শুধু তোর জন্য ভালোবাসা

শুধু তোর জন্য ভালোবাসা

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি বউটা আমার dressing table এর সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে। তাড়াতাড়ি করে বিছানা ছেড়ে বউয়ের কাছে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই বউ বলে উঠলো–

শালিকা বউ—— আরে আরে করেন কি দুলাভাই???? এই ছাড়েন বলছি,,,আমি আপনার বউ না শালিকা বউ। ছাড়েন আমায়।
আমি—- তাই নাকি আপনি আমার বউ না???
——– হুম,,,,,আমি আপনার বউ না। আমি তো আপনার শালিকা।
——– ও,,,তাহলে বুঝি কাজী সাহেব ভুল করে কাবিননামাতে আপনার নাম লিখেছেন।
——– হ্যা,,,,,এটা হতে পারে। কি ভুলটাই না করেছে কাজী সাহেব।
——– মাইর চিনো শালিকা বউ আমার????
——– হুম চিনিতো। দাড়াও দেখাচ্ছি তোমাকে মাইর কিরকম। ( এই বলে কিল-ঘুষি আমার বুকের উপরে মারতে শুরু করলো)
——– আরে আরে করো কি???? এতো মারলে কিন্তু শালিকা বউকে ছেড়ে খালি বউ এর কাছে চলে যাবো।
——- এক পা সামনে বাড়িয়ে দেখাও দেখি পা ভেঙে দিবো।
——- ঐ না,,,,,এইতো আমি এখানেই দাড়িয়ে রয়েছি।
——- best দুলাভাই জামাই আমার উম্মাআআআহ…..
——- এভাবে সকাল সকাল প্রতিদিন মিষ্টি খাওয়াইলে ডায়াবেটিস হবে আমার ১২০% নিশ্চয়তা।
——- জ্বী নাহ,,,,এটা sugar free মিষ্টি। এতোই ভয় যখন ডায়াবেটিস এর তাহলে আমি চলে যাচ্ছি bye. ( রাগ দেখিয়ে চলে গেলো)
——- আরে ঐ যে আবার রাগ করেছে। আরে কই যাও এইটা তো বলে যাও।( কে শুনে কার কথা)

কি ভাবছেন???? আরে এইটা আমার বিয়ে করা বউ। বিয়ের আগমুহূর্ত পর্যন্ত শালিকা ছিলো। আচ্ছা বলতেছি সব কাহিনী।
লেখা পড়া শেষ করে ভালো একটা চাকরি নিলাম। বাবা- মা এর জেদের কাছে হেরে গিয়ে বিয়ে করতে রাজি হইলাম। মেয়ে তাদের পছন্দ হওয়ার পরে এমন বিপদে পড়লাম যার কারনে হবু বউকে ছেড়ে শালিকাকে বিয়ে করতে হলো,,,,,শুশুন তাহলে ঘটনা–

বাবা মা বিয়ের সব দিন তারিখ ঠিক করে আসার কয়েকদিন পরে আমাদেরকে আবার মেয়ের বাসায় যাইতে বললো urgently…গিয়ে শুনলাম যে তাদের ছোট মেয়ে নাকি আমাকে ভালোবাসে তাই বড় মেয়ের সাথে বিয়ে না দিয়ে ছোট মেয়ের সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে তারা। বাবা মা রাগারাগি করতেছিলো অনেক তাদেরকে বুঝিয়ে বললাম যে কিছু না মনে করলে আমি আপনাদের ছোট মেয়ের সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে চাই। তারা মেনে নিলো। বাড়ির সাদে পাঠালো আমাদের দুজনকে।

—– আপনার এরকম পাগলামির কারন কি?????
—– আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি তাই।
—– ও!!!! কি জন্য ভালোবাসেন????
—– জানি না,,,,,তবে খুব ভালোবাসি।
—– এখন যদি বলি ভালোবাসার প্রমান দিতে।
—– wait,,,,এই যে,,, এই যে প্রমান। ( হাত কেটে আমার নাম লিখেছে)
—– আপনি পাগল নাকি??? বড় বোনের হবু বরের নাম নিজের হাতে কেউ লিখে নাকি????
—– এখন আর আপনি আপুর হবু বর নেই তাই লিখেছি। জানেন অনেক কষ্ট হয়েছে লেখার সময় কিন্তু শেষ হওয়ার পর আপনার নাম দেখে সব কষ্ট চলে গেছে
—– হবু বর নেই মানে????
—– কারন,,,আপু আপনাকে বিয়ে করবে না কারন আমি আপনাক ভালোবাসি।
—– আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
—– আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই।
—– তাহলে তো ভালোই,,,,,,,,আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না কারন আমি আপনার বোনকে ভালোবাসি।
—— ভুলে যান আমার বোনকে আর আমাকে বিয়ে না করার কথাটাও ভুলে যান।
—— কোনোটাই ভুলবো না। আর আপনাকে বিয়ে করবোও না।
—— কি বললেন???? আমাকে বিয়ে করবেন না আপনি????
—– হুম,,,,,করবো না বিয়ে। কারন আপনার মতো পাগলের থেকে দুরে থাকাই ভালো।
—– বিয়ে করবেন না তাহলে,,,,,ঠিক আছে এখন Formula number 2 ব্যবহার করতে হবে দেখতেছি।
—– যা ইচ্ছা ব্যবহার করেন,, আমি চললাম…..bye (আমি চলে আসতে লাগলাম)
—– আমাকে বিয়ে না করলে আমি suicide করবো কিন্তু। ( চিল্লাইয়া বললো)
—– আমি হুমকি তে ভয় পাইনা।
—– ঠিক আছে। কাল আমার মরা মুখটা দেখতে আবার আসিয়েন আমাদের বাসায়।
—– অবশ্যই। ( এই বলে ছাদ থেকে চলে আসলাম)

নিচে এসে ওর বড় বোনকে বললাম যে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছে আমাকে যেনো বিয়ে করি আমি। ওর বোন কথাটা শুনে পাগলের মতো দৌড়ে ছাদে গিয়ে দেখলো যে সত্যি সত্যিই বিষ খেয়েছে মেয়েটা।
এরপর hospital এ নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার বললো যে অনেক ভাগ্যবতী তাই বেচে গেলো। এতো বেশি পরিমান বিষ খেয়ে কেউ কখনও বাচেনি।

তারপর আর কি,,,,,এরকম পাগলামি দেখে মা বাবা রাজি হলো বিয়ে দিতে। আমি বাধ্য হলাম শালিকাকে বিয়ে করার জন্য।

বিয়ের পরে সবার হয় বাসর রাত আর আমার হয়েছে হুমকির রাত। শুনতে চান???? আচ্ছা শুনুন—

—– ওহ তেরি!!!!!!! আপনি আবার লজ্জাও পান নাকি। বাসর রাতে ঘমটা দিয়ে বসে আছেন।
—– আপনি এসে গেছেন??? দাড়ান দাড়ান আপনাকে আগে সালাম করে নেই।
—– আচ্ছা করেন। ( সালাম করে গিয়ে আবার বসলো খাটে)
—– বসে না থেকে ঘুমান এখন,,,,,অনেক রাত হয়েছে।
—- ঘুমাবো মানে????? আজ আমাদের বাসর রাত আর আপনি বলতেছেন ঘুমানোর কথা।
—– হুমকি দিয়ে বিয়ে করেছেন বলে বাসর রাত পালন করবেন এটা তো কাবিননামার কথাও লেখা নেই। আর আপনার বোন হলে অন্যকথা ছিলো। আমি আপনাকে ভালোই বাসিনা। ( এই বলে শুয়ে পরলাম…..চোখ বন্ধ করে ভাব নিলাম যেনো খুব ঘুম ধরেছে আমার)
—— তাই??? দাড়ান দেখাচ্ছি আপনাকে,,,আমাকে ভালোবাসেন না তাই তো???
—– হুম বাসি না।
—– এবার বলেন তো ভালোবাসেন কি না।
—– আরে আরে করেন কি???? ঐ ছুরি তে প্রচুর ধার,,,,গলা কেটে যাবে আমার। ( চোখ বন্ধ ছিলো তাই বুঝতেই পারি নাই। গলায় কিছু একটার ছোয়া লাগতে চোখ খুলে দেখি যে আমার গলায় ছুরি ধরে বসে আছে আমার বুকের উপরে)
—— আবার বলেন তো শুনি যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।
—– আপনার মাথা ঠিক আছে তো???? একে তো গলায় ছুরি ধরেছেন তার উপরে আমার বুকের উপর বসে আছে। পাগল নাকি আপনি???
—– হুম,,,,তবে পাগল না। তোমার প্রেমে পাগলি আমি আমার জানপাখিটা।
—– পাগলি হোন আর যাই হোন। গলা থেকে ছুরি সরান। আমার গলা কেটে যাবে।
—– যাক কেটে। আমাকে ভালো না বাসলে কাউকেউ ভালোবাসতে দিবো না আমি।
—– হুমকি দিচ্ছেন????
—– হুম,,,,মনে করলে তাই। তবে এখন কিন্তু বাংলা ছিনেমার ডায়লগ দিবেন না।
—- মানে????
—– ঐ যে ঐ ডায়লগ টা “শয়তান তুই আমার দেহ পাবি তবু মন পাবি না”
—– হুম,,,মন পাবেন না।
—– কি এতো বড় কথা????? আগে আপনার মনটা কেই নিবো।
—– কিভাবে???
—– যেকোনো ভাবে,,,,,আগে বলেন আপনার বুকের কোন পাশে মন আছে আপনার।
—– কেনো শুনে কি করবেন????
—– বুক চিরে আগে মনটা বের করে নিবো।
—– এই না। ( আল্লাহ বলে কি এই মেয়ে??? বিশ্বাস নাই এই মেয়ের বুক চিরতেও পারে)
—– বলতে হবে না। আমিই খুঁজে নিচ্ছি। ( এই বলে আমার বুকের উপরে ছুরি ছোয়ালো)
—– ঐ করেন কি আপনি??????? উহ,,,,,,,( ছুরি ধরতে গিয়ে আমার হাত কেটে গেলো)
—– আপনার তো হাত কেটে গেলো। আমি তো এমনি এমনি বলেছিলাম। আমি মজা করতেছিলাম।
—– আগেই বলেছিলাম ছুরিতে প্রচুর ধার।
—– এই দাড়ান,,,, আমি আপনার হাতটা বেধে দিচ্ছি যেনো রক্ত না বের হয়। ( এই বলে রুমাল দিয়ে আমার হাত টা বেধে দিলো।
—– এখন ঘুমান।
—– আমার জন্য আপনার হাত কেটেছে। খুব কষ্ট হচ্ছে আপনার।
—- আরে নাহ,,,,আচ্ছা এতো ভালোবাসেন কেনো আমাকে???
—– জানি না তবে খুব ভালোবাসি।
—– আমি তো ভালোবাসি না।
—– কি বললেন????? ছুরিটা এখনও ঘরেই আছে কিন্তু।
—– বাসি তো,,,ভালোবাসি তো খুব ভালোবাসি। ( মাইনকার চিপায় ফাইস্যা গেছি আমি)
—– very good boy,,,,,এই শুনেন। আমি আপনার ordinary বউ না আমি আপনার #শালিকা_বউ। তাই আমাকে খুব খুব খুব ভালোবাসতে হবে।
—– আচ্ছা ঠিক আছে। এখন ঘুমান।
—- পাগল নাকি???? আজ সারারাত গল্প করবো।
—— ঘুম ধরেছে তো আমার।
—– ছুরিটা কি আরেকবার দেখবো আপনাকে????
—– কথায় কথায় ছুরি কেনো। একটুও ঘুম নাই আমার। সারারাতেও আসবে না।
—– that’s like a #দুলাভাই_বর

এভাবেই গল্প করতে করতে পার হলো বাসর রাত। oh shit!!!!! আপনাদের কাহিনী বলতে গিয়ে ভুলেই গেছি যে আমার #শালিকা_বউ রেগে আছে। আগে রাগ ভাঙাই। দেখি কি করতেছে রুমের ভিতরে—-

আমি—- ঐ কাপড় সেজেগুজে কই যাচ্ছো????? বাপের বাড়ি যাইতে কেউ সাজে নাকি।
শালিকা বউ— আমার ইচ্ছা হয়েছে সেজেছি। এতে তোমার কি????
—— আচ্ছা আরও সুন্দর করে সাজো আর নীল শাড়ী টা পরিও। ( সাজার কারনটা হলো আজ আমাকে অফিসে না গিয়ে ওনাকে নিয়ে ঘুরে বেরাতে হবে সারাদিন আর রাতে candle light dinner এ নিয়ে যেতে হবে)
—– তুমি এখান থেকে যাও,,,,যাও তোমার যেখানে যাওয়ার ইচ্ছা।
—— জো হুকুম মহারানী,,,, আপনার হুকুম শিরোধার্য।
—- হুম,,,,যাও যাও।
একটু পর আমি এসে বললাম-
—– শালিকা বউ,,,আমিও সেজেগুজে প্রস্তুত।
—– ঐ দুলাভাই বর তুমি এতো ভাব ধরে সেজেছো কেনো????
—— বাহ রে,,,,তুমি তো একাই তোমার বাবার বাড়ি যাচ্ছো না। আমিও যাচ্ছি আমার শুশুরের বাড়ি।
—— ঐ তোমাকে ক বলেছে যে আমি বাবার বাড়ি যাচ্ছি?????
—– তুমিই তো তখন রাগ করে বললে যে চলে যাচ্ছো তুমি। আর রাগ করে তো বাবার বাড়িই যাবা তো নাকি।
—– আমি বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য রাগ করি নাই।
—— তাহলে?????
—— জানি না।
—— হুদাই রাগ করছো তাহলে???
—– না,,,,অফিসে call করে ছুটি নিয়ে নাও।
—– পারবো না। আজ অফিসে M.D. sir এর মেয়ে আসবে আর তাকে receive করার দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে।
—– আরে ঐটা কই গেলো???? কই যে রাখলাম। ( কি যেনো খুজতেছে,,,,আমি জানি ছুরি খুজতেছে)
—– পাবা না খুজে। সব ছুরি আমার কাছে। ( হাতে রাখা ছুরিগুলো দেখালাম)
—– ঐ ছুরি দাও বলতেছি। দাও আমাকে।
—– পাগল নাকি,,,,একটাও দিবো না।
—– দাও না গো একটা।
—– দিতে পারি তবে শর্ত আছে।
—– কি শর্ত???
—– আমার সাথে আজ সারাদিন ঘুরতে হবে আর রাতে candle light dinner এ যেতে হবে। আর তুমি যে এই কারনে এতো সুন্দর করে সেজেছো আমি তা জানি।
—– তাহলে তোমার অফিস??? আর M.D. এর মেয়ে???
—– কেউ আসবে না। তোমাকে রাগানোর জন্য বলেছি।
—– কুত্তা,বিলাই,শয়তান,বান্দর… I love you so much.
—— I love you more than I love you so much.
—– হুম,,,এবার চলো।
—– জো হুকুম।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত