:- তুমি কি অামাকে পছন্দ করো?( অামি)
= হ্যাঁ করি, ( মারিয়া)
:- অামাকে কি সত্যি ভালোবাসো?
= হ্যাঁ অনেক ভালোবাসি।
:- তাহলে তুমি অামাকে বিয়ে করবে কবে?
= “” (সে চুপ )
:- কি হলো জবাব দাও, তুমি বিয়ের জন্য রাজি হলে, অামি অামার বাবা মা কে বলতে পারি তোমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে।
= “” ( মারিয়া কোন কথা না বলে ফোন রেখে দেয় )
—-
মারিয়ার সাথে অামার প্রথম দেখা হয় তাদের কলেজে।
অামি একদিন অামার বন্ধু রাকিব এর সাথে দেখা করতে তার কলেজে যাই। তখনি মারিয়া কে প্রথম দেখি।
প্রথম দেখাতে তাকে অামার খুব ভালো লেগে যায়, তাই মারিয়া কে দেখিয়ে রাকিব কে জিজ্ঞেস করি।
—-
:- দোস্ত নীল ড্রেস পড়া মেয়েটা কে? ( অামি)
= ওর নাম মারিয়া। এই কলেজেই পড়ে, কেন কি হয়েছে?,( রাকিব)
:- কিছু হয়নি , তবে কিছুদিন পর হবে।
= কি হবে দোস্ত?
:- তোর ভাবী হবে মারিয়া।
= হা হা হা,
:- ওই শালা হা হা হা করবি না। সব দাঁত ভেঙে দিবো নয়তো। দেখ দোস্ত তোর কিন্তু অামারে একটা হেল্প করতে হবে।
= কি করতে হবে বল।
:- তার বয়ফ্রেন্ড অাছে কি না, একটু খোঁজ নিয়ে দেখ, যদি তার বয়ফ্রেন্ড না থাকে তাহলে তার মোবাইল নাম্বার টা যোগাড় করে দে ।
= তার সাথে অামার তেমন কথাবার্তা হয়না, তাই তার সম্পর্কে অামি কিছু জানি না, তবে অামি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি , তোকে রাতে জানাবো।
—-
ওই দিন রাতে রাকিব এসে মারিয়ার মোবাইল নাম্বার দিয়ে বললো, তার কোন বয়ফ্রেন্ড নাই ।
পরেরদিন মারিয়া কে কল দিলাম, তার সাথে কথা বলে অামার সব পরিচয় দিলাম, তার নাম্বার টা কোথায় পেলাম সেটাও বলে দিলাম।
—-
এর পর থেকে মাঝে মাঝে তার সাথে কথা হতো, কিছু দিনের মধ্যে অামরা ভালো বন্ধু হয়ে যাই,
মাঝে মাঝে রাকিব এর সাথে দেখা করার নাম দিয়ে কলেজে গিয়ে মারিয়ার সাথে দেখা করে অাসি ।
—-
এভাবে দুই মাস চলে যাওয়ার পর অামি অার মনের কথাটা মনের মধ্যে রাখতে পারি নাই। একদিন ওকে বলে দেই. অামি তোমাকে ভালোবাসি।
কিন্তু তখন মারিয়া রাজি হয়নি, সে বললো অামাকে ভালোবাসা তার পক্ষে সম্ভব না।
অামি তখন কারন জানতে চাই কেনো ভালোবাসা সম্ভব না।
তখন সে বলে, তুমি অামার অতীত জানো না, অতীত যদি জানতে তাহলে কখনও অামাকে ভালোবাসি বলতে না।
তখন অামি ওকে বলি,তোমার অতীত অামি জানতে চাইনা শুনতে চাইনা, অামি বর্তমানের তোমাকে ভালোবাসি।
অনেক করে বুঝালাম, তারপরেও সে রাজি হয়না। এরপর প্রায় দুই মাস ধরে অনেক চেষ্টা করে,
তার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে পাই।
ধরতে গেলে এক প্রকার জোর করে অামাকে ভালোবাসতে বাধ্য করি।
—-
এখন অামাদের সম্পর্ক হলো এক বছর, সে অামাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু যখনি বিয়ের কথা বলি, তার মুখটা কালো হয়ে যায়।
সে কোন কথাই বলে না চুপ হয়ে থাকে, এক মাস ধরে তাকে বিয়ের কথা বলে চলেছি।মারিয়ার কোন জবাব পাচ্ছি না।
তাই সিদ্ধান্ত নিলাম কালকে অামাকে জানতেই হবে বিয়ের কথা বললে মারিয়া কেনো চুপ হয়ে থাকে, কেনো তার হাসি ভরা মুখটা বিয়ের কথা শুনলে কালো হয়ে যায়।
—-
পরের দিন সকালে মারিয়া কে না জানিয়ে তাদের বাসায় চলে গেলাম, তখন সে কলেজে ছিলো। বাসা থেকে বের হবার অাগে সব প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম ।
মারিয়া দের ঘরে ঢুকে, অাংকেল অার অান্টিকে সালাম করে বললাম।
—-
:- অাংকেল অামার নাম জাবেদ, অামি মারিয়া কে ভালবাসি। তাকে বিয়ে করতে চাই, ( অামি)
[ অামার কথা বলার ভঙ্গি দেখে উনারা হেসে দিলেন]
= হা হা হা তাই, কিন্তু মারিয়া তো কখনো তোমার কথা বলেনি। সে কি তোমায় ভালবাসে? ( অাংকেল)
:- জ্বী, অবশ্যই ভালবাসে।
= তুমি শিওর?
:- ১০০% শিওর। অামাদের এক বছরের সম্পর্ক ।
= আচ্ছা আমি আজকেই মারিয়া কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিব।
:- তো অাংকেল, মা বাবা কে অাসতে বলবো কখন?
= তোমার মা বাবা অাসবে কেনো?
:- বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে অাসবে, বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল করতে অাসবে।
—-
কথাটা শুনার পর ওনার হাসি হাসি মুখটা হঠাৎ করে কেমন অন্ধকার হয়ে গেলো । অামি অবাক হলাম
এ কেমন লোকজন, ভালবাসবে ঠিক আছে। পছন্দ হবে ঠিক আছে, কিন্তু বিয়ের কথা বললেই মুখ অন্ধকার।
অাংকেল অার কোন কথা না বলে চুপ হয়ে থাকেন। অামার তখন মেজাজ টা গরম হয়ে যায়।
তখন অামি বলি, অাপনাদের সমস্যাটা কোথায়, যাকে বিয়ের কথা বলি সেই চুপ হয়ে থাকেন কেনো? তারপরেও অাংকেল কোন কথা বললো না।
তখন অান্টি বললেন,দেখো বাবা মারিয়া যদি সত্যি সত্যি তোমাকে ভালবেসে থাকে, তাহলে কখনোই সে তোমাকে বিয়ে করতে চাইবে না, কখনো না।
অামি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেনো অান্টি বিয়ে করবে না কেনো..?
অান্টি তখন বলে, সে তোমাকে তার অতীত সম্পর্কে কিছু বলে নাই,
অামি বলি, না অান্টি কিছু বলে নাই, তবে অামাদের সম্পর্ক হবার অাগে সে অামাকে তার অতীত সম্পর্কে বলতে চেয়েছিলো, অামি শুনতে রাজি হইনি তখন।
অাচ্ছা অান্টি অাপনি কি অামাকে ব্যাপার টা খুলে বলবেন? কেনো মারিয়া অামাকে বিয়ে করবে না,
তার সমস্যাটা কোথায়?
—-
তারপরে অান্টি বলতে লাগলেন।
দুই বছর অাগে তার বিয়ে ঠিক হয়ে ছিলো, কিন্তু যার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয় সেই ছেলেটা বিয়ের অাগের দিন তার চাচাতো বোন কে নিয়ে পালিয়ে যায়।
এরপর থেকে ওদের খোজ অার কেউ পেলো না, এমনকি তাদের পরিবার ও না। এই ঘটনার তিন মাস পর, মারিয়ার অাবার বিয়ে ঠিক হয় ভালো একটা পরিবারে।
বিয়ের দিন পর্যন্ত সব ঠিক টাক মতো চললো, কিন্তু বিয়ের দিন বরযাত্রী অাসার সময়….,
রাস্তায় তাদের গাড়ি এক্সিডেন্ট করে, বাসের সব লোক এতে মারা যায়. সাথে মারিয়ার বর ও।
সেখান থেকে লোকেরা নানান কথা বলে, মারিয়ার নাকি কখনো বিয়ে হবে না।
সে নাকি অলক্ষী মেয়ে, যেখানে তার বিয়ে হবে, সেই পরিবারের সুখ শান্তি সব নষ্ট হয়ে যাবে, যে ছেলের সাথে বিয়ে হবে সে বেশিদিন পৃথিবীতে বাঁচবে না,
বিয়ের কিছুদিন পর সে মারা যাবে, অারো অনেক অাজে বাজে কথা বলতে লাগলো।
তার পরেও অামরা ওকে বিয়ে দিতে চাইছিলাম,কিন্তু বর পক্ষ যখনি তার অাগের দুইটা বিয়ের ঘটনা শুনে , তখন কেউ অার রাজি হয়না।
দুইটা ঘটনা তার জীবনে ঘটে যাওয়াতে মারিয়া এখন নিজে নিজেকে অলক্ষী মেয়ে মনে করে। মনে করে মানুষের অাজে বাজে কথা গুলোই সত্য।
—-
একটানা কথা গুলো বলে গেলেন অান্টি, অামি অান্টি অার অাংকেল এর মুখের দিকে তাকালাম দেখি দুইজনের চোখে জল,
অামি এক মিনিট নিরব হয়ে থাকলাম, তারপর বললাম দেখেন অামি অামার মা বাবাকে অাগামি কাল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে পাঠাবো।
অাশা করি অাপনারা প্রস্তাবে রাজি হবেন, এই বলে সালাম দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে অাসি।
—-
( দশ বছর পর )
—-
মারিয়ার সাথে অামার বিয়ে হয়েছে দশবছর, দেখতে দেখতে দশটা বছর কখন পার হয়ে গেলে বুঝতেই পারি নাই।
অার বিয়ের দশবছরে কোন অলক্ষুনে কিছু ঘটে নাই অামার সাথে বা অামার পরিবারের সাথে।
অারো উল্টা সব কিছু ভালো হতে লাগলো, বিয়ের অাগে বেকার ছিলাম, এখন বিয়ের পর ভালো একটা জব পেলাম।
অামাদের অভাবের সংসার ছিলো, কিন্তু এখন অার অভাব জিনিষ টা অামাদের সংসারে নাই।
মারিয়াকে বউ করে ঘরে অানার পর থেকে অামাদের ঘরটা সুখে শান্তিতে ভরে গেল । অার এখন অামাদের এক মেয়ে এক ছেলে।
তাদের নাম মারজিয়া অার জাকির। সব সময় দুইজনে ঘরটা কে অালোকিত করে রাখে।
—-
বিছানার ঠিক মাঝখানে অামি শুয়ে অাছি, অামার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে মারিয়া ।
সে বললো, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে,
অামি তখন বললাম, তুমি ঘুমাও আমি কি তোমাকে ডিস্টার্ব করছি নাকি।
সে বললো, নাহ । কিন্তু ঘুমাতে ইচ্ছে করে না, সারারাত তোমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করে ।
ঠিক সেই সময়ে কারেন্ট চলে যায়,
অামি তখন বললাম,এই কারেন্ট তো নাই । চলো ছাদে যাই,ছাদে গিয়ে দুইজনে গল্প করি।
সে বললো, না না এতো রাতে ছাদে একদম যাওয়া যাবে না।
অামি বললাম, কেনো?
সে বললো, অামার খুব ভয় করতেছে।
অামি বললাম , কিসের ভয়।
সে বললো, দেখো অামাদের ছাদে রেলিং নাই। তাছাড়া
এখন অনেক অন্ধকার ছাদে।
অামি বললাম, ওহ এতক্ষণে বুঝলাম অামার কিছু হয়ে যাবে এই ভয় তোমার মনে। বিয়ের দশবছর হয়ে গেলো এখনো তুমি ভয় পাচ্ছো।
এই বলে একটু বিরক্ত বোধ করে তার মাথা অামার বুকে থেকে সরিয়ে দেই।
ঠিক তখনি অাবার কারেন্ট চলে অাসে।
সে তখন বলে, ছাদে যাওয়া লাগবে না কারেন্ট চলে অাসছে, এখন তোমার বুকে মাথা রেখে অামাকে ঘুমাতে দাও, এই বলে অাবার অামার বুকে মাথা রাখলো।
তখনি অামার মনে একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো,
মনে মনে ভাবলাম একটু ভয় দেখাই তাকে।
যেমন ভাবা তেমনি কাজ, অামি ওকে বললাম, এই অনেক গরম লাগছে , একটু মাথাটা সরাও অামি ফেনের সুইচটা অন করে দেই।
তারপর অামি উঠে গিয়ে এমন ভাবে অভিনয় করলাম,
যে ফেনের সুইচ দেওয়ার সময় অামাকে ইলেক্ট্রিক শক লাগে, অামি একটা চিৎকার দিয়ে সেখানে শুড়ে পড়লাম।
মারিয়া তখন চিৎকার করে অামাকে এসে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে, এই তোমার কি হয়েছে কথা বলো চোখ খোলো।
পাগলীটার কান্না দেখে তাড়াতাড়ি উঠে বসে বললাম, অারে অামার কিছু হয়নি অামিতো একটু মজা করলাম তোমার সাথে।
তখন সে কেঁদে কেঁদে বলে, তুমি কি অামাকে মেরে ফেলতে চাও, মেরে ফেলতে চাও।
তখন অামি ওকে জড়িয়ে ধরে বলি, না শুধু ভালোবাসতে চাই, ভালোবাসতে চাই।…………