কালো বর

কালো বর

বাবা মা জোর করেই বিয়ে দিলো।
একদম মতের বিরুদ্ধেই। ইচ্চা ছিলো লেখাপড়াটা শেষ করে বিয়ে করবো কিন্তু সেটা আর হলো না।
.
>বিয়ের কয়েকদিন আগের ঘটনাঃ
“বাবা আমি এখন বিয়ে করতে চাই না লেখাপড়াটা শেষ করতে চাই ”
বাবার মুখের উপর জীবনের প্রথম একটা কথা বললাম। কথাটা বলেই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
– বিয়ের পরও লেখাপড়াটা শেষ করা যাবে।

আর ছেলে টা খুব ভালো আমি জানি তোমাকে কোন কিছু তে বাধা দিবে না।একটু কালো হতে পারে তবে মনটা অনেক ভালো।
– কিন্তু বাবা আমি…….
– দেখো কোন কথা শুনতে চাই না আমি যা বলছি তাই।
বাবা কথাটা বলেই চলে গেল।
– মা তুমি কিছু বলো আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।
– আমি কিছু বলতে চাই না কারন তোর বাবার বিরুদ্ধে যেতে পারবো না।
– ও খুব স্বামী সোহাগা তাই না? আমিও দেখে নিবো বলে দিলাম হু।
– কি দেখবি হুম?
– তোমার আর বাবা ডিভোর্স করাই দিবো এই বলে দিলাম!
– বড্ড পাজি হইছিস তাই না দিবো একটা কানের নিচে।
– ও আচ্চা তোমার আর বাবার ডিভোর্স করালে এই বয়সে কই যাবা?

–আচ্ছা যাও মাফ করে দিলাম একটা কথা বলে দিলাম জামাইয়ের ডাক শুনতে পারবে না হুু…
– যাবি এখান থেকে নাকি তোর বাবা কে ডাকবো?
– যাচ্ছি যাচ্ছি কিছু একটু হলেই আদরে আল্লাদা হয়ে ওকে স্বামী ওগো কই তুমি বলে ডাকাডাকি শুরু করে!
চলে আসলাম।
> বিয়েটা হয়েই গেলো। বাসার ঘরে বসে আছি এখনো মহারাজার আসার কোন নাম গন্ধ নেই। হয়তো শালিদের সাথে লুচুমি করছে হু।
আব্বু আর আম্মু কাম পায় নি দুই দুইটা বোন বানাই দিলো।
তার উপর আবার সেই লেবেলের সুন্দর। আরে ওদের এতো সুন্দর হতে কে বলেছে আমি সুন্দর হলেই তো হয়।
বরের মাথা চিবাচ্ছি মনে মনে আসুক একটার ঘাড় ধরে বের করে দিবো একদম বাসর আর কপালে জুটবে না হু।
একটু পর দড়জা খুললো! হুমমম ঠিক ধরেছেন মজারাজা এসেছে।
আমার দিকে এগিয়ে আসছে বুকে ধুকপুক করছে।
কিছু বললে আবার জোর করে কিছু করবে না তো? দেখিই না কি হয়।
হুমমম বাবা ঠিকই বলেছিলো ছেলেটা কাল তবে একটু বেশিই কালো যা আগে বলে নি বাবা।
কাছে এসে দাড়ালো।
– এই যে শোনেন একদম কাছে আসবেন না বলে দিলাম দুর হন এখান থেকে! বিছানাতে ঘুমাতে হবে না বাইরে যান কি হলো দাড়িয়ে আসেন কেন? কানে কথা যায় না?
ওরে আমার কথা শুনে আরও কাছে আসছে!
দেখলাম একটা বালিশ নিয়ে বাইরে বেলকোনিতে গেলো।
যাক ছেলেটা মানে বর টা তাইলে ভালোই কথা শুনবে আমার।
ইশ রে কত স্বপ্ন দেখতাম এটা সুন্দর ছেলের সাথে আমার বিয়ে হবে কিন্তু কি হলো একটা কালো ছেলে? ভাবতেই কেমন যেন লাগছে।
সুয়ে আছি ঘুম আসছে না!
একটু পর ঠাস ঠাস করে চড়ের শব্দ পেলাম। শব্দটা বাইরের বেলকোনি থেকে আসছে।
হাটি হাটি পা পা করে গেলাম।
দেখি মশা মারছে। ইশ রে বর বেচারা বউকে আদর করা বাদে মশা মারছে।
– কি খুব মশা?
আমার কথা শুনে চুমকে উঠলো।
– না মানে….
– কয়েল আনবো? নাকি ঘরে শুবেন?
– না না ঠিক আছে ছোট থেকেই অভ্যাস আমি তো গ্রামে মানুষ এইটা ব্যাপার না।
– ওকে তাইলে থাকেন!
ঘরে এসে আবার সুয়ে পড়লাম।
ওরে বাপ এতো সুন্দর কণ্ঠ? কথায় আছে কোকিল কালো হলেও কণ্ঠে মধু আছে!
আচ্ছা ঘরে আনি গল্প করা যাবে।
– এই যে শুনছেন? ভিতরে আসেন তো!
– কেন?
– আসতে বলছি আসেন এতো কথা বলেন কেন?
একটু পর দেখলাম আসলো।
– একি বালিশ কই ওটা কি আম আনবো?
– মানে?
– মানে আপনি ছোফায় সুয়ে থাকেন! একা আমার ভয় করে।
-আরে আমি তো বাইরেই আছি!
– তাতে কি হুমমম? যান বলছি।
– আচ্ছা।
বালিশ নিয়ে আসলো।
এসেই সুয়ে পড়লো। আরে আরে ঘুমাবে নাকি? কথা বলার জন্য ডাকলাম এতো দেখি সুয়ে পড়েছে।
– এই যে ঘুমালেন? নাকি?
– না তো
– তাইলে সুয়ে পড়লেন কেন?
– তো রাতে কি করবো?
– গল্প করেন!
– কি গল্প?
– আরে আরে আপনি না গল্প লেখেন? তো এখন ন্যাকামি কেন? আচ্ছা আপনি কি পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন?
-কই না তো!
– তাইলে শরীরের এই অবস্থা কেন?
– না মানে ছোট বেলা থেকে খুব কষ্ট করে মানুষ হইছি তো তাই আর কি?
– আপনি মানুষ হইছেন? বন মানুষ একটা।
– কিছু বললেন?
– কই না তো কি বলবো।
– ও….
– আচ্ছা চাকরি নাকি বেকার?
– না মানে…..
– ও বুঝছি বেকার তো? ভালো এখন কি খাওয়াবেন বউ কে হুমমম?
– ইঞ্জিনিয়ার
– ও আচ্চা! …কি..!!?
– জ্বি..
– আপনার এই শরীর নিয়ে কে দিলো এই চাকরি?
– সরকার।
– মানে?
– সরকারী ইন্জিনিয়ার।
– বুঝলাম!
-না বুঝলেও সমস্যা নেই!
ওরে এই ছেলের তো সাহস কম না আমার মুখে মুখে কথা বলে!
– তো গান পাড়েন?
– ওই আর কি!
– শুনান তো।
– তুমি কার পোষা পাখি কাজল বরং আখি…. রক্ত জবা তোমার ওই মুখ…….
আমারে কান্দাইয়া পাও নি সুখ আমার আদরের পিন্জিরার পোষা পাখি রে……..
আমারে কান্দাইয়া পাও কি সুখ।
ওরে আল্লাহ এই ছেলের প্রেমে পড়বো নাকি গান শুনে? এতো সুন্দর কণ্ঠ কেন?
রাতটা কেটে গেলো গল্প করে!
নাহ্ কালো হলেও মন টা সত্যিই অনেক ভালো।
সকালে অনু ফোন দিলো ওইটা আমার দুশমন বান্ধবী।
– কি রে এখনো বরের বুক থেকে উঠিস নি? হি হি হি (অনু)
– মাথা গরম করাস না যা বলছি বল তারাতারি।
– কেন রাতে বুঝি ঘুম হয় নি তো কেমন হলো?
– এই সব ছাড়া তোর মাথায় কিছু আসে না?
– আচ্চা তুই নাকি একটা কালো ছেলকে বিয়ে করলি?
– হুমমম তো এতে তোর সমস্যা কি?ও সাদা হলে তুই বুঝি প্রেম করতি? কিন্তু সেইটা আর হলো না রে ছুরি।
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম!
আরোও কয়েক জন ফোন দিয়ে একিই প্রশ্ন, কিরে কালো বর কে বিয়ে করলি?
কেমন ডা লাগে?
আরে ভাই আমার বর যেমন ইচ্চা তেমন হোক তোমাদের কি? যত্তসব।
সকালে বাইরে বের হতেই মা মুচকি মুচকি হাসছে।
“কি রে এতো বেলা হলো যে রাতে ঘুম হইছিলো? “ভাবি হেসে হেসে বললো।
ভাবি তুমিও ধুর ভালো লাগে না।
– আচ্ছা তাইলে তোর উকিল আংকেল কে ডাকি? (মা)
– কেন?
– তোর তো ওরে পছন্দ না তাই ভাবছি এখনি যদি ডিভোর্স দিস তাই।
– আমাদের ডিভোর্স করালে না তোমার আর বাবা ডিভোর্স করিয়ে দিবো হু।
সবাই উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো আমার গলাটা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।………….(সমাপ্তি)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত