দক্ষিণের জানালা খুলে ঘুমিয়ে আছি। রুমে একা একা থাকি,ভয় লাগে না। মাঝে মাঝে ভয় পাই, তখন পাশের রুমে গিয়ে আপুর পায়ের কাছে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকি। প্রতিদিনের মত আজও ঘুমিয়ে আছি,হঠাৎ নূপুরের আওয়াজ কানে আসলো। মাঝে মাঝে হাতের চূরির আওয়াজ আসছে কানে।
আমি – কে ওখানে?
– ———– কোনো কথার আওয়াজ আসছে না ওইপাশ থেকে।
আমি- আবার জিগ্যেস করলাম কে ওখানে?
– ——- এবার আওয়াজ আসলো, বললো আমি পেত্নী।
আমি- ওহ, তা কাকে চান?
পেত্নী – আপনাকে ( হেসে হেসে)
আমি – কেনো, ঘার মটকাবেন নাকি?
পেত্নী – নাহ, ভালবাসার উষ্ণ আদর দিবো।
আমি – পেত্নী কি আবার ভালবাসতে জানে নাকি?
পেত্নী – এতকথা বলতে পারবো না, পুকুরপাড়ে এসো।
আমি – ভয় লাগে, পেত্নী যদি ঘার মটকে দেয়।
পেত্নী – তুমি ঘর থেকে বের হয়ে আসবে নাকি আমি ঘরে গিয়ে তোমার ঘার মটকাবো।
আমি – ওরে বাপরে, পেত্নী রেগে গেছে, এবার ঘরে বসে থাকা যাবে না।
রুম থেকে বের হয়ে দেখি আব্বু ঘরের প্রধান দরজায় চেয়ার পেতে বসে আছে, আস্তে আস্তে গিয়ে দরজা খুললাম, আব্বু বুঝবে দূরের কথা, চুর যদি দরজা খুলা নিয়ে ডিগ্রী নেয় তারপরও আমার মত পারবে না, কারন এটা আমার দৈনিক কাজের মধ্যে এটা একটা কাজ। তো পুকুরপাড়ে গিয়ে দেখি পেত্নী মানে তাহমিনা বসে আছে,
আমি – কাশি দিলাম।
তাহমিনা – এতক্ষণে তেমার আসার সময় হল?
আমি – কি করবো বল? রুম থেকে বের হয়ে দেখি মেইন দরজা বন্ধ, দরজার পাশে একটা চেয়ার,চেয়ারে আব্বু বসে আছে, তারপর……….
. তাহমিনা আমার মুখ চেপে ধরলো।
তাহমিনা – চুপ,এজন্যই তোমাকে কথা বলার সুযোগ দেই না।
আমি – থাক আর কথা বলবনা, শুধু একটা কথা জিগ্যেস করবো, উত্তর দিবা?
তাহমিনা – বল।
আমি – আচ্ছা তুমি আমার কাছ থেকে লুকিয়ে থাকো কেনো?
তাহমিনা – কৈই, আমি সবসময় তোমার পাশে থাকি, তোমাকে নজরে নজরে রাখি,
আমি – মিথ্যা কথা, থামো কে যেন এদিকে আসছে।
তাহমিনা – আসুক, আমি কি কাউকে ভায় পাই নাকি?
বাবা – কিরে রনি, তুই একা একা পুকুরপাড়ে কি করিস?
আমি – কৈই, আমি একা নাতো, আমার সাথে তাহমিনা আছে।
বাবা – আর কত আমাকে জ্বালাবি?
এই বলে আব্বু আমাকে বাসার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
তাহমিনা তুমি এখান থেকে যেওনা, আমি আবার আসবো।
_______________
তাহমিনা আর আমার বাড়ী একই পাড়ায়, আমরা দুইজন একই ক্লাসে পড়তাম, দুইজনে একই সাথে স্কুলে যেতাম আবার একসাথে বাড়ী আসতাম, দুজন দুজনকে না দেখে একদিনও থাকতে পারতাম না, আমরা দুজন ভাল বন্ধু বললে ভুল হবে, সুখ- দুঃখে দুজন দুজনার পাশে থাকতাম, দেখতে দেখতে কখন যে বড় হয়ে গেছি নিজেরাও জানতাম না। দুজন S S C পরীক্ষা দিয়ে পাসও করলাম। একদিন বিকেল বেলা রুমে ঘুমিয়ে ছিলাম,কোথা থেকে আমার বন্ধু আরিফ এসে বললো তাহমিনা কে কয়েকজন লোক দেখতে এসেছে, আমি ততক্ষণাৎ দৌড় দিলাম তাহমিনার বাড়ীর দিকে,
আমি – হাপাতে হাপাতে, কিরে তোকে কয়েকজন লোক দেখতে এসেছিল?
তাহমিনা – হুম, এসেছিল।
আমি – তো, তুই কি বললি?
তাহমিনা – আমি কিছু বলিনি, সব তারাই বলেছে।
আমি – কি বলেছে? বলনা কি বলেছে?
তাহমিনা – বলবো?
আমি – বল? কি বলেছে। কিরে চুপ করে আছিস কেনো?
তাহমিনা – তারা আমাকে পছন্দ করেনি।
আমি – ( বাচলাম) কিছু না বলে বাড়িতে চলে আসলাম।
বাড়ী এসে আপুকে সব বললাম, আমার তো মা নেই, একটি শিশু কথা শিখার প্রথম শব্দ হচ্ছে মা,আমি সেই শব্দটা শিখার আগেই আমার মা ওপারে পাড়ি দিয়েছেন। তাই আমার মনের সব কথা আমার আপুর কাছে সেয়ার করি। তাহমিনাকে যে আমার ভালো লাগে সেটাও বলেছি। আমি আব্বু কে কিছু দরকার নাই, যা বলার আপুই বলবে।
আপুর সব কথা শুনে আব্বু রাজি হলেন। প্রস্তাব নিয়ে গেল তাহমিনার বাড়ী, কিন্তু তারা কন্যা দান করতে রাজি হলনা। বলবো তারা নাকি তাহমিনা কে অনেক বড় ঘরে বিয়ে দিবে।
আমি আব্বুর মুখে সব শুনে তাহমিনার বাড়ী গেলাম। তাহমিনার বাবা – মার হাতে পায়ে ধরে বললাম আমাকে কয়েকটা বছরের সুযোগ দিন,আমি আমার নিজের পায়ে দাড়িয়ে তাহমিনাকে আমার বাড়ী নিয়ে যাবো। তারা রাজি হলেন।
আমি – আব্বু আমি বিদেশ যাবো।
আব্বু – কেনো? তুই কেনো বিদেশ যাবি?
আপু – ভাই আমার কথা শুন, পাগলামি করিস না, বরং তুই তাহমিনা কে ভুলে যা, আমরা একটা মেয়ের জন্য তোকে হারাতে পারবো না,
আমি – আরে, আমি হারাবো কোথায়? জাষ্ট কয়েকটা বছর তোমাদের কে ছেড়ে দূরে থাকতে হবে এটাই তো।
আব্বু – তুই যা ভাল মনে করস কর, আমি কিছু বলবো না।
আমি – আব্বুর পায়ের পাশে বসে কেঁদে কেঁদে বললাম, আব্বু তুমি চাওনা তোমার ছেলে সুখে থাকুক? ভালো থাকুক?
শেষ মেস আব্বু রাজি হলেন।
– —————–
– সাত বছর পর বাড়ী আসলাম, সব কিছু কেমন যেন পাল্টে গেছে, চিনার কোনো সুযোগ নাই।
আমি – আপু, আমি তাহমিনা বাড়ী যাচ্ছি।
আপু – তাহমিনা আর নাই, এই বলে আপু কাঁদতে লাগলেন।
আমি – আপু, তুমি কাঁদছ কেনো?
আপু – তুই বিদেশ যাওয়া ১( এক) বছর পর তাহমিনার বিয়ে ঠিক হয় একটা ৪০ ( চল্লিশ) বছরের লোকের সাথে, সেই লোকের নাকি তাহমিনার সমান একটা মেয়ে আছে, তারা লোকটির বয়স দেখেনি, দেখেছে লোকটির টাকা – পয়সা। তাহমিনা বিয়ের আগে আমার কাছে অনেক বার এসেছিল, কিন্তু সেখানে আমার কিছু করার ছিলনা।
তাহমিনা তোর ভালবাসাকে অন্যের হাতে তুলে দেয়নি, সে বাসর রাতে বিষ খেয়ে আত্ম হত্যা করেছে।
( আপু শুধুই কেঁদেই চলেছে)
আপুর সব কথা শুনে যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। তারপর থেকে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি।
তাহমিনা মরে নি, তাহমিনা বেচে আছে আমার শরীরের শীরা- উপ শীরায়…………….
কত রাত যে জেগে জেগে কাটিয়েছি তার কোনো হিসাব নাই।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা