অপেক্ষার দীর্ঘ তিন বছর পর

অপেক্ষার দীর্ঘ তিন বছর পর

মেয়েটি আর কখনও অনলাইনে আসবেনা জেনেও ছেলেটি প্রতিদিন তাকে মেসেজ করে যায়।কারণ তার বিশ্বাস কোন একদিন সে অবশ্যই ফিরে আসবে।তার করা মেসেজ গুলোও একদিন সিন হবে।
মেয়েটির থেকে পাওয়া তার শেষ মেসেজ ছিলো,,
“” আমাকে ভুলে যাও।ভালো থেকো।””
:
:
:
দুজনের পরিচয় হয়েছে অনলাইনে।প্রথমে বন্ধুত্ব তারপরই সেই বন্ধুত্ব থেকে ধীরে ধীরে ভালোবাসা গড়ে উঠে।কিন্তু সেই ভালোবাসাটা ছিলো ওয়ান সাইডেড।ছেলেটিই(অনিক)এক সময় মেয়েটিকে(আনিকা) ভালোবেসে ফেলে।
আর সেটা সময় বুঝে একদিন আনিকাকে জানিয়ে দেয় অনিক। আনিকা শুনে কিছুই বলেনি সেদিন।এরপর থেকেই অনিক অনেকবার তাকে প্রপোজ করে। কিন্তু যতবারই তাকে ভালোবাসার কথা বলেছে ততবারই শুধু একটি কথা শুনতে হয়েছে।,,,,,
“””I have no feelings about love.
so I can’t love anyone”””
__but why?
আনিকা উত্তর দিতোনা।এড়িয়ে যেতো প্রশ্ন। অনিক অনেকবার চেষ্টা করেছে জানতে।
পারেনি।যেদিন আনিকা অনলাইন ছেড়ে চলে গেছে তার আগেরদিনেও আবার ও প্রপোজ করে কিন্তু সেই একই কথা,,,,I have no feelings about love…..কিন্তু কেন?সেদিন ও উত্তর দেয়নি আনিকা। ঠিক এর পরেরদিনই উপরের মেসেজ টি পায় অনিক,,,,,
আমাকে ভুলে যাও। ভালো থেকো।
:
:
:
এভাবেই দীর্ঘ এক বছরের ফ্রেন্ডশিপ ভেঙে কিছু না বলে হুট করেই অনিককে একা করে দিয়ে অনলাইন ছেড়ে চলে যায় আনিকা।অনিক একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়ে তাকে হারিয়ে।কি করবে? কি করে তার সাথে কন্টাক্ট করবে?
ফোন নাম্বার কিংবা এড্রেস কোনটাই জানা নেই তার।
জানা নেই বললে ভুল হবে। অনেকবার ফোন নাম্বার চেয়েছে এড্রেস চেয়েছে। কিন্তু আনিকা দেয়নি।
দেখা করতে চেয়েছে।কিন্তু দেখা করতে রাজি হয়নি সে। হ্যা অনেক কষ্টে তার থেকে একটা পিক নিয়েছে অনিক।শুধু এই পর্যন্তই।বাট আনিকা কখনও অনিকের পিক দেখতে চায়নি।অনিক নিজে থেকেও অনেকবার দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু আনিকা না করে দিতো।
এভাবে বারবার আনিকার কাছে হেরে যেতো অনিক। তারপর ও তাকে ভালোবাসত। অনেকবেশি ভালোবাসত। নিজের থেকেও বেশি।এতোবেশি ভালোবাসত যে আনিকা যখন তাকে যা বলতো তা কোন প্রশ্ন ছাড়াই মেনে নিতো।আনিকাকে হারিয়ে ফেলার ভয়েই অনেকটা জোর করতো না অনিক।আর এজন্যই তার নাম্বার, বাসার ঠিকানা কোনকিছুই তার কাছে নেই।
কিন্তু কেন সে অনলাইন ছেড়ে চলে গেলো?
কি হয়েছে তার?
সে নাই বা বাসতো ভালো আমাকে কিন্তু চলে গেলো কেন?
ফ্রেন্ড হয়েই না হয় থাকতো সে আমার পাশে।অনিক কিছুই বুঝতে পারছেনা। আনিকা তো কখনই তার প্রপোজে খারাপ ব্যবহার করতো না। বিরক্ত হয়েও কিছু বলতো না।
তবে? অনিক ভেবে পায়না।
এখন কি করে তার খোজ নিবে?
কোথায় আছে সে?
কেমন আছে?
ভালো আছে তো?
অনিক দিনরাত ভেবেই যাচ্ছে আনিকাকে নিয়ে।এ ভাবনার কোন শেষ নেই।যতই তার কথা ভাবছে ততই তাকে আরও বেশি ভালোবাসছে। ভুলতে পারছেনা কিছুতেই বরং আগের থেকে ও বেশি তাকে ফিল করছে।
অপেক্ষা!!!!!!!!!!!!!!
হ্যা, অপেক্ষা করা ছাড়া আজ আর অনিকের কিছুই করার নেই।অনিক অপেক্ষায় আছে আনিকার।সে ফিরে আসবে। কোন একদিন সে ফিরে আসবে।আসতেই হবে তাকে।তার ভালোবাসার কাছে আনিকাকে হার মানতেই হবে।এই বিশ্বাস নিয়ে অনিক অপেক্ষা করে যাচ্ছে অনলাইনে আনিকার।অপেক্ষার পর অপেক্ষা করে যাচ্ছে। সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন,রাত,সপ্তাহ, মাস,এক মাস, দু মাস, তিন মাস, বছর।পুরোটা সময় জুড়েই শুধু অপেক্ষা করে যাচ্ছে অনিক। অপেক্ষার প্রহর যেনো শেষ হচ্ছেনা।তবুও অপেক্ষা করে যাচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষটির।
:
: ,,,,,,,,,,,অপেক্ষার দীর্ঘ তিন বছর পর,,,,,,,,,
:
:
:
খুব খুশি মনে আজ আনিকা অনলাইনে ডুকেছে।তার খুশি হওয়ার কারণটা অনেক বড়।কারণ তিন বছর অনেক সময়।অনেক! এই দীর্ঘ সময়ে অনিক নিশ্চয়ই তাকে ভুলে গেছে। ভুলে গেছে তার ভালোবাসার কথা। হ্যা এটাই চেয়েছে আনিকা। অনিক যাতে তাকে ভুলে যায় তাই সে তার জীবন থেকে এভাবে না বলে চলে গেছে।কারণ সে চায়নি ভালোবাসা নামক ঘৃণিত বিষয়টাতে জড়াতে।
আনিকা তাই মনে মনে ভাবে যাক ভালো হয়েছে।সে যা চেয়েছে তাই হয়েছে।তার ভালোবাসার উপর যে বিশ্বাস ছিলো তা ভাঙেনি।পৃথিবীর সব ভালোবাসাই ক্ষনিকের।সবাই ক্ষনিকের জন্যই ভালোবাসে সারাজীবনের জন্য নয়।এই ধারনা আনিকা অনিকের উপরেও রেখেছিলো।অনিক ও হয়তো সবার মতই ক্ষনিকের জন্য তাকে ভালোবাসতে চাইছে সারা জীবনের জন্য নয়। আর এজন্যই সে সবসময় তাকে ফিরিয়ে দিতো আর বলতো,,,,,,,,I have no feelings about love…
আনিকা কিছুক্ষণ নিউজফিড ঘাটাঘাটি করে মেসেঞ্জার চেক করে। মেসেঞ্জার চেক করেই আনিকা এতোটা শকড হয়ে যায় যে তার মনের অনুভূতির সব ভাষা হারিয়ে ফেলে।আনিকা ভেবেছিলো সে যেহেতু কিছু না বলে চলে গেছে তাই হয়তো কয়েকদিন অনিক মেসেজ করে স্বাভাবিক ভাবেই জানতে চাইবে সে কেন চলে গেছে এভাবে?
কিন্তু না, আনিকা যা ভেবেছিলো তা হয়নি।দীর্ঘ তিন বছরের প্রতিটা দিনই অনিক তাকে মেসেজ করেছে। শুধু প্রতিটি দিনেই নয় প্রতিটা সেকেন্ড প্রতিটা মিনিট প্রতিটা ঘন্টা প্রতিটা মুহূর্তেই তাকে সে মেসেজ করে গিয়েছে।শুধু একটি কথাই,,,,,,,,
“”””ভালোবাসি তোমাকে। অপেক্ষা করবো আজীবন যতদিন না তোমার মাঝে ভালোবাসা নিয়ে কোন ফিলিংস না জন্মায় আর আমায় ভালোবাসি না বলবে””””
আনিকা একের পর এক মেসেজ সিন করেই যাচ্ছে।করেই যাচ্ছে। ভাবতেই পারছেনা অনিক এই দীর্ঘ তিন বছর ধরেই তাকে মেসেজ করে যাবে। এটা কি করে সম্ভব? How is it possible?আনিকা আর ভাবতে পারেনা।মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে আনিকার।বের হয়ে তখনই এফবি থেকে।
নাহ এ কিছুতেই হতে পারে না।নিরবে তার অনুপস্থিতিতে কেউ তাকে এভাবে মনে রাখতে পারেনা।এভাবে ভালোবাসতে পারেনা।এভাবে এতোটা সময় অপেক্ষা করে থাকতে পারেনা।তাও শুধু অনলাইনে একটা মেয়ের জন্য।
আচ্ছা আমি ভুল দেখিনিই তো,আনিকা নিজেকে প্রশ্ন করে।একথা বলেই সে আবার এফবিতে ডুকে। না ভুল নয়।শুধু অনিকের আইডি থেকেই তাকে এতোটা সময় ধরে মেসেজ করা হয়েছে।হ্যা গতকাল পর্যন্ত ও অনিকের আইডি থেকে তাকে শেষ মেসেজ করা হয়েছিলো,,,,,,,,,,
“””আমি জানি তুমি একদিন ফিরবে। ফিরে আসবেই আমার ভালোবাসার টানে। হয়তো সেদিন ফিরে আসবে যেদিন আমাকে আর খুজে পাবেনা। আমার মেসেজ সিন করে তুমি রিপ্লাই দিবে এটা আমি জানি হয়তো সেদিন দিবে যেদিন তোমার মেসেজ সিন করার মানুষটি আর থাকবে না অনলাইনে। আজও ভালবাসি তোমাকে। তোমার অপেক্ষায়ই আছি।অপেক্ষায় থাকবো”””
আনিকা কি করবে বুঝতে পারেনা।সে এতোক্ষনে খেয়াল করলো অনিক ওই মেসেজ সেন্ড করার পর থেকেই ইনএক্টিভ। আচ্ছা আমি কোনো ভুল করিনিই তো?অনিক কি তাহলে সত্যিই আমাকে………….এক মিনিট ভাবলো আনিকা তারপর মনের সব আবেগ আর অনুভূতি দিয়ে চারটি অক্ষর দিয়ে একটি শব্দই লিখলো,,,,,,, ভালোবাসি,,,,,,,,,
লিখেই সেন্ড করলো অনিকের আইডিতে।
এরপর অপেক্ষা করতে থাকলো কখন অনিক অনলাইনে আসবে আর তার মেসেজ সিন করবে। সময় চলে যেতে লাগলো। সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন, সপ্তাহ। আরও আরও এক সপ্তাহ চলে গেলো। না মেসেজ সিন হয়নি এখনও। আনিকা হাঁপিয়ে উঠেছে এই দু সপ্তাহ অপেক্ষা করে। নিজেকে আর স্থির রাখতে পারছেনা।
অনিক অনলাইনে আসছে না কেন? আনিকা নিজেকে সান্ত্বনা দেয় হয়তো অনিকের কোন সমস্যা হয়েছে তাই আসতে পারছে না। এতোটা বছর যে আমার জন্য অপেক্ষা করেছে আর এখন সে আসবেনা এটা কিছুতেই হয়না। অনিক আসবে।অবশ্যই আসবে।
ওহ!কি বোকা আমি। অনিককে ফোন করলেই তো জানা যায় তার কি হয়েছে? কিন্তু নাম্বার কোথায় পাবো? তার তো কোন ফোন নাম্বার বা এড্রেস নেই আমার কাছে।আমি তো এর একটাও রাখার প্রয়োজন মনে করিনি কখনও।তাহলে কি করে খোজ নেবো তার?
না আমাকে আরও অপেক্ষা করতে হবে।সে আমার জন্য তিন বছর ওয়েট করতে পেরেছে আর আমি তার জন্য এইটুকু ওয়েট করতে পারবো না।
আবারও অপেক্ষা!!!!!!!
আনিকা অপেক্ষা করতে থাকে। সেকেন্ড মিনিট ঘন্টা দিন,সপ্তাহ, মাস,এক মাস, দু মাস, তিন মাস ।কিন্তু আনিকা কখনই জানতে পারবে না,সারাজীবন অপেক্ষা করলেও তার এই অপেক্ষার কোন মূল্য আজ আর নেই।আর কোন দিনই তার মেসেজ সিন হবেনা।কোনদিনই অনিক নামের ছেলেটির আইডিতে সবুজ বাতি জ্বলে উঠবেনা।
কারণ অনিক এখন বিশ্রাম করছে।গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে আছে সে। কতকাল সে ঘুমায় নি!বিশ্রাম নেয়নি!হ্যা অনেক সময়, দীর্ঘ তিন বছর সে ঘুমায়নি নিজের মত করে।ঘুমাতে পারেনি।জেগে অপেক্ষা করে গেছে অনলাইনে। কখন আনিকা ফিরে আসবে। কখন তার মেসেজ সিন হবে।কখন বলবে “” ভালোবাসি “”।
না আর শোনা হয়নি অনিকের আনিকার সেই ভালোবাসি কথাটা।যেটা শোনার জন্য সে এতো সময় অপেক্ষা করে বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো। অনেক বেশি ক্লান্ত!
আজ আর অনিক ক্লান্ত নয়! ক্লান্ত তাকে মুক্তি দিয়েছে।
চিরদিনের জন্য মুক্তি দিয়েছে।অনিকের জন্য ভালো হয়েছে।এবার সে ক্লান্তিহীন হয়ে ঘুমাতে পারবে।নিজের মত করে।বহুকাল সে ঘুমায়নি।অনিক তুমি ঘুমাও! বিশ্রাম নাও! তোমার বিশ্রামের বড় প্রয়োজন আজ!বড় প্রয়োজন তোমার ঘুমের!

……………………………(সমাপ্ত)…………………………

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত