হায় প্রেম হায় ভালবাসা

হায় প্রেম হায় ভালবাসা

সি এন জি দিয়ে অামি অার অবনী বাসায় ফিরছি। সামনে পুলিশের চেকপোস্ট। অবনী একটুও ভয় পাচ্ছেনা। মহিলা মেম্বারের মেয়ে অবনী।

অামার চেয়ে তার সাহসটা বরাবরই বেশী। অামি ক্ষানিকটা ভয় পেলাম। বাড়িতে জানতে পারলে অামাকে বাড়িতেই ঢুকতে দিবেনা।

তার উপর কাল চলে যাব দেশের বাইরে। এর মধ্যে যদি পুলিশের হয়রানির শিকার হই তাহলেতো অামার বিদেশ যাবার বারোটা বেজে যাবে।
.
— এই তোমাদের ব্যাগের মধ্যে কি?
পুলিশের এক সদস্য এমনভাবে প্রশ্ন করতেছে যেন অামরাই সন্দেহের অাসামি।
— কাপড়, কেনা কাটা করে ফিরলাম।
— সাথের এটা কে?
— দেখতেই পাচ্ছেন একটা মেয়ে।
— মেয়েতো বুঝলাম। তোমার কি হয়? পালিয়ে যাচ্ছ নাকি মেয়ে নিয়ে? এই বাইরে বেরিয়ে এসে কথা বলো। অামি পুরোই হতবাক পুলিশের ব্যবহারে।

কি জবাব দিব বা বাইরে বের হব কিনা বুঝতে পারছিনা। এর মধ্যে অবনী মুখ খুলল।
— অামরা পালাব কেন? সে বললনা অামরা কেনাকাটা করে ফিরেছি???
— এই মেয়ে তোমাকে কথা বলতে বলছি? তোমার বাড়ির নাম্বার দাও, দেখি কথা বলে তোমরা পালাচ্ছ কিনা।
অবনী সত্যি সত্যি নাম্বার দিয়ে দিল। অামার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ পকেট থেকে ফোন বের করে নাম্বার তুলে ডায়াল করল। রিং হচ্ছে। অামার মনে হচ্ছে অামি কিছুটা ঘামতেছি। কোন বিষয় নিয়ে চিন্তায় পড়লে অামার এমন হয়।
.
পুলিশ অবনীর মায়ের সাথে কি কথা বলেছে সঠিক বুঝতে পারিনি। শুধু কাছে এসে বলল,
— দেখুন অাপনারা বাইরে ঘুরাফিরা করেন, অামরা নিরাপত্তা দেই।
অামাদেরতো রাস্তাঘাটে কত খরচ। হাত খরচের টাকা দিয়ে যান।
মনে মনে ভাবতেছি ভিক্ষার টাকাটা প্রথমে চাইলেই হত এত কাহিনীর কি দরকার হল? আমি দুইশত টাকা বাড়িয়ে দিলাম।
— কত দিলেন? এই টাকাতো এক প্যাক সিগারেট কিনলেই শেষ
হয়ে যাবে।
অবণী তার ব্যাগ থেকে পাঁচশত টাকার একটি নোট বের করে দিয়ে অামাকে বলল, “তোমারটা রাখো”
.
— সরাসরি তোমার মায়ের নাম্বার দিয়ে দিলে তোমার ভয় করেনি?
জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে অাছি অবনীর দিকে।
— ভয় পাবার কি হল? অামিতো মায়ের কাছে বলেই এসেছি।
— কি বলেছো???
—বলেছি শ্রাবণ কাল দেশের বাইরে চলে যাবে তার সাথে একটু মার্কেটে যাব।
— বলার পর অাসতে দিল?
— তো এখন কি তোমার পাশে অামার আত্মা বসে অাছে? অার বলে না অাসলে মায়ের সাথেতো পুলিশের লোকটি কথা বলল, তবুও বুঝোনি?
— বুঝেছি।
.
সিএনজি ভাড়া মিটিয়ে অবনীকে বিদায় জানানোর সময় নতুন বায়না ধরল অবনী।
— কাল তোমার সাথে যাব। তুমি বিমানে উঠার সময় চলে অাসব। যদি তোমার বউ কিছু মনে না করে।
— লিনাতো সবকিছু জানেই। সে কিছু মনে করবেনা। কিন্তু তোমার মা অাসতে দিবে?
— সেটা অামি দেখব।
— তোমার স্বামী যদি জানতে পারে?
— অামি কি তাকে ভয় পাই নাকি?
— অাচ্ছা, বিকাল তিটায় বের হব। সন্ধা সাতটায় ফ্লাইট।
ইমেগ্রেশনে দুই আড়াই ঘন্টা অাগে ঢুকতে হবে।
—অামি সঠিক সময়ে তোমাদের বাড়ি চলে অাসব। আন্টিকে অার শিমুকে বলে রাখিও। তোমার বউকেও বলতে ভুলোনা।
— অাচ্ছা, বাড়ি যাও তাহলে।
.
অামি জানি অবনী এখনো অামাকে অনেক ভালবাসে। অবনীর স্বামী বয়সে অবনীর থেকে ষোল বছরের বড়। অামি জানি অবনী সুখে নেই।

তার মা বড়লোক স্বামী পেয়ে হাতছাড়া করেনি। তাইতো অবনীর বড় বোনকে রেখে অবনীকে বিয়ে দিয়েছিল।
বিয়ে দেবার অারেক কারন অবশ্য অামি। তবে অামি অবনীর বিয়ের তিন মাস পর বিয়ে করেছি। অবনীর বিয়ে হয়েছিল নভেম্বরে।

আমি বিয়ে করেছি এর পরের বছর ফেব্রুয়ারীতে। অবনী এখনো অামাকে প্রায়ই ফোন করে কথা বলে। কতবার বলেছি এখন স্বামী হয়েছে সংসার হয়েছে।
এখন যোগাযোগ করলে তোমার সংসার ভাঙ্গবে। জবাবে অবনী বলেছিল, “কিছুই হবেনা। বাসর রাতেই অামি অামার স্বামীকে বলে দিয়েছি।

বিয়ে করেছেন অামার দেহটাই পাবেন শুধু। অামার মন পাবার অাশা করা বোকার কাজ ছাড়া কিছুইনা। যাকে ভালবাসতাম তাকেই সারাজীবন ভালবাসব”।
অবনীর স্বামী হয়তো ভেবেছিল কিছুদিন গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু অবনীর একটি ছেলে হল। সংসার জীবনের চার বছর কেটে গেল। অথচ অবনী এখনো অামাকেই ভালবাসে।
.
শিমুকে ডেকে এনে বললাম, “মা’কে একটু বুঝিয়ে বলিস কাল অবনী অামাদের সাথে যাবে। ”
— সত্যি অবনী যাবে ভাইয়া? অবনী বাবার বাড়িতে অাসল অথচ অামার সাথে দেখা করলনা।
— আজইতো অাসল। অার কালতো অাসবেই।
— মা রাজী হবে। কিন্তু বাবা যদি কিছু বলে?
— বাবাকে মা বুঝিয়ে বলবে।
.
লিনা বিছানায় বসা। তার মনটা অনেক খারাপ বুঝতেছি। অামি বিদেশ যাই এটা সে চায়নি। কিন্তু তার বড় ভাই যখন অামাকে ভিসা দিল।

বুঝতে পারল তার বড় ভাইয়ের সাথেই থাকব। তাই অার অমত করেনি।
— লিনা। অবনী কাল অামাদের সাথে যাবে।
অামার দিকে তাকিয়ে লিনা একটু হাসার চেষ্টা করল। তারপর বলল
— অবনী যাবে সেটাতো ভাল কথা। অবনী এখানে এসেছে?
— হ্যাঁ, মার্কেটে গিয়েছিল অামার সাথে। অামার ছেলে কোথায়?
— সবসময় তোমার ছেলে তোমার ছেলে করো কেন?
ছেলে কি তোমার একার? মারুফ তার দাদীর কাছে।
— হইছে। মারুফকে নতুন কাপড় পড়িয়ে দিও কালকে।
.
অবনী অার শিমু গাড়ীতে উঠে বসে অাছে। অনেকদিন পর দুই বান্ধবী একসাথে হল। বাবা অামার পাশে এসে দাড়াল।
— অবনী যাবে ভাল কথা। লিনার সামনে অবনীর সাথে বেশী কথা বলবিনা। কিছু না বললেও লিনা কিন্তু মনে মনে কষ্ট পাবে।
— অাচ্ছা। তুমি যাবেনা বাবা?
— না, তোর বড় দুলা ভাই যাচ্ছে। সেখানে এত মানুষের জটলা পাকানোর দরকার নেই।
.
অামার ছেলেটার কপালে চুমো দিলাম। শিমুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছি । শামীমকে কান্না করতে মানা করলাম। একটা মাত্র ভাই অামার।
লিনার কাছে গিয়েছি, তার চোখটা ছলছল করছে।
— মন খারাপ করোনা। অামি গিয়েই ফোন করব। অার তোমমার ভাইতো সেখানে অাছেই। মারুফকে ধরো, দেরী হয়ে যাচ্ছে।
লিনার কোলে মারুফকে দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম, সাথে অবনী।
.
অবনী অামার পাশে বসে অাছে। বুকিংয়ে মালামাল সব দিয়ে দিলাম।
পাসপোর্ট অার টিকেট অামার হাতে। অবনী মাথা নিচু করে অাছে।
— অবনী মন খারাপ করোনা।
— তুমি ফোন দিবেতো? নাকি লুকিয়ে যাবে অামার কাছ থেকে?
— না ফোন দিব। তবে এখন তুমি চলে যাও। লিনাসহ সবাই বাইরে।
তোমরা বাড়ি চলে যাও।
— ভাল থেকো।
অবনী ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিল। এখন খুব একা লাগতেছে। এই প্রথম বুঝতেছি প্রিয়জনদের ছেড়ে দেশের বাইরে যাওয়াটা কত কষ্টের।
.
বিমান অাকাশে উড়তেছে। অবনীর কথা খুব করে মনে পড়ছে।
অবনী অামার সাথে অাসাতে লিনা কষ্ট পায়নিতো? মনে হয় পাবেনা। লিনাওতো অামার অার অবনীর প্রেমের পিয়ন ছিল।
.
মাঝপুকুরে সাতার কাটার সময় মেয়েটি অামাকে ঢিল দিয়ে গাছের অাড়ালে লুকিয়ে পড়ল। অল্পের জন্য গায়ে পড়েনি। কিনারায় অাসতে অাসতে অারো দুটি ঢিল ছুঁড়ল মেয়েটি।

পুকুর থেকে উঠার অাগেই মেয়েটি পালিয়ে গিয়েছে। কত অার বয়স হবে তখন? অামি কেবল ক্লাস সিক্সে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা দিয়েছিলাম।
.
অাসরের নামাজ পড়েছি মসজিদে। বাড়িতে এসে একটু অবাক হলাম। যে মেয়েটি অামাকে ঢিল ছুঁড়েছিল সে মায়ের কাছে।

মা টাকা ভাঙ্গতি করে দেয়ার পর অামার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল।
— মা, এই মেয়েটা কে? অামাদের বাড়িতে কি?
— মেম্বারনীর মাইয়া, টাকা ভাঙ্গতি নিতে অাসছে। শিমুর সাথে একই ক্লাসে পড়ে।
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ভাবতেছি। শিমুর ক্লাসে যেহেতু পড়ে তাহলে মাত্র ফোরে। কিন্তু দেখতে অামার মতই বড় দেখা যায়।
.
শিমুর মুখের ডাক শুনে জানতে পারি মেয়েটির নাম অবনী।
অামাদের বাড়িতে প্রতিদিনই অাসত। অবনীর সাথে ছোট ছোট হাড়ি পাতিল দিয়ে খেলত। কিন্তু দৈনিক যদি অামাকে একটা ভেংচি না দিত তাহলে মনে হয় অবনীর পেটের ভাত হজম হতনা।
অামি কিছুই বলতামনা। কৈশোরের ছায়া অামার মধ্যে। চোখে সবকিছুই রঙ্গিন লাগে। দুষ্টু বন্ধুদের সাথে স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলে যেতাম দূর দূরান্তে। কত পিটুনি খেয়েছি বাবা মায়ের হাতে।
তবুও দুরন্তপানা ছাড়তে পারিনি। কখনো বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যেত। অনেকদিন দেখতাম রাতেও অবনী শিমুর সাথে বসে পড়ছে বা মজা করছে। রাতে অবনীর মা এসে ডেকে নিয়ে যেত। এলাকার মেম্বার অবনীর মা। সারাদিনই ব্যাস্ত থাকেন। অবনীর বাবা কাজ করে রেজেস্ট্রি অফিসে। স্কুল ছুটির পর থেকে প্রায় বাকিটা সময় অবনী অামাদের বাড়িতেই কাটাত।

মাঝে মধ্যে যদি বাইরে বের না হতাম তখন অবনী অামার রুমে এসে হলেও একটা মুখ ভেংচি দিয়ে যাবে। এভাবেইতো কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো।
.
ক্লাস এইটে নিছক কারণেই পড়ালেখা ছেড়ে দেই অামি। বাজারে অামাদের তিনটি দোকান অাছে একটিতে বাবা বসেন। অার বাকি দুটি কর্মচারী চালায়।

লেখাপড়া ছাড়ার পর থেকে দিনের বারোটা পর্যন্ত আমি একটি দোকানে বসতাম। তারপর বাড়ি ফিরে অাবার সেই দুরন্তপনা। কিন্তু বেশীদিন কাটেনি অার দুরন্তপনায়।
অামি একটি মোহে অাকৃষ্ট হতে লাগলাম। অবনী যখন অামাকে ভেংচি কাটত অামিও সাথে সাথে দুটি ভেংচি কাটতাম।
.
অবনী অার অামি মেঠো পথ ধরে হাটতেছি। ঘন্টাখানেক অাগে বাড়িতে থাকতে অবনী হঠাৎই অামার কাছে গেল.
— শুধু ভেংচি দিবেন? কথা বলবেননা অামার সাথে?
— তুমিতো দুই তিন বছর ধরে ভেংচি দিচ্ছ অামাকে। কই অামিতো কিছু বলিনি তোমাকে।
—সেটা বলিনিতো, বলতেছি ভেংচিই দিবেন শুধু? কথা বলবেননা?
— তো এখন কি করতেছি?
— ধ্যাৎ, চলেন হেটে অাসি।
—কই যাব?
—রাস্তা দিয়ে হাটব।
হাটতেছি দুজনে কিন্তু মনে একটা ভয়। না জানি অবনীর মা দেখে ফেলে। অবনী অবশ্য বলেছে তার মা সন্ধার অাগে ফিরবেনা।
সন্ধার অাগে বাড়ি ফিরে দেখি শিমু গাল ফুলিয়ে অাছে কেন তাকে নিয়ে গেলামনা।
.
. অবনী তখন নাইনে পড়ে। মোটামোটি বড়লোকের মেয়ে ছিল অবনী। যে সময় বাচ্চাদের তার বাবা মা দুই টাকা করে টিফিন খরচ দিত।

সেই সময়ে অবনীর দৈনিক হাত খরচ ছিল একশত টাকা। বারো টাকা করে মিমি চকলেট বিক্রি করত। মিমি চকলেট, চকবার অাইসক্রীম কিনে নিয়ে অাসত অামাদের বাড়িতে।

শিমুকে দিত, অামাকে খেতে বলত। অামি বলতাম অামার কাছে টাকা অাছে অামি কিনে খেতে পারব।
যদি না করতাম তখনই মন খারাপ করে থাকত। মনে হত সেই সময় অাকাশের সব মেঘ তার চেহারায় এসে ভীড় জমায়। যেকোন সময় বৃষ্টি ঝরবে।
.
একদিন হাসি মুখে দুষ্টুমির স্বরেই অবনী বলতেছে,
— অামার সাথে প্রেম করবেন? বিয়ে করতে হবেনা, শুধুই প্রেম।।
অামি সে কথার উত্তর ভেবে চিন্তে দিয়েছিলাম কিনা মনে নেই।
হুট করে বলেই দিলাম,
— এটা কোন ব্যাপার হল?
মনে মনে অবশ্য ভাবছিলাম এটাই ভাল হবে। বিয়ে শাদি করতে হবেনা, শুধু প্রেম করব।
.
মা অনেকটাই বুঝতে পারল। নাইনে পড়ুয়া একটি মেয়ের সারাদিন অামাদের বাড়িতে অাসা যাওয়াটা শুধুই শিমুর জন্য না।

অামার সাথে সারাদিন ঘুরা, দুষ্টুমি করা মায়ের নজর এড়াতে পারেনি। তেমন কিছু না বললেও ইশারা ইঙ্গিতে ঠিকই বলত,
” শ্রাবণ, এমন কিছু করিসনা যা অামাদের মান সম্মান ডুবাবে” অামি ভাল মানুষ সেজে সাথে সাথেই জবাব দিতাম, “অামি অাবার কি করলাম? কার কাছে কি শুনছ? ”
শিমু জানত অামি অার অবনী দুজন প্রেমের চোরাবালিতে হাবুডুবু খাচ্ছি।
.
.
বিমান থেকে নেমে এয়ারপোর্টে লিনার ভাইকে খুঁজতেছি।
নতুন একটি দেশ, অচেনা সবকিছু। ক্ষানিকটা পরই লিনার ভাই লিমন ভাইকে খুঁজে পেলাম। মোটা হয়ে যাবার কারনে অামারই চিনতে সময় লেগেছিল। কোলাকোলি করে গাড়ীতে উঠলাম।

এক এক করে বাড়ি ঘরের সব খুঁজ খবর লিমন ভাইয়ের কাছ বলতেছি। অামার চোখে তখন রাজ্যের ঘুম। ইচ্ছে হচ্ছিল গাড়ীতেই ঘুমিয়ে পড়ি।
.
অাসার পরদিন বাড়িতে বাবার নাম্বারে ফোন দিয়েছিলাম। লিমন ভাই এই দেশের একটি সীম কার্ড অামাকে কিনে দিয়েছিল।
বাবা মা, শিমু শামীম, লিনা অার অামার অাদরের ছেলেটার সাথে কথা বলেছি। অনেকটা কষ্ট লাগছিল। দুদিনের ব্যবধানে অাজ হাজার হাজার মাইল দূরে অামি।

কথা বলার সময় জড়তা চলে অাসছিল। অবনীকে একটা ফোন দেয়া প্রয়োজন। অাসার সময় বলেছিলাম পৌছেই ফোন দেব।
.
—হ্যালো কে?
—অামি শ্রাবণ, কিন্তু অাপনি কে?
— ও শ্রাবণ কেমন অাছো? অবনীর মুখে তোমার কথা শুনেছি।
তোমার নাকি ছেলে হয়েছে সে কেমন অাছে?
— অাছে ভাল অাছে। অাসলে গতকাল অামি বাহরাইন এসে পৌছেছি,
তাই ভাবলাম অবনীকে জানাই।
— ও অবনী ফোন চার্জে রেখে বাইরে গেছে। অাসলে অামি জানিয়ে দেব।
ফোন রেখে দিয়ে ভাবতেছি অবনীর স্বামীতো অনেক ভাল। অবনী আমার কথা তার স্বামীকে বলার পরও অবনীকে নিয়ে ঘর করতেছে। অামার সাথে এত সুন্দর ব্যবহার করল।
ভাবতেই অবাক লাগে। নাকি ব্যাটা ভাবতেছে অামিও বিয়ে করে ফেলেছি, বাচ্চা অাছে। তাই সবকিছুই স্বাভাবিক।

অবশ্য অস্বাভাবিকেরও কিছু নেই, কারন আমিতো অার প্রতিদিন ফোন দিয়ে অবনীর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলিনা।

সে নিজেই চারদিন পাঁচদিন পরপর ফোন দিয়ে দুই চার মিনিট কথা বলে।
লিনাও অবশ্য কিছু মনে করেনা। লিনাকে একদিনই বলেছি। সবারই অতীত থাকে। অবনী অামার অতীত। তোমাকে বিয়ে করেছি তুমি অামার বর্তমান। অার তোমাকেই অামি এখন ভালবাসি।
.
ভাবলেই একটা গোলক ধাঁধাঁ মনে হয়। অামার অার অবনীর প্রেমের পিয়ন ছিল লিনা। অাবার লিনার অার অামার বিয়ের বরযাত্রীতে ছিল অবনী।

মজার বিষয় হল অামার গায়ে হলুদের রাতে অামার হাতে অবনী নিজ হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিয়েছিল।
.
.
লিনা অামার অাপন খালাত বোন। যখন তাদের বাড়িতে বন্যার পানি উঠে তখন অামাদের বাড়িতে এসেছিল। পাশের বাড়িতে রুম ভাড়া নিয়েছে। যতদিন পানি থাকবে তারা এখানেই থাকবে। এই সময়টা ছিল অবনী যখন অামাকে বলেছিল বিয়ে না করে প্রেম করতে পারব কিনা, তারও অাগের সময়কার। তখনো অবনী অামাকে প্রেমের কথা বলেনি।

অামিই তার প্রেমে পড়েছিলাম কিন্তু মেম্বারনীর মেয়ে বলে বলার মত সাহস পাচ্ছিলামনা।
.
অামার বন্ধুর বড় বোনের গায়ে হলুদ ছিল। একই এলাকায় থাকায় অবনীদের বাড়ি অামাদের বাড়ি সহ এলাকার সবার দাওয়াত ছিল। অার গায়ে হলুদে ছেলে মেয়েরাই অানন্দ করে বেশী।
যেহেতু সে বিয়ে বাড়ির গায়ে হলুদে অবনীও গিয়েছিল তাই অামার নজরটা সেদিকে একটু বেশী। গায়ে হলুদের অাগে সবাইকে খাবার দেয়া হল ঘরের ভিতর। অামিও খাইতে বসেছি।

অামার পাশে বসেছে অবনীর চাচা। যদিও চাচা অামার সমবয়সী। তার সাথেই অবনী খাচ্ছিল। খাওয়ার এক পর্যায়ে অবনী পানি পানি বলে চিৎকার করল। অামার অার কিসের খাওয়া?
হাতের কাছের পানি শেষ হওয়ায় দৌড়ে পাশের রুমে গেলাম পানি অানতে। গ্লাস দিয়ে পানি এনে দেখি অারেকজন পানি নিয়ে হাজির।
অবনী অামার দিকে একবার তাকিয়ে অন্যজনের হাত থেকে নিয়ে পানি খেল। খাওয়া শেষে হাত মুছার জন্য কাপড় খুঁজতেছিল অবনী।

অামি পকেট থেকে অামার সাদা রুমালটি বের করে দিলাম। অবনী বলেছিল, “রুমাল নষ্ট হবেতো” অামি বলেছি হোকনা নষ্ট। রুমালটি নেয়ার সময় দুই তিনজন বিষয়টা লক্ষ্ম করেছে।

অবশ্য অাড়ালে বলার চেষ্টা করতেছে অামি অবনীর পিছনে লাইন মারি।
.
খাওয়া শেষ করে ঐ বাড়ির ছাদে গিয়ে দাড়িয়েছি অামি অার অামার এক বন্ধু। মনটা খুব বেশী খারাপ না হলেও খুব বেশী ভাল নেই।

ছাদে অন্ধকারে দাড়িয়ে ভাবতেছি, চারদিকে অামাকে খুঁজে না পেয়ে অবনী ছাদে অাসবেতো???
ভাবনার অবসান ঘটল অবনী অার তার দুই বান্ধবী অাসাতে। অামি অভিমান করে উল্টোদিকে তাকিয়ে অাছি।

স্পষ্ট বুঝতে পারতেছি কেউ পিছন থেকে রজনীগন্ধা ফুল ছিড়ে অামাকে ঢিল দিচ্ছে। এটাও বুঝতে পারতেছি অবণী ছাড়া অামাকে কেউ ঢিল দিবেনা।
.
-অাপনি কি অামার বান্ধবীকে পছন্দ করেন?
অবনীর বান্ধবীর মুখে এমন প্রশ্ন শুনে কি উত্তর দিব ভাবতেছি। তবুও জানতে চাইলাম, কেন কি হইছে?
– জানতে চাইলাম অারকি। সেদিও ফুল নিয়ে অামাদের পিছন পিছন গেলেন।
– তোমাদের পিছন পিছন যাব কেন?
– তার মানে অাপনি অবনীকে পছন্দ করেননা?
– পছন্দ করবনা কেন? পছন্দ করি বলেকি অামার জেল হবে?
– না জেনে নিলাম।
ওরা তিন বান্ধবী নেমে গেল। ভাবতেছি সেদিনের কথাটি।
অবনী অার তার বান্ধবীরা স্কুলে যাওয়ার সময় ফুল নিয়ে গিয়েছিলাম পিছন পিছন। অবনীও বারবার পিছন ফিরে তাকাচ্ছিল। ওর মায়ের কথা ভাবতেই ভিতরে ভয় ঢুকে গেল।

তাই অার সেদিন ফুল দেয়া হয়নি।
.
বিয়ে বাড়ির গায়ে হলুদের পর থেকে অবনী অামাদের বাড়ি ঘন ঘন একটু পর পর অাসতে শুরু করল। অামার একটা পোষা টিয়া পাখি ছিল। খাঁচায় বন্দী করে রাখতে হতনা।

অামি সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময়ও পাখিটি অামার কাঁধে বসে থাকত। অবনী অামাদের বাড়িতে অাসবে তারতো একটা কারণ থাকা চাই।

তাই অবনীর ছোট বোনটিকে কোলে নিয়ে অামাদের বাড়ি অাসত। একবছর বয়সের অবনীর বোনটি যখনই কান্না করত তখনই অবনী তার বোনকে নিয়ে অাসত।

অবনীর ছোট্ট বোনটি অামার টিয়া পাখিকে দেখলে কান্না বন্ধ করে দিত।
.
-অাপনি ব্যাথা পাননা?
অবনীর প্রশ্ন শুনে একটি হাসি দিয়ে বলেছি, “না অামি ব্যাথা পাইনা”
– হাত দিয়ে রক্ত পড়ছেতো, তাহলে ব্যাথা পাননা মানে কি?
– তবুও ব্যাথা পাইনা।
– মিথ্যেবাদী।
বলেই অবনী তার ছোট বোনকে কোলে করে নিয়ে চলে গেল।
এতক্ষন অবনী অামাদের জানালার কাছে ছিল। অামি অামার টিয়া পাখিকে জানালা দিয়ে দিয়ে দিতাম অবনীর বোনের কান্না থামানোর জন্য।

অবনীর ছোট বোন টিয়া পাখির লেজে ধরে টান দিত অার টিয়া তার বড় ঠোট দিয়ে অামার হাতে ঠোকর দিত। দুই তিন জায়গা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। তবুও বলেছি অামি ব্যাথা পাইনা।

কারন অামিতো অবনীকে দেখতে পাচ্ছিলাম। তখন অার কিসের ব্যাথা। কি করে বুঝাব অামি যে তার প্রেমে পড়েছি।
.
এর কিছুদিন পরই অবনী সে কথাটি বলেছিল, ” প্রেম করবেন।
বিয়ে হলে হবে না হলে নাই। ”
অামিও বলেছি, “এটা কোন ব্যাপার হল?”
সেই থেকে প্রেমের সূচনা।
অামার খালাত বোন লিনাতো পাশের বাড়িতেই থাকত। অামার বোন শিমু, অবনী অার লিনা একসাথেই থাকত। অার কথাবার্তা বা ছোট্ট চিরকুট লিনাকে দিয়ে পাঠাত।

তখন কি অার জানতাম এই লিনাই হবে অামার বউ?
.
অবনীর জন্মদিন উপলক্ষে অবনী নিজে এসে অামাকে অার অামার ছোট বোনকে দাওয়াত দিয়ে গেল। অামি বলে দিয়েছি শিমু যাক, অামি যাবনা।
অবনী বলতেছে, “অামি জানি অাপনি অামার অাম্মুকে ভয় পান। চিন্তা নেই অাম্মু বাড়িতে নেই। অাপনি না গেলে অামি কেকই কাটবনা।
শিমুকে নিয়ে সন্ধার সময় যাবেন। ” বলেই হন হন করে চলে গেল অবনী।
.
সন্ধা সাতটার দিকে অবনীদের বাসায় গেলাম। অামাদের বাড়ি থেকে অবনীদের বাড়িতে যেতে শুধু একটি পুকুরপাড় ঘুরতে হয়।
বাড়িতে গিয়ে কিছুটা ভয় ভয় লাগতেছে। এত বড় বাড়িতে তেমন কেউ নেই। অবনী, অবনীর বড় বোন অার তাদের বাড়ির কাজের মেয়েটি ছাড়া কেউ নেই বাড়িতে।

অবনীর বড় বোন অামার সমবয়সী। এমনিতে দেখা হলে কথাবার্তা হত দুষ্টুমি হত। অামাদের একটি সোফায় বসতে বলল। অামাদের বাড়িতে সোফা নেই।

বড় লোকদের বাড়ি কতকিছুতে সাজানো থাকে। সেটা ঘরের এদিক সেদিক তাকালেই বুঝানো যায়।
.
– “এরা রাতেরবেলা এই বাড়িতে কেন? সোফাগুলো নষ্ট হবেনা? অামাদের ছাড়া কেক কাটলি কেন? অামরা কি একেবারে চলে গেছি?”
পাশের রুম থেকে কথাগুলো শুনলাম। বুঝতেবাকি রইলনা অবনীর মা কথাগুলো অামাদেরকেই বলছে।
অবনী প্রায় সারাদিনই অামাদের বাড়িতে পড়ে থাকে। অথচ অাজ কেমন ব্যবহার করতেছে। হঠাৎ অবনীর গলা শুনতে পেলাম।
“তাদের অামি অাসতে বলছি। অামার জন্মদিনের কেক কাটব তাই তাদের অাসতে বলেছি। ”
এর মিনিট দশেক পর অামি শিমুকে নিয়ে চলে অাসলাম। মনে অাজ খুব কষ্ট পেলাম।
.
অাজ সকাল থেকে অবনী অামার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতেছে। অামি তেমন একটা উত্তর দেইনা বলে লিনাকে বলতেছে, জিজ্ঞেস করোনা তোমার ভাইয়ের কি হয়েছে?
অামি তবুও জবাব দেইনি । অামি জানি অবনীর ভাল লাগেছে না অামি কথা না বলাতে। কিন্তু গতরাতে এর চেয়ে বেশীকষ্ট অামরা পেয়েছি।
.
অবনীর সাথে অার রাগ করে থাকতে পারিনি অামি। ঈদের অাগেরদিন টিউব মেহেদী কিনে এনেছি, অবনী অামার হাতে পড়িয়ে দিবে। রাত তখন সাড়ে অাটটা। অামি দাদীর ঘরে।

দাদীও অামাদের সম্পর্কের কথা জানে। দাদীতো অবনীকে নাতবৌ বলেই ডাকে। শুধু বাবা মা চায়না অবনীর সাথে অামার কিছু হোক।
অবনীর জন্মদিনের পরেরদিন শিমু মায়ের কাছে সব বলে দিছে। অবনীর মা যা যা করেছে তার বর্ণনা দিছে। মা বলেছে বাবার কাছে।

বাবাতো সরাসরিই বলে দিয়েছে, “অবনীকে নিয়ে মনের মধ্যে কিছু থাকলে ঝেরে ফেলো। অামি জীবিত থাকতে এই সম্পর্ক কিছুতেই সম্ভবনা।
.
অবনীকে বলেছিলাম তোমার অামার বিয়ে কখনো হবেনা।
অবনী অামাকে জবাব দিল,
” বিয়ে করাই ভালবাসা না, ভালবাসার ফলাফল। অামার তোমার ভালবাসার অংকের ফলাফল কিছু না হলেও অংক ঠিকই করব। বলেছিলামনা, বিয়ে হোক বা না হোক ভালবাসতে হবে। ”
অামি কেন যেন অবনীর মত ভাবতে পারিনা। অামার ভাবনা জুড়ে শুধু, অামি অবনীকে ভালবাসি অবনীকেই বিয়ে করব।
.
দাদীর ঘরে অবনী চলে এল। দাদী বাইরে পিঠা ভাজে। অবনীর বাবা মা মার্কেটে। সেই ফাঁকে অবনী চলে এসেছে । অবনীর কোলে একটি বালিশ, সেই বালিশে অামার হাত।

অবনী মেহেদী পড়াচ্ছে, অামি বালিশে হাত রেখে বিছানায় শুয়ে পড়েছি। শুয়ে অবনীর নত করা চেহারা দেখতেছি।
কত মায়া ভরা মুখ। তাকে হারালে অামি থাকব কিকরে? বাবা মা চায়না, অার অবনীর বাবা মা অামার কাছে বিয়ে দিবেনা। কিন্তু কেন পাঁচ বছর ধরে তারই প্রেমে পড়লাম।
-অবনী, এত রাতে তুই এখানে কেন? বাড়ি অায়। মাথা ফিরে তাকিয়ে কলিজা শুকিয়ে গেছে। অবনীর মা স্বয়ং জানালায় দাড়িয়ে বলতেছে এই কথা।
– তুমি বাড়ি যাও, অামার অার দশ পনেরো মিনিট লাগবে।
অবনীর জবাব শুনে অারো ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু না, অবনীর মা চলে গেল। অামি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা।
– তুমি এভাবে অাছো কেন হা করে? অামি মা’কে ভয় পাইনা। বাড়ি গেলে না হয় মারবে অারতো কিছুনা।
– কিন্তু অবনী, যদি বাবা মায়ের কাছে কিছু বলে?
– অারে বলবেনা।
.
ঈদের দুদিন পর জানতে পেলাম অবনীর মা অবনীকে অনেক মেরেছে। অামাদের বাড়িতে অবনী অার তেমন একটা অাসেনা। অাসলেও দুই চার মিনিট পর চলে যায়।

অবনীকে ছাড়া সময়গুলো কাটতেই চায়না। বাড়ি থেকে বের হয়ে পুকুরপাড় পর্যন্ত গিয়ে দড়িয়ে থাকতাম অবনীকে একটু দেখার জন্য। কিন্তু বাড়ি থেকেই বের হয়না।
যদি কখনো দেখা হত, ইচ্ছে হত বেঁধে রাখি।
.
একদিন জানতে পারি অবনীর বিয়ে হয়ে গেছে। অবনীকে দেখতে এসেছিল পাত্রপক্ষ। বড় বোনকে রেখে সেদিনই অবনীকে বিয়ে দিয়ে দেয় তার বাবা মা।

কিছু করব সে সময়টুকুও পাইনি। অার কে জানত বড় বোনকে রেখেই বিয়ে দিয়ে দিবে।
.
কেঁদেছি অামি অনেক কেঁদেছি। বাচ্চাদের মত কেঁদেছি ঘরে বসে। খুব বেশী খারাপ সময় পাড় করেছি। গলা দিয়ে ভাত নামতনা। এক দৃষ্টিতে উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকতাম।

এলাকার মোটামোটি সবাই জানত। বাড়ি থেকে বের হতে পারতামনা। সবাই করুণার চোখে তাকিয়ে থাকত। কেউ কেউ পিঠে হাত বুলিয়ে জানতে চাইত “মনটা খারাপ?”
তখন অারো বেশী রাগ হত। বাড়ি থেকে বের হতেই ইচ্ছে হতনা।
.
লিনা তখন ছিলনা। বন্যার পানি কমাতে চলে গিয়েছিল। একদিন শিমু বলতেছে, “ভাইয়া বাবা মা বলাবলি করতেছে লিনাকে তোমার কাছে বিয়ে দিবে”
কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলাম। অবনীরও কত ছোট লিনা। এই ছোট মেয়েকে নাকি অামার কাছে বিয়ে দিবে। অামি অবনীকে ছাড়া অন্য কাউকে অামার বউ হিসেবে কল্পনাও করতে পারিনা। অার লিনা নিজেই অবনীর আমার প্রেমের পিয়ন ছিল। লিনাই অামাকে মেনে নিবে কিভাবে?
.
বাবা মায়ের কথা হল, “লিনা যতদিন এখানে ছিল অামাদের সব কাজ করে দিয়েছে। লক্ষী একটা মেয়য়ে, জানাশুনার মধ্যে। তাই লিনার সাথেই অামার বিয়ে ঠিক হল।

বাবা মায়ের অবাধ্য হতে পারিনি। তাই অবনীর বিয়ের তিনমাস পর অামি লিনাকে বিয়ে করলাম।
.
অবনীকেও দাওয়াত করা হয়েছিল। মজার বিষয় হল গায়ে হলুদের রাতে অবনী নিজে অামার হাতে মেয়েদী পড়িয়ে দিয়েছে। অামার সাথে বরযাত্রীতে গিয়েছে।

অামার বাসর ঘর সাজিয়ে দিয়েছে। একবারও অবনীর মন খারাপ হতে দেখিনি। অামিই কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলাম। এত কাছে অামার অবনী অথচ কত দূরে।
.
এর পর থেকে অবনী প্রায়ই অামাদের বাড়ি অাসত। লিনাকে জিজ্ঞেস করত কেমন অাছে। শিমুর সাথে বসে গল্প করত। অামি ভাবতাম লিনা বা বাবা মা কিছু মনে করত কিনা।

কিন্তু না, কেউ কিছু মনে করতনা। সবাই সহজভাবেই নিত বিষয়টা। ফোন করত প্রায়ই। কথা বলত অামার সাথে, লিনাও ফোনে কথা বলত।
.
.
লিনা এখন অামার বিয়ে করা বউ। তাকে অনেক ভালবাসি। ভালবাসি অামার ছেলেটাকে। অবনীকে এখন ভালবাসি কিনা জানিনা। তবে বুকের বাম পাজরে একটা ব্যাথা অনুভব হয়।

অামি জানি সেটা একটা হাহাকারের ব্যাথা। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস প্রায়ই বের হয় এখান থেকে। দোয়া করি অবনী চির সুখী হোক। অবনীর সেই কথাটি এখনো মনে পড়ে..
“বিয়ে মানেই ভালবাসা না। ভালবাসার ফলাফল। তোমার অামার অংকের ফলাফল কিছু না হলেও অামরা ভালবাসার অংক করব।”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত