জুনিয়র ছেলেটি

জুনিয়র ছেলেটি

ভোর হতেই আমাদের বাসার সামনের রাস্তাই স্কুল কলেজের অনেক ছেলে-মেয়ে দেখা যায়।আশে-পাশেই অনেক স্যার কোচিং,প্রাইভেট পড়ান। সে সুবাধে সকালে বা বিকেলে বেড়লেই অনেকের সাথে দেখা হয়।বিকেলের তুলনাই সকালে ছেলে-মেয়েদের আনাগোনা বেশি।
.
আমার তখন সামনে এস.এস.সি পরীক্ষা। পড়ার অনেক চাপ। সকাল-বিকেল প্রাইভেট।হঠাৎ একদিন বিকেলে পড়ে আসতে বাসার কাছাকাছি একটা ছেলেকে দেখলাম।ছেলেটার কাঁধে ব্যাগ দেখে বু্ঝা যায়, পড়তে এসেছিল কোন স্যাররের কাছে।এ পাড়াই নতুন পড়তে আসছে। আরও দু’জন ছেলের সাথে । বাসায় গিয়ে আর কিছু মনে হয় নি। স্বাভাবিক ভাবে ছিলাম।
.
ছেলেটাকে মাঝে মাঝেই দেখতাম। অদ্ভুত বিষয় হল ছেলেটার চোখ দু’টো আমার দারুন লাগতো। ছেলেটা দেখতে আহামরি সুন্দর তা নই। রংটা স্যামবর্ণ,লম্বাস্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে দু’হাত বাড়িয় চাইলেই কি পাওয়া যায় ? নিরবে দূরে থেকেও কাছে এসে সব কিছুকি খুঁজে নেওয়া যায় ? , হালকা শরীর, যাকে বলে চিকন। হালকা শরীরের জন্য আরও লম্বা দেখা যায়। কিন্তু চোখে কিছু একটা আলাদা আছে। ছেলেদের চোখ সাধারণত এমন হয় না।
.
মায়া ? না, না মায়া নই। আকর্ষণ? না, না সেটাও না। তবে কিছু একটা আছে। পাপড়িগুলো বড়ো বড়ো। কালো গভীর দু’টো চোখ। এটা বুঝেছিলাম, চোখের সাথে ছেলেটার হাসি বেশ মানাই। ভাতের সাথে ডাল যেভাবে মিশে যায়। ঠিক যেন হাসিও তেমন চোখের মাঝে মিশে যায়। এমন চোখ আমি আর কারো দেখি নি। যে চোখে ডুব দেওয়া যায়, যে চোখ দেখে খুব কাছাকাছি আশা যায়। এ যেন চোখ নই, অন্ধকার কালো মায়া।
.
ছেলেটাকে আমার ভালো লাগতে শুরু করে । একটা অন্য রকম অনুভূতি তৈরি হয় । নতুন একটা আশার প্রদীপ টিপটিপ করে জ্বলতে থাকে। স্বচ্ছজলের মতো উজ্জ্বল নই সেই আলো। কিছু দিন পর জ্বলটা আরো ঘোলাটে হয়ে গেল। এক বন্ধুর সাথে কথাই কথাই জানতে পারলাম, ছেলেটা নতুন দশম শ্রেণীতে উঠেছে। আমার এক বছরের জুনিয়র। ছেলেটার নাম তপু ।
.
আমার খালাতো বোন বাসায় এলো শুনে সে কি হাসি ! বললো, শেষ পর্যন্ত এক বছরের ছোট ছেলেকে তোর ভালো লাগলো। নদী তোর আশাই তো চোরাবালি,যেখানে শুধু ডুবা যায়। উঠা মুসকিল। তুই তো মরেছিস। বললাম শোন, তপু যদি আমার ছোট না হতো ! আমি নিজে ওকে প্রপোজ করতাম।
তপুর সাথে আমি প্রেম করতামই।
.
পরের দিন যখন খালাতো বোন তপুকে দেখলো, ও নিজেই মুদ্ধ ঐ দু’টি চোখ দেখে । কিরে বিশ্বাস হলো ?
বললো, কি চোখ রে ! যেন আকর্ষণ করা এক চম্বুক। আসলেই ছেলেটার চোখ সুন্দর। আমি বললাম, নজর দিস না। থাম এবার।
.
পরীক্ষার জন্য বাইরে প্রাইভেট পড়তে যায় না। তাই তপুকে আর দেখতে পারি না। দেখা হয় না ! পরীক্ষা শেষ হলো । বাসা পাল্টানোর কথা । পরীক্ষা শেষ হবার অপেক্ষায় সবাই ছিল। খোকসা ছেড়ে আমাদের চলে আসতে হলো । ছেলেটার সাথে আমার আর দেখা হয় নি। আজ অনেক দিন পর মনে পরে গেল সেই গল্পটা। স্মৃতির পাতায় মিশে আসে ।
.
কখুনো বলা হয়নি, এই ছেলে তোমার চোখ জোড়া আমার ভিষণ ভালো লাগে ! তুমি কি আমার বন্ধু হবে !
তোমার জন্য যে আমার মনে আলাদা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত