-এইযে আমার আদুরে বউ কি করছো? -রান্না করছি।
-ওহ !আমার শরীর খারাপ লাগছে রাতে আর কিছু খাবো না। তাই ঘুমাতে গেলাম ।
-যতো যাই বলো। না খেয়ে তোমাকে আমি ঘুমাতে দিবো না।
-আমি খাবো না আজ।তুমি খেয়ে নিও।
-তোমাকে ছাড়া আমি কখনও খেয়েছি? আমিও খাবো না। বলে দিলাম ।
-জেদ করো কেন ?
-কই জেদ করলাম । আমার জায়গায় তুমি হলে কী করতে শুনি? -তোমাকে খাবায়ে ঘুম পারাতাম ।
-আমিতো ঠিক সেটাই করছি। -আচ্ছা তাহলে আমাকে খাইয়ে দিতে হবে।[বউয়ের হাতে খাবার জন্য শরীর খারাপের বাহানা]
-বললেই হয় খাইয়ে দিতে হবে।এমন বাহানা করার কি দরকার। যাহ ধরা খেয়ে গেলাম।
-খাওয়ার টেবিলে গিয়ে বসো।আমি একটুপর খাবার নিয়ে আসছি। টেবিলে গিয়ে বসলাম। সময় যে যাচ্ছেই না। অহনার হাতে খাবার জন্য মনটা ছটফট করছে। (ঠিক ধরেছেন। অহনা আমার বউয়ের নাম) যদিও মাঝে মধ্যে অহনার হাতে খায় তবুও বউয়ের সঙ্গে বাহানা করতে ভালোই লাগে।
-কই হলো?
-এইতো আসছি। একটু চুপ করে বসে থাকতে পারো না? কী আর করার চুপ করে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম। কিছুক্ষণ পরে খাবার নিয়ে আসল। অহনা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে পরম আদরে ।আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি অহনার দিকে। স্পষ্ট বলতে পারবো না কি খাচ্ছি ।কিন্তু খাবারটা খুবই সুস্বাদু লাগছিল ।আসলে অহনার নরম হাতের স্পর্শে খাবার যেন নতুন স্বাদ পেয়েছে। এতো ভালো লাগছিলো এই মুহূর্ত বলে বুঝাতে পারবো না । মনটা সুন্দর মুহূর্তের মাঝে হারিয়ে গেছে ।
-ইসস! -কি হলো?
-আঙুলে কামড় দিয়ে এখন বলছে কি হলো বদ কোথাকার। আরেকটু হলে মনে হয় আঙুলই খেয়ে ফেলতে। -সরি বউ। সুস্বাদু খাবারে মাঝে হারিয়ে গেছিলাম ।তাই খেয়াল করিনি।
-ও তাই বুঝি? -হুমম। আচ্ছা এই খাবারের নাম কী গো?
-সবজির তরকারী -আবারও সবজি। তুমিতো জানোই আমি সবজি পছন্দ করি না।
-হিহিহি। এতক্ষণ পর বুঝলে? বেশি মাংস,পোলাও,বিরি য়ানি খাওয়া স্বাস্হ্যর জন্য ক্ষতিকর।তাই এখন তোমাকে সবজির তরকারীই খেতে হবে ।
-হু তাইইতো ।নিজে সবজি খাবে আমাকেও জোর করে খাওয়াবে। ঠিক আছে তুমি খাইয়ে দিচ্ছো বলে খাচ্ছি। অহনা সবজি দিয়ে সুন্দর করে ভাত মাখায়ে এমনভাবেই দেয় বুঝতেই পারি না যে আমি সবজি খাচ্ছি । আমার খাওয়ার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে অহনা ।মুখটা দেখে একটু মন খারাপও মনে হচ্ছে ।বুঝেছি আমি অহনার হাতে এতো আরামে খাচ্ছি অহনার ও ইচ্ছা করছে নিশ্চয় আমার হাতে খেতে।
-এই তুমি খাবে না। দেখি তোমাকে খাইয়ে দি।হা করো। কথাটি শুনে অহনা আনন্দিত হয়েছে বুঝতেই পারছি।মনে হচ্ছে কথাটি শুনার অপেক্ষায় ছিলো। আমিও গালে তুলে অহনাকে খাইয়ে দিলাম।চোখে পানি টলমল করছে মেয়েটির খুশিতে
-জানো বউ রান্নাটা বেশিই টেস্টি হইছে।
-তাতো হবেই। আমি খাইয়ে দিলেতো তোমার কাছে প্রতিবারই টেস্টি হয়।
-এতোই যখন জানো তাহলে খাইয়ে দিতে পারো না? -এহ! তুমি মনে হচ্ছে ছোট্ট বাবু যে খাইয়ে দিতে হবে সবসময়। (ভেনচি কেটে)
-আমিতো তোমার ছোট বাবু ই।জানো না?
-হইছে। এখন ঘুমাতে যাও। -ঠিক আছে। কিন্তু তুমি? -আমি কাজসেরে আসছি।
-তাড়াতাড়ি এসো। . বিছানার উপর হেলান দিয়ে ভাবছি বিয়েটা আমাদের পারিবারিক ভাবেই হয়েছিলো। খুব ইচ্ছা ছিলো বউয়ের সাথে প্রেম করার। সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আমাদের বিয়ে করা মাত্র ৩মাস হলো। এরই মধ্যে আমরা একজন আরেকজনের এতোটাই আপন হয়ে গেছি যে এখন একে অপরকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারি না। বউ আমাকে খুব সহজেই আপন করে নিয়েছিলো। সবথেকে বড় বিষয় আমরা ভালোবাসার কাঙাল ছিলাম। একে অপরের একটু ভালোবাসা থেকেই আমাদের মাঝে বৃহৎ ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। আমার বউয়ের মাঝে প্রায় সকল ভালো গুণই আছে।বিশেষ করে খুব আবেগী ও প্রচন্ড রাগী স্বভাবের এই গুণগুলো আমার খুব ভালো লাগে।
আরো অনেক গুণ আছে যা বলে হয়তো শেষ হবে না। ও হ্যাঁ আমার বউয়ের নাম অহনা।নিশ্চয় অনেক আগেই জানেন তবুও বললাম। আর আমার নাম অংকন। প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি। বাবা-মা আমি আর বউ মিলে এই সুখের সংসার। আমাদের নামের মতো আমাদের মাঝেও খুব মিল। একে অপরকে আমাদের থেকে ভালো কেউ বুঝে না। আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবান এমন মনের মতো বউ পেয়ে।
-কি ব্যাপার ঘুমাও নাই কেন?কি ভাবছো এতো? অহনার কথায় ভাবনায় ছেদ হলো।
-তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে যে ঘুম আসে না। আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ভাবছিলাম। -এতো ভাবার কি আছে? -যদি ভাবার কিছু না থাকে তাহলে অন্যকাউকে নিয়ে ভাবি? -ভেবেই দেখ মেরে হাড় ভেঙে দিব হুহ। -আমার বউকে ছাড়া অন্যকাউকে নিয়ে ভাবতেই পারি না। চলো আজ রাতে আকাশের চাঁদ দেখে রাত পার করি। -কাল অনেক সকালে উঠতে হবে। এতো রাত জাগলে যদি শরীর খারাপ করে আর তাছাড়া ঘুম থেকে উঠতেও পারবে না।
-সেসবের জন্য তুমিতো আছোই। তুমি থাকতে চিন্তা নাই এসবের । এখন চলো।
-আমি যাবো না। -ও তাই আচ্ছা আমিও দেখছি কীভাবে না যেয়ে থাকো। তোমাকে কী করে নিয়ে যেতে হবে তা ভালোই জানা আছে। . অতঃপর অহনাকে কোলে তুলে সাদে নিয়ে গেলাম। অহনা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে বুকে মুখ লুকিয়ে রাখছে। সাদে সুন্দর বসার জায়গা আছে সেখানে আমি বসে অহনাকে দেখছি আর অহনা আমার কোলে মাথা রেখে চাঁদ দেখছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এই তুমি চাঁদ না দেখে আমাকে কী দেখছো? চাঁদ দেখার জন্যে সাদে নিয়ে আসছে।
-আমার আসল চাঁদটাই তুমি। চাঁদের আলোতে তোমাকে আরো ভীষণ সুন্দর লাগছে তাই তোমাকেই দেখছি।
-হইছে।আর মিথ্যা বলা লাগবে না।
-তোমার কাছে সত্যি বললেও মিথ্যা হয়ে যাই,না? দুজন দুজনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। যেন চোখের পলকই পড়ছে না। অনেকক্ষণ ধরে আমরা গল্পও করলাম।
-এই আমার ঘুম আসছে। এখন ঘুমাব।
-তাহলে ঘুমাও। অহনা আমার কোলেই চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুমন্ত অবস্থায় অহনা নতুন রূপ ধারণ করছে। এই মেয়ের যে কত রূপ তার ঠিক নাই। একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে। আমি অহনাকে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম তখন রাত২টা বাজে।.
-এই অংকন উঠো। ভোর হয়ে গেছে। নামায পড়তে হবে।
-এতো তাড়াতাড়ি ভোর হয়ে গেল? আরেকটু ঘুমাই প্লিজ। -সেই জন্যেই এতো রাত জাগতে নিষেধ করেছিলাম। উঠো বলছি তাড়াতাড়ি। -তাহলে আদর দিতে হবে। -যাহ দুষ্টু ।দিতে পারবো না। -আমিও উঠবো না। বউটি আমার কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিলো। আমিও দিলাম তবে কপালে নয় ঠোঁটে। হিহিহি। অহনা লজ্জায় মুখ লুকালো আমার বুকে জড়িয়ে ধরে। অনেকক্ষণ পর আজানের সুর শোনা গেল ।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৪:৩০টা বাজে । আমি অবাক হলাম।
-জানতাম তুমি সহজে উঠবে না তাইতো আধা ঘণ্টা আগে তোমায় ঘুম থেকে তুলেছি।
-বাব্বাহ !আমার বউয়ের দেখছি খুব বুদ্ধি। -হুমম। নেও এখন চলো নামায পড়ি। দুজনে এক সাথে নামায পড়ে নিলাম।তারপর আবার কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে সকালে -অহনা আজকে না অফিসে যেতে মন যাচ্ছে না। তোমার পাশে পাশে থাকতে মন যাচ্ছে। -রোজইতো বলো।তাহলে অফিসে যাওয়ার দরকার নাই।
-সত্যি?(খানিকটা অবাক হয়ে) -হুমম সত্যি
-আমার বিশ্বাস হয় না।যে কোনদিন আমাকে অফিস কামায় দিতে দেয় না। আজ তার মুখে এমন কথা। সত্যি করে বলো?
-আরে বোকারাম আজ শুক্রবার এটাও ভুলে গেছো? -ওহো ভুলেই গেছিলাম।তাই বলি তোমার মুখে এমন কথা। (মজা করে)
-তোমার কি মনে হয় আমি প্রতিদিন ইচ্ছা করে অফিসে পাঠায়? অফিসে না গেলে বকা খেতে হবে বসের কাছে বলেইতো অনিচ্ছা সত্বেও তোমাকে জোর করে পাঠায়। আমার বুঝি ইচ্ছা করে না তোমার সাথে সময় কাটাতে ? এই বলে কাঁদতে শুরু করে দিল।
-আরে আরে কাঁদছো কেনো? আমিতো মজা করে বললাম। কেঁদো না আমার লক্ষী মিষ্টি বউ। তোমার কান্না আমি যে সহ্য করতে পারি না। জড়িয়ে ধরলাম বউকে । কান্না থামানোর একমাত্র উপায় জড়িয়ে ধরা। মেয়েটাও না একটুতেই কেঁদে একাকার করে ফেলে।
-অহনা আজকে আমরা সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরবো।দুপুরে বাইরে থেকেই খাবো। -হুমম।চলো এখনই বের হই।
-আগে ব্রেকফাস্ট তো করে নিই।তারপর আমি গোসল করে জুম্মার নামাজ পড়ে এসেই রেডি হয়ে বের হবো। আজ কিন্তু তোমায় শাড়ি পরতে হবে।
-তুমি পড়ায়ে দিলে পড়বো । ঠিক আছে আমিই পড়িয়ে দিব। সকালে একসাথে নাস্তা করলাম। দুপুরে নামাজ পড়ে এসে রেডি হলাম। আমি শাড়ি পড়ায়ে দিলাম । যতবারই শাড়ি পড়েছে প্রতিবার আমাকে পড়িয়ে দিতে হতো। অহনা ভালো করে শাড়ি পরতে পারতো না। ইচ্ছা করেই শিখে নি। আমি বলে খুব সুন্দর শাড়ি পড়াতে পারি। আমারও শাড়ি পড়াতে ভীষণ ভালো লাগে। বুঝেনইতো বউকে শাড়ি পড়িয়ে দেবার মজাই আলাদা । অনেক বছর আগে আম্মুর কাছ থেকে শাড়ি পড়া শিখেছিলাম। সেদিন শিখার জন্য আমাকেই শাড়ি পড়তে হয়েছিলো। আম্মু আর দাদী দেখে ওরে হাসাহাসি করা। এখন ভাবতেও লজ্জা লাগে। শুধুমাত্র বউকে শাড়ি পড়াতে পারার জন্য এমন করা। সেই ইচ্ছাও পূর্ণ হলো। অহনা আমার কোন ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখে না।
-দেখোতো কেমন লাগছে। খুব সুন্দর করে সেঁজেছে আমার বউটি। অহনাকে দেখে নতুন করে প্রেমে পড়ে গেলাম।এত্তো সুন্দর লাগছে কি আর বলবো। ইচ্ছা করেই বললাম -একটুও ভালো লাগছে না। অহনা মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। এমন কথা আশা করে নি। বেশি মন খারাপ হলে এখনই কেঁদে চোখের কাঁজল লেপ্টে যাবে সুন্দর সাঁজটাও নষ্ট হয়ে যাবে। অহনা এতো কষ্ট করে আমার জন্যে সাঁজলো আর আমি কি বলে ফেললাম ।
-ওলে আমার সুন্দরী পরীরে। আমি এমন কথা বললাম আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে? তোমাকে এত্তো এত্তো সুন্দর লাগছে। পরীরাও দেখলে নিশ্চিত লজ্জা পাবে গাল টেনে বললাম। চলো তাহলে যাওয়া যাক ।
-হুমমম . অহনা প্রাকৃতিক পরিবেশেই ঘুরতে খুব ভালোবাসে। দুপুরের খাবার বাইরে থেকে খেয়ে ঘুরতে লাগলাম প্রকৃতির মাঝে। আজকের আবহাওয়াটাও অনেক সুন্দর।দক্ষিণা বাতাস বইছে । আবহাওয়াটা হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা। ঘুরতে ঘুরতে কখন যে দুপুর থেকে বিকাল আর বিকাল থেকে সন্ধা হয়ে গেছে বুঝতেই পারি নি। আমার মনে হয় এমন মিষ্টি সুন্দরী বউয়ের সাথে ঘুরলে কারোর সময়ের প্রতি খেয়াল থাকবে না ।খুব মজা করলাম ।এখন বাড়িতে যেতে হবে।
হঠাৎ অহনা মার্কেট করতে চাইলো। বাধ্য হয়ে মার্কেটে যেতে হলো। বরাবরের মতো এবারও অহনার জিনিস আমি ও আমার জিনিস অহনা পছন্দ করলো।অহনা আমার জন্য নীলের মাঝে সাদা চেক শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পছন্দ করলো। আর আমি সুন্দর একটি সবুজ শাড়ি পছন্দ করলাম। এদিকে পকেটে হাত দিয়েই দেখি আর তেমন টাকা নেই। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।
এখন বলতেও খারাপ লাগছে। অহনা আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবলো তারপর বললো -আজ আর কিছু কিনবো না।পরের সপ্তাহে মনভরে কেনাকাটা করবো কিন্তু। তারমানে বুঝে গেছে আমার মন খারাপের কারণ। আমিও খুশিতে রাজি হলাম। অহনা কেনাকাটা তেমন পছন্দ করতো না। যখন বুঝতে পারলো আমি নিত্যনতুন পোশাকে অহনাকে দেখতে খুব পছন্দ করি তখন থেকেই কেনাকাটা ভালো লাগে ।অহনা আগে আমার পোশাক কিনবে তারপর নিজের পোশাক কিনে। দোকানীদের বিল দিয়ে মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসলাম। -আমার কোন দোষ নেই। আমিতো জানতাম না তুমি কেনাকাটা করবে আজ। তাই টাকা বেশি এনেছিলাম না।
-আমি কি এতার জন্য কিছু বলেছি তোমায় ?
-না। আচ্ছা তুমি প্রতিবার কীভাবে বুঝো আমার মন খারাপ?
-এতো ভালোবাসি তোমায় আর এটুকু বুঝবো না। তাছাড়া তুমিও তো বুঝে ফেলো ।তোমার ঐ চোখের ভাষা আমি বুঝতে পারি। আর এমন প্রশ্ন করছো কেন? তার মানে তোমার বিশ্বাস হয়না আমি তোমাকে ভালোবাসি?
-তুমিও না কথার শুধু অন্যমানে খুঁজে বের করো।
-আমি অন্যমানে বের করি? জেনেশুনে তাহলে ওমন প্রশ্ন করো কেন বলো? এইরে আরো রেগে যাওয়ার আগেই কিছু করতে হবে। ওইতো সামনে ফুসকাওয়ালা। অহনাতো ফুসকা পাগলী।
-আর বলব না । ভুল হইছে । এবার রাগ করতে হবে না চলো ফুসকা খাই। অহনার জন্য একপ্লেট ফুসকা অর্ডার দিলাম। -এই তুমি খাবে না ? -আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।
-জানি তোমার ফুসকা ভালো লাগে না। তবুও তোমাকে খেতে হবে। তোমাকে ছাড়া আমি একা কখনও খেতে পারবো না। কি আর করার। আরেকপ্লেট ফুসকা অর্ডার দিলাম। অহনার জন্য হলেও খেতে হবে। দুজনে একসাথে ফুসকা খাচ্ছিলাম। অহনাতো এমনভাবে খাচ্ছে যেন আরো ৪-৫প্লেট ফুসকা দিলেও খেয়ে ফেলবে। এদিকে আমি আস্তে আস্তে খাচ্ছি। এমন সময় কোথা থেকে আমার কলেজ লাইফের বান্ধবী সামনে এসে হাজির। অনেক বছর পর দেখা ভাব বিনিময় করলাম। আমার বউয়ের সাথে পরিচয় করিয়েদিলাম।
হেসে হেসে একটু গল্প মজা করছিলাম। ওদিকে বউয়ের দিকে তাকাতেই মুখ ফুলিয়ে রেগে আগুন হয়ে আছে । ভয়ে তাকাতেই পারছি না। বুঝতে পেরেছি আজ আমার কপালে দুঃখ আছে। পরিস্তিতি খারাপ দেখে বান্ধবীকে ইশারা করে বুঝানোর চেষ্টা করলাম যে বউ খুব রেগে গেছে আমাদের গল্প করাতে ।সে কিছুটা আঁচ করতে পেরে বেস্ট অফ লাক বলে বিদায় নিলো। অহনা ফুসকা না খেয়েই রাগে বাসার দিকে হাঁটা দিলো। এখান থেকে বাসা মিনিট পাঁচেকের রাস্তা। অহনা সামনে সামনে হাঁটতে লাগতো আর আমি পিছনে পিছনে। বাসায় গিয়ে দৌড়ে বেড রুমে চলে গেল। আমি রুমে যেতেই দেখি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে । কাছে যেতেই অন্যদিকে ঘুরে বসলো। -কি হলো বউ? কাঁদছো কেন?
-একদম আমায় বউ বলবে না। আমার ইচ্ছা হচ্ছে তাই কাঁদছি। তোমারকি? আর তুমি এখানে কেন? যাও তোমার প্রাণের বান্ধবীর সাথে মনভরে গল্প করো। -এতো রাগ? দীর্ঘদিন পর দেখা কথা না বললে কি না মনে করবে তাই একটু বললাম।
-সে কি মনে করবে সেটা দেখছো আর আমার কষ্ট হচ্ছে সেটা বুঝো না ? আমারতো কোন গুরুত্বই নাই তোমার কাছে। তুমি খুব ভালো করেই জানো অন্যকোন মেয়ের সাথে আমি তোমাকে সহ্য করতে পারি না। তারপরও তুমি খুবতো গল্প করলে হেসে হেসে। আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে তাইনা ? যখন থাকবো না তখন বুঝবে বলেই আরো কান্না জুড়ে দিল।
-আমার বউ আমায় এত্তো ভালোবাসে বুঝি? আচ্ছা মাফ করে দেও। এইযে কান ধরছি এমন হবে না কখনও। তুমিই আমার হৃদয়,প্রাণ,ভালোবাসা সবকিছু। তোমার কিছু হলে কি আমি বাঁচবো বলো? চলে যাওয়ার কথা কখনও মুখে আনবে না। যদি আনো তাহলে আমি নিজেকেই _ _ _ __বলার আগেই আমাকে অহনা জড়িয়ে ধরলো। অনেক শক্ত করে ধরলো যেনো হারিয়ে যেতে না পারি।
-মার দিবো কিন্তু। তোমাকে ভালোবাসবো নাতো কাকে ভালোবাসবো? তোমাকে ছাড়া এই মেয়েটা যে শূন্য। অনন্তকাল তুমি শুধু আমার আর কারোর না।অন্যকোন মেয়ের সাথে এবার হেসে কথা বললে চোখ তুলে নিব বলে দিলাম। আমি দুই হাতের বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে চোখের পানি মুছে দিলাম। আমি খুব ভাগ্যবান এতো ভালোবাসাকারী বউ পেয়েছি বলে। এভাবেই যেন চিরটাকাল আমাদের ভালোবাসা অটুট থাকে।