাসার মানুষটি বাদে অন্য কেউ বিয়ে করে সুখি হতে পারবে না,আর মজা করে কাজ নেই ভেবে নিশির দিকে তাকিয়ে রিফাত, “আমি আপনাকে বিয়ে করছি না,আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করে ভালো থাকুন, আল্লাহ্ হাফেজ” কথা গুলি বলেই হাটা আরম্ভ করলো রিফাত,
~ রিফাতের মুখ থেকে কথা গুলি শোনার পর আবার নিশির মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো, খুশিতে লাফালাফি করা অবস্থা মেয়েটার,ওদিকে রিফাত চলে যাচ্ছে তাকে কিছু বলা উচিৎ ভেবে নিশি রিফাতের দিকে তাকিয়ে, “এই যে একটু এদিকে আসবেন”?
~ নিশির ডাকে সাড়া দিয়ে পিছে ফিরে এসে রিফাত, “হুম বলেন”
~ রাগি মুখ করে রিফাতের দিকে তাকিয়ে নিশি, “দেখতে শুনতে তো মাশাআল্লাহ বেশ সুন্দর, তার উপর বিশার বিজনেসম্যান, তা একটা প্রেম করার যোগ্যতা ও কি নাই? নাকি অন্য কোন সমস্যা আছে হুম?
~ নিশির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেঁসে তখন কিছু না বলেই সেখান থেকে বিদায় নিলো রিফাত,
,
এদিকে বাসায় আসলো রিফাত
তখন খুব রাগ হচ্ছিলো নিশির শেষের কথা গুলি শুনে তার,কিন্তু কি বা করার এরকম কথা তো শুধু নিশি না যেকেউই তাকে বলতে পারে,আর পারবে নাই বা কেনো, আজ কাল সবাই প্রেম করছে কিন্তু সে নয় কেনো,? রিফাত প্রেমের পিছে কখনো ছুটেনি প্রেম তাকে বার বার ছুতে চাইলে ও সে তা থেকে থেকেছে অনেক দূরে, কিন্তু এসব তো আর পাবলিক বুঝবে না,আর নিশিদের বাসা থেকে ফেরার পর নিশির মুখ থেকে “যোগ্যতা নাই নামক কথাটা বার বারর ফিরে এসে কানে বাজছে রিফাতের,এররকম কথা আজ পর্যন্ত তাকে কেউ বলতে পারেনি যা বলেছে নিশি,মনে মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো রিফাত, কি সিদ্ধান্ত? সে প্রেম করবে,হ্যা প্রেম করবে,রিফাত যেরকম মেয়ে খুঁজছে আর আজকের নিশির কথা সব কিছু মিলিয়ে তার একটা প্রেম করা উচিৎ,তাহলে এক দিকে সে তার মন মতো মেকাবহীন একটা মেয়ে পাবে, অপর দিকে নিশিকে ভালোভাবে একটা জবাব ও দিতে পারবে সে প্রেম করতে পারে দেখিয়ে,,কিন্তু প্রেম করা তো এতো সহজ না যে চাইলেই প্রেম করা যায়,ওদিকে আবার রিফাতের পছন্দ একদম অন্য রকম,সাজগোজ হীন খুব সাধারণ একটা মেয়ে, এরকম মেয়ে আজকাল পাওয়া যায় নাকি,ভাবতে ভাবতেই রিফাতেই মনে পরলো লামিয়ার কথা, লামিয়াটা আবার কে? লামিয়া একসম রিফাতকে অনেক পছন্দ করতো,শুধু পছন্দ বললে ভুল হবে রিফাতকে সে অনেক ভালোবাসতো, কিন্তু সেই ভালোবাসাটা ছিলো এক পক্ষের, লামিয়া যতোবারই ভালোবাসার কথা বলেছে ঠিক ততোবারই তাকে না করে দিয়েছে রিফাত,অনেক চেষ্টা করেছিলো মেয়েটা,বার বার না করে দেয়ার পর ও সে আবার ফিরে আসতো রিফাতের কাছে, চেষ্টা করতো তার সাথে কথা বলার কিন্তু শেষ মেষ যেনো ফোন দিতে না পারে সে জন্য লামিয়ার নাম্বার রিফাত ব্লাক লিষ্টে দিয়ে দিয়েছিলো,তার পর আব্বু আম্মুর নাম্বার থেকে ও রিফাতকে অনেকবার কল দিয়েছিলো লামিয়া কিন্তু তাতে কি রিফাত সেই নাম্বার গুলি ও ব্লাক লিষ্টে দিয়েছিলো,রিফাত এরকম করার কারণ কখনোই ছিলো না যে লামিয়াকে তার পছন্দের না, তার এরকম করার কারণ ছিলো প্রেম নামক ব্যাপারটা দিয়ে দূরে থাকা,রিফাতের ধারণা ছিলো প্রেম সবাইকে পিছিয়ে দেই আর তাই সে আবেগের ফাদে পা দিয়ে পিছিয়ে যেতে চাইতো না,রিফাতের একটাই ইচ্ছা ছিলো যে সে নিজের পায়ে দাঁড়াবে,আর এখন তো সেটা হয়েছেই তাই আর প্রেম করতে অসুবিধা কোথায়,লামিয়া দেখতে খুব মিষ্টি ছিলো,মেয়েটার চোঁখ আর হাঁসিটা ছিলো অসাধারণ, চোঁখ বন্ধ করলে রিফাতের চোঁখে যা এখনো ভেসে উঠে,লামিয়াই রিফাতের চোঁখে দেখা একমাত্র মেয়ে যে কিনা একদম মেকাপহীন,মেয়েটা কোন দিন কোন কসমেটিক ব্যাবহার করে না,তার পর ও দেখতে একদম পরীর মতো,লামিয়ার কথা ভাবতে ভাবতে রিফাত হারিয়ে ছিলো এক অন্য জগতে,সে জগত থেকে বের হতেই আবার রিফাতের মনে পড়লো নিশির সেই “যোগ্যতা নাই নামক কথাটি” রিফাত ভাবছে লামিয়াকে একবার কল দিবে, মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো সে হ্যা লামিয়ার নাম্বার আছে তার কাছে,কল দিবে দিবে করে ও দিতে পারছে না সে,খুব লজ্জা পাচ্ছে, কিন্তু যখনই নিশির সেই কথাটা মনে পরছে তখন তার থেকে বড় লজ্জা আর রিফাতের কাছে নাই,লজ্জাকে এক পাশে রেখে লামিয়ার নাম্বারে কল দিয়েই দিলো রিফাত,কল দিতে দিতে রিফাত ভাবছে “আজ প্রায় ৮ মাস পর কথা হবে তাদের,লামিয়া চিনবে তো তাকে? আগের মতো আছে তো মেয়েটা? সে লামিয়ার সাথে যেরকম করছে আবার লামিয়া তার সাথে সেরকম করে বদলা নিবে নাতো?ভাবতে ভাবতে ওপাশে দেয়া কল রিসিভ হলো,,
,
~ লামিয়া- ফোন রিসিভ করে চুপ হয়ে আছে লামিয়া, ()
~ রিফাত- এদিকে রিফাত ও চুপ, কিছু বলার ইচ্ছা থাকলে ও বলে উঠতে পারছে না,তার মানে ফোনের দুপাশেই চলছে নীরবতা,, কি ভেবে যেনো ফোনের লাইনটা কেটে দিলো রিফাত,আবার সাথে সাথেই কল দিলো লামিয়াকে,,
~ লামিয়া- খুব আস্তে করে, “কি ব্যাপার কল দিলা, আবার কিছু না বলেই লাইন কেটে দিলা”?
~ রিফাত- অনেকদিন পর লামিয়ার কন্ঠ শুনলো রিফাত,একটা সময় এই কন্ঠে তার কাছে করা প্রেম নিবেদন শুনেছে অনেকবার,নিজেকে সামলে নিয়ে লামিয়াকে সে, “না এমনি ইচ্ছা হলো তাই”
~ বেশ নরম ভাবে তাকে বলা রিফাতের কথাতে কেমন জানি একটা অন্যরকম কিছুর মনে হলো লামিয়ার,কারণ রিফাত কোন দিন এতোটা নরম ভাবে তার সাথে কথা বলেনি,রিফাতকে লামিয়া “এমনি কল দিয়েছো তুমি আমাকে,? এটা কোন দিনই সম্ভব না,যায় হোক তোমার কাছ থেকে ফোন পাওয়া এটা আমার প্রতিদিনের ভাবনা আর অনেক বড় স্বপ্ন পূরনের মতো একটা ব্যাপার”
~ একদিকে লামিয়ার সাথে কথা বলছে আরেক দিকে রিফাতের এর কানে বার বার ফিরে এসে বাজছে নিশির বলা সেই, “যোগ্যতা নাই নামক কথাটি” এরকম একটা কথা রিফাতের শোনা প্রাপ্য ছিলো এটা সে বুঝতে পেরেছে এখন,কিন্তু তার জায়গা সে ঠিক ছিলো এখন না হয়,,,, নিজেকে আর সামলাতে পারছে না রিফাত,ফোনের ওপাশে থাকা লামিয়াকে সে, “আচ্ছা তুমি কি এখনো আমাকে ভালোবাসো,? আমি যদি তোমার সাথে প্রেম করতে চাই তুমি কি করবে”?
,

বেশ নরম ভাবে তাকে বলা রিফাতের কথাতে কেমন জানি একটা অন্যরকম কিছুর মনে হলো লামিয়ার,কারণ রিফাত কোন দিন এতোটা নরম ভাবে তার সাথে কথা বলেনি,রিফাতকে লামিয়া “এমনি কল দিয়েছো তুমি আমাকে,? এটা কোন দিনই সম্ভব না,যায় হোক তোমার কাছ থেকে ফোন পাওয়া এটা আমার প্রতিদিনের ভাবনা আর অনেক বড় স্বপ্ন পূরনের মতো একটা ব্যাপার”
~ একদিকে লামিয়ার সাথে কথা বলছে আরেক দিকে রিফাতের এর কানে বার বার ফিরে এসে বাজছে নিশির বলা সেই, “যোগ্যতা নাই নামক কথাটি” এরকম একটা কথা রিফাতের শোনা প্রাপ্য ছিলো এটা সে বুঝতে পেরেছে এখন,কিন্তু তার জায়গা সে ঠিক ছিলো এখন না হয়,,,, নিজেকে আর সামলাতে পারছে না রিফাত,ফোনের ওপাশে থাকা লামিয়াকে সে, “আচ্ছা তুমি কি এখনো আমাকে ভালোবাসো,? আমি যদি তোমার সাথে প্রেম করতে চাই তুমি কি করবে”?
~ রিফাতের মুখ থেকে এরকম কথা শুনে নিজের কানকে ও বিশ্বাস করতে পারছে না লামিয়া,রিফাতকে সে, “মোবাইলে কি এতো কথা বলা যায়, তার থেকে কাল কোথাও দেখা করলে ভালো হয় না”?
~ লামিয়ার কাছ থেকে এখনই তার করা প্রশ্নের উত্তর শোনার জন মনটা ছটফট করলে ও নিজেকে শান্ত করে লামিয়াকে রিফাত, “ঠিক আছে তাহলে কাল দেখা করি,কিন্তু কোথায়”?
~ লামিয়ার তো মনে চাচ্ছে এখনই যদি সে রিফাতকে দেখতে পেতো কিন্তু না সেটা সম্ভব না,যদি ও সে সারাক্ষণই ছবিতে রিফাতকে দেখে,তার মোবাইলের স্কিনপেপার বলেন আর গ্যালারি সবটা জুড়োই রিফাতের ছবি,আর যায় হোক ছবি আর বাস্তবে দেখা তো এক না,এগুলি ভাবতে ভাবতেই রিফাতকে সে, “ঠিক আছে কালকে ওই নদীর পাশে”
~ রিফাত অনেকটা চমকে গেলো এই ভেবে যে “লামিয়ার এখনো মনে আছে নদী তার অনেক পছন্দের” আর বেশি কিছু না ভেবে লামিয়াকে সে, “ঠিক আছে কাল বিকাল ৫ টা”
,
সেদিনের মতো তখন তাদের কথা বলা শেষ, যদি ও কারোই মন চাচ্ছিলো না ফোন রাখতে কিন্তু রাখতে তো হবেই কারণ অনেক রাত হয়ে ছিয়েছিলো,,
,
পরের দিন ঠিক বিকাল ৫ টা,
লামিয়াকে দেখার অধীর আগ্রহ থাকার কারণে রিফাত সেই ৪ টায় এসে হাজির হয়েছে এই নদীর পাশে,এতোক্ষন একা একা বসে থাকতে তার খারাপ লাগলে ও সব খারাপ লাগা তার কাছ থেকে হারিয়ে পালিয়েছে লামিয়াকে দেখতে পাবে ভাবার সাথে সাথে,হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রিফাত দেখতে পেলো ৫.১০,, মানে লামিয়ার বলা ৫ টা থেকে ১০ মিনিট বেশি হয়ে গেছে,লামিয়া তো দেড়ি করার মতো মেয়ে না,কিছুটা ভয় হচ্ছে আর ভাবছে রিফাত, “লামিয়া আসবে তো? একটা সময় আমি ওকে অনেক অবহেলা করেছি এখন সুযোগ পেয়ে ও আবার সেগুলির প্রতিশোধ নিবে না তো”? কথা গুলি ভাবতে ভাবতেই রিফাতের সামনে এসে দাঁড়ালো একটি মেয়ে,মেয়েটা মুখ ঢাকা বোরখা পড়ে আছে,মেয়েটির চোঁখের দিকে তাকাতের নিজের মাঝ থেকে অন্য এক জগতে হারিয়ে গেলো সে,আর না হারিয়ে বা যাবে কোথায় ,কাজল মাখা এক মায়াবী চোঁখ সে চোঁখে চোঁখ পড়লে তার মায়াবী জাদুতে অন্য জগতে হারাতেই হবে,,এই কি ব্যাপার কি দেখো,?
,
~ রিফাত- লামিয়ার কথাতে হুশ ফিরলো রিফাতের,লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে লামিয়াকে সে, “এখন আসার সময় হয়েছে”
~ বোরকার মুখ খুলতে খুলতে রিফাতের দিকে তাকিয়ে লামিয়া, “আমি তোমার আগে ৩.৪৫ এ এসেছি,ওদিকে দাঁড়িয়ে থেকে তোমার অস্থিরতা দেখছিলাম আর ভাবছিলাম এই কি সে? যে কিনা আমাকে দিনের পর দিন অবহেলা করেছিলো”
~ লামিয়া কি বলছে সে গুলি কিছু শোনেনি রিফাত,কারণ সে হারিয়ে বসে আছে অন্য কিছুর দিকে,তার চোঁখের সব দৃষ্টি ঘিরেছে লামিয়াকে,তার পছন্দের একদম মেকাপহীন মুখ,গোলাপি ঠোট,মিষ্টি হাঁসি,মায়াবী চোঁখ,আর শিল্পীর গানের মতো সুন্দর কন্ঠ,সব কিছুই আছে লামিয়ার ভিতর, পুরো যেনো প্যাকেজ, একের ভিতর সব,,ভাবছে আর একা একা হাঁসছে রিফাত,
~ রিফাতের কান টান দিয়ে লামিয়া, “এই যে আছেন আপনি”
~ হুশ ফিরতেই রিফাত বুঝলো স্বপ্ন না বাস্তব তার সামনেই,লামিয়ার দিকে তাকিয়ে সে, “তার পর”
~ মিষ্টি করে হেঁসে রিফাতের দিকে তাকিয়ে লামিয়া, “আমি তোমাকে অনেকবার এখানে আনতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমার সাথে আসোনি,বার বার এসেছো একা একা”
~ মাথা নিচু করে রিফাত, “পুড়নো কথা বাদ দাও,যে জন্য ডেকেছি সেটা বলো”
~ রিফাত তাকে কি জন্য ডেকেছে সেটা মনে আছে লামিয়ার,তার পর ও আরেকবার রিফাতের মুখ থেকে শুনতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকেই মিথ্যার আশ্রয়, “কি জন্য ডেকেছো আমি ভুলে গেছি”
~ রাগ হচ্ছে রিফাতের কিন্তু কিছুই করার নাই,সে এখন মাথা ঠান্ডা রাখবে,লামিয়ার দিকে তাকিয়ে রিফাত, “আমি তোমার সাথে প্রেম করতে চাই,তুমি করবে”
~ হা,হা,হা,,করে প্রায় মিনিট ২ হাঁসলো লামিয়া,তার পর রিফাতের দিকে তাকিয়ে, “আচ্ছা তোমার কি মনে আছে আমি কতোবার কাঁদতে কাঁদতে তোমাকে বলছিলাম “আমি তোমাকে ভালবাসি”
~ খুব আস্তে করে রিফাত, “হ্যা আমার সব কিছুই মনে আছে”
~ একটু রেগে গিয়ে লামিয়া রিফাতকে, “না তোমার কিছুই মনে নাই,আমি দিনের পর দিন তোমাকে ভালোবাসার কথা বলেছি আর তুমি আমাকে দিনের পর দিন অবহেলা করেছো”
~ মাথা নিচু করে রিফাত, “সব মানছি,আমার ব্যাপারটা ও তোমাকে বুঝতে হবে,আমি তো তখন বলেছিলাম আমি প্রেম করবো না,আমি আমার পথে চলে ভালো একটা অবস্থানে আসবো”
~ কিছুটা শান্ত হয়ে, আস্তে করে রিফাতের দিকে তাকিয়ে লামিয়া, “আমি তখন অনেকবার বলেছিলাম,তুমি জীবনে সব পেলে ও একটা আমি পাবে না,যে তোমাকে ভালোবাসবে নিজের থেকে ও বেশি”
~ লামিয়ার দিকে তাকিয়ে খুব আস্তে করে রিফাত, “হ্যা তুমি ঠিক বলেছিলা,আমি জীবনে সব পেলে ও একটা তুমি পাইনি আর হয়তো পাবো ও না”
~ রিফাতের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ধরে চুপ করে আছে লামিয়া,
~ রিফাতের ভিতর কেমন জানি একটা অস্থিরতা কাজ করছে, লামিয়ার দিকে তাকিয়ে সে, “আচ্ছা বলো প্রেম করবা আমার সাথে”?
~ রিফাতের দিকে তাকিয়ে থাকা লামিয়া এবার আস্তে আস্তে মাথা নিচু করলো,রিফাতকে সে, “রিফাত আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ে”
~ লামিয়ার মুখের কথা শেষ হবার আগেই হতাশার ছাপ রিফাতের চোঁখে মুখে লেগে গেছে,সব আশা শেষ,হয়তো কথা বলার শক্তিটকু ও নাই তাই লামিয়ার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে, “ঠিক আছে আমি এখন আসি” বলেই হাটা আরম্ভ করলো রিফাত,ঠিক তখনই পেছন থেকে লামিয়ার “এই দাড়াও” কথাটা শুনে আবার পিছে ফিরে আসে রিফাত”
~ রিফাতের দিকে এক অদ্ভুত চাহনীতে তাকিয়ে লামিয়া, “একটা উপায় কিন্তু আছে”
~ সব শেষ, অনেক হতাশা,এর মাঝে ও একটু শান্তি খোজার আশায় লামিয়ার দিকে তাকিয়ে রিফাত, “কি উপায়”
~ বড় বড় চোঁখ করে রিফাতের দিকে তাকিয়ে লামিয়া, “আমাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করতে পারবা”?
~ লামিয়ার মুখ থেকে কথাটা শুনে অন্য সময় হলে হেঁসে উড়িয়ে দিতো রিফাত ব্যাপারটা,যেখানে প্রেম করার কোন ইচ্ছা ছিলো না সেখানে পালানোর মতো একটা ব্যাপার,, হ্যা,রিফাত নিজে ও জানে এখন তার হাঁসার মতো অবস্থা ও নাই,তার উপর আবার মনে পড়লো তাকে বলা নিশির সেই “যোগ্যতা নাই” নামক জঘন্য কথাটা,এর উপর আবার রিফাত ভাবছে ভেজালের যুগে লামিয়ার মতো একটা মেয়ে পাওয়া অসম্ভব,সব ভাবতে ভাবতেই লামিয়ার দিকে তাকিয়ে রিফাত বলে উঠলো, “হ্যা আমি রাজি”
~ নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না লামিয়া,স্বপ্নের মানুষটি একটা সময় হারিয়ে যেয়ে আবার ফিরে আসবে এটা ভাবতে পারছে না সে,যদি ও বিশ্বাস ছিলো তার ভালোবাসার প্রতি, “ঠিক আছে কবে পালাবা বলো,আমার হাতে সময় আছে মাত্র কয়েকদিন”
~ লামিয়াকে আর কিছুতেই হারাতে চাইনা এমনটা ভেবে লামিয়ার দিকে তাকিয়ে রিফাত, “কালকে”
~ এতো দ্রুত? ভাবতে পারছে না কি করবে লামিয়া,,একটু ভয় লাগছে তার,কিন্তু ভয় পেলে হবে না ভেবে রিফাতের দিকে তাকিয়ে লামিয়া, “তুমি চাইলে আমি আজ ও পালাতে রাজি”
~ তার উপর লামিয়ার এরকম বিশ্বাস আছে দেখে বেশ খুশি হয়ে সামনে থাকা লামিয়ার দিকে তাকিয়ে, “আজ না কাল”
~ রিফাতের কোন কথাতে আর কথা বলতে চাচ্ছে না লামিয়া,কারণ আর কিছুতেই সে তার জীবন থেকে রিফাতকে হারাতে চাচ্ছে না, “আচ্ছা আমরা পালিয়ে বিয়ে করে কতোদিন বাহিরে থাকবো”?
~ লামিয়ার দিকে তাকিয়ে রিফাত, “আমি যদি তোমাকে বিয়ে করে সোজা আমার বাসায় নিয়ে যায় তাতে ও কিছু না,আমার আব্বু আম্মু বরং তাতে আরো খুশি হবে”
~ লামিয়া জানে তারা পালালে দুপরিবারে তেমন কোন ঝামেলা ছাড়ায় তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিবে,কিন্তু তার অনেক ইচ্ছা ছিলো রিফাতকে নিয়ে পালানোর,আর এই সুযোগে সেটা কাজে লাগাতেই হবে না হলে সারাজীবনের আফসোস থেকে যাবে, “না আমার অনেক ইচ্ছা সিলেট যাবো তা ও তোমাকে নিয়ে,পালিয়ে আমরা সেখানে যেয়ে ৪/৫ দিন থাকি,যদি তুমি চাও”
~ লামিয়ার সব কথা খুব গভীর মনোভাবে শুনলো রিফাত,তার দিকে তাকিয়ে হেঁসে “আচ্ছা তুমি যা বলছো তাইই হবে”
,
সব কিছু ঠিক ঠাক ভাবে করে পরের দিন পালিয়ে বিয়ে করেছে রিফাত আর লামিয়া,
,
বিয়ের প্রথম রাত, মানে আজ তাদের স্বপ্নের বাসর রাত,পালিয়ে বিয়ে হলে ও রিফাত লামিয়াকে শাড়ি কিনে দিয়েছে আর সেটা পড়েই লামিয়া এখম রিফাতের সামনে,নীল শাড়িতে মেকাপহীন লামিয়াকে পৃথীর সব থেকে সুন্দর মেয়ে মনে হচ্ছে রিফাতের কাছে,আর লামিয়াকে সুন্দর না ভাবার কোন কারণ নেই, সে তো সত্যিই সুন্দর, লামিয়ার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছে রিফাত,হঠাৎ করেই রিফাত কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে,বুঝতে বাকি রইলো না যে তার সামনে বসে থাকা লামিয়াই কাঁদছে, রিফাত ভাবছে “হয়তো আব্বু আম্মুর কথা মনে পড়েছে তাই কাঁদছে” রিফাতের ভাবা শেষ হবার আগেই লামিয়া তাকে জরিয়ে ধরে হাও মাও করে কাঁদতে শুরু করলো,লামিয়ার মাথা বুকে নিয়ে পিঠে হাত রেখে রিফাত তাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছে ঠিক এরকম সময় লামিয়া আরো জোরে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে রিফাতকে,
~ লামিয়া- রিফাতের দিকে তাকিয়ে লামিয়া “আমি একটা মিথ্যা বলেছি তোমাকে,আর মিথ্যাটা আমি তোমার জন্যই বলেছি যাতে তোমাকে আর হারাতে না হয়,রিফাত এক সপ্তাহ পড়ে আমার বিয়ে ছিলো না,আমার কারো সাথে বিয়ে ঠিক হয়নি,হ্যা আমার বাসা থেকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি বার বার না করে দিয়েছি শুধু তোমার আসায়,আর বিয়ের এই মিথ্যা কথাটা বলেছি যাতে করে কোন ভাবেই আর তোমাকে হারাতে না হয়” হাপিয়ে হাপিয়ে কথা গুলি বলছিলো আর কাঁদছিলো লামিয়া
~ রিফাত- লামিয়ার মাথা ধরে, তার চোঁখের পানি মুছে দিয়ে, কপালে একটা চুমু দিয়ে আবার লামিয়াকে বুকে জরিয়ে নিয়ে, “তুমি যা করেছো ভালোই করেছো,তোমাকে না পেয়ে অন্যো কাউকে পেলে এ জীবনে অনেক বড় ভুল হয়ে যেতো আমার,আমি সব পেলে ও একটা তুমি পেতাম না”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত