গোধূলি থেকে রাত

গোধূলি থেকে রাত

গাঢ় নীল রঙের শাড়ি পড়েছে আজ চিনি। শ্যামলা বর্ণের হলেও বেশ মায়াবতী। আসলে মেয়েটির চোখে অনেক মায়া। নীল শাড়ি সাথে নীল চুরি, চোখে হালকা কাজল পরে নিলো চিনি, আর একটু রাঙ্গিয়ে নিলো তার ঠোঁট। বেশী সাজগোজ করেনা মেয়েটা। কিন্তু আজ মন থেকে খুব সাজগোজ করেছে, শাওন এর জন্য। শাওন ছেলেটা বড্ড অভিমানী, কিন্তু ওর মত গভীরভাবে ভালোবাসতে খুব কম মানুষ ই পারে।
ঘড়িতে এখন ৬টা ২০। এখনও আসছেনা কেন উনি?! উনি তো কখনো দেরি করেনা। শাওনের আসতে দেরি হচ্ছে দেখে চিনির খুব চিন্তা হতে লাগলো। কোথায় উনি, কি করছে?! অফিস এ খুব কাজের চাপ?! নাকি… কোন বিপদ হলো না তো! নাহ! চিন্তায় আর ভালো লাগছেনা চিনির।
রিং বাজছে শাওনের ফোন এ…
– আসসালামুআলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। কোথায় আপনি?! এত দেরি হচ্ছে কেন?!! আপনি তো কখনই এত দেরি করেন না!
– কোথায় এত দেরি?!! এইতো, বাসায় এসেই পরেছি। আর ২ মিনিট!
– ২ মিনিট মানে কিন্তু ১২০ সেকেন্ড! দেরি করবেন না প্লিজ! আপনার জন্য সারপ্রাইজ আছে ১ টা!
– তাই নাকি?! তাহলে তো তাড়াতাড়িই আসতে হয়! আসছি… একটু অপেক্ষা কর!
খানিক বাদেই গেটে আওয়াজ শুনে চিনি খালি পায়ে দৌরে বারান্দায় গেলো দেখতে, কে এসেছে? এক পায়ে পায়েল এর শব্দেরা যেন অদ্ভুত ছন্দ বুনছিল। না! শাওন না! কেউই নেই! গেট তো বন্ধই। তাহলে হয়ত ভুল শুনেছে চিনি। মন খারাপ হয়ে গেলো চিনির। ছেলেটা কখনো সময় মত আসেনা! ঘরে নতুন বউ! অথছ তিনি নেই! কি সুন্দর গোধূলিটা। হিম বাতাস বইছে আর চিনির গায়ে সেই হাওয়ারা দোল দিয়ে যাচ্ছে। খোলা চুল গুলো উড়ছে বাধাহীন ভাবে, এলোমেলো করে দিচ্ছে, কিন্তু সেদিকে কোন খেয়ালই যেন নেই চিনির। অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে রস্তার দিকে, তার দৃষ্টিটা হয়ত অপেক্ষার… আকাশ এ কালো ধূসর মেঘ এর পাশাপাশি খানিক নীল ও দেখা যাচ্ছে! লাল সূর্যের রক্তিম আলোয় চারপাশটা আজ বেশ অন্যরকম লাগছে! পাশে টবে থাকা ফুল গুলোকেও আজ দেখতে অন্যরকম লাগছে চিনির কাছে।
– ইশ! এরকম একটা সময় যদি পাশে থাকত উনি! ছেলেটা কিচ্ছু জানেনা!বোঝেনা! এরেঞ্জ মেরিজ বলে কি ভালোবাসা থাকবেনা! এক্কেবারে আনরোমান্টিক!
দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে আসছে! কই?! এখনও তো উনি এলো না! প্রচণ্ড মন খারাপ নিয়ে রুম এ গেলো চিনি।
– একি! এতো অন্ধকার কেন ঘরে! জানলা দরজা সব এভাবে বন্ধ কেন!!
হঠাত আলো হাতে শাওন এলো চিনির কাছে। পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে দুজন দুজনের দিকে। কোন কথা নেই কারও মুখে, চিনির এতক্ষণের সব অভিযোগ ও বোধয় ভুলে গেছে শাওনের চোখের দিকে তাকিয়ে। প্রকৃতিও যেন স্তব্ধ হয়ে আছে। বারান্দা থেকে হালকা হাওয়া বইছে। মোমের আলোয় অপরূপ লাগছে চিনিকে শাওন এর কাছে। এক ধ্যানে তাকিয়েই আছে। হঠাত করে চিনি বলে উঠল
– কখন এলেন?! আর এই নীল পাঞ্জাবিটা কখন পরলেন?!
– যখন তুমি দৌরে বারান্দায় গেলে, তখন।
– ডাকলেন না যে?!
– তোমার চোখে আমার জন্য অপেক্ষা দেখতে বেশ ভালো লাগছিলো! ঐ মুহুর্তটা হারাতে চাইনি, তাই……
– অভিমানী সুরেই চিনি বলল, আর আমি যে আপনার সাথে এতো সুন্দর গোধূলিটা কাটাতে পারলাম না! সেই বেলায়?!
– কই?!! আমি তো তোমার পাশেই ছিলাম! বরং আমি তো প্ল্যান করছিলাম, আজ গোধূলি থেকে সম্পুর্ন রাত আর ভোঁর হওয়া অবধি আমরা একসাথে বসে দেখব! তোমার না অনেক ইচ্ছা!? একদম গোধূলি বেলা থেকে শুরু করে ভোঁর হওয়া পর্যন্ত প্রকৃতির পরিবর্তন দেখা। আর সাথে থাকবে তোমার প্রিয় কোন একজন?!
– আপনি কিভাবে জানেন??!!
– তোমার ডায়েরি থেকে… সরি, তোমার ডায়েরিটা পড়েছিলাম। তুমি তো তেমন কিছুই বলো না! সব এই ডায়েরিকে বল!
– আচ্ছা, এবার থেকে আর ডায়েরি লিখবনা! আপনাকেই সব বলব! শুনবেন তো?!
– শুনবোনা আবার?!! আগে তুমি বলো, বানাবে কি তোমার সেই প্রিয় একজন?! যাবে? আমার সাথে?! গোধূলি থেকে রাত পার করতে?
কেঁদে ফেলল চিনি! শাওনকে জড়িয়ে ধরে বলল, “যাব! নিয়ে চলেন আমাকে?!”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত