ভালবাসার গল্প- ছায়াপরী

ভালবাসার গল্প- ছায়াপরী

আজ অফিসের প্রথম দিন।অনেক কষ্টের পরে চাকরিটা হল।তবে অনেকটা ভাগ্যের সহায়তা ও পেয়েছি।সকাল ৯ টা থেকে অফিস শুরু।রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
-কিছু ফেলে যাচ্ছ না তো?
-ওপস। ফোন টাই তো ফেলে যাচ্ছি।
-থ্যাংকস।মনে করিয়ে দেবার জন্য।
..
প্রথম দিন তাই নির্দিষ্ট সময়ের একটু আগেই এলাম অফিসে।শুনেছি আমাদের অফিেসর এমডি হলো মহিলা।উনার সাথে একবার দেখা করা দরকার……
-মে আই কাম ইন ম্যাম?
-ইয়েস।
-তু-তু-তুমি। মানে আপনি?
-হ্যা আমিই।সারপ্রাইজট
া কেমন দিলাম?তুমি অবশ্যই আমাকে এখানে আশা কর নি তাই না?
-আসলে কি বলবো বুঝতে পারছি না।
-বলেছিলাম না পৃথিবীটা গোল।ভাগ্যটা কেমন দেখেছো আমরা যা না আশা করি আমাদের সাথে সেটাই হয়।
-তার মানে তুমি আগে থেকেই জানতে সব কিছু।
-অবশ্যই।তোমাকে এত সহযে হারাতে দেই কি করে বল।
-কিন্তু আমি এখানে সেটা তুমি জানলে কি ভাবে।
-তুমি তো বলেছিলে কয়েক মাস পর আমাদের দেখা না হলে আমি তোমাকে ভুলে যাবো।দেখ কয়েক মাস না কয়েক বছর হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো তোমাকে ভুলিনি।তুমি যত দূরেই থাক না কেন আমার দৃষ্টি থেকে কখনই দূরে যেতে পারনি।কখনও কি ভেবেছো তোমার প্রতি জন্মদিনে দেওয়া তোমার ছবি,ওই কাচের গোলাপ ফুল,সাগরপাড়ের মুক্তোর মালা, প্রতি জন্মদিনে তোমাকে ফোন করে আই লাভ ইউ বলা , এক্সিডেন্ট করার পর হাসপাতালে নেওয়া, তোমার হারিয়ে যাওয়া ফোন ফিরে পাওয়া, কিভাবে হয়েছে এত সব।
এখনও তোমার মনে হয় এগুলো আমার আবেগ?
-কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলেও বলতে নেই।
-তোমার মধ্যে দেখছি দার্শনিক ভাবটা এখনও যায়নি।
-সব কিছু তো আর পরিবর্তন করা যায়না।
-চলো সবার সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই।
-ওকে চল।

এতক্ষন যার সাথে কথা বলছিলাম ও নিশা।বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি কখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।আর ও তখন প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
একদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম।একটা মেয়ে দৌড়ে আমাদের দিকে আসলো তারপর
-আপনি নিশো তাই না?
-হ্যা,।কিন্তু আপনি কে?
-আমি নিশা। আমি আপনার জুনিয়র।প্রথম বর্ষে পড়ি।কাল প্রোগ্রামে আপনার গান শুনেছি।অনেক ভাল গান আপনি।
-তা আমার কাছে কি মনে করে?
-আই লাভ ইউ।
-কি??????
-আই লাভ ইউ বলেছি।শুনেতি পান নি?
-তোমার মাথা ঠিক আছে তো।
-হ্যা।।আছে।ওকে এখন আসি পরেএক সময় উত্তর জেনে নেব।বাই

নিশা অনেক সুন্দরি।এক কথায় চোখে ভয়ংকর সুন্দরি।তার উপর বড়োলোক বাবার একমাত্র মেয়ে।মেধাবি ছাত্রী।কিন্তু অন্য কাউকে ভালবাসতাম।
ও এমন করে বার বার আমাকে ওর ভালবাসার কথা বলতে।
-তোমাকে কত বার বলবো আমি অন্য কাউকে ভালবাসি।আর এটা তোমার আবেগ।কয়েকমাস পর তোমার এই আবেগ আর থাকবে না।তুমি আর কখনও আমার সামনে আসবে না।
-ওকে আসবো না।পৃথিবীটা গোল।সো একদিন তুমি নিজেই আমার সামনে আসবে।মাইন্ড ইট।

সত্যই পৃথিবীটা গোল।সো তুমি যাকে এক্সেপেক্ট করো একদিন তার সাথে তোমার দেখা হবেই।আজ নিশা সেটা প্রমান করলো।আজ সারাদিন আমি কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম।সব কিছু কেমন স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
অফিস শেষে নিশা আমার ডেক্সের সামনে আসলো
-বাসায় যাবে না?
-হ্যা যাবো।
-চল তোমাকে নামিয়ে দিবো।
-অন্য দিন যাবো।
-ওকে।
…..
রিক্সায় করে বাসায় আসছি।
.
-তুমি আবার কিছু একটা ভুলে যাচ্ছো।
-হুম মনে পড়েছে।দুইটা গোলাপ নিতে হবে।
থ্যাকস এগেইন।
.
চারিদিকে শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে।সন্ধ্যা নামতেই কুয়াশার আবির্ভাব।পরিবেশটা খারাপ না।তবে একটু শীতে কাপুনি লাগছে মাঝে মাঝে।
-এখন আসার সময় হলো তোমার?আমি এই শীতের মধ্যে সেই কখন থেকে বসে আছি।
-না আসলেই তো পারো এই শীতের মধ্যে
-হুম ঠিক।তাহলে তুমি আসছো কেন এই শীতের মধ্যে?
-কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে নেই
-কেন?
-কারন তুমি এই প্রশ্নের উত্তর জানো।
-কিন্তু তোমার মুখ থেকে শুনতে যে বড় ইচ্ছে হয়।
-সব ইচ্ছা তো আর পূরন হবার না।
– সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্য সম্ভব।
-শুধু সাধ্যের মধ্যেই থাকলেই তো হয় না।যদি তাই হতো তাহলে আজ আমাদের মধ্যে কি এত দূরত্ব কি থাকত?
-তা ঠিক।কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমারা শুধু দর্শকের ভূমিকায় থাকি।আসল খিলাডি তো ওই যে উপরে যিনি আছেন তিনি।
– তিনি ভাল কিছুর জন্যই এসব করেছেন।
আফিস কেমন কাটলো আজ।
-অনেকটা স্বপ্নের মত।নিশার সাথে দেখা হল আজ।
-মেয়েটা অনেক ভালবাসে তোমাকে।তোমার তাকে গ্রহন করা উচিত।
-আমার হৃদয় আগেই থেকেই তুমি আছো।
-কিন্তু এখন তো আমি নেই।আমার কোন অস্তিত্ব নেই এই পৃথিবীতে।
-কারো কাছে না থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে আছে।
-যদি সেটাও না থাকে তবে কি করবে?
-থাকবে। কেন থাকবে না? আমার অস্তিত্বের মাঝেই যে তুমি বিদ্যমান।
-কত দিন থাকবে এভাবে?
-জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
-আমার যাবার সময় হয়ে গেছে।
-চাইলেও তো আটকাতে পারবোনা।
-ভাল থেকো।বিদায়।
…..
সামিহা আমকে ছেড়ে গেছে আজ দুই বছর পূর্ন হল।প্রতি মৃত্যুবার্ষিকিতে আমি ওর কবরে আসি।কিন্তু আমি সবসময় আমার পাশে ওকে অনুভব করি।মনে হয় যেন আমার ঠিক পাশেই ও পা মিলিয়ে হাটছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত