যখন তখন এতো ফোন করো কেনো তুমি?। “এভাবে কেউ কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে?। “আমি বলি, সমস্যা?। “হ্যা, কেনো বলো?। “আমার ইচ্ছে হয় তাই বলি। “ঠিক আছে কালকে সকালে দেখা হলে জেনে নিবো।
,
কলটা কেটে ফোনটা বন্ধ করে রেখে দিলো আলভি। জেনিয়া দেখতে সুন্দরী হলেও একটা কারনেই আলভি মেয়েটাকে লাইক করেনা। সেটা হলো জেনিয়া নেশাগ্রস্ত। এমনিতেই তার রিলেশান করার ইচ্ছে নেই। আবার এমন মেয়ের সাথে তো নয়ই।
,
জেনিয়া কিছু দিন পর পরই ফোন করে আলভি কে। যথেষ্ট বিরক্ত হয় সে। কারন সে সহ্য করতে পারেনা জেনিয়া কে। মেয়েটা নেশাগ্রস্থ বলে মাঝে মাঝে খুবই রাফ ব্যবহার করে আবার নেশা কেটে গেলে ভালো ভাবে কথা বলে, আবার সরি বলতে বলতে শেষ হয়ে যায় প্রায়। কিছু কিছু সময় আবার আলভি কে ব্লাকমেইল করারও চেষ্টা করে। সেজন্য জেনিয়ার থেকে যতদুরে থাকতে চায় অথচ কোনো না কোনো ভাবে জেনিয়া তার সাথে যোগাযোগ রাখবেই।
,
সেদিনও নেশাগ্রস্থ ভাবে আলভি কে ইচ্ছে মত যা নয় তা বলে। তাই সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় ফোনের সিম কার্ডই সে চেন্জ করে ফেলে। অথচ ল্যাপটপ দিয়ে যখন সে ফেসবুকে লগইন করে তখন জেনিয়া মেসেজের মাধ্যমে ব্লাকমেইল করে যে বাসায় চলে আসবে। তাই আবার সিম কার্ড লাগিয়ে ফোন অন করে। জেনিয়া কল করে।
,
“সিম কেনো অফ করো? তুমি কি ভাবছো আমি তোমাকে পাবোনা? সোজা তোমার বাসায় উঠে যাবো দেখি কিভাবে নামাও আমাকে”।
“প্লিজ তুমি আমাকে এসব বলে টেনশানে ফেলো না, আমি মাফ চাই তোমার কাছে। ছেড়ে দাও আমাকে”
“ছেড়ে দিবো মানে? তোকে আমি কখনোই ছাড়বোনা। আর কখনো ফোন দিলে কেটে দিবি না, ফোন বন্ধও রাখবিনা নয়ত তোর খবর আছে”
,
জেনিয়া’র এরকম ব্যবহার গুলো কখনোই ভালো লাগেনা আলভি’র। জেনিয়ার এরকম ব্লাকমেইলে’র কারনে পরবর্তীতে সে তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জেনেছে যে ওরা খুব রিচ। বাবা সারাদিন ব্যস্ত থাকে। বাড়িতে মা নেই কারন সে আরোও ৬ বছর পূর্বেও গত হয়েছে যখন জেনিয়া ক্লাস এইটে পড়তো। এরপর বাবার থেকে দুরত্ব বাড়তে থাকে। বেশির ভাগ সময়ই সে ব্যস্ত থাকতো নিজের কাজে। আর একাকীত্ব জেনিয়া কে নিয়ে যায় অন্য পথে। আর ধীরে ধীরে সে নেশাগ্রস্থ হতে থাকে তখন থেকে যখন এসএসসি তে জিপিএ ফাইভ পাওয়ার পরও তার বাবা তাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় অব্দি দেয়নি। জেনিয়ার সম্পর্কে সব কথাগুলো জানার পর জেনিয়ার প্রতি একটু দুর্বল হয়ে পরে আলভি। কিন্তু এমন একটি মেয়ের সাথে সে কিভাবে সম্পর্কে জড়াতে পারে। তাই জেনিয়া কে দেখা করতে বলে।
,
জেনিয়া’র প্রিয় কালো গাড়িটা পার্ক করে সে রেষ্টুরেন্টের ভেতরে এসে আলভি’র পাশে বসে। আলভি ইতস্তত ভাবে বলে, “তুমি পাশে বসলে কিভাবে কথা বলবো? সামনা সামনি বসো তাহলে বোঝাতে সুবিধা হবে”। জেনিয়া সামনের চেয়ারে বসে, দুজনের মধ্যে শুধু টেবিলটার দুরুত্ব।
,
“আমি খুব হ্যাপি আলভি তুমি আমাকে দেখা করতে বলেছো তাই”। “ওয়ান মিনিট, তুমি কি স্মোকিং করেছো?”। “হ্যা, কেনো?”। “জেনিয়া তোমার সাথে আমার সিরিয়াসলি কিছু কথা আছে। এখানে ডাকার কারন এটাই”। “শুনতেই তো এসেছি, বলো কি বলবে?”। “বলতে চাচ্ছিলাম যে, তুমি আমাকে আর ব্লাকমেইল করোনা। আমাকে আমার মত থাকতে দাও। আমার সাথে এমন করে তোমার তো কোনো লাভ নেই”। “হিহিহি, কি বললে? আলভি এই কথা শুনে প্রথমে রাগ হতো এখন হাসি পায়। একই কথা ছাড়া আর কিছু বলতে পারোনা? তোমার কি মনে হয় তুমি বললেই আমি শুনবো?”। “তারমানে তুমি আমার কোনো কথাই শুনবে না?”। “কেনো শুনবোনা, এসব কথা বাদে অন্য কিছু বলো? আচ্ছা বাদ দাও লাভ টাইপ কিছু বলো, ভালবাসি বলো”। “আমি কেনো বলবো তোমায়? আমি তোমাকে ভালবাসিনা। তুমি যদি আর সাধারন মেয়েগুলোর মত হতে তাহলে একশত বার বলতাম। কিন্তু তুমি কেনো এসব করো বলো আমায়? কেনো স্মোকিং করো? কেনো অন্যান্য বাজে নেশা করো। তুমি কি কখনো এসব ছাড়তে পারবে? কখনোই কি হবে তোমার দ্বারা?”। “আর যদি ছেড়ে দেই?”। “তাহলে সেদিন মন থেকে ভালবাসবো তোমায়”। “প্রমিজ করো?”। “হ্যা প্রমিজ”।
,
,
জেনিয়া প্রমিজ করেও সেই প্রমিজ রাখেনি। আবারও ফোন করে আলভি’র সাথে যা নয়ত তা ভাবে ব্যবহার করেছে। আলভি’র ইচ্ছে করেনা জেনিয়ার সাথে কথা বলতে তবুও তার ব্লাক মেইল সহ্য করতে হয়। ভীষন বিরক্ত হয়ে ওঠে সে। তার কথা, মেয়ে তুমি এসব ছেড়ে দাও ভাল ভাবে জীবন যাপন করো, ভালবাসবো তোমায়। অথচ জেনিয়া’র এত দিনের অভ্যাস সে কিছুতেই ছাড়তে পারছেনা। বাধ্য হয়ে এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যায় কারন পূর্বের বাসা টা জেনিয়া চিনে ফেলেছিলো। তবুও কিভাবে যেন বর্তমান ঠিকানাটাও পেয়ে গেছে।
,
রাতভর ফোন দিয়ে কথা বলবে সে, কখনো প্রেমের কথা তো কখনো আবার উল্টো পাল্টা রাফ ব্যবহার করতে থাকে। নেশাগ্রস্থ হয়ে গেলে যা হয় আরকি। একদিন রাতে প্রায় ৯ টার দিকে ফোন দিয়ে নেশাগ্রস্থ ভাবে কথা বলতে শুরু করে। ব্লাকমেইল করে বাড়ির নিচে যেতে বলে। এইসময় বাইরে বের হয়না কখনোই আলভি। তবুও সে স্বীকার। গিয়ে দেখে জেনিয়া গাড়ির মধ্যে বসে ড্রিক্স করছে। আলভি কে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে ডাকতে থাকে। আলভি দ্রুত হেটে ডান হাত দিয়ে জেনিয়ার মুখ চেপে ধরে বলে, “কেউ শুনলে ভীষন প্রবলেম হয়ে যাবে, তুমি যাও, ড্রাইভার ভাইয়া আপনার ম্যাডাম কে বাড়িতে নিয়ে যান”। জেনিয়া আলভি হাত ধরে রেখে জোর করে তাকে বাড়িতে দিয়ে আসার জন্য। যেতে না চাইলেও জেনিয়ার পদ্ধতি রয়েছেই। বাধ্য হয়ে ব্যাক সিটে বসে পড়ে আলভি। ড্রাইভার গাড়িটা চালিয়ে যাচ্ছে। আর জেনিয়া, আলভি’র কোলে মাথা রেখে শুয়ে একাই বকবক করতে থাকে, “তোমার মত কেউ ভালবাসে না আমাকে, কেউ সময় দিতে চায়না আমার। সবাই খুব ব্যস্ত আমার আম্মু থাকলে তোমার সাথে কথা বলিয়ে দিতাম আব্বু তো সারাদিন ব্যস্ত থাকে”। আলভি জেনিয়া’র চুলে হাত বুলিয়ে বলে, “তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো”। দাড়োয়ান বড় গেট টা খুলে দেয়, গাড়িটা বাড়ির ভেতরে ঢোকে। আলভি জেনিয়া কে ধরে গাড়ি থেকে বের করে। ড্রাইভার জেনিয়ার কেয়ার টেকার মহিলা কে ডেকে নিয়ে আসে। আলভি কেয়ারটেকার মহিলা’র কাছে জেনিয়া দিয়ে চলে আসতে চায়। কিন্তু জেনিয়া হাতটা ধরে রাখে। মহিলাটি বাড়ির ভেতরে যেতে আমন্ত্রন জানায়। নয়ত জেনিয়া যাচ্ছেনা।
,
দুজন মিলে ধরে জেনিয়া কে তার রুমে শুইয়ে দেয়। মহিলা টি বেড়িয়ে চলে যায়। আলভিও চলে আসবে জেনিয়া আসতে দেয়না। “তুমি যেওনা, আমার কিছু হয়নি। শুধু একটু ঝিমঝিম লাগছে। জানো আলভি, আজ আমার আম্মুর জন্মদিন, আম্মুকে খুব মনে পড়ছিলো তাই একটু ড্রিক্স করে ফেলছি কি করবো বলো, খুব কষ্ট হচ্ছিলো”। জেনিয়ার ওপরে রাগ না করে তার বাবার ওপরে ভীষন রাগ হয় আলভি’র। ভাবতে থাকে উনি কেমন মানুষ যে তার মেয়েকে সঙ্গ দিতে পারেনা। অথচ আমার বাবা আমাকে কত ভালবাসে। পাশে বসিয়ে ভাল মন্দ বোঝায়, অনেক গল্প করে। কখনো কখনো সবাই কোথাও বেড়াতে যায়। অথচ জেনিয়ার বাবা, উনি কেমন বাবা!
,
“তুমি আমার ওপরে রাগ কেনো করো আমি তা জানি। কিন্তু কি করবো বলো? আমার যে খুব কষ্ট হয়। তাই এসব করি। আর তোমার সাথে যখন কথা বলি তখন আমি সব কিছুকে ভুলে যেতে চেষ্টা করি। এমনকি কিছু সময়ের জন্য এসব মনেও থাকেনা। অথচ তুমি কথা বলতেও চাওনা।
,
আলভি’র চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পরে। জেনিয়ার চুলে বিলি কেটে বলে, “এখন থেকে তুমি যখন চাইবে তখনই কথা বলবো। তুমি একা নও। এখন একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো”। “আমি ঘুমালে তুমি যেওনা কিন্তু”। “যাবোনা”। জেনিয়া ঘুমানোর চেষ্টা করে। অনেকক্ষন হয়ে গেছে আলভি এসেছে, এবার চলে যাওয়া উচিত। ড্রাইভার আলভি কে দিয়ে আসে। ফেরার পথে প্রতিটা মুহুর্ত আলভি শুধু জেনিয়ার কথা ভেবে চোখের অশ্রু ঝড়িয়েছে। তার নিজস্ব কিছু কষ্ট রয়েছে কিন্তু তার থেকেও জেনিয়ার কষ্ট গুলোতে তার বুকটা আরো বেশি ভারী হয়ে যাচ্ছে.. ক্রমশ। এতোটা কষ্ট হয়ত মানুৃষের থাকতে নেই…নয়ত কষ্ট গুলো প্রতি নিয়ত যন্ত্রনা দিতেই থাকে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা