-এইটা কি বস্তু?
-এইটা বস্তু না,খাবার!পুডিং।
-কি??পুডিং!!! এইটা পুডিং!কেউ আমাকে মেরে ফেল!পুডিং এর ভিতর পানি আটকায়ে আছে ক্যান?
-পানি আটকায়ে আছে নাকি?আগে কখনো বানাইনি তো!আজকে ফার্স্ট বানালাম।ভাল না’ই হতে পারে!চেষ্টা তো করেছি,এভাবে বলছ কেন?
-কিভাবে বললাম?তুমি এই উদ্ভট খাবারটাকে পুডিং বলে পুডিং এর অবমাননা করছ,তাই বললাম আর কি…এই বস্তুটা সরিয়ে আমাকে দয়া করে ভাত খেতে দাও…আমি প্রচন্ড ক্ষুধার্ত।
-ভাত নেই!
-নেই মানে?
-পুডিং বানাতে সময় চলে গেছে।ভাত রান্না করা হয় নি।
-সত্যি?
-হ্যাঁ।তুমি বস একটু।আমি চট করে তোমাকে নুডলস করে দেই।
-তুমি আমাকে আর কত নুডলস,পাস্তা,টোস্ট খাওয়াতে চাও,বলবা?
-তুমি তো জানতেই আমি রান্না-বান্না পারি না,জেনেশুনেই তো বিয়ে করেছ,এখন আমার সাথে এমন করছ কেন??
-তুমি এক কাজ কর,এখানে বসে বসে আমার এমন ব্যবহারের জন্য কিছুক্ষন কাঁদ,আমি ততক্ষণে চট করে দুজনার জন্য খিচুড়ি রান্না করে ফেলি………
অনু এখন কিছুক্ষন কাঁদবে।এই মেয়েটা খুব আহ্লাদী!আমি কিছু বললেই হল!চোখে পানি চলে আসবে!এই আহ্লাদী মেয়ে বিয়ে করে আমি মুশকিলে পড়ে গেছি!কিন্তু কি আর করব!এই আহ্লাদী,কোন কাজই ঠিকঠাক মত করতে না পারা কিন্তু করতে চেষ্টা করে ভজকট পাকিয়ে ফেলা মেয়েটাকেই আমি এত বেশি পরিমানে ভালবেসে ফেলেছি যে নিজেরই নিজেকে গাধা মনে হয়।এই মেয়েটাকে এত ভাল লাগে কেন আমার?আমার মত চৌকস একটা ছেলে,যার জন্য ভার্সিটির স্মার্ট মেয়েরা ঘুরত,সে কি না ভালবেসে,নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে অনুর মত একটা মেয়েকে।ওর হাজারটা দোষ জেনেও আমি ওকে ভালবাসি।ওর দোষগুলো আমি সহজেই বলে দিতে পারি!ও কখনো সকালে আমার অফিস যাওয়ার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারে না,অন্যান্য বউদের মত আমার জন্য নাস্তা বানায় না,লাঞ্চ প্যাকেট করেও দেয় না।আমি সকালে এক কাপ কফি আর এক স্লাইস পাউরুটি,ডিম ভাজা খেয়ে অফিস চলে যাই!অনু ভাত রান্না করতে যেয়ে একদিন হয়তো রোগীদের খাবার মাড়ি ভাত রান্না করে ফেলে তো আরেকদিন রাবারের মত শক্ত ভাত রান্না করে নয়তো কোন কোন দিন এমন ভাতও রান্না করে ফেলে যে ভাত পুড়ে কয়লা হয়ে যায়…খুব বেশি কথা বলে,বকবক করতে শুরু করলে থামতেই চায় না। হড়বড় করে কথা বলে যায়।ওর সাথে আমার প্রথম কথা হয় একটা বইয়ের দোকানে!কোন মেয়ে যে অপরিচিত কোন ছেলের সাথে এভাবে কথা বলে তা আমার জানা ছিল না।ওইদিনের পর থেকে কেমন কেমন করে যেন এই বোকা-আহ্লাদী মেয়েটার মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে গেলাম।ও সকালে উঠতে পারে না তাই প্রতিরাতে সে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার জন্য সেল ফোনে, ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখে!তাও ঠিক সময়ে উঠতে না পেরে আমি বের হওয়ার মুহূর্তে ফোলা ফোলা চোখ-মুখ নিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে যখন বলে “আজকেও পারলাম না সায়ন বাবু তোমাকে নাস্তা করে দিতে,আমি আসলে অকর্মার ঢেঁকি একটা,আলসি,আমাকে দিয়ে হবে না।তুমি মন খারাপ করো না প্লিয…।আমি কাল অবশ্যই পারব,দেখ তুমি।” ওর চোখে তখন আমার জন্য যে পরিমানে ভালবাসা থাকে তা দেখার জন্য আমি সকালে নাস্তা খাওয়াও ছেড়ে দিতে পারি।অনুর আমাকে “সায়ন বাবু” বলা আমি রেকর্ড করে রেখেছি।এত মায়া আর ভালবাসা নিয়ে মেয়েটা আমাকে কেন ডাকে?আমার মন খারাপ হলেই আমি রেকর্ডটা শুনি,বোকা মেয়েটা তা জানে না। রান্না করতে না জানা মেয়েটা তাও আমার জন্য নিত্যনতুন রান্না করতে চায়!হাত পুড়িয়ে,কেটে সে আমার জন্য পানি আটকে থাকা পুডিং,হাত দিলেই ভেঙ্গে যায় এরকম আলুর চপ,পাতলা ট্যালটেলে কাস্টার্ড,দুনিয়ার চিনি দেওয়া ক্ষীর বানিয়ে রাখে।আমি ওর এসব রান্না দেখে ওকে ক্ষেপাই,রাগাই।আমার কথা শুনে তখন মেয়েটা খুব মন খারাপ করে!পরে যখন আমিই ওর এসব উদ্ভট খাবার অর সামনে বসেই খাই আর বলি “বাহ,চপটা তো এভাবে খেতেই বেশি ভাল লাগছে,এখন থেকে আসলে সবার এভাবেই চপ বানানো উচিত” তখন খুশিতে ওর চোখে জল চলে আসে।পাগলী একটা মেয়ে।
-এই যে আহ্লাদী মেয়ে,আসেন গরম গরম খিচুড়ি আর ডিমভাজা খাই।তারপর না’হয় আমি তোমার স্পেশাল পানি আটকে থাকা পুডিং খাব।
-তুমি খুব বিরক্ত হও,তাই না?সবার বউ কি সুন্দর জামাইয়ের জন্য ভাল ভাল রান্না করে আর আমি কি করি!!সায়ন বাবু,তুমি আমাকে খুব অপছন্দ করো,তাই না?
-হুম।তুমি আমাকে এইভাবে “সায়ন বাবু” বলে ডাক আর আমি প্রতি বার তোমার প্রেমে পড়ি,তুমি অতি পাজী একটা মেয়ে।এই কারনে তোমাকে আমি অত্যন্ত ভালবাসি।ভালবাসার কথা এত বারেবারে শুনতে চাইতে হয় না।আসো তো খাই।
অনু ঘুমিয়ে গেছে।প্রতি রাতের মত আজও অ্যালার্ম দিয়েছে।আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।হাসলে অনুর বাম গালে টোল পড়ে।আলতো করে ওর গাল ছুঁয়ে দিলাম। আমিও আমার প্রতি রাতের নিয়ম মত অনুর সেলফোন,ঘড়িতে দেওয়া সকাল সাড়ে ছয়টার ওঠার অ্যালার্ম অফ করে পাগলীর পাশে ঘুমিয়ে গেলাম।