“”””””””””
জীবন কল্পনার চেয়েও বেশি কিছু। জীবনের প্রত্যকটা মহূর্ত জীবন গল্পের একেকটা পর্ব।
প্রত্যকটা জীবনের গল্প প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত না পড়ে কল্পনাও করতে পারবেন না কি ঘটতে চলেছে।
“””””””””””
আমি ফারাবি।
আমি ৮-১০ টা ছেলের মতো হয়ত সুন্দর আর স্মার্ট না।
আমি দেখতে ঠিক কালির মতো।
কালো ছেলে আমি একটা।
তাই কখনো প্রেম ভালবাসার দিকে হাত বাড়াইনি।
একটা কালো ছেলেকে কে ভালোবাসবে, সবাইতো ভালবাসে সুন্দর স্মার্ট ছেলে আর টাকাকে।
তবে সবাই না অনেকে শুধু সুন্দর মনটাকে ভালবাসে।
সবসময় গল্প লেখার কারনে প্রতিদিন অনেক অনেক মেসেজ আসতো কিন্তু ঠিকমতো রিপ্লে দিতে পারিনা। কারন আমি ফেসবুকে কম আসি।
সবার মেসেজগুলো দেখতাম।
একদিন একটা আইডি থেকে মেসেজ আসে।
মেসেজটা দেখে আমার ভিতরটা জানি কেমন করে উঠল।
আমার মনে হলো সে আমার খুব কাছের কেউ।
সে জানালো তার নাম জয়া।
ওর বাসা আমাদের বাসা থেকে ৪-৫ কি:মি দুর।
এর কয়েকদিন পর জয়ার সাথে ফোনে কথা হতো, ফোন মেসেজে কথা হতো।
জয়া আমার কাছ থেকে আমার ছবি নিয়ে দেখেছে কিন্তু আমি ওর ছবি নেইনি কারন,
আমি জানি জয়া আমার থেকে হাজার হাজার গুন বেশি সুন্দর আর দেখে যদি ওকে ভালবেসে ফেলি তখন তো এই কালো ছেলেকে সে ঘূণা করবে অপমান করবে।
আমাকে ছবি দেখার পরেও জয়া আমার সাথে কথা বলতো, তাই আমি তখনি বুঝেছি সে দেখতে যেমনি হোক কিন্তু ওর মনটা অনেক ভালো আর সুন্দর।
এভাবেই চলে যায় বেশ কিছুদিন। নিয়মিত কথা চলতে থাকে আমাদের মাঝে।
বেশ কিছুদিন পর বুঝতে পারি আমি জয়ার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি।
একসময় বুঝতে পারলাম আমি ওকে ভালবেসে ফেলেছি।
যেদিন থেকে ওর প্রতি আমার ভালবাসাটাকে বুঝতে পেরেছি সেদিন থেকে প্রতিদিন একা একা কাদতাম।
কেন কাদতাম জানেন?
কারন, আমি একটা কালো ছেলে। আমার হয়ত যোগ্যতা নেই জয়াকে ভালবাসার।আর জয়াই বা কেন ভালবাসবে আমাকে।
অনেক কাদতাম প্রতিদিন, ভাবতাম যদি জয়াকে আমার নিষ্পাপ ভালবাসার কথা বলি তাহলে তো সে আমাকে ঘূণা করতে শুরু করবে, হয়তো আর কথাই বলবেনা আমার সাথে।
স্কুল জীবনেই তো কেউ আমার সাথে মিশতো না কালো আর গরীব ছিলাম বলে।
স্কুল জীবনে একটা মেয়েকে ভালবেসেছিলাম। অনেক বেশি ভালবেসেছিলাম।
কিন্তু সে কি করেছে জানেন?
আমাকে অপমান করেছে।
যদি কোন মানুষকে ওই কথাটা বলে অপমান করা হয় তাহলে কেবল সেই বুঝবে কতটা যন্ত্রনা আর কষ্টদায়ক সেই কথা।
সেই মেয়েটা আমাকে বলেছিল আমি নাকি তার নখের যোগ্য না আর আমার পরিবার নাকি তার পরিবারের যোগ্য না।
সেই স্কুল জীবনের সেই অপমানটার কথা মনে পরলে জয়ার থেকে পিছিয়ে আসি।
পুনরায় অপমান হওয়ার ভয়টা কাজ করত মনের ভিতর।
তবে আমি এটা বিশ্বাস করতাম জয়া ৮-১০ টা অহংকারি মেয়ের মতো না।
ওর মনটা অনেক সুন্দর ছিল।
বেশ কিছুদিন কেটে যাবার পর আমি বুঝতে পারলাম আমি সত্যি জয়াকে অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছি।
তারপর প্রতিদিন জয়াকে আমার ভালবাসার কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু প্রত্যেকবার ফিরে এসেছি বলতে পারিনি।
মনের ভেতর ভয় কাজ করত জয়া কি আমার মতো একটা সাধারণ আর কালো ছেলেকে ভালবাসবে।
অনেক কষ্ট হত ওকে ভালবাসার কথা বলতে না পারায়।
পরে যখন মনে হলো জয়া তো অন্যদের মতো না, হয়ত সে আমার ভালবাসাকে ফিরিয়ে দেবেনা।
এই বিশ্বাস নিয়ে জয়াকে আমার ভালবাসার কথা জানালাম।
জয়া আমার কথা শুনে চমকে গেল। তারপর একদিন পর সে আমাকে তার উত্তর জানায়।
হ্যা আমার ভালবাসা স্বার্থক হয়। জয়া আমাকে ফিরিয়ে দেয়নি।
শুরু হয়ে গেল একটা কালো ছেলে আর মিষ্টি মেয়ের প্রেমকাহিনী।
অনেক ভালবাসতাম জয়াকে আর জয়াও আমাকে কম ভালবাসতোনা।
একদিন জয়াকে বললাম,,,,
আমি-:আচ্ছা জয়া তুমি আমার কি দেখে আমার ভালবাসা গ্রহন করলা?
জয়া-: দেখো ফারাবি মানুষের যোগ্যতা দিয়ে ভালবাসা হয়না, ভালবাসতে সুন্দর একটা মন লাগে।
আমি-:হুম, কিন্তু আমিতো অনেক কালো, দেখতেও ভালোনা।
জয়া-: হ্যা, কিন্তু কালোরা কি মানুষ না? তাদের ভেতর কি সুন্দর একটা মন নেই বলো?
আর শোনো কালোর ভেতরে কিন্তু ভালো লুকিয়ে থাকে যেমন অন্ধকারে প্রকৃত আলো খুজে পাওয়া যায় যেটা বেশি প্রতিফলিত হয়।
আমি-:হুম। আমাকে অনেক ভালবাসো জয়া??
জয়া-:হ্যা বাসি যেটা বলে বোঝাতে পারবোনা।
“”””””””
তারপর বেশ ভালভাবেই এগোতে থাকে আমাদের ভালবাসা।
একসময় আমরা বিয়ে করি।
বিয়ের পর জয়া আমার এতটা কেয়ার করতো আর ভালবাসতো যেটা আমি কল্পনাও করিনি।
বাসর রাতের পরে সকালে একটা সুন্দর সুর শুনে ঘুম ভাঙ্গে আমার। যে সুরটা পৃথিবির অন্য সকল সুরকে হার মানায়।
আমি অন্য রুমে যেয়ে দেখলাম জয়া কোরান শরিফ তেলাওয়াত করতেছে।
অবাক হয়ে যাই আমি, এই মেয়েটা এত ভালো, আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া আদায় করি এমন একটা বউ পাওয়ার জন্য।
এর পরের দিন থেকে শুরু হলো শাসন যেটা আমার ভালোর জন্যই ছিল।
পরের দিন বাসায় আসতেই জয়া বলল,,,,,,
জয়া-: এই শোনো আজকে কয় ওয়াক্ত নামায আদায় করছো?
আমি-: না মানে, এক ওয়াক্ত না।
জয়া-:আজকে নামায না পড়ার কারনে খাবার বন্ধ।
আমি-: কি বলো। আমার তো অনেক ক্ষুদা লাগছে আর তোমার রান্না না খেলে আমার পেট ভরেনা।
জয়া-: যেদিন এক ওয়াক্ত নামায মিস্ হবে সেদিন অনেক শাস্তি পেতে হবে।
“”””””
এরপর না খেয়ে রাতে ঘুমাতে গেলাম,,,,,
জয়া-: দাড়াও,, যে নামায পড়েনা সে আমার সাথে ঘুমাতে পারবেনা। যাও নিচে ঘুমাও।
“”””””””
আর কিছুই বলতে পারলাম না কারন ওকে বলে লাভ নেই সে যা বলে তাই করে।
তাই ফ্লোরে শুয়ে পরলাম।
একটু পর কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। দেখলাম জয়া কাদতেছে।
আমি-: এই সোনা বউ কাদো কেন?
জয়া-:চুপ কথা বলবানা, আমি কাদলে তোমার কি?
আমি-: আমার কষ্ট হয়।
জয়া-:তাহলে আমাকে কষ্ট দাও কেন? জানো আমিও না খেয়ে আছি।
আমি-:এই কেন?
জয়া-: কারন স্বামীকে না খেয়ে রেখে স্ত্রী কিভাবে খাবে। সব তোমার দোষ।
আমি-:আমি কি করলাম?
জয়া-: বোঝোনি কি করেছো।তুমি নামায পড়োনি তাই না খাইয়ে রেখেছি আর ফ্লোরে ঘুমাতে দিয়েছি, তুমি জানোনা তোমার বুকে না ঘুমালে আমার ঘুম আসেনা।
আমি-:হ্যা, বুঝেছি।
জয়া-:প্লিজ আর কখনো নামায মিস্ করবানা কারন আমি মৃত্যুর পরেও তোমাকে চাই।
জয়ার কথা শুনে আমি কেদে ফেলি। এত ভালবাসে এই কালো ছেলেটাকে।
আমি-: ঠিক আছে আর কখনো নামায মিস্ করবোনা এবং তোমাকে কষ্ট দেবনা।
“”””””
এরপর একদিন,,,,,,,
আমি-: আচ্ছা জয়া আল্লাহ আমাকে এত কালো না বানিয়ে একটু সুন্দর বানাতে পারতোনা?
জয়া-: বাজে কথা বলবানা, আল্লাহর থেকে তুমি কি বেশি বোঝো।
আমি-:ঠিক আছে, কিন্তু,,,,,।
জয়া-:আচ্ছা আশে পাশের কত মানুষ তো দেখো, কেউ অন্ধ, কেউ বোবা, কেউ আবার কথা বলতে পারেনা,
অনেকের হাত পা নেই, আবার অনেকে পাগল, আরো অনেক কিছু। তাদের মধ্যে অনেকেই দেখতে সুন্দর।
আচ্ছা আল্লাহ্ যদি তোমাকে সুন্দর চেহারা দিয়ে তাদের মতো সেইসব বিকলঙ্গ পঙ্গু মানুষদের মতো করে তৈরি করতো তখন কেমন হতো?
আমি-: হুম আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
জয়া-:হ্যা, তাইতো শুকরিয়া আদায় করো নামায পড়ো কারন আল্লাহ্ তোমাকে স্বাভাবিক মানুষ বানিয়েছে।
“””””””
সেদিনই আমি আমার ভুল বুঝতে পারি আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি জয়াকে আমার করে দেওয়ার জন্য।
অনেক ভালবাসি মিষ্টি বউটাকে। এখন অনেক ভালভাবেই কেটে যাচ্ছে আমাদের দিন আল্লাহর রহমত আর জয়ার অবদানে।
“”””””””